ভবঘুরেকথা
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব

আদ্যাশক্তি ও অবতারতত্ত্ব

আর-একদিন ঠাকুর দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে দক্ষিণ-পূর্ব বারান্দায় সিঁড়িতে বসিয়া আছেন। সঙ্গে রাখাল, মাস্টার হাজরা। ঠাকুর রহস্য করিতে করিতে বাল্যকালের অনেক কথা বলিতেছেন।

[দক্ষিণেশ্বরে-সমাধিস্থ শ্রীরামকৃষ্ণ ও জগন্মাতার সঙ্গে তাঁহার কথা ]

ঠাকুর সমাধিস্থ। সন্ধ্যা হইয়াছে। নিজের ঘরে ছোট খাটটিতে বসে আছেন ও জগন্মাতার সহিত কথা কহিতেছেন। বলিতেছেন, “মা, এত হাঙ্গাম করিস কেন? মা, ওখানে কি যাব? আমায় নিয়ে যাস তো যাব!”

ঠাকুরের কোন ভক্তের বাড়িতে যাবার কথা হইয়াছিল! তাই কি জগন্মাতার আজ্ঞার জন্য এইরুপ বলিতেছেন?

জগন্মাতার সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ আবার কথা কহিতেছেন। এবার কোন অন্তরঙ্গ ভক্তের জন্য বুঝি প্রার্থনা করিতেছেন। বলিতেছেন, “মা, একে নিখাদ কর। আচ্ছা মা, ওকে এককলা দিলি কেন?”

ঠাকুর একটু চুপ করিয়াছেন। আবার বলিতেছেন, “ও! বুঝেছি, এতেই তোর কাজ হবে!”

ষোলকলার এককলা শক্তিতে তোর কাজ অর্থাৎ লোকশিক্ষা হবে, এই কথা কি ঠাকুর বলিতেছেন?

এইবার ভাবাবিষ্ট অবস্থায় মাস্টার প্রভৃতিকে আদ্যাশক্তি ও অবতারতত্ত্ব বলিতেছেন।

যিনি ব্রহ্ম তিনিই শক্তি। তাঁকেই মা বলে ডাকি। যখন নিষ্ক্রিয় তখন তাঁকে ব্রহ্ম বলি, আবার যখন সৃষ্টি-স্থিতি-সংহার কার্য করেন, তখন তাঁকে শক্তি বলি। যেমন স্থির জল, আর জলে ঢেউ হয়েছে। শক্তিলীলাতেই অবতার। অবতার প্রেমভক্তি শিখাতে আসেন। অবতার যেন গাভীর বাঁট। দুগ্ধ বাঁটের থেকেই পাওয়া যায়!

“মানুষে তিনি অবতীর্ণ হন। যেমন ঘুটির ভিতর মাছ এসে জমে।”

ভক্তেরা কেহ কেহ ভাবিতেছেন, শ্রীরামকৃষ্ণ কি অবতার পুরুষ? যেমন শ্রীকৃষ্ণ, চৈতন্যদেব, Christ?

-১৮৮৩, ১৮ই অগস্ট-

…………….
রামকৃষ্ণ কথামৃত : চর্তুদশ অধ্যায় : একাদশ পরিচ্ছেদ

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!