রামকান্ত বৈরাগীর পূর্ব্বাপর প্রস্তাব কথন
পয়ার
রামকান্ত মহাসাধু পরম উদার।
অন্নপূর্ণা মাতাকে দিলেন পুত্র বর।।
সান্দিপণি দ্বাপরে ত্রেতায় বিশ্বামিত্র।
কলিকালে গঙ্গাদাস পন্ডিত সুপাত্র।।
ভারতী গোঁসাই শক্তি হইয়া মিশ্রিত।
মুক ডোবা রামকান্ত হৈল উদ্ভাবিত।।
তাহাতে মিশ্রিত হ’ল বাসুদেব শক্তি।
স্নেহ ভাবে বাসুদেবে করিতেন ভক্তি।।
বাসুদেবে সমর্পিয়া আত্ম স্বার্থ-আত্মা।
ব্রজের মাধুর্য্যভাবে করিত মমতা।।
সাধুর সঙ্গেতে ছিল বাসুদেব মুর্ত্তি।
কভু সখ্য ভাব কভু ব্রজভাবে আর্ত্তি।।
ধুপ দীপ নৈবিদ্যাদি আতপ তন্ডুলে।
পূজিতেন রম্ভা দুর্ব্বা তুলসীর দলে।।
নিবেদিয়া করিতেন ভোজন আরতি।
বাসুদেব খাইতেন দেখিত সুমতি।।
মূলা থোড় মোচা কাচা রম্ভার ব্যঞ্জন।
আতপের অন্ন দিত না দিত লবণ।।
ছোলা ডাল মুগ বুট গোধুম চাপড়ী।
তৈল হরিদ্রা বিনে ঘৃত পক্ক বড়ি।।
ভোগ লাগাইয়া সাধু আরতি করিত।
বাসুদেব খেত তাহা চাক্ষুস দেখিত।।
একদিন গ্রামবাসী বিপ্র একজন।
বাসুদেব ভোগ রাগ করিল দর্শন।।
ক্রোধ করি বলে বিপ্র এ কোন বিচার।
শূদ্রের কি আছে অন্নভোগ অধিকার।।
শূদ্র হ’য়ে বাসুদেবে অন্ন দিলি রাধি।
কোথায় শুনিলি বেটা এমত অবিধি।।
হারে রে বৈরাগী তোর এত অকল্যাণ।
শূদ্র হ’য়ে হবি নাকি ব্রাহ্মণ সমান।।
ব্রাহ্মণ কহিল গিয়া ব্রাহ্মণ সকলে।
শুনিয়া ব্রাহ্মণ সব ক্রোধে উঠে জ্বলে।।
দশ জন বিপ্র গেল বৈরাগীর বাড়ী।
ক্রোধভরে বাসুদেবে ল’য়ে এল কাড়ি।।
বৈরাগী নির্মল চিত্তে দিলেন ছাড়িয়া।
বলিল রে প্রাণবাসু সুখে থাক গিয়া।।
কাঙ্গালের কাছে তুমি ছিলে অনাদরে।
আদরে খাইও এবে ষোড়শোপচারে।।
ভাল হ’ল ব্রাহ্মণেরা লইল তোমারে।
সুখেতে থাকিবা এবে খট্টার উপরে।।
দঃখিত দরিদ্র আমি কপর্দ্দক নাই।
বহু কষ্টে থোড় মোচা তোমারে খাওয়াই।।
দধি দুগ্ধ ঘৃত মধু পায়স পিষ্টক।
লুচি পুরি মন্ডা খেও যাহা লয় সখ।।
চির দিন রাখিয়াছ ব্রাহ্মণের মান।
যাও যাও বিপ্র ঘরে নাহি অপমান।।
আমি অজ্ঞ নাহি জানি তোমারে পূজিতে।
এখন পূজিবে তোমা মন্ত্রের সহিতে।।
যেখানে সেখানে থাক তাতে ক্ষতি নাই।
তুমি যেন সুখে থাক আমি তাই চাই।।
ব্রাহ্মণেরা বাসুদেবে ল’য়ে হরষেতে।
বাসুদেবে অভিষেক করে তন্ত্রমতে।।
কেহ বলে রাখ দেবে প্রতিষ্ঠা করিয়ে।
জাতি নেশে নমঃশূদ্রের পক্ক অন্ন খেয়ে।।
প্রতিষ্ঠা করিয়ে পঞ্চ গব্য দ্বারে স্নান।
অভিষিক্ত করিয়া মণ্ডপে দিল স্থান।।
খাট্টার উপরে রজতের পদ্মাসন।
তাহার উপরে দেবে করিলা স্থাপন।।
শ্বেতপদ্ম রক্তপদ্ম শতদল পদ্ম।
নীলপদ্ম স্থলপদ্ম কোকনদ পদ্ম।।
গোলাপ টগর আর পুষ্প জাতি জুতি।
গন্ধার অপরাজিতা মল্লিকা মালতী।।
গন্ধরাজ সেফালিকা ধবল করবী।
কৃষ্ণকেলী কৃষ্ণচূড়া কামিনী মাধবী।।
দূর্ব্বা তুলসীর পত্র অগুরু চন্দন।
শ্রীঅঙ্গে লেপন আর শ্রীপদ সেবন।।
মন্ত্রপুত করি পরে তন্ত্র অনুসারে।
ভোগাদি নৈবেদ্য দেন নানা উপহারে।।
আতপ তন্ডুল ভোগ দেয় যে কখন।
যেখানে যে মিষ্ট ফল পায় যে ব্রাহ্মণ।।
আনিয়া লাগায় ভোগ বাসুদেব ঠাঁই।
রন্ধনশালান্য ভোগ সুপক্ক মিঠাঁই।।
সব দ্বিজ বাসুদেবের ভক্ত হইল।
পূজারি ব্রাহ্মণ এক নিযুক্ত করিল।।
সন্ধ্যাকালে ঘৃত দ্বীপ পঞ্চ বাতি জ্বালি।
আরতি করেন সব ব্রাহ্মণমণ্ডলী।।
শঙ্খ ঘন্টা কংশ করতাল ঝাঁজ খোল।
রাম শিঙ্গে ভেরী তুরী মধুর মাদল।।
এই রূপে বাসুদেব ব্রাহ্মণের পূজ্য।
আর এক লীলাগুণ বড়ই আশ্চর্য্য।।
এই বাসুদেব জন্ম সফলা নগরী।
তারক রসনা ভরি বল হরি হরি।।