ভবঘুরেকথা

মতির ঘটনা
সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় অশ্বিনী সুজন।
হরিনাম করিবারে ঝরে দু’নয়ন।।
হরিচাঁদ গুণগান রচনা করিয়া।
ভক্তগন মাছে তাহা বেড়ায গাহিয়া।।
নিজের রচনা পদ নিজে সুরকার।
শুনিয়া সবার চোখে বহে প্রেমধার।।
মতি নামে একজন দারখালী বাড়ী।
অশ্বিনীর সঙ্গে ঘোরে বলে হরি হরি।।
কন্ঠস্বর ছিল তার অতি মধুময়।
গান শুনে সব লোকে মানিতে বিস্ময়।।
সে অশ্বিনী যত গান রচনা করিল।
সব গান সেই মতি গাহিয়া চলিল।।
অশ্বিনীর ভালবাসা সে মতি পাইয়া।
অশ্বিনীর সাথে সাথে বেড়ায় ঘুরিয়া।।
অশ্বিনীর এক মেয়ে বিমলা নামেতে।
চেহারায় কৃষ্ণা বর্ণা নিয়ম দেখিতে।।
একদিন বলিলেন অশ্বিনী গোঁসাই।
শুন শুন শুন মতি তোমাকে জানাই।।
মোর মনে এক ইচ্ছা জাগে সর্বক্ষণ।
তুমি মোর সেই ইচ্ছা করহে পূরণ।।
তুমি মোর বিমলাকে বিবাহ করিবে।
আমার মনের বাঞ্ছা তবে পূর্ণ হবে।।
এই কথা শুনি মতি মনে মনে কয়।
কাল মেয়ে বলে তার ইচ্ছা নাহি হয়।।
প্রকাশ্যে বলেছে তাই অশ্বিনীর ঠাই।
আমার মনের কথা তোমাকে জানাই।।
বিবাহ করিতে মোর হয়নি সময়।
অন্য পাত্রে কন্যা দান কর মহাশয়।।
অশ্বিনী বলেছে মতি কি কথা বলিলে।
কাল মেয়ে বলে তুমি অবজ্ঞা করিলে।।
শুন বলি ওগো মতি, বলি যে তোমায়।
বিবাহ করিতে তব হবে না সময়।।
এই কথা যখনেতে অশ্বিনী বলিল।
মনে মনে সেই মতি ভাবিতে লাগিল।।
আমার মনের কথা জানিতে পারিয়া।
অভিশাপ দিল মোরে কি যেন ভাবিয়া।।
তারপর সেই মতি গৃহেতে চলিল।
এইভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।।
অশ্বিনীর লীলা সাঙ্গ যখনে হইল।
তারপর সেই মতি মেয়ে দেখে এল।
দিন ধার্য্য সব কিছু ঠিক হয়ে গেল।।
বিবাহের দিন মাত্র একদিন আছে।
সর্পঘাতে সে মেয়ের মরণ হয়েছে।।
তারপর কিছুদিন গত হয়ে যায়।
বিবাহ করিতে তার জাগিল হৃদয়।।
অনেক দেখিল মেয়ে বিবাহ না হয়।
যেইখানে যায় তথা বাধা পেয়ে যায়।।
একবার কালশিরা গ্রামেতে চলিল।
মেয়ে দেখে বিবাহের দিন ঠিক হল।।
বিবাহ করিতে যাবে এমন সময়।
কলেরায় সে মতি হল মৃত্যুপ্রায়।।
এইভাবে সে মতির বিয়া না হইল।
বিবাহের আশা মতি শেষ ছেড়ে দিল।।
অশ্বিনীর কথা যেই মনেতে পড়িত।
নির্জনে বসিয়া মতি তখনে কাঁদিত।।
অশ্বিনীর ছবিখানি হৃদয় ধরিয়া।
উদাসীন সেই মতি বেড়াত ঘুরিয়া।।
অধম বিনোদ বলে বেলা বেশি নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!