শ্রীবৎসরাজার উপাখ্যান:
সেখানে রাজা হল শ্রীবৎস ভূপতি।
সর্বগুণে গুণাকর সদা ধর্মে মতি।।
তাঁহার সভায় দ্বিজ হইল উপনীত।
অভ্যর্থনা করে রাজা হইয়ে হরষিত।।
কোথায় নিবাস বলি কহে নরপতি।
কোন বংশজাত হও বল হে সম্প্রতি।।
শুনিয়া দ্বিজের পুত্র কহে সমাচার।
হরিদাস নাম ধরি সাধু ব্যবহার।।
অতি দীন-দু:খী আমি নাহি পিতামাতা।
স্বদেশে বিদেশে থাকি যাই যথা তথা।।
বাতুলের প্রায় আমি ভ্রমি দেশে দেশে।।
জীবন ধারণ করি অতি-কায়-ক্লেশে।।
শ্রীবৎস বলেন দ্বিজ চিন্তা পরিহর।
আমার আলয় থাকি মোরে কৃপা কর।।
শাস্ত্রেতে নিপুণ তুমি বুঝি অনুমানে।
আমারে করহ তুষ্ট বাক্যের সন্ধানে।।
আমার আছয়ে দুই যুগল নন্দন।
তব স্থানে পড়াইব এই আকিঞ্চন।।
কোন কষ্ট নাহি তার সদা সুখে রয়।
রাজপণ্ডিত বলি লোক হইল পরিচয়।।
মিষ্টভাষী সদা করে মিষ্ট আলাপন।
নৃপতির পুত্রদ্বয় করে অধ্যয়ন।।
এইরূপে কিছুদিন হইল বিগত।
বালকের বেশে শনি হইল উপনীত।
হরিদাস নিকটেতে দিল দরশন।
পড়য়ার মত শনি চিনে কোন জন।।
চিনিতে নারিল দ্বিজ শনির ছলনা।
শনির রূপেতে মন হইল মগনা।।
জিজ্ঞাসিল দ্বিজবর কহ বাছাধন।
কোন কার্য হেতু তব হইল আগমন।।
শনি বলে মহাশয় কর অবধান।
পড়িতে আইনু আমি তোমা বিদ্যমান।।
বিপ্র বলে যথাসুখে কর বেদাভ্যাস।
যত্নে সহিত তোমার পড়ার বিশেষ।।
শুনিয়া বিপ্রের বাক্যে সন্তুষ্ট হইল।
তাহার নিকটে মনি পড়িতে লাগিল।।
ব্যাকরণ-স্মৃতি-কাব্য সাংখ্যদরশন।
অল্পদিন মধ্যে সব কৈল অধ্যয়ন।।
সমস্ত বিদ্যায় নিপুণ হইল শনি।
বিপ্রবর পরিচয় চাহিল তখনি।।
শনি বলে কিবা দিব নিজ পরিচয়।
শনৈশ্চর নাম মম সূর্যের তনয়।।
শুনিয়া তাঁহার বাক্য বিপ্রবর কয়।
বড় সৌভাগ্য আমার শুনি পরিচয়।।
গ্রহের প্রধান তুমি মান্য দেবতার।
আমাকে করিলে কৃপা কি কহিব আর।।
যদি হে প্রসন্ন দেব হলে আমাপরে।
কিসে কষ্ট দূর মম হইবারে পারে।
তাহার সন্ধান কথা কহ দেখি শুনি।
ব্যথায় ব্যথিত বড় আকুল পরাণি।।
আমার রাশিতে আছে তোমার কটাক্ষ।
কিসে যাবে বল দেখি হইয়া স্বপক্ষ।।
শনি বলে, বলি তবে শুন মহাশয়।।
মম ভোগ দশ বর্ষকাল মাত্র রয়।।
আর অবশিষ্ট ভোগ দশ মাস আছে।
দশদণ্ড যাবে না আসিবে পাছে।
সেই দশদণ্ড তুমি পাবে অতিকষ্ট।
পশ্চাতে যাইবে ক্লেশ ঘুচিবে অরিষ্ট।
সপ্তম দিবসে গিয়ে ভাগীরথী তীরে।
একমনে এক ধ্যানে ভজ মুরারিরে।।
মম কোপ হতে পারে অবশ্যই মুক্তি।
কহিলাম সত্য আমি এই স্থির যুক্তি।
এতবুলি শনিদেব হল অন্তর্দ্ধান।
আর না দেখিতে পায় বিপ্রের সন্তান।।
শনি আজ্ঞা মত পরে গিয়ে গঙ্গাতীরে।
একমনে নারায়ণে বসে ভজিবারে।।
দশদণ্ড পূর্ণ হইল হেন জ্ঞান করি।
উঠিয়া দাঁড়ায় বলি শ্রীহরি শ্রীহরি।
দশদণ্ড পূর্ণ দেখিল যখন।
নয়ন মুদিয়া পুন:ভজে নারায়ণ।।
সূর্য-পুত্র মনে মনে কোপাবিষ্ট হইল।
নারায়ণে সাক্ষী করি তখনি বলিল।
আপনার দোষে কষ্ট পাইবে ব্রাহ্মণ।
মম কিবা দোষ ইথে দৈবের ঘটন।
আমি যা কৈনু তার কৈল বিপরীত।
বুঝে পরে শান্তি দিব যে হয় বিহিত।।
যে দুই রাজার পুত্রে পড়াইত দ্বিজে।
মায়াকরি দুই পুত্র হরিনিল নিজে।।
নিজমায়া মন্ত্রে দুই শিশুমুণ্ড গড়ি।
হেথায় শ্রীবৎস রাজা শয়নেতে ছিল।
পুত্র অমঙ্গল যত স্বপনে দেখিল।।
স্বপন দেখিয়া রাজা শমব্যস্ত হইয়ে।
বিপ্রের নিকটে দ্রুত চলিলেক ধেয়ে।।
দেখিয়া বিপ্রের কোলে পুত্র মুণ্ডদ্বয়।
হাহাকার করি রাজা ভুতলে গড়ায়।।
সেবক কহিছে রাজা কেন হও ভ্রান্ত।
অচিরে পাইবে পুত্র না জান বৃত্তান্ত।।