হীরামনের দেশাগমনে সকলের শ্রীহরির প্রতি ঐশিভাব প্রকাশ
ও হীরামনের পুত্রের জন্ম ও মৃত্যু।
পয়ার
হীরামন দরশনে শ্রীচৈতন্য বালা।
কহে হরি ঠাকুরের কি আশ্চর্য লীলা।।
এ কভু সামান্য নহে পুরুষ প্রধান।
এখনে আমার যে হ’তেছে ব্রহ্মজ্ঞান।।
নলিয়া জামালপুরে হয়েছিল বার।
সেই হরি ওঢ়াকাঁদী হ’ল অবতার।।
নলিয়া, যখন বার হইল বিখ্যাত।
মুখের কথায় কত ব্যাধি সেরে যেত।।
তদধিক রূপে এই হরি বর্তমান।
মরা গরু বাঁচে মরা দেহে পায় প্রাণ।।
ইতিপূর্বে বার হ’ল সফলাডাঙ্গায়।
সফলাডাঙ্গার বার হরিচাঁদ পায়।।
হরি এসে হরিচাঁদে আবির্ভূত হ’ল।
মরা হীরামনে হরি তাই সে বাঁচাল।।
নলিয়া যে বার মোর মনে হেন লয়।
সেই বার এসেছিল সফলাডাঙ্গায়।।
তারপর সেই বার হরিচাঁদ পায়।
বেশী দিন থাকে হেন বিশ্বাস না হয়।।
মৃদুভাষে হেসে হেসে হীরামন বলে।
চিনেও চিনিতে নারে দূরদৃষ্টি হ’লে।।
দেশে এসে হীরামন গৃহকর্ম করে।
এক ছেলে হ’ল তার কিছুদিন পরে।।
প্রভু আজ্ঞা নারী ঋণ শোধ হ’লে পরে।
ত্যাজিয়া সকল কার্য হরিনাম করে।।
সবে বলে এ কেন বাঁচিয়া এল দেশে।
মরিলেই ভাল হ’ত এই সর্বনেশে।।
দিবসেতে ঘরে থাকে দ্বার বন্ধ করি।
ঝুঁকি ঝুঁকি গায় গুণ বলে হরি হরি।।
নিশাভাগে থাকে যোগে গিয়া সে শ্মশানে।
কখনে কি করে তাহা কেহ নাহি জানে।।
হিরার রমণী যত মেয়েদিকে কয়।
তোমরা না জান উনি রাত্রে কোথা রয়।।
কোথা যায় নিশিতে না থাকে মোর কাছে।
কার সঙ্গে যেন ওর গুপ্ত প্রেম আছে।।
সব নারী বলে হীরামনের নারীকে।
তুই কেন দেখিস না কোথা গিয়া থাকে।।
যখন উঠিয়া যায় টের যদি পাস।
অলক্ষিতে তুই ওর সাথে সাথে যা’স।।
তাই শুনি সেই ধনি জাগরীতা রয়।
যখনে সে হীরামন শ্মশানেতে যায়।।
লুকাইয়া পিছে পিছে সঙ্গে সঙ্গে গেল।
দেখিলেন পতি গিয়া শ্মশানে বসিল।।
গৃহে এসে সেই নারী সকলে বলেছে।
শ্মশানেতে থাকে ওরে ভূতে পাইয়াছে।।
শেষ রাত্রে হীরা এসে ডাকে ঘনে ঘনে।
তার নারী জাগরীতা ডাক নাহি শুনে।।
ঘুচাইতে দ্বারে হীরামন মারে লাথি।
তবু দ্বার ছাড়িল না সেই দুষ্টামতি।।
হীরামন শান্ত মন র’ল বাহিরিতে।
সে ধনির ছিল এক বালক কোলেতে।।
সকালে হইল ব্যাধি দিন গত হয়।
শ্বাসবদ্ধ মৃত্যু হ’ল সন্ধ্যার সময়।।
সবে বলে হীরামনে পাগলামি কর।
মরিয়াছে পুত্র তব পা’র যদি সার।।
নহে এই ছেলে ল’য়ে ওঢ়াকাঁদী যাও।
যে মতে বাঁচিলে তুমি সে মতে বাঁচাও।।
সে কথা শুনিয়া হীরামন গৃহে গেল।
গৃহদ্বার বন্ধ করি যোগেতে বসিল।।
কেমনে সারিব পুত্র মনেতে ভেবেছে।
যোগবলে প্রাণ দিব বাঁচে কিনা বাঁচে।।
এত বলি হরি বলি প্রহরেক পরে।
ছেলের জীবন দিতে মাথা চেপে ধরে।।
হীরামনের রমণী কহিছে তাহারে।
মরা ছেলে রাখ কেন ফেলে এস ওরে।।
মুখ কাছে মুখ দিয়া দেহে দিবে প্রাণ।
বালকের মুখ যবে করিছে ব্যাদন।।
তাহা দেখি সেই ধনি করিছে চিৎকার।
মরা খায় মরা খায় একি ব্যবহার।।
আমাদের উহারে যে পাইয়াছে ভূতে।
মরা ছেলে হা করিয়া লেগেছিল খেতে।।
এতেক শুনিয়া সাধুর ক্রোধ উপজিল।
বালক ত্যাজিয়া তবে বাহিরে আসিল।।
বালকে লইয়া সবে ফেলাইয়া দিল।
ক্রোধেতে চৈতন্যবালা কহিতে লাগিল।।
আমরা ভেবেছি সবে বেঁচে এল হীরে।
হরিচাঁদ বাঁচায়েছে হরিনাম জোরে।।
তাহা কভু নহে ওরে ভূতে পাইয়াছে।
নিশা কিংবা ব্রহ্মদৈত্য জীবন দিয়াছে।।
নাহি করে গৃহকার্য মানুষ এ নয়।
মানুষ হইলে গৃহকার্যে মন লয়।।
হীরার যে রীতিনীতি সব গেল বোঝা।
ভূত ছাড়াইতে আন খণ্ডজ্ঞানী ওঝা।।
হরিপ্রেম বিকারেতে হীরামন রোগী।
কবি কহে ভব ব্যস্ত এ রোগের লাগি।।