শ্রীযুক্ত কেশব সেনের সহিত নৌকাবিহার – সর্বভূতহিতে রতাঃ
সংনিয়ম্যেন্দ্রিৃনিদ্রয়গ্রামং সর্বত্র সমবুদ্ধয়ঃ ৷
তে প্রাপনুবন্তি মামেব সর্বভূতহিতে রতাঃ ৷৷
[গীতা – ১২।৪]
ভাটা পড়িয়াছে। আগ্নেয়পোত কলিকাতাভিমুখে দ্রুতগতিতে চলিতেছে। তাই পোল পার হইয়া কোম্পানির বাগানের দিকে আরও খানিকটা বেড়াইয়া আসিতে কাপ্তেনকে হুকুম হইয়াছে। কতদূর জাহাজ গিয়াছিল, অনেকেরই জ্ঞান নাই – তাঁহারা মগ্ন হইয়া শ্রীরামকৃষ্ণের কথা শুনিতেছেন। কোন্ দিক দিয়া সময় যাইতেছে, হুঁশ নাই।
এইবার মুড়ি নারিকেল খাওয়া হইতেছে। সকলেই কিছু কিছু কোঁচড়ে লইলেন ও খাইতেছেন। আনন্দের হাট। কেশব মুড়ির আয়োজন করে এনেছেন। এই অবসরে ঠাকুর দেখিলেন বিজয় ও কেশব দুইজনেই সঙ্কুচিতভাবে বসিয়া অছেন। তখন ঠাকুর যেন দুইজন অবোধ ছেলেকে ভাব করিয়া দিবেন। ‘সর্বভূতহিতে রতাঃ’
শ্রীরামকৃষ্ণ (কেশবের প্রতি) – ওগো! এই বিজয় এসেছেন। তোমাদের ঝগড়া-বিবাদ – যেন শিব ও রামের যুদ্ধ। (হাস্য) রামের গুরু শিব। যুদ্ধও হল, দুজনে ভাবও হল। কিন্তু শিবের ভূতপ্রেতগুলো আর রামের বানরগুলো ওদের ঝগড়া কিচকিচি আর মেটে না! (উচ্চহাস্য)
“আপনার লোক তা এরূপ হয়ে থাকে। লব কুশ যে রামের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। আবার জানো মায়ে-ঝিয়ে আলাদা মঙ্গলবার করে। মার মঙ্গল, আর মেয়ের মঙ্গল যেন দুটো আলাদা। কিন্তু এর মঙ্গলে ওর মঙ্গল হয়, ওর মঙ্গলে এর মঙ্গল হয়। তেমনি তোমাদের এর একটি সমাজ আছে; আবার ওর একটি দরাকার। (সকলের হাস্য) তবে এ-সব চাই।
যদি বল ভগবান নিজে লীলা করেছেন, সেখানে জটিলে-কুটিলের কি দরকার? জটিলে-কুটিলে না থাকলে লীলা পোষ্টাই হয় না! (সকলের হাস্য) জটিলে-কুটিলে না থাকলে রগড় হয় না। (উচ্চহাস্য)
“রামানুজ বিশিষ্টাদ্বৈত্যবাদী। তাঁর গুরু ছিলেন অদ্বৈত্যবাদী। শেষে দুজনে অমিল। গুরুশিষ্য পরস্পর মত খণ্ডন করতে লাগল। এরূপ হয়েই থাকে। যাই হোক, তবু আপনার লোক।”
-১৮৮২, ২৭শে অক্টোবর-
.………………………
রামকৃষ্ণ কথামৃত : পঞ্চম অধ্যায় : সপ্তম পরিচ্ছেদ
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….