দুই পুত্র বলেছিনু করিয়া শয়ন।
দূতগণে কহে রাজা আনহ ব্রাহ্মণ।
ইহার বৃত্তান্ত কথা জানে সে দ্বিজে।
বিপ্রেরে দিলাম কষ্ট না বুঝিয়া নিজে।
আজ্ঞামাত্র দূতগণ আনে বিপ্রবরে।
শীর্ণ কলেবল বিপ্র কান্দেন কাতরে।।
ভূপতি সে বিপ্রবরে করে নানাস্তুতি।
অপরাধ ক্ষমা কর তুমি মহামতি।।
না জেনে তোমারে কষ্ট দিলাম যে আমি।
সকলের নিকট আমি হইলাম বদনামী।।
ত্বরায় করহ মম সন্দেহ ভঞ্জন।
কোন শিশু মুণ্ডদ্বয় দেখিনু তখন।।
বিপ্র কহে মহারাজ করি নিবেদন।
কিছুমাত্র নাহি জানি তাহার কারণ।।
শনি দোষে কষ্ট পাই ঘটায় প্রমাদ।
শনির সে খেলা ভূপ মম পরিবাদ।।
সকলি ঈশ্বর ইচ্ছা অঘট ঘটন।
আর কেন সেই কথা কর উত্থাপন।।
রাজা বলে সত্য করি মানি।
গ্রহ দোষে নানা কষ্ট ভালরূপ জানি।
যদি হে কখনও হয় শনি দরশন।
পূজিয়ে তাহার পদ করি নিবারণ।।
ষোড়শোপচারে পূজি নানা উপাচারে।
ভক্তিতে সাধনা করি বিধি ব্যবহারে।
বিপ্র বলে মহারাজ স্থির কর মতি।
এখনি জানাব আমি শনিগ্রহপ্রতি।
এত বলি বিপ্রবর করিল স্তবন।
স্তবে তুষ্ট হয়ে শনি দিল দরশন।।
শনির চরণে রাজা পড়ে লুটাইয়া।
বহুবিধ স্তব করে কাঁদিয়া কাঁদিয়া।।
তোমার করিব পূজা করিয়াছি মন।
এ দাসের অপরাধ কর বিমোচন।।
তুমি হে গ্রহের শ্রেষ্ঠ দেব শনৈশ্চর।
রাখ-মার সবই পার ইচ্ছায় তোমার।।
আমি অতি নরাধম কি জানি মহিমা।
নিজগুণে কর প্রভু সব দোষ ক্ষমা।
তপন তনয় তুমি সর্বগুণধাম।
তোমায় যে চিনে তার পুরে মনস্কাম।।
করিব তোমারি পূজা করিয়াছি মন।
অনুগ্রহ করি দেব করহ গ্রহণ।।
পূজার পদ্ধতি প্রভু নাহি জানি।
নিজ মুখে কহ তাহা জুড়াক হৃদয়মণি।।
শুনিয়া রাজার স্তব শনিগ্রহ কয়।
ক্ষমিলাম অপরাধ নাহি আর ভয়।
পূজার নিয়ম মম শুনহ ভুপতি।
তুমি অতি বুদ্ধিমান সুজ্ঞান সুমতি।।
আমার বারেতে শুদ্ধ পরিয়া বসন।
করিবে আমার ব্রত হয়ে শুদ্ধ মন।।
নীলবস্ত্র তিলতৈল লৌহের আসন।
মাষকলাই আদি করিবে আয়োজন।
কৃষ্ণবর্ণ ঘট চাই করিতে স্থাপন।
পঞ্চজাতি ফল ফুলে করিবে অর্চ্চন।।
দরিদ্র বিধান মত কহিলাম সরি।
ভক্তিই প্রধান তার কি কহিব আর।।
ভক্তি করি যেবা করে আমার পূজন।
ক্ষণমাত্রে হয় তার দু:খ বিমোচন।।
পূজা অন্তে করিবেক আমার প্রণাম।।
নবগ্রহ স্তোত্র পাঠে লইবেক নাম।।
পরেতে প্রসাদ খাবে করিয়া ভকতি।
পাপ-তাপ যাবে দূরে পাইবে মুকতি।।
রাত্রিতে লইবে প্রসাদ বাসি না করিবে।
অভক্তিতে নিলে পরে প্রমাদ ঘটিবে।।
আমার পূজাতে যারা করে অনাদর।
চিরকাল দু:খে তারা হইবে কাতর।।
এই কথা বলে শনি হইল অন্তর্দ্ধান।
ভক্তিতে করেন রাজা শনি র পূজন।
প্রতি শনিবারে পূজা করে নরবর।
ধন দিয়া বিপ্রগণের তুষিল অন্তর।।
ইন্দ্রের অধিক ধন হইল তাহার।
সুখের নাহিক সীমা ঐশ্বর্য অপার।।
শঙ্খপতি সওদাগরের উপাখ্যান
শনির প্রভাবে দেখি এক ডোমনারী।
মানস করিল বহু স্তুতি ভক্তি করি।।
আমার দুহিতাসহ সাধু সদাগরে।
বিবাহ হইলে শনি পূজিত সত্বরে।।
শনির সকল কার্য অতীব অদ্ভুত।
বাণিজ্যে আইল এক সওদাগর সূত।।
বিবাহ করিয়া সেই ডোমের কুমারী।
বাণিজ্যে চলিল পুন: শুভযাত্রা করি।।
শনি পূজা করিবারে শাশুড়ী কহিল।
বাণিজ্যে পূজিব বলি সাধু চলি গেল।।
দক্ষিণ রাজার দেশে হইল উপনীত।
বেচাকিনী করে সদা আশাতিরিক্ত।।
বহুবিধ লভ্য হয় ধন-রত্ন হার।
নাহি পূজে শনৈশ্চরে সদা অহঙ্কার।।
দেখিয়া সাধুর রীতি, শনি ক্রোধে জ্বলে।
নিশিযোগে রাজাকে বলেন স্বপ্ন ছলে।।
তব ভাণ্ডারের সব চুনি-মুক্ত ধন।
চুরি করি নিয়ে যায় সাধু মহাজন।।
সকালে উঠিয়া রাজা কহে কোটালেতে।
সদাগরে বান্ধি আন আমার সাক্ষাতে।।
আজ্ঞামাত্র সদাগরে বান্ধিয়া আনিল।
কারাগারে রাখিবারে রাজা আজ্ঞা দিল।।
কাঁদিয়া সাধুর সুত বন্দী ঘরে যায়।
মনে ভাবে শনির সেবায় আছি বড় দায়।।
এত বলি শনৈশ্চরে করে আরাধন।
বন্ধন মুক্ত কর পূজিব চরণ।।
অপরাধ ক্ষমা কর প্রভু নিজ দাসে।
তব পূজা করি নৌকা ভাসাইব দেশে।।
তুষ্ট হয়ে শনি পুন: ভুপে আদেশিল।
সাধু সুত চোর নয় মম কোপে ছিল।
স্বপ্ন দেখি করে রাজা সাধুকে বিদায়।
পূজা করি সদাগরে নিজ বাসে যায়।
শাশুড়ীকে পণমিয়া ধন ঘরে নিল।
বহুবিধ উপচারে শনিকে পূজিল।।
এই মতে শনি পূজা যেই জন করে।
যাহা চায় তাহা পায় দু:খ যায় দূরে।।
শনির পাঁচালী গ্রন্থ গৃহে থাকে যার।
সুখ শান্তিময় তার হইবে সংসার।।
অতএব বন্ধুগণ ধরহ বচন।
ভক্তি করি শনিগ্রহ করিবে পঠন।।
সকল বিপদ হইতে পাবে পরিত্রাণ।
বেদেতে সকল কথা আছয়ে প্রমাণ।।
হরি হরি মুখে বল যত বন্ধুগণ।
শনির পাঁচালী কথা হইল সমাপন।।