দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে
শ্রীরামকৃষ্ণ সর্বদাই সমাধিস্থ; কেবল রাখালাদি ভক্তদের শিক্ষার জন্য তাঁহাদের লইয়া ব্যস্ত – কিসে চৈতন্য হয়।
তাঁহার ঘরের পশ্চিমের বারান্দায় সকাল বেলা বসিয়া আছেন। আজ মঙ্গলবার, অগ্রহায়ণ চতুর্থী; ১৮ই ডিসেম্বর, ১৮৮ত খ্রীষ্টাব্দ। ৺দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্তি ও বৈরাগ্যের কথায় তিনি তাঁহার প্রশংসা করিতেছেন। রাখালাদি ছোকরা ভক্তদের দেখিয়া বলিতেছেন, তিনি ভাল লোক; কিন্তু যারা সংসারে না ঢুকিয়া ছেলেবেলা থেকে শুকদেবাদির মতো অহর্নিশ ঈশ্বরের চিন্তা করে, কৌমারবৈরাগ্যবান, তারা ধন্য!
“সংসারী লোকদের একটা না একটা কামনা বাসনা থাকে। এদিকে ভক্তিও বেশ দেখা যায়। সেজোবাবু কি একটা মোকদ্দমায় পড়েছিল – মা-কালীর কাছে, আমায় বলছে, বাবা, এই অর্ঘ্যটি মাকে দাও তো – আমি উদার মনে দিলাম।
“কিন্তু কেমন বিশ্বাস যে আমি দিলেই হবে।
“রতির মার এদিকে কত ভক্তি! প্রায় এসে কত সেবা। রতির মা বৈষ্ণবী। কিছুদিন পরে যাই দেখলে আমি মা-কালীর প্রসাদ খাই – অমনি আর এলো না! একঘেয়ে! লোককে দেখলে প্রথম প্রথম চেনা যায় না।”
শ্রীরামকৃষ্ণ ঘরের ভিতর পূর্বদিকের দরজার নিকট বসিয়া আছেন। শীতকাল, গায়ে মোলস্কিনের র্যাপার। হঠাৎ সূর্যদর্শন ও সমাধিস্থ। নিমেষশূন্য! বাহ্যশূন্য!
এই কি গায়ত্রী মন্ত্রের সার্থকতা – “তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি”?
অনেকক্ষণ পরে সমাধি ভঙ্গ হইল। রাখাল, হাজরা, মাস্টার প্রভৃতি কাছে বসিয়া আছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (হাজরার প্রতি) – সমাধি, ভাব, প্রেমের বটে। ও-দেশে (শ্যামবাজারে) নটবর গোস্বামীর বাড়িতে কীর্তন হচ্ছিল – শ্রীকৃষ্ণ ও গোপীগণ দর্শন করে সমাধিস্থ হলাম! বোধ হল আমার লিঙ্গ শরীর (সূক্ষ্ম শরীর) শ্রীকৃষ্ণের পায় পায় বেড়াচ্ছে!
“জোড়াসাঁকো হরিসভায় ওইরূপ কীর্তনের সময় সমাধি হয়ে বাহ্যশূন্য! সেদিন দেহত্যাগের সম্ভাবনা ছিল।”
শ্রীরামকৃষ্ণ স্নান করিতে গেলেন। স্নানান্তর ওই গোপী প্রেমের কথা বলিতেছেন।
(মণি প্রভৃতির প্রতি) – “গোপীদের ওই টানটুকু নিতে হয়!
“এই সব গান গাইবে:
সখি, সে বন কতদূর!
(যেখানে আমার শ্যামসুন্দর)
(আর চলিতে যে নারি!)
গান – ঘরে যাবই যে না গো!
যে ঘরে কৃষ্ণ নামটি করা দায়। (সঙ্গিনীয়া)”
-১৮৮৩, ১৮ই ডিসেম্বর-
……………..
রামকৃষ্ণ কথামৃত : ষোড়শ অধ্যায় : দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….