পরিশিষ্ট খণ্ড : দ্বিতীয় তরঙ্গ
বন্দনা
জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
(জয় শ্রীসুধন্যচাঁদ সভ্যভামাত্মজ।
প্রেমানন্দে হরি গুরু শ্রীপতিচাঁদ ভজ।।)
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।
স্বামী মহানন্দ পাগলের লীলা
পয়ার
বড় পাগল বলিয়া খ্যাতি শ্রীগোলোক।
যে কালে ভূলোক ছাড়ি গেলেন গোলোক।।
গোলোকের অঙ্গ হ’তে উঠে এক জ্যোতি।
জ্যোতির সহিত এক উঠিল শকতি।।
ধাইয়া উঠিল জ্যোতি গগন মণ্ডলে।
নামিতে লাগিল জ্যোতি দেখিল সকলে।।
জয়পুর তারকের বাড়ী দেহত্যাগ।
এ সময় তারকের কোলে মহাভাগ।।
সবে দেখে সেই জ্যোতি নিম্নগামী হয়।
দেখিতে দেখিতে জ্যোতি হ’য়ে গেল লয়।।
তারক দেখিল জ্যোতি পূর্বমুখ হ’ল।
নারিকেলবাড়ী গিয়া পতিত হইল।।
মহানন্দ শ্রীঅঙ্গেতে মিশিল সে জ্যোতি।
ছোট পাগল বলিয়া হ’ল তাঁর খ্যাতি।।
যেই দিন মহানন্দ করিল শ্রবণ।
করিল গোলোকচাঁদ লীলা সম্বরণ।।
শ্রবণেতে মহানন্দ নিরানন্দ চিত।
ঠিক না করিতে পারে কি কার্য উচিৎ।।
হইল উন্মনা যেন পাগলের ন্যায়।
হইয়া বিস্মৃতি ভাব ইতি উতি ধায়।।
ঘূর্ণবায়ু মত সদা করেন ভ্রমণ।
যেখানে যেখানে পাগলের আগমন।।
ভ্রমি সব ঘরে ঘরে করেন তালাস।
খুঁজিয়া না পেয়ে ক্রমে বাড়ে হা হুতাশ।।
অবশেষে করিলেন ফুকুরা গমন।
মধুমতী নদী কূলে ঠেকিল তখন।।
পাগলের বিরহেতে দহিতেছে কায়।
নদীজল দেখে হ’ল প্রফুল্ল হৃদয়।।
জ্বালা জুড়াইতে জলে ঝাঁপ দিয়া পড়ে।
দিল ঝাঁপ পেয়ে তাপ জল গেল সরে।।
নদী মধ্যে যতদূর হয় অগ্রসর।
জল শুষ্ক হ’য়ে যায় তপ্ত কলেবর।।
দেহ হ’তে দুই পার্শ্বে আড়ে পরিসর।
দুই হাত দেড় হাত জল দূরতর।।
আছাড়িয়া করে সদা হস্ত আস্ফালন।
জলস্তম্ভ মত উর্দ্ধে ধুম উদ্গীরণ।।
হেনকালে মূর্তিমন্ত হইয়া গোঁসাই।
গোলোক পাগল এসে দাঁড়ায় সে ঠাই।।
বলে বাপ ছাড় তাপ আমি যাই নাই।
জ্যোতি হয়ে তোর দেহে নিয়াছিরে ঠাই।।
এই আমি তোর দেহে করিনু প্রবেশ।
তুই রাজা হরিচাঁদ ভক্ত রাজ্য দেশ।।
চিরদিন তরে মম এই মনোসাধ।
কুটি নাটি কাটি দেশ করিবি আবাদ।।
পাগলে পাইয়া অগ্নি নির্বাপিত হ’ল।
পুনরায় নারিকেলবাড়ী চলে গেল।।
ভ্রমিত পাগল চাঁদ যেই যেই বাড়ী।
মহানন্দ ভ্রমে তথা লাহিড়ী লাহিড়ী।।
শালনগরের মধ্যে পালপাড়া গ্রাম।
তথায় বসতি তারাচাঁদ পাল নাম।।
ওঢ়াকাঁদি মতো সম্প্রদায় যত ছিল।
সবাকার নিমন্ত্রণ তথায় হইল।।
তারাচাঁদ ছোট পাগলের কাছে গিয়ে।
দিন ধার্য ক’রে এল আনন্দিত হ’য়ে।।
মতুয়ার ভীড় হ’ল পাগলের সঙ্গেতে।
তিন শত মতুয়া মিলিল একসাথে।।
সবে হরি হরি বলি বাহির হইল।
তরাইল বাজারে সকলে উপজিল।।
পাঁচবার খেয়াপার মতুয়া সকল।
নদীমধ্যে এপার ওপার হরিবোল।।
সে দিন বাজার পড়ে মেলা মিলেছিল।
গান সাঙ্গ হ’য়ে মেলা ভাঙ্গিয়া চলিল।।
একেত মেলার মাঠে ছিল গণ্ডগোল।
তাঁর সঙ্গে মিশে গেল সুধা হরিবোল।।
দোকানী পশারী যত দোকানে দোকানে।
সবে বলে হরি হরি ওই নাম শুনে।।
বাজারে বসতি বড় বড় মহাজন।
ঘরে ঘরে সবে করে নাম সংকীর্তন।।
মেলায় এসেছে লোক ফিরে বাড়ী যায়।
ঘাটে পথে তারা সবে হরিনাম লয়।।
পার হয় যত ম’তো খেয়াঘাটে রই।
অন্য নাম নাহি মুখে হরিনাম বই।।
মেলার অধ্যক্ষ যত তারা বলে একি।
ভেঙ্গেছিল মেলা কি পুনশ্চ হল নাকি।।
কেহ কেহ ঘুরিতেছে নাগর দোলায়।
ঘূর্ণমান হ’য়ে ভব নদীর গোলায়।।
তাহারা চাহিয়া দেখে ঘাটের দিকেতে।
মতুয়ারা হরি বলে প্রেমানন্দ চিতে।।
তারা সবে হরি বলে নাগরদোলায়।
অধে হরি উর্দ্ধে হরি তরঙ্গ গোলায়।।
ঝাঁকি লেগে দোলা ভাঙ্গে এই ভয় করে।
দোলা আলা লোক সব নামাইল পরে।।
ভূমিতে নামিয়া লোক হাতে দিয়ে তালি।
নদীর কিনারে যায় হরি হরি বলি।।
বেশ্যারা ছিলেন জলে স্নান করিবারে।
কেহ বা বাজারে কেহ কিনারে বা ঘরে।।
ওপারে এপারে হরিধ্বনি করে সব।
খেয়ানায় নদীমধ্যে উঠিয়াছে রব।।
তাহা শুনি বেশ্যাগণ বলে ধন্য ধন্য।
হরি হরি বলে তারা হ’য়ে জ্ঞানশূন্য।।
অশ্রুপূর্ণ শিবনেত্র হরিনাম লয়।
মধ্যে হুলুধ্বনি করে জয় জয় জয়।।
এই মতে পার হ’ল মতুয়ারগণ।
নাচিয়া গাহিয়া সবে করিল গমন।।
মেলার বাজারে হ’ল কিমাশ্চর্য লীলা।
রচিল তারকচন্দ্র পাগলের খেলা।।