শ্লোক
লজ্জা ঘৃণা তথা ভয় চ্যুতি জুগুস্পা পঞ্চম।
শোকং সুখং তথা জানি অষ্টপাশ প্রকীর্ত্তিত।।
পয়ার
লজ্জা ঘৃণা ভয় ভ্রষ্টা গ্লানি দুঃখ সুখ।
সপ্ত গেছে লজ্জাপাশে পরীক্ষা কৌতুক।।
পতি ত্যজে বনে এসে করে প্রেম সজ্জা।
পরীক্ষিলে গোপীদের আছে কিনা লজ্জা।।
কৃষ্ণ সুখে সুখিনী শ্রীকৃষ্ণ প্রতি আর্তি।
শয়নে স্বপনে জাগরণে কৃষ্ণ স্ফূর্তি।।
যারা যাচে দাসী পদ আপন গরজে।
রাধা বাস হরি’ হরি নিলে কি বুঝে।।
বোঝা মন বুঝিবারে কিবা প্রয়োজন।
সেও বুঝি জগতের শিক্ষার কারণ।।
প্রভু বলে শেষ লীলা বড় চমৎকার।
লীলাকারী যেই তার নিজে বোঝা ভার।।
শুনি দশরথ পড়ে পদে লোটাইয়ে।
কাঁদিতে কাঁদিতে কহে চরণ ধরিয়ে।।
সারে বা না সারে রোগ তাতে নাহি দায়।
দয়া করি হরি মোরে রাখ রাঙ্গা পায়।।
প্রভু কহে এত তোর সাধন ভজন।
শুদ্ধাচারী বৈরাগীর ব্যাধি কি কারণ।।
প্রভু কহে দশরথ তোমারে জানাই।
শৌচাচার ক’রে তোর হ’ল শুচিবাই।।
স্নান না করিয়া কিছু খাওনা কখন।
স্নান না করিয়ে অদ্য করগে ভোজন।।
কল্য ভাত রাঁধিয়া রেখেছে জল দিয়া।
কাঁচা ঝাল দিয়া সেই ভাত খাও গিয়া।।
শুনি অন্তঃপুরে যায় লক্ষ্মীর নিকটে।
মা! মা! বলিয়া সাধু ডাকে করপুটে।।
সাধুর মুখের ঐকান্তিক ডাক শুনি।
দশরথে দেখা দিল জগৎ জননী।।
দশরথ বলে মা দেহি প্রসাদী ভাত।
খেতে আজ্ঞা দিয়াছেন প্রভু জগন্নাথ।।
সাধু ভক্তগণ সব যায় উড়িষ্যায়।
সে আনন্দ বাজারে প্রসাদ মেগে খায়।।
কল্য রাঁধিয়াছ ভাত তাতে দিলে জল।
সেই মাতা লক্ষ্মী তুমি এই সে উৎকল।।
আনন্দ বাজার এই মেগেছি প্রসাদ।
পদ্ম হস্তে দেহ খেয়ে পুরাইব সাধ।।
তব হস্ত রাঁধা অন্ন জগন্নাথ ভোগ।
দেহ অন্ন খাইয়া সারিব ভব রোগ।।
বাহির্দ্দেশে থাকিয়া বলেছে জগন্নাথ।
দশরথে দেহ কাঁচা লঙ্কা পান্তাভাত।।
জগন্মাতা দিল অন্ন আর কাঁচা লঙ্কা।
দশরথ বলে মম গেল মৃত্যু শঙ্কা।।
কি ছাড় ত্র্যাহিক জ্বর ভব রোগ গেল।
অন্নপাত্র ধরি সাধু মস্তকে রাখিল।।
বহুদিন অরুচি না পারে কিছু খেতে।
অদ্য এত রুচি নাহি পারে ধৈর্য হ’তে।।
বড়ই বেড়েছে রুচি বড়ই সুস্বাদ।
সাধু কহে আর বার দেহ মা প্রসাদ।।
ভিড়দিয়া ডাক ছেড়ে কহে দশরথ।
কাঁহা লাবড়া ব্যঞ্জন কাঁহা জগন্নাথ।।
মহাপ্রভু বলে দশরথ এবে আয়।
পাইবি লাবড়া অন্ন মধ্যাহ্ন সময়।।
কিনা কি এ ওঢ়াকাঁদি না পা’লি ভাবিয়ে।
আয় দেখি ক্ষণকাল বসি তোরে লয়ে।।
উপজিল প্রেমভক্তি সেরে গেল জ্বর।
কবি চূড়ামণি কহে হরিনাম সার।।