এখন প্রশ্ন হইতেছে মুনষ্যাত্মা আপন-স্বরূপকে কেমন করিয়া ভুলিল? কথিত আছে এক রাজার রাজ-প্রাসাদ জঙ্গলের নিকট অবস্থিত ছিল। একদিন রাজকুমার খেলিতে খেলিতে এক ভেড়ার দলের সহিত চলিয়া গেল। রাজকুমার ভেড়ার দলে ভেড়াদের সহিত লালিত পালিত হইতে লাগিল। অনেক দিন পর রাজা শিকার করিতে জঙ্গলে গিয়া দেখিলেন যে ভেড়ার দলে এক মানব শিশু। রাজা উহাকে উদ্ধার করিয়া নগরে আনয়ন করিলেন। দীর্ঘদিন ভেড়ার দলে থাকিয়া রাজকুমারের আকৃতি-প্রকৃতি অনেক পরিবর্তিত হইয়া গিয়াছিল। তাহার নখ অত্যন্ত বড় বড়, চুল লম্বা লম্বা হইয়া গিয়াছিল, আর শরীর ধূলা-মাটিতে ভরিয়া গিয়াছিল। দেখিতে দেখিতে রাজার মনে পরিয়া গেল যে এই ভেড়ার জীবন যাপনকারী মানব শিশুই তাহার হারানো রাজকুমার। তখন তাহাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হইল। রাজকুমারের ন্যায় বেশভূষা পরানো হইল, চালচলন ও ব্যবহারিক শিক্ষা দিবার জন্য উপযুক্ত শিক্ষক নিযুক্ত করা হইল। শিক্ষক তাহাকে শিক্ষা দিতে লাগিল যে- “তুমি ভেড়া নও, জঙ্গলবাসী নও, রাজকুমার। এই জঙ্গল ও নগর তোমার পিতার রাজ্য।” এই রূপ শিক্ষার ফলে রাজকুমারের চালচলন, কথাবার্তা ও আচার ব্যবহারের মধ্যে পরিবর্তন আসিল। তাহার মনে এই ভাবেব উদয় হইল যে- “আমি রাজকুমার-!”
সকল রাজ্যের উত্তরাধিকারী, তেমনই মনুষ্যত্মাগণ দেবতাদেরও দেবতা ত্রিলোকীনাথ, পরমপিতা পরমাত্মার সন্তান। কিন্তু শরীর ও কর্মেন্দ্রিয়ের বন্ধনে নিজেদের শরীর বলিয়া ভাবিতেছে ও বিষয় বিকারে ডুবিয়া গিয়াছে। এখন পরমপিতা পরমাত্মা এই জ্ঞান দিতেছেন- “হে আত্মাগণ, তোমরা প্রকৃতপক্ষে আমার অর্থাৎ ত্রিলোকীনাথ পরমপিতা, পরমাত্মার সন্তান। তোমরা স্বর্গের দিব্য সুখ যথা রত্মাদি খচিত সুবর্ণ রাজপ্রাসাদে থাকিয়া সম্পূর্ণ পবিত্রতা তথা সুখ শান্তি সম্পন্ন রাজ্য ভোগ করিতেছিলে। কিন্তু সৃষ্টির আবর্তনে জন্ম-জন্মান্তর দেহের বন্ধনে আসিতে আসিতে দেহের উপর আসক্ত হইয়া পরিয়াছ এবং নিজেকে ভুলিয়া দেহ মনে করিতেছ।”