সমুদ্রে শ্রীমন্ত চলে চিন্তি দুর্গানাম।
দিবানিশি তরী বহি চলে অবিরাম।।
কালিদহে দেখে এক দৃশ্য চমৎকার
কমল বনেতে হ’ল উদয় মাতার।।
গজ গিলে ও উগরে নিমেষের মাঝে।
শ্রীমন্ত বুঝিল বিপত্তারিণী বিরাজে।।
মাতৃ দরশনে তার বুকে এল জল।
মনের উৎসাহে ডাকে মা মা অবিরল।।
মগরার মোহনায় অতি ঝড় বৃষ্টি।
শ্রীমন্ত ভাবিল বুঝি উলটাইবে সৃষ্টি।।
মায়ের মহাত্ম্য কেবা বর্ণিবার পারে।
আপনি আসিল চণ্ডী তাকে রক্ষিবারে।।
অবশেষে তরী এল সিংহলের ঘাটে।
শ্রীমন্ত বারতা দিল রাজার নিকটে।।
পরিচয় জিজ্ঞাসিল সিংহল ভূপতি।
কি নাম তোমার হয় কোথায় বসতি।।
শ্রীমন্ত করিল তার উদ্দেশ্য বর্ণনা।
বাণিজ্যের তরে সিংহলেতে আগমন।।
কাল বনেতে পূর্বে যেরূপ দেখিল।
রাজার নিকটে তারা বর্ণনা করিল।।
শুনি রাজা বলে মোর লাগে চমৎকার।
যদি তা দেখতে পার পাবে পুরস্কার।
অর্দ্ধেক সাম্রাজ্য মোর সুনিশ্চিত দিব।
অত:পর তোমা আমি জামাতা করিব।।
রূপে গুণে মম কন্যা যেন দেবী সম।
তোমা করে দিব তারে এ প্রতিজ্ঞা মম।।
যদ্যপি তোমার বাক্য সত্য নাহি হয়।
জহলাদের করে তব মরণ নিশ্চয়।।
শ্রীমন্ত কহিল রাজা মিথ্যা না কহিব।
যাহা দেখিয়াছি আমি নিশ্চয় দেখাব।।
আনন্দিত হয়ে রাজা শ্রীমন্তেরে লয়ে।
উপনীত হইলেন কালীদহ জলে।।
কালীদহে রাজা কিছু না দেখিতে পেয়।
ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে জহলাদে ডাকয়ে।।
জহলাদেরে আজ্ঞা দিল শ্রীমন্তেরে বধিতে।
শ্রীমন্ত দুর্গারে স্মরে কাঁপিতে কাঁপিতে।।
বিপত্তারিণী নাম মনেতে জপিল।
একমনে করজোড়ে মায়েরে জপিল।
একমনে করজোড়ে মায়েরে ডাকিল।।
দুর্গারে স্মরণ করে চক্ষের জল বহে।
কেন মাগো দেখা দিলে নিজে কালিদহে।।
বিপত্তারিণী মাগো কেন গো নির্দয়।
দেখ মোরে আজি হল জীবন সংশয়।।
কোথা আছ দেখা দাও রক্ষ মোর প্রাণ।
তুমি বিনা কে করিবে সঙ্কটেতে ত্রাণ।।
তোমার করতে মাতা অর্পিল আমায়।
দয়াময়ী মাতৃনাম কলঙ্ক না হয়।।
শ্রীমন্ত আহবানে দেবী চঞ্চল হইল।
অষ্টাদশ ভুজা হয়ে মশাণে আসিল।।
শ্রীমন্তে কহিল ত্রাণ বিপদ নাশিনী।
ধন্য মাগো দয়াময়ী ভক্তের জননী।।
সার্থক করিলে নাম মশানেতে এসে।
শ্রীমন্ত গোষিল তাহা ফিরে নিজ দেশে।।