ভবঘুরেকথা

ভেকের মুক্তি
শ্রীহরি স্মরিয়া আমি, গুরুচাঁদ পদে নমি
(লাইন জ্ঞাপ)
তারকের চরিত্র সুধা, মিটাইতে ভব ক্ষুধা
আশীর্বাদ কর ভক্তগণ।।
হরিভক্ত যত জন, বন্দি সবার চরণ
শ্রীচরণে করি নিবেদন।
হরিভক্ত কৃপাকরে, বসিয়া মস্তক ‘পরে
সঙ্গে থেকে করিও লিখন।
যশোহর জেলা পরে, নবগঙ্গা নদী তীরে
লক্ষ্মীপাশা গ্রামখানি ছিল।
লক্ষ্মীপাশা কালি বাড়ী, নাম ছিল দেশ জুড়ি
সে কারণে বিখ্যাত হইল।।
সেই গ্রামে একজন, পুকুর করে খনন
কুয়াতিরা মাটি কাটিতেছে।।
ছয় হাত মাটি তলে, দেখিতে পায় সকলে
ফোস ফোস শব্দ হইতেছে।
কিছু মাটি ফেলে দিল, সকলে দেখিতে পেল
শোয়া হাত পরিমাণ হবে।
বড় এক ভেক দেখি, সকলে ভাবিল একি
মনে মনে সকলেতে ভাবে।।
গায় দেখে চেট ভরা, বুঝিতে না পারে তারা
এত বলি ডাকিল সকলে।
জ্ঞানীগুণী ছিল যারা, আসিয়া দেখিল তারা
যে যেমন বোঝে তাই বলে।।
এক জন ডেকে কহে, এত কভু ভেক নহে
এত বড় ভেক কভু হয়।
অন্য প্রাণী হবে ভাই, মোর মনে জাগে তাই
ভাল করে দেখরে সবায়।।
একজন ডেকে কয়, ভেক ছাড়া কিছু নয়
সব কিছু ভেকের আকৃতি।
বহুদিন পড়ে রয়, তাই এত বড় হয়
না বুঝিয়া কহ যে অযুক্তি।।
এই ভাবে কত জন, করে সথো আগমন
ব্রাহ্মণ পণ্ডিত এল কত।
কহিলেন কত কথা, যুক্তিতে আসিল না তা।
কহে যত যার যার মত।।
সেই খানে ছিল যারা, সবে হল দিশেহারা
সুরেন্দ্র নামেতে একজন।
সে কহিল সকলেরে, এই কথা কহিবারে
পারে মাত্র তারক সুজন।।
এই কথা শুনি কানে, কহিল পণ্ডিতগণে
হেসে হেসে কহিল তখনে।
আদ্য মধ্য আছে কত, সবে হল থতমত
তারক সে পারিবে কেমনে।।
কাড়ার যাজির ছেলে, কবি গায় তাই বলে
হেন তত্ব ক্যামনে কহিবে।
শুনিয়ে সে ঘটনা, কোন মতে আসিবেনা
পার যদি আন গিয়ে সবে।।
একজন তথা গিয়ে, তারকেররে প্রণমিয়ে
কহিল সকল সমাচার।
শুনিয়া তারক তাই, কেমনে আমি যাই
আমি হই জাতিতে কাড়ার।।
মোর বিদ্যা বুদ্ধি নাই, সেথা পণ্ডিত সবাই
আমি হই ক্ষুদ্র একজন।
আমি সেথা নাহি যাব, কেন অপমান হব
বল গিয়ে আমার বচন।।
তাই শুনে চলে গেল, সব গিয়ে নিবেদিল
কহিল সে তারক গোঁসাই।
বড় বড় পণ্ডিতেরা, সেখানে রয়েছে তারা
বলিলেন পণ্ডিত সবাই।
তাই শুনে পণ্ডিতেরা, হাসিতে লাগিল তারা
হাসিয়া কহিল একজন।
আমাদের আছে জানা, সে কখন আসিবে না
তার দ্বারা হবে না কখন।।
সুরেন্দ্র শুনিয়ে তাই, কহিলেন আমি যাই
কেন আসিবে না সেই জন।
চলিলেন ধীরে ধীরে, গিয়ে সেই জয়পুরে
তারকের করিল বন্দন।
কহিলেন বিনয়েতে, চল বাবা মোর সাথে
চল তুমি লক্ষ্মীপাশা গায়।
তুমি যদি নাহি যোবে, এ জীবনে কিবা হবে
এ জীবন ত্যাজিব নিশ্চয়।।
হেন কথা শুনি কানে, কি যেন ভাবিয়া মনে
সুরেন্দ্রের সঙ্গেতে চলিল।
ঘটনার স্থলে গিয়ে, ভেকেরে দেখিল চেয়ে
সভা মধ্যে দাড়ায় কহিল।।
শুন শুন সভাজন, করি আমি নিবেদন
আমি হই কড়ারের ছেলে।
হরিচাঁদ পদ ভাবি, হৃদয়ে আঁকিয়া ছবি
এই তত্ত্ব আমি যাই বলে।।
কর্ম ফলে কত লোক, পায় তারা দিব্য লোক
কর্ম ফলে হয় রাজরাণী।
কর্ম ফলে রাজ্য হারা, অন্ধ খঞ্জ সবে তারা
কর্ম ফলে হয় ধনীমানী।।
মানব জনম ধরি, কেহ করে গুরুগিরি
কেহ কেহ শিষ্য হয়ে রয়।
পূর্ব জম্মে ভেক ছিল, গুরুগিরি করে ভাল
ব্রাহ্মণের ছেলে সেই হয়।।
বহু শিষ্য ছিল তার, করে গুরু ব্যাভিচার
ব্যাভিচারে মত্ত হয়েছিল।
নৌকা পথে চলে তারা, ডুবিল পাপের ভরা
কর্ম ফলে ভেক রূপী হল।।
চেট হল শিষ্য যারা, চেয়ে দেখ গায় ভরা
কর্ম ফল ফলিয়াছে ভাল।
তাই শুনে সেই ভেকে, ঠিক ঠিক ওঠে ডেকে
আখি জলে ভাসিতে লাগিল।।
ভেক ভাসে আখি জলে, তাই দেখি কেন্দে বলে
পেয়ারী নামেতে যেই ছিল।
শুনিতে বাসনা আজ, কহ তুমি রসরাজ
কিসে ভেক মুক্তি পাবে বল।।
শুনিয়া তারক কয়, হরি বলি রসনায়
শুন তাই কিসে মুক্তি পাবে।
হরিভক্ত দরশনে, হরি ভক্ত পরশনে
সর্বপাপ মুক্ত হয়ে যাবে।।
হেন কথা শুনে কানে, ভেক ভাবি মনে মনে
লাফ দিয়ে চরণে পড়িল।
তারকের পড়ি পায়, প্রাণ পাখি উড়ে যায়
চেটগণ পরাণ তেজিল।।
হেন দৃশ্য চোখে হেরি, সবে যায় গড়াগড়ি
তারকেরে চরণে লুটায়।
ধনীমানী ছিল যারা, সবে হয়ে আত্মহারা
নয়নের জলে ভেসে যায়।।
ভক্তি রসে মাতোয়ারা, নয়নে বহিছে ধারা
তারকের করে জয়গান।
ভেকেরে ধরিয়া তুলে, ফেলে দিল গঙ্গা জলে
সাঙ্গ ভেক মুক্তির আখ্যান।।
হরি ভক্ত যারা যারা, প্রেম রসে মাতোয়ারা
পরশনে সর্বপাপ ক্ষয়।
কান্দিযা বিনোদ বলে, এ জনম গেল চলে
অধমের কি হবে উপায়।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!