ভবঘুরেকথা
শনি দেব

দীর্ঘ ত্রিপদী
রাজা অতি দু:খ মনে, শিরে করাঘাত হানে,
কাঁদিয়া করে হাহাকার।
হায়রে দারুণ বিধি, এই কি হল বিধি,
প্রাণনিধি করিল সংহার।।
বিদ্যাবন্ত জন দেখি, তাহারে সাদরে রাখি,
পড়িবারে দিনু যত্ন করি।
হবে পুত্র গুণবান, সুখেতে জুড়াবে প্রাণ,
এই বাঞ্ছা সদা মনে করি।।
হিতে হল বিপরীত, বিপ্র হয়ে দস্যুরীত,
আমার করিল সর্বনাশ।
স্মরিতে বাছার মুখ, বিদারিয়া যায় বুক,
ভালকর্ম করিল প্রকাশ।।

স্মরিতে বাছার মুখ, বিদারিয়া যায় বুক,
ভালকর্ম করিল প্রকাশ।।
হেথা অন্ত:পুরে বাণী, একথা শ্রবণে শুনি,
এলো-থেলো পাগলিনী প্রায়।
ক্ষণে উঠে ক্ষণে বৈসে, নয়ন নীরেতে ভাসে,
বলে মম হৃদি ফেটে যায়।
আমি রে ভুজঙ্গফণি, তুই রে আমার মণি,
মরি আমি তোমার বিহনে।
দেখা দিয়ে প্রাণ রাখ, মা মা বলিয়া ডাক,
শ্রবণে জুড়াইব মন-প্রাণ।।

কান্দেন শ্রীবৎসরাজ, জীবনেতে কিবা কাজ,
যদি গেল মম পুত্রনিধি।
কোথা বাপ পুত্রধন, কোলে আয় যাদুধন,
তোর শোকে কান্দি নিরবধি।
ক্রোধে হল অঙ্গ ভারি, আর না সহিতে পারি,
চরে ডাকি দিল অনুমতি।
শুন ওরে চরগণ, কররে বিপ্রে বন্ধন,
কারাগারে রাখহ সম্প্রতি।
সেবক কাতরে কন, না কর বিপ্রে বন্ধন,
বিপ্র হ’ন সর্বসিদ্ধি দাতা।।
বিপ্রের হরিলে মান, নাহি পাবে পরিত্রাণ,
বিপ্র হ’ল সর্বসিদ্ধিদাতা।

আজ্ঞামাত্র চরগণ ব্রাহ্মণে বান্ধিল।
গলা ধাক্কা দিয়া তারে কারাগারে নিল।।
বিপ্রের নয়ন বারি ঝরে অবিরত।
বলে হায় একি মোর ঘটিল প্রমাদ।।
শুনিছে আপদ নাশে ভবানী চরণ।
সকল বিপদ হন্তা শ্রীমধুসুদন।।
রক্ষা কর দয়াময় এ ঘোর সঙ্কটে।
ভূপতির ক্রোধ দেখে মম হৃদি ফাটে।।

বিদেশ এসেছি আমি নাহি জানি হাল।
এ দু:খ কহিব আর কাহারে বল।।
এইরূপে বিপ্রবর কারাগারে কান্দে।
শুনিলে ফাটে হৃদয় কিবা কব ছন্দে।।
অত:পর শুন সবে হয়ে একমন।
দশদণ্ড বেলা পূর্ণ হইল যখন।।
পুত্র শোকে নৃপবর আছেন কাতর।
হেনকালে দুই পুত্র আইল সত্বর।
চরণে প্রণাম করি পড়ে লুটাইয়া।
পিতা-মাতা বলি ডাকে ব্যাকুল হইয়া।।
রাজা বলে কোথা ছিলে অন্ধের নয়ন।
বুঝিতে না পারি আমি তাহার কারণ।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!