ভবঘুরেকথা

শ্রী শ্রী হরিচাঁদের কৃষ্ণরূপ ধারণ
পয়ার

শ্রীকমল দাস নাম বৈরাগী ঠাকুর।
পরম বৈষ্ণব তিনি ভক্তি সে প্রচুর।।
ভক্তিভাবে করিতেন শ্রীকৃষ্ণ ভজন।
বৃন্দাবনে যাবে বলে করিল গমন।।
রাস পূর্ণিমার অগ্রে যাত্রা যে করিল।
যাত্রী নাহি সঙ্গে নিল একেলা চলিল।।
বিশুদ্ধ বৈষ্ণব সাধু তনু প্রেমে মাখা।
সর্বদাই হৃদিমাঝে ভাবে ভঙ্গি বাঁকা।।
রাধারাণী কর দয়া মোরে এইবার।
ব্রজে গিয়ে দেখি যেন শ্যাম নটবর।।
জয় রাধে বলরে মন জয় রাধে বল।
অন্য বোল মুখে নাই শুধু এই বোল।।
সে কমল পীতবাসে ভাবিতে ভাবিতে।
বৃন্দাবনে যাত্রা করে মনের সুখেতে।।
এ সময় হরিচাঁদ সফলাডাঙ্গায়।
ধান্য কাটিবারে হরি মাঠ মধ্যে যায়।।
যে জমিতে হরিচাঁদ ধান্য বুনেছিল।
কৃষাণ লইয়া হরি সে জমিতে গেল।।
বিশ্বনাথ নাটু আর ব্রজকে লইয়া।
সেই ধান্য কাটিলেন প্রভু মাঠে গিয়া।।
ধান্য কাটে আটি বাঁধে মনের হরিষে।
কেহ কাটে কেহ বাঁধে কেহ আছে বসে।।
এই মত কৃষাণেরা কর্ম করিতেছে।
আইল উপরে হরি দাঁড়াইয়া আছে।।
পূর্বমুখ হ’য়ে হরি আছে দাঁড়াইয়া।
আসিল কমল দাস সেই পথ দিয়া।।
প্রভুর নিকটে যবে আসিল বৈরাগী।
শ্রীহরির রূপ দেখি হইল অনুরাগী।।
প্রভুপানে চেয়ে থাকে কমল তখন।
অপরূপ রূপ তিনি করেন দরশন।।
পরিধান পীতবাস যেন কাল শশী।
ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিমা বাঁকা হাতে আছে বাঁশী।।
বনমালা গলে দোলে বক্ষদেশ ঢাকা।
চরণে চরণ দিয়ে হ’য়ে আছে বাঁকা।।
মস্তকেতে শিখি পাখা শ্রীপদে নুপুর।
এইমত রূপে আছে শ্রীহরি ঠাকুর।।
দাঁড়াইয়া আছে হরি আইল উপরে।
সে কমল সাক্ষাতে এইরূপ হেরে।।
হইল কমল দাস জ্ঞানশূন্য প্রায়।
বাহ্য স্মৃতি হারাইয়া অনিমেষে রয়।।
দণ্ডবৎ হ’য়ে শেষে পদধূলা নিল।
পদরজ সে বৈরাগী মস্তকে মাখিল।।
মস্তকেতে নিল আর অঙ্গেতে মাখিল।
যোড়হস্তে কেন্দে কেন্দে বলিতে লাগিল।।
শ্রীহরি বলিল তুমি কহ মহাশয়।
কিবা হেতু কোথা যাবে দেও পরিচয়।।
কমল বলিল মোর কালামৃধা বাস।
বৃন্দাবনে যাব আমি মনে অভিলাষ।।
হরিচাঁদ তারে বলে যাও তবে তুমি।
কমল বলিল আর নাহি যাব আমি।।
প্রভু বলে যাইতেছ তুমি বৃন্দাবন।
এবে তুমি নাহি যাবে বল কি কারণ।।
সে বলিল নাহি যাব আর বৃন্দাবন।
বৃন্দাবনচন্দ্র আমি করিনু দর্শন।।
বৃন্দাবনে যাব আমি যাহার লাগিয়া।
সেই কৃষ্ণ দেখি আমি নয়ন ভরিয়া।।
কমলের অশ্রুজলে বক্ষ যে ভাসিল।
করযোড়ে দাঁড়াইয়া স্তব আরম্ভিল।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!