দ্বিজের ভবনে গিয়, হরষিত কাঠুরিয়া,
প্রণাম করিল সপ্তবার।
শুনিয়া মঙ্গলধ্বনি, পরম আনন্দ গণি,
অধিষ্ঠান আসন উপর।।
ভক্তিভাবে কহে বাণী,
শুন ওহে দ্বিজমণি,
কোন দেবে করহ পূজন।
বুঝিয়া তাহার মতি,
বলে দ্বিজ কাশীপতি,
করি পূজা সত্যনারায়ণ।।
শুনিয়া দ্বিজের কথা,
ঘুচিল মনের ব্যথা,
কামনা করিল যে যাহারা
ভক্তিভাবে করি স্তুতি,
তুষ্ট হয়ে লক্ষ্মীপতি,
দু:খ সিন্ধু হইতে কর পার।
সভার ভাজন হইয়া,
রহিলেক কাঠুরিয়া,
পাইয়া যে কুবের ভাণ্ডার।।
প্রাণমিয়া সত্য দেবে,
যে জন তোমারে সেবে,
তুমি তারে কর পরিত্রাণ।
হইয়া যে একচিত্ত রচয়ে তোমার কৃত্য,
তারে তুমি কর জ্ঞানবান।।
কাঠুরিয়া উপাখ্যান রহিল এক্ষণ।
সদাগরের উপাখ্যান করি নিবেদন।।
উজানী নগরে সাধু নাম ধনপতি।
বাণিজ্য করিয়া দেশে চলে শীঘ্রগতি।।
নব-ডিঙ্গা পরিপূর্ণ অতি মনোহর।
যমুনা পুলিনে দেখে গোকুল নগর।।
গোকুল নগরের কথা কি কহিব আর।
করিল তথায় কেলি নন্দের কুমার।।
দেখিয়া অপূর্ব ঘাট লাগায় তরণী।
অকস্মাৎ দ্বিজ গৃহে শুনি জয়ধ্বনি।।
হরি হরি বলে সবে আনন্দিত মন।
শুনিয়া বিস্মিত হইল সাধুর নন্দন।
জিজ্ঞাসিল সদাগর করিয়া বিনয়।
কি কারণে হরিধ্বনি দ্বিজের আলয়।।
সবে বলে সদাগর স্থির কর মতি।
গোকুলে সত্যের সেবা করে কাশীপতি।
সত্যনারাণ প্রভু অশেষ মহিমা।
কহিতে না পারে বেদে শাস্ত্রে নাহি সীমা।।
অপুত্রের পুত্র হয় নির্ধনের ধন।
সেই পূজা করে অদ্য দ্বিজের নন্দন।।
শুনিয়া লোকের কথা হৃষ্ট সদাগর।
উপস্থিত হইল আসি দ্বিজের নগর।।
ভক্তিভাবে সদাগর কলিল প্রণতি।
সত্যনারাণ প্রতি আমার মিনতি।।
সাধু বলে নিবেদন করি বিদ্যমান।
অপুত্রক আছি আমি হউক সন্তান।
করিব সত্যের সেবা বিবিধ বিধানে।
এই মনোরথ করি সভা বিদ্যমানে।।
কামনা করিয়া সাধু উঠিল সত্বর।
উপস্থিত হইল আসি ডিঙ্গার উপর।।
দিবারাত্রি বাহ্ তরী আনন্দিত মন।
উপস্থিত সদাগর আপন ভবন।।
বিমলা সাধুর নারী পরমা সুন্দরী।
আনন্দে তাঁহার সঙ্গে বঞ্চে বিভাবরী।।
এইরূপে আছে সাধু আপনার পুরী
জন্মিল সাধুর কন্যা পরমা সুন্দরী।।
গঙ্গানারায়ণ দ্বিজ পরম আনন্দে।
সংক্ষেপে পাঁচালী রচে পয়ার প্রবন্ধে।।
দেখিয়া কন্যা বড়ই ধন্যা অনুপম রূপবতী।
হেরিয়অ বদন করিছে রোদন কত কত নিশাপতি।।
সাধু মনে গণি বিমলাকে আনি কহিলেন হৃষ্টমতি।
সকলে কহিয়া রাখিত বাছিয়অ নাম তার প্রভাবতী।।
দিনে দিনে বাড়ে কোকিলার স্বরে কহে মনোহর কথা।
হইয়া সন্তুষ্ট করিলেন দৃষ্ট অনিরুদ্ধের পিতা।
জিনিয়া কুঞ্জরী রূপের মাধুরী উরু জিনি রামকলা।
সুচারু চামর জিনিয়া চিকুর হইয়াছে সাধুর বালা।।
জিনিয়া মেদিনী চারু নিতাম্বিনী ভ্রূর ভঙ্গি তার অতি।
কুরঙ্গিনী সমা আঁখির ভঙ্গিমা ভুবনমোহিনী রতী।।
নিরখিয়া মধ্য অতি লজ্জা সদ্য, পেয়েছে কেশরী বর।
দুটি বাহু দেখি, করি মনোদুখী, নিন্দিছে নিজ কর।।
পয়োজ-কোরক বর, মণিময় হার শোভা।
হেন মকরন্দ, পাইয়া সুগন্ধ, মধুকর বর লোভা।।