ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

হাতিবাগানে ভক্তমন্দিরে – শ্রীযুক্ত মহেন্দ্র মুখুজ্জের সেবা

শ্রীরামকৃষ্ণ শ্রীযুক্ত মহেন্দ্র মুখুজ্জের গাড়ি করিয়া দক্ষিণেশ্বর হইতে কলিকাতায় আসিতেছেন। রবিবার, ৬ই আশ্বিন, ২১শে সেপ্টেম্বর, ১৮৮৪; আশ্বিন শুক্লা দ্বিতীয়া। বেলা ৫টা। গাড়ির মধ্যে মহেন্দ্র মুখুজ্জে, মাস্টার ও আরও দু-একজন আছেন। একটু যাইতে যাইতে ঈশ্বরচিন্তা করিতে করিতে ঠাকুর ভাবসমাধিতে মগ্ন হইলেন।

অনেকক্ষণ পরে সমাধিভঙ্গ হইল। ঠাকুর বলিতেছেন, “হাজরা আবার আমায় শেখায়! শ্যালা!” কিয়ৎক্ষণ পরে বলিতেছেন, “আমি জল খাব।” বাহ্য জগতে মন নামাইবার জন্য ঠাকুর ওই কথা প্রায়ই সমাধির পর বলিতেন।

মহেন্দ্র মুখুজ্জে (মাস্টারের প্রতি) – তাহলে কিছু খাবার আনলে হয় না?

মাস্টার – ইনি এখন খাবেন না।

শ্রীরামকৃষ্ণ (ভাবস্থ) – আমি খাব; – বাহ্যে যাব।

মহেন্দ্র মুখুজ্জের হাতিবাগানে ময়দার কল আছে। সেই কলেতে ঠাকুরকে লইয়া যাইতেছেন। সেখানে একটু বিশ্রাম করিয়া স্টার থিয়েটারে চৈতন্যলীলা দেখিতে যাইবেন। মহেন্দ্রের বাড়ি বাগবাজার ৺মদনমোহনজীর মন্দিরে কিছু উত্তরে। পরমহংসদেবকে তাঁহার পিতাঠাকুর জানেন না। তাই মহেন্দ্র ঠাকুরকে বাড়িতে লইয়া যান নাই। তাঁহার দ্বিতীয় ভ্রাতা প্রিয়নাথও একজন ভক্ত।

মহেন্দ্রের কলে তক্তপোশের উপর সতরঞ্চি পাতা। তাহারই উপরে ঠাকুর বসিয়া আছেন ও ঈশ্বরের কথা কহিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টার ও মহেন্দ্রের প্রতি) – শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত শুনতে শুনতে হাজরা বলে, এ-সব শক্তির লীলা – বিভু এর ভিতর নাই। বিভু ছাড়া শক্তি কখন হয়? এখানকার মত উলটে দেবার চেষ্টা!

ব্রহ্ম বিভুরূপে সর্বভূতে – শুদ্ধভক্ত ষড়ৈশ্বর্য চায় না

“আমি জানি, ব্রহ্ম আর শক্তি অভেদ। যেমন জল আর জলের হিমশক্তি। অগ্নি আর দাহিকা শক্তি। তিনি বিভুরূপে সর্বভূতে আছেন; তবে কোনওখানে বেশি শক্তির, কোনখানে কম শক্তির প্রকাশ। হাজরা আবার বলে, ভগবানকে পেলে তাঁর মতো ষড়ৈশ্বর্যশালী হয়, ষড়ৈশ্বর্য থাকবে ব্যবহার করুক আর না করুক।

মাস্টার – ষড়ৈশ্বর্য হাতে থাকা চাই। (সকলের হাস্য) শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) – হাঁ, হাতে থাকা চাই! কি হীনবুদ্ধি! যে ঐশ্বর্য কখন ভোগ করে নাই, সেই ঐশ্বর্য ঐশ্বর্য করে অধৈর্য হয়। যে শুদ্ধভক্ত সে কখনও ঐশ্বর্য প্রার্থনা করে না।

কলবাড়িতে পান সাজা ছিল না। ঠাকুর বলিতেছেন, পানটা আনিয়েলও। ঠাকুর বাহ্যে যাইবেন। মহেন্দ্র গাড়ু করিয়া জল আনাইলেন ও নিজে গাড়ু হাতে করিলেন। ঠাকুরকে সঙ্গে করিয়া মাঠের দিকে লইয়া যাইবেন। ঠাকুর মণিকে সম্মুখে দেখিয়া মহেন্দ্রকে বলিলেন, “তোমার নিতে হবে না – এঁকে দাও?” মণি গাড়ু লইয়া ঠাকুরের সঙ্গে কলবাড়ির ভিতরের মাঠের দিকে গেলেন।

মুখ ধোয়ার পর ঠাকুরকে তামাক সেজে দেওয়া হইল। ঠাকুর মাস্টারকে বলিতেছেন, সন্ধ্যা কি হয়েছে? তাহলে আর তামাকটা খাই না, “সন্ধ্যা হলে সর্ব কর্ম ছেড়ে হরি স্ম রণ করবে।” এই বলিয়া ঠাকুর হাতের লোম দেখিতেছেন – গনা যায় কি না। লোম যদি গনা না যায়, তাহা হইলে – সন্ধ্যা হইয়াছে।

-১৮৮৪, ২১শে সেপ্টেম্বর-

……………….
রামকৃষ্ণ কথামৃত : ষড়বিংশ অধ্যায় : চতুর্থ পরিচ্ছেদ

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!