শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ স্মৃতি সভা
“সাথে করে এনেছিলে
মৃত্যুহীন প্রাণ।
মরণে তাহাই তুমি
করে গেলে দান।।”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ওড়াকান্দি মহাযজ্ঞ হ’ল সমাপন।
কলিকাতা আসিলেন প্রমথরঞ্জন।।
বঙ্গবাসী উচ্চবর্ণ হিন্দু যত রয়।
প্রমথরঞ্জনে সবে ডাক দিয়া কয়।।
“তব পিতামহ ছিল পুরুষ মহান।
আমরা সকলে তারে করিব সম্মান।।
তার মৃত্যুদিন তাই করিয়া স্মরণ।
আমরা করিব সবে সভার শোভন।।”
কলিকাতাবাসী যত নমঃশূদ্র ছিল।
এই বার্তা ক্রমে তারা সকলে শুনিল।।
মহানন্দে আয়োজন করে কুতূহলে।
স্মৃতি-সভা স্থান হ’ল এলবার্ট হলে।।
তের শত চুয়াল্লিশ ফাল্গুন বাসরে।
স্মৃতি সভা উদযাপিত হ’ল সেই ঘরে।।
“রাষ্ট্রপতি” নির্বাচিত সে সুভাষ চন্দ্র।
যতেক বাঙ্গালী তা’তে পাইল আনন্দ।।
এই স্মৃতি সভা গৃহে আসিলেন তিনি।
জে.সি. গুপ্ত নাম তার সভাপতি যিনি।।
ডাক্তার গঙ্গাপ্রসাদ করে পরিশ্রম।
কোন কার্যে কিছু নাহি হ’ল ব্যতিক্রম।।
শ্রদ্ধাঞ্জলি দিল সেথা শ্রীসুভাষচন্দ্র।
“মহা পুরুষ” আখ্যা পেল প্রভু গুরুচন্দ্র।।
উনশিয়া গ্রামে ঘর সেই ফরিদপুরে।
পণ্ডিত শ্রীহরিদাস ব্যাপ্ত চরাচরে।।
মহামহোপধ্যায় সিদ্ধান্ত বাগীশ।
স্মৃতিসভা বাসরেতে করেন আশিস।।
যতেক প্রধান বর্গ করিল বক্তৃতা।
প্রশংসা করিয়া বলে ঠাকুরের কথা।।
কেহ বলে “সাধু লোক” কেহ “অবতার”।
সকলে জানায় শ্রদ্ধা স্মৃতিতে তাঁহার।।
আনন্দবাজার নামে দৈনিক পত্রিকা।
ঠাকুর সম্বন্ধে তাহা লিখে বহু লেখা।।
পৃথিবী বিখ্যাত যিনি গান্ধী মহাশয়।
‘মহাত্ম’ বলিয়া যার আছে পরিচয়।।
প্রমথরঞ্জনে তিনি এক পত্র দিল।
ঠাকুর সম্বন্ধে কথা তাহাতে লিখিল।।
সেই পত্র এইখানে করিনু উদ্ধার।
বঙ্গভাষা যোগে ব্যাখ্যা করিলাম তার।।
“প্রিয় প্রমথরঞ্জন ঠাকুর মহাশয়।
পত্রযোগে পাইলাম তব পরিচয়।।
ওড়াকান্দি বাসী যিনি ঠাকুর মহান।
গুরুচাঁদ নামধারী গুরুর প্রধান।।
বহু বহু শিস্য যার আছে বঙ্গদেশে।
সহজ সরল যিনি বাক্য কিংবা বেশে।।
তার পৌত্র তুমি তাহা বুঝিলাম মনে।
দুটি কথা লিখিলাম তাঁহার কারণে।।
সহজ সরল পথে তব পিতামহ।
দুর্গত সেবার ব্রত ছিল অহরহ।।
তার মতে দুর্গতের জন্য সর্বদায়।
উৎসর্গ করিতে প্রাণ মন যেন ধায়।।”
সূর্য বল কবে ঢাকা থাকে মেঘতলে?
মহতের জ্যোতিঃ তথা সেইরূপ চলে।।
স্মৃতি সভা কালে সবে পেল পরিচয়।
কি মহাপুরুষ এসে ছিল এ ধরায়।।
শ্রীগুরুচাঁদের লীলা অনন্ত অপার।
কে কত বুঝিবে যার নাহি কোন পার?