ভবঘুরেকথা

স্বামীর শালনগর গমন।
পয়ার

হাসে গায় নাচে কাঁদে মতুয়ার দল।
কুন্দসী গ্রামেতে এসে উঠিল সকলে।।
শ্রীঅদ্বৈত দীননাথ কালাচাঁদ পাল।
তিন বাড়ী পরিপূর্ণ মতুয়ার দল।।
কতকাংশ চলে গেল জয়পুর গ্রাম।
তারকের বাড়ী ঘিরে করে হরিনাম।।
কুন্দসীর তিন বাড়ী জুড়িয়া বসিল।
মাধ্যাহ্নিক স্নানাদি ভোজন সমাধিল।।
ভোজনের পরে দিয়া হরি হরি ভীড়।
আচমন করি সবে হইল বাহির।।
নাচিতে গাইতে সবে প্রেমেতে বিভোর।
উপনীত হ’ল পালপাড়া শালনগর।।
নামেতে মাতিয়া সবে বাহ্যজ্ঞান হারা।
বৈবর্ণ পূলক স্বেদ চক্ষে অশ্রুধারা।।
দিঘলিয়াবাসী মধুসূদন ঠাকুর।
চক্রবর্তী উপাধি ভজনে সুচতুর।।
তার এক পুত্র মাত্র অক্ষয় নামেতে।
ব্রহ্মত্ব ত্যজিয়া মিশিলেন অই মতে।।
ছিণ্ডিয়া গলার পৈতা দেন পরিচয়।
মতুয়া হ’য়েছি ওঢ়াকাঁদি সম্প্রদায়।।
শ্রীগুরু তারক চন্দ্র জননী সাধনা।
ওঢ়াকাঁদি হরিচাঁদে করি আরাধনা।।
প্রেমদাতা মহানন্দ চিদানন্দময়।
জয় ওঢ়াকাঁদি জয় ওঢ়াকাঁদি জয়।।
হরিবোলা সঙ্গে তিনি পালপাড়া গিয়া।
নামে প্রেমে কীর্তনেতে গেলেন মাতিয়া।।
কীর্তনের মাঝে গিয়া মনের আনন্দে।
মহানন্দ পাগলকে করিলেন স্কন্ধে।।
মহানন্দ অক্ষয়ের স্কন্ধেতে বসিয়া।
অস্থি সন্ধি কল যেন দিলেন ছাড়িয়া।।
এ রঙ্গ দেখিয়া প্রেমে উন্মত্ত সকল।
সবাকার মুখে মাত্র সুধা হরিবোল।।
ক্ষণ পরে সবে করে ঠাকুরকে স্কন্ধে।
বাহ্যহারা কে কারে কি করে প্রেমানন্দে।।
ব্রাহ্মণ কায়স্থ কুণ্ডু পাল ঝালো মালো।
নমঃশূদ্র সাহা সাধু একত্র হইল।।
মাতিয়া কীর্তনানন্দে প্রায় নিশি শেষ।
পাগলচাঁদের হ’ল অদ্বৈত আবেশ।।
কহিছেন তোরা আলি সে আমার কই।
যারে নেড়ে এনে আমি নাড়া নাম লই।।
যার জন্য করিলাম সাধ্য এতদূর।
অসাধ্য সাধন করি ব’সে শান্তিপুর।।
যার জন্য ফুল তুলসী ধাইল উজান।
কইরে আমার সেই পরাণের পরাণ।।
অক্ষয় ঠাকুর কহে শোন ওরে নাড়া।
ওঢ়াকাঁদি আসিয়েছে তোর সেই গোরা।।
তার দুই পুত্র গুরুচাঁদ উমাকান্ত।
তার প্রাণপুতলী করিছে লীলা অন্ত।।
দেহ ছেড়ে করেছেন গোলোকে গমন।
জ্যেষ্ঠ পুত্র গুরুচাঁদ জগত জীবন।।
তোর হরিচাঁদ গুরুচাঁদে মিশিয়াছে।
মানুষে মানুষ মেশা বর্তমানে আছে।।
বলিতে বলিতে কয় মুই শ্রীচৈতন্য।
অধরোষ্ঠ চক্ষুদ্বয় হ’ল রক্তবর্ণ।।
রোমকূপে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুণ্ডু উথলিল।
কণ্টক আকার কেশ লোম উর্দ্ধ হ’ল।।
দু’জনার মোহ প্রাপ্ত জ্ঞান নাহি আর।
মতুয়া সকলে হরি বলে অনিবার।।
দশা ভঙ্গ হ’ল প্রায় নিশি অবসানে।
করিল কীর্তন ক্ষান্ত সবে সুস্থ মনে।।
ভোজন হইল সব ভোরের সময়।
আচমন সময়েতে অরুণ উদয়।।
আরবার মাতিলেন নাম সংকীর্তনে।
গাইতে গাইতে সবে চলিলেন স্নানে।।
মধুমতী ভরট গোগের ঘাটে গিয়া।
জলকেলী করে সবে আনন্দে মাতিয়া।।
হরি হরি হরি বলি করে জলকেলী।
প্রেমাবেশে করে সবে জল ফেলাফেলী।।
জলকেলী করি শেষে ভিজা বসনেতে।
আসিলেন তারাচাঁদ পালের বাটীতে।।
দধি খদি চিঁড়া চিনি জল ফলাহার।
ফুল মহোৎসব সবে করে বার বার।।
শালনগরের মহোৎসবে এই লীলা।
গোলোক পুলক হেতু রায় বিরচিলা।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!