লখিন্দরের বিবাহ সর্পদংশনে মৃত্যু ও পুনর্জীবন প্রাপ্তি
নিছনি গ্রামেতে বাস সায় সদাগর।
তার জাতি গন্ধবেণে স্বভাব সুন্দর।।
কুল-মান-গুণ-শীল ধনবান অতি।
অমলা তাহার পত্নী পতিব্রতা সতি।।
তাহার গর্ভেতে জন্মে বেহুলা সুন্দরী।
সর্ব্ব সু-লক্ষণা কন্যা রূপে বিদ্যাধরী।।
পুত্রের সুযোগ্য পাত্রী চাঁদ করি মনে।
বিবাহ সম্বন্ধ স্থির করে সেই স্থানে।।
শুভক্ষণে শুভলগ্নে পুত্রের বিবাহ।
মহা সমারোহে চাঁদ করিল সম্পন্ন।।
বাসরে পুত্রের মৃত্যু সর্পের দংশনে।
সে কথা চাঁদের মনে জাগে সর্বক্ষণে।।
সে কারণে পুত্র পুত্রবধুকে লইয়া।
বিবাহের পরক্ষণে আসিল চলিয়া।।
দেশেতে নির্ম্মাণ করি এক লৌহ ঘর।
রাত্রে বর কন্যা রাখে তাহার ভিতর।।
চাঁদের অজ্ঞাতে ছিল ছিদ্র লৌহ ঘরে।
ছিদ্রে আসি কালীনাগ দংশে লখিন্দরে।।
জাগিয়া বেহুলা উঠে করি হাহাকার।
সংবাদ পাইয়া সবে খোলে লৌহদ্বার।।
দ্বার খুলি দেখে পড়ি আছে লখিন্দরে।
বেহুলা বিলাপ করে পতি করি ক্রোড়ে।।
সনকা সংবাদ শুনে আসিল ধারিয়া।
অনেক ক্রন্দন করে ভূমিতে পড়িয়া।।
বহুরূপে সান্ত্বনা দিল চাঁদ সদাগরে।
বিধির লিখন বল কে খণ্ডাতে পারে।।
তারপর সৎকারের করে আয়োজন।
শ্বশুর চরণে পড়ি বেহুলা তখন।।
কাঁদিয়া বলিল মোর শুন নিবেদন।
মান্দাসে পতিকে লয়ে করিব গমন।।
(কলাগাছের তৈরি ভেউরা)
সুরলোকে যেয়ে আমি শিবের প্রসাদে।
অবশ্য জিয়াব মোর পতি নির্বিবাদে।।
চাঁদ বলে একে তুমি কুলের কামিনী।
তাতে অতি রূপবতী যুবতী রমণী।।
কেমনে তোমাকে আমি দিব এ দশায়।
কুলের কলঙ্ক তাতে রটাবে সবাই।।
শুনিয়া বেহুলা কাঁদি করযোড়ে কয়।
অবশ্য জিয়াব পতি না কর সংশয়।।
আর যদি কোনক্রমে না কর স্বীকার।
অনশনে ত্যাজিব এ জীবন আমার।।
আজ্ঞা দিল চাঁদবেণে না দেখি উপায়।
বধুসহ লখিন্দরে মান্দাসে ভাসায়।।
গুরুজন পদ বন্দি বেহুলা সুন্দরী।
দেবীর প্রসাদে চলি যায় সুরপুরী।।
দেবের সভায় নৃত্য করিয়া বেহুলা।
সর্ব্ব দেবগণে তথা সন্তুষ্ট করিলা।।
বেহুলা প্রতিজ্ঞা করে দেবের সভায়।
মনসার পূজা করাইবে শ্বশুর দ্বারায়।।
তুষ্ট হয়ে জিয়াইল দেবী লখিন্দরে।
আরও এনে দিল মৃত ছয়টি ভাসুরে।।
চৌদ্দ তরী দ্রব্য ভরি দিলেন বিদায়।
বেহুলা চরণ বন্দি উঠিলেন নায় (নৌকায়)।।
দেবীর প্রসাদে তরী শীঘ্র লাগে ঘাটে।
পাড়া-পড়ীম সংবাদ পেয়ে আসিল নিকটে।।
আশ্চর্য্য হইয়া সবে জয়ধ্বনি দিল।
পত্নীসহ সুখে চাঁদ সবে ঘরে নিল।।
বেহুলা শ্বশুর পদে করিল মিনতি।
তুষ্ট হয়ে চাঁদে করে মনসার স্তুতি।।