ন্যাংটাবাবার শিক্ষা – ঈশ্বরলাভের বিঘ্ন অষ্টসিদ্ধি
শ্রীরামকৃষ্ণ – সিদ্ধাই থাকা এক মহাগোল। ন্যাংটা আমায় শিখালে – একজন সিদ্ধ সমুদ্রের ধারে বসে আছে, এমন সময় একটা ঝড় এল। ঝড়ে তার কষ্ট হল বলে সে বললে, ঝড় থেমে যা। তার বাক্য মিথ্যা হবার নয়। একখানা জাহাজ পালভরে যাচ্ছিল। ঝড় হঠাৎ থামাও যা আর জাহাজ টুপ করে ডুবে গেল। এক জাহাজ লোক সেই সঙ্গে ডুবে গেলো। এখন এতগুলি লোক যাওয়াতে যে পাপ হল, সব ওর হলো। সেই পাপে সিদ্ধাইও গেল, আবার নরকও হলো।
“একটি সাধুর খুব সিদ্ধাই হয়েছিল, আর সেই জন্য অহংকারও হয়েছিল। কিন্তু সাধুটি লোক ভাল ছিল, আর তার তপস্যাও ছিল। ভগবান ছদ্মবেশে সাধুর বেশ ধরে একদিন তার কাছে এলেন। এসে বললেন, ‘মহারাজ! শুনেছি আপনার খুব সিদ্ধাই হয়েছে’। সাধু খাতির করে তাঁকে বসালেন। এমন সময়ে একটা হাতি সেখান দিয়ে যাচ্ছে। তখন নূতন সাধুটি বললেন, ‘আচ্ছা মহারাজ, আপনি মনে করলে এই হাতিটাকে মেরে ফেলতে পারেন?’
সাধু বললেন, ‘য়্যাসা হোনে শক্তা’। এই বলে ধুলো পড়ে হাতিটার গায়ে দেওয়াতে সে ছটফট করে মরে গেল। তখন যে সাধুটি এসেছে, সে বললে, ‘আপনার কি শক্তি! হাতিটাকে মেরে ফেললেন।’ সে হাসতে লাগল। তখন ও সাধুটি বললে, ‘আচ্ছা, হাতিটাকে আবার বাঁচাতে পারেন?’ সে বললে, ‘ওভি হোনে শক্তা হ্যায়।’ এই বলে আবার যাই ধুলো পড়ে দিলে, অমনি হাতিটা ধড়মড় করে উঠে পড়ল।
তখন এ-সাধুটি বললে, ‘আপনার কি শক্তি! কিন্তু একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। এই যে হাতি মারলেন, আর হাতি বাঁচালেন, আপনার কি হল? নিজের কি উন্নতি হল? এতে কি আপনি ভগবানকে পেলেন?’ এই বলিয়া সাধুটি অন্তর্ধান হলেন।
“ধর্মের সূক্ষ্মা গতি। একটু কামনা থাকলে ভগবানকে পাওয়া যায় না । ছুঁচের ভিতর সুতো যাওয়া একটু রোঁ থাকলে হয় না।
“কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, ভাই আমাকে যদি লাভ করতে চাও তাহলে অষ্টসিদ্ধির একটা সিদ্ধি থাকলে হবে না।
“কি জান? সিদ্ধাই থাকলে অহংকার হয়, ঈশ্বরকে ভুলে যায়।
“একজন বাবু এসেছিল – ট্যারা। বলে, আপনি পরমহংস, তা বেশ, একটু স্বস্ত্যয়ন করতে হবে। কি হীনবুদ্দি। ‘পরমহংস’; আবার স্বস্ত্যয়ন করতে হবে। স্বস্ত্যয়ন করে ভাল করা, – সিদ্ধাই। অহংকারে ঈশ্বরলাভ হয় না। অহংকার কিরূপ হান? যেন উঁচু ঢিপি, বৃষ্টির জল জমে না, গড়িয়ে যায়। নিচু জমিতে জল জমে আর অঙ্কুর হয়; তারপর গাছ হয়; তারপর ফল হয়।”
Love to all – ভালবাসায় অহংকার যায় – তবে ঈশ্বরলাভ
“হাজরাকে তাই বলি, আমি বুঝেছি, আর সব বোকা – এ-বুদ্ধি করো না। সকলকে ভালবাসতে হয়। কেউ পর নয়। সর্বভূতেই সেই হরিই আছেন। তিনি ছাড়া কিছুই নাই। প্রহ্লাদকে ঠাকুর বললেন, তুমি বর নাও। প্রহ্লাদ বললেন, আপনার দর্শন পেয়েছি, আমার আর কিছু দরকার নাই। ঠাকুর ছাড়লেন না। তখন প্রহ্লাদ বললেন, যদি বর দেবে, তবে এই বর দেও, আমায় যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের অপরাধ না হয়।
“এর মানে এই যে, হরি একরূপে কষ্ট দিলেন। সেই লোকদের কষ্ট দিলে হরির কষ্ট হয় ।”
-১৮৮৪, ২১শে সেপ্টেম্বর-
………………
রামকৃষ্ণ কথামৃত : ষড়বিংশ অধ্যায় : দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….