ভবঘুরেকথা

হীরামন ও লোচন গোস্বামীর বাদানুবাদ
পয়ার

রাউৎখামার গ্রামে গোস্বামী লোচন।
তথায় উদয় এসে হৈল হীরামন।।
গুরুচরণ বালার প্রাঙ্গণে বসিয়া।
বকিতেছে হীরামন ক্রোধিত হইয়া।।
হীরামনে সর্বজনে দণ্ডবৎ করে।
পদধূলি কেহ তুলি লইতেছে শিরে।।
ক্রোধযুক্ত তাহাতে হইয়া হীরামন।
বকাবকি যাহা মুখে বলিছে তখন।।
রমণীর গুহ্যাস্থন অপভ্রংশ ভাবে।
উচ্চারণ করিছেন ক্রোধের প্রভাবে।।
অনেকক্ষণ হীরামন বকিতে লাগিল।
ক্রোধভরে লোচন উঠিয়া দাঁড়াইল।।
লোচন কহিছে ডেকে হারে হীরামন।
হেন বাক তোরে শিখায়েছে কোন জন।।
হরি ঠাকুরকে দেখে হইলি পাগল।
সেই নাকি তোরে শিখায়েছে এই বোল।।
কি বোল বলিয়া করেছিস ডাকাডাকি।
তুই নাকি শ্রীহরির পড়া শুকপাখী।।
যে বোল শুনালি তুই, শোন তোরে কই।
দু-টা কথা কই তোরে আর কত সই।।
উলঙ্গ হইয়া জলে ঝাঁপিলে কি হয়।
তাহাতে কাহার কোথা সাধুত্ব বাড়ায়।।
জলচর পক্ষী জল চরিয়া বেড়ায়।
মরা শব জলে ভাসে সেও সাধু হয়।।
পাগল হ’য়েছে কেন চেননা মাতুল।
কি উদ্দ্যেশে খেপাইল মাতুলের কুল।।
বিবাহ করিলি যারে তারে মা বলিলি।
শ্বশুরকে আজা বলে প্রণাম করিলি।।
রমণীর মাতা শাশুড়িকে বলে আজি।
শালাকে বলিলি মামা মনেতে কি বুঝি।।
হরিচাঁদ নাম ল’য়ে পোড়াইলি মুখ।
মাতৃকুল খেলাইয়া পাইলি কি সুখ।।
জ্ঞান মিশ্র ভক্তিযোগে হ’য়েছে অজ্ঞান।
কেন উচ্চারণ কৈলি মাতৃ গুহ্য স্থান।।
মাতৃ রজ পিতৃবীর্যে জনম সবার।
তাহা কর তুচ্ছ জ্ঞান একি অবিচার।।
বিবাহিতা রমণীকে ডাক মা বলিয়া।
এতটুকু জ্ঞান আছে অজ্ঞান হইয়া।।
বিচারের কথা তোরে কহিলাম সার।
মানা করি মাতৃ কুল খেপাইওনা আর।।
তাহা শুনি হীরামন হইল কাতর।
ক্ষমা কর অপরাধ হইয়াছে মোর।।
কহিছেন হীরামন করিয়া ভকতি।
ভট্টাচার্য ঠাকুর করুণ অব্যাহতি।।
আজ হ’তে পাইলাম ব্যবস্থার পত্র।
প্রায়শ্চিত্ত করি মোরে করুণ পবিত্র।।
লোচনের ঠাই হীরামন পেল লাজ।
রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!