ভবঘুরেকথা
নিয়তিবাদ

নিয়তিবাদ : কারণ ও প্রভাব : এক

-সুকুমারী ভট্টাচার্য

প্রকৃত ব্যবহারে নিয়তিবাদের সঙ্গে আমার প্রত্যক্ষ পরিচয় প্রায় চল্লিশ বছর আগে। এক সপ্তাহ অনুপস্থিতির পরে আমার পরিচারিকা ফিরে এসে জানালো তার দু বছরের শিশুটির বসন্তরোগে মৃত্যু হয়েছে। যখন প্রশ্ন করলাম তাকে টিকা দেওয়া হয়েছিল।

কিনা, সে উদাস বৈরাগ্যের সুরে জানাল যখন ‘বসন্তে’ মৃত্যুই তার ছেলের ‘কপালে’ ছিল তখন কোনও টিকাই তার মরণকে আটকাতে পারত না। নিশ্চয়ই তার এই মনোভাব অজ্ঞানতা প্রসূত, কিন্তু আমাকে যা আঘাত করল তা হল তার এই সহজ ভাবে মৃত্যুকে মেনে নেওয়া। আর এই মেনে নেওয়া থেকে সে যে শান্তি আর সান্তনা পেয়েছে সেই তথ্য।

আজ যখন কোনও অজ্ঞ কৃষক কারখানায় তৈরি সার ব্যবহার না করে তার অল্প ফসলকেই মেনে নেয়, তখন সে এই একই নিয়তিবাদী মনোভাব দ্বারা চালিত হয়–‘এ বছর সার দিই বা না দিই। ফসল কম হওয়াই কপাল। যা ক্ষতিকর তা হল, এই প্রকার নিস্ক্রিয় মনোভাব প্রগতির পথ রোধ করে।

সঠিক শিক্ষার সুযোগ আর অর্থনৈতিক সুযোগ দেওয়া হলে কিন্তু আধুনিক কলাকৌশল এবং তার উপকার সম্পর্কে এই বিরোধী মনোভাব অনেকাংশে লোপ পাবে।

উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একটি প্রাচীন ভারতীয় পুরাকথাতে বলা হয়েছে যে পৃথিবী অবস্থান করে বহুফণাযুক্ত দিব্য সর্প বাসুকির মস্তকে, তাই বাসুকি’ যখন তার ক্লান্ত ফণা থেকে পৃথিবীর ভার অপর ফণায় সরিয়ে নেন তখনই ভূমিকম্প হয়।

আর একটি পুরাকথায় বলা হয়েছে যখন দানব রাহু চন্দ্র বা সূর্যকে গ্রসে করে তখনই গ্রহণ লাগে। প্রাক-বিজ্ঞান যুগের মানুষের এই অনুসন্ধিৎসা তার উৎসাহী এবং কৌতুহলী মনেরই পরিচয়। সে মন তাকে প্রেরণা দিয়েছে প্রাকৃতিক ঘটনা প্রপঞ্চ, যে সব ঘটনা তার নিজের আয়ত্তের বহির্ভুত, যাকে দেখে মনে হয়, কোনও মহাজাগতিক বিপর্যয়, সেই সব অনুষঙ্গকে সঠিক ভাবে উপলদ্ধি করতে, অনুসন্ধান করতে এবং ব্যাখ্যা করতে।

তবুও দুর্ঘটনা, ব্যাধি, দুর্ভাগ্য আর প্রিয়জন বিয়োগ অপ্রত্যাশিত ভাবে তার পরিকল্পনা বিনষ্ট করে দেয়, আর শেষ পর্যন্ত মৃত্যু এসে এই সবের উপর যবনিকা টেনে দেয়। অধিকাংশ মৃত্যুই বোধহীন মনে হয়, আর জীবন কখনওই মৃত্যুকে, অস্তিত্বে চরম নঞর্থকতাকে মেনে নিতে পারে না।

জ্ঞানের মাধ্যমে, অর্থাৎ জ্যোতির্বিদ্যার অগ্রগতি এবং ভূকম্পলিখা যন্ত্র প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনুরূপ ব্যাখ্যাগুলি অকেজো হয়ে পড়ে; বৈজ্ঞানিক, কারণ-নির্ভর সম্পর্কের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়; এবং আকস্মিক সুযোগ থাকার অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলি আর স্বীকার করা হয় না।

প্রাক-বিজ্ঞান যুগের কৃষকেরা বৈদিক যুগে শূন্যাসীরীয় যজ্ঞের মাধ্যমে আর পৌরাণিক যুগে ‘ক্ষেত্রপূজা’ করে ক্ষেতপ্রের কর্ষণের জন্য দেবতাকে প্রসন্ন করত। এমনকী কৃষির উন্নতির জন্য ‘ক্ষেত্রপতি’, ‘হলধর, ইত্যাদি দেবতাকেও কল্পনা করা হয়েছে।

বৈদিক যুগে খরার প্রতিবিধানের জন্য অনুষ্ঠিত হত কারীরী ইষ্টি, পরবর্তী পুরাণের যুগেও হত নানাবিধ পূজা। অনুরূপ ভাবে ফসল। না হওয়ার কারণ হিসাবে মাটিতে বিবিধ রসায়নের ঘাটতিকে খুঁজে দেখা হত না, বরং খোঁজা হত নানা অতিলৌকিক শক্তিকে; যথাযথ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাদের প্রসন্ন করা গেলে প্রচুর ফসলে আবার পূজকের ঘর ভরে উঠবে।

আদর্শ কৃষি-খামারগুলিতে কৃষকদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, সার প্রয়োগে মাটির উৎপাদনশক্তি পুনরায় জীবিত করা যায়, এর ফলে কুসংস্কার দূরীভূত হয়েছে, বহু কৃষক সার কিনতে উৎসাহী হয়েছেন। কিন্তু সেচপ্রণালী, খালের জল আর সারের ব্যবহার–এ সবের জন্যই অর্থের প্রয়োজন।

আর তাই কেবলমাত্র শিক্ষার ভূমিকাও একটা সীমারেখাতে এসে থেমে যায়। অতএব যতদিন না দেশে জ্ঞানকে পরিব্যাপ্ত করার মতো সামর্থ হচ্ছে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাগুলি ব্যবহার করার উপায় সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে না দেওয়া যাচ্ছে- ততদিন নিয়তিবাদ অত্যন্ত দৃঢ় এবং গুরুত্বপূর্ণভাবে আত্মবিস্তার করে রাখছে তার মূল অতি গভীরে, ইতিহাসের বহু দূরে প্রোথিত হয়ে রয়েছে।

যদি বিষয়ান্তরে গিয়ে নিয়তিসম্পর্কিত ধারণার উৎপত্তি অনুসন্ধান করি তবে দেখা যায় নিয়তিবাদের উদ্ভব তিনটি মূল কেন্দ্র থেকে- জন্ম, দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু; যার মধ্যে সম্ভবত শেষতমটিই চূড়ান্ত শুরুত্বপূর্ণ। জন্ম অতীতে হয়েছে, মৃত্যু ভবিষ্যতে আসবে। কিন্তু দুর্ঘটনা, যা আমাদের জীবনকে পদে পদে অনুসরণ করে সে তো মানুষের জীবন ধারণার অন্তর্নিহিত যুক্তিবাদ বিষয়ে বিশ্বাসকে বিদ্রহ্মপ করতে থাকে।

এ সব ঘটনা তো বর্তমানের তাই এর পীড়নও বেশি। জন্মের সঙ্গে নিয়তির সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। এইখানে যে, শিশু তার পছন্দ মতো পিতামাতা কিংবা তার নিজের চারপাশের সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবেশকে বেছে নিতে পারে না। অথচ তাকে সারাজীবন ধরে এই আকস্মিক ঘটনার প্রভাব বিয়ে বেড়াতে হয়, কারণ প্রায়ই এই সব সমাপতনের ফলে তার গতিবিধির সীমা নির্দিষ্ট হয়ে যায় অথবা আকস্মিক ঘটনার ফলে তার উচ্চাশা ব্যাহত হয়।

অবশেষে, প্রায় প্রতিটি মৃত্যুতেই, অপূর্ণ স্বপ্ন আর অসমাপ্ত কাজের দীর্ঘ তালিকা যেন এক নিষ্ঠুর অকাল সমাপ্তির কথা বয়ে আনে। মানুষ বিভপ্রান্ত হয়ে পড়ে; যদিও যুক্তি আর বুদ্ধি তাকে প্রণোদিত করে সযত্নে নিজের জীবনের পরিকল্পনা সাজাতে আর সেই কল্পনা অনুসারে কাজ করতে।

তবুও দুর্ঘটনা, ব্যাধি, দুর্ভাগ্য আর প্রিয়জন বিয়োগ অপ্রত্যাশিত ভাবে তার পরিকল্পনা বিনষ্ট করে দেয়, আর শেষ পর্যন্ত মৃত্যু এসে এই সবের উপর যবনিকা টেনে দেয়। অধিকাংশ মৃত্যুই বোধহীন মনে হয়, আর জীবন কখনওই মৃত্যুকে, অস্তিত্বে চরম নঞর্থকতাকে মেনে নিতে পারে না।

পরবর্তীকালে দর্শনের যে শাখার উৎপত্তি যজ্ঞীয় ধর্মবিধির প্রয়োজনে, সেই জৈমিনির পূর্বমীমাংসা গ্রন্থে এই সত্য স্বীকার করা হয়েছে যে যথাযথ ভাবে অনুষ্ঠিত যজ্ঞের ফলে অপূর্ব বা অলৌকিক শক্তিবিশেষ উৎপাদিত হয়, যার সাহায্যে প্রাথিত উদ্দেশ্যসাধন করা যায়। এই ভাবে যজ্ঞ আর তার ফল, উভয়ের অন্তর্বতী যে মাধ্যম।

তাই মৃত্যুতে মানুষকে দুর্ঘটনা আর আকস্মিকতাকে মেনোনিতে হয়, যখন সে এর সংস্পর্শে আসে তখন সে যে ভাষা ব্যবহার করে তা হল একে ‘ভাগ্য’ এই সংজ্ঞায় নির্দিষ্ট করা। কারণ, অত্যন্ত বাস্তব অর্থেই এই সব দুর্ঘটনা মানবীয় প্রচেষ্টাকে যেন বিদ্রুপ করে।

আশ্চর্যের কিছু নেই যে, অধিকাংশ পুরাকথাতেই অসংখ্য নামে ময়রা’র অস্তিত্ব রয়েছে। নিয়তিবাদ একটি বহু প্রাচীন ধারণা; ময়রা’ প্রাচীন দেবী এবং ক্রীট অঞ্চলের লিনিয়ার বি লেখসমূহে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ শতকেই ‘এরিনিস’-এর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। গ্রিস দেশে ডেমোক্রিটাস এই মত ্রকাশ করেছিলেন যে, জীবনের একটি সংগত ব্যাখ্যা হল অণু-বাদ।

কিন্তু সেই ইউডেমোনিয়া বা হাগেন ও মানুষের আয়ত্তেই ছিল; এবং ডাইওজিনিস লেয়টিয়াস বলেছিলেন যুক্তি, ভাগ্য, হাইমারমেনে এবং জেউসের সঙ্গে ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। বিধাতার ধারণা ঈষৎ পৃথক এবং ক্লিনথিয়াস বলেছেন যদিও বিধাতার হাত ধরে যা কিছু আসে সবই ভাগ্যনির্ধারিত তবু এর বৈপরীত্য ঘটে না। অর্থাৎ যা কিছু ভাগ্যনির্ধারিত সবই কিন্তু বিধিনির্দিষ্ট নয়।

এই মতবাদ ভাগ্যের মঙ্গলময় ও অমঙ্গলকারী দুটি বিধানকে আলাদা করে দেখায়। নিয়তিবাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী সমস্যাটি হল স্বাধীন ইচ্ছার ধারণা। ক্রিসিঙ্গসাস উভয়ের সমন্বয় করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিশেষ সফল হননি। ভারতীয় সাহিত্যেও সম্পূর্ণ পূর্বনির্ধারিত রূপে নিয়তিকে একক একটি ছাঁদে ফেলার প্রচেষ্টা করা হয়েছে, কখনও তাকে মানুষী প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য পূরণের সহায়ক রূপে বর্ণনা করা হয়েছে কখনও কখনও প্রচেষ্টাকে নিয়তির সহায়ক বলা হয়েছে।

এই ভাবে আমরা উত্তরবৈদিক সাহিত্যেও দেখি, কিছু কিছু রচনা যেখানে নিয়তির সঙ্গে পুরুষকার অর্থাৎ স্বাধীন ইচ্ছা বা প্রচেষ্টার প্রতি স্পর্ধা বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। পাশ্চাত্যে এই মনোভাব আরও সুস্পষ্ট ভাবে দৃঢ় ভাবে প্রকাশিত হয়েছে সিসেরো’র ডিফলতো-তে; এখানে নিয়তিবাদকে বর্ণনা করা হয়েছে নৈতিক ভাবে পলায়নপর মনোভাব রূপে।

নিয়তির বিধান আর স্বাধীন ইচ্ছা এই উভয় বিষয়ে, ভারতীয় সাহিত্যে একটি সরব দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাব দেখা যায়। নিয়তির বিভিন্ন রূপকে বিভিন্ন মহিমান্বিত সংজ্ঞায় ভূষিত করা হয়েছে, যেমন ‘ময়রা’, ‘হাইমরমেনে আতে’, ‘এরেনিস’, ‘নিকে’, ‘নেমেসিস’ এবং এই রকম বহু নাম। এদের মধ্যে শপ্রেষ্ঠ দেবকল্পনা ময়রা’, মৃত্যুর সঙ্গে সর্বাধিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত।

কিন্তু অন্য দিকে জন্মের সঙ্গেও তার সংযোগ রয়েছে। যে জন্ম জীবনের অপর প্রান্তসীমায় অবস্থিত, যা সম্পূর্ণভাবে মানুষের নিয়ন্ত্রণ রেখার বাইরে। ইলিয়াড কাব্যে ময়রার প্রাচীনতম উল্লেখ পাচ্ছি, সেখানেই সে নিয়তিনির্দিষ্ট মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

কিন্তু পূর্বনির্ধারিত অবস্থা আর মানবিক শক্তির নৈতিক দায়িত্ব, উভয়ের মধ্যে যে সংঘাত তা সুস্পষ্ট হয়ে যায় ওডিসি কাব্যে, যখন জেউস বলেন যে মানুষ ভাগ্য বা দৈব নিয়ন্ত্রণের নামে যে দোষ দেয় তার অধিকাংশ ক্ষেতপ্রেই, প্রকৃতপক্ষে সে তার নিজের কার্যকলাপের ফল ভোগ করে।’

ভারতের প্রাচীনতম ধর্মমূলক সাহিত্য ঋগ্বেদ-এ অবশ্য নিয়তিবাদের কোনও উল্লেখ নেই। এ গ্রন্থ এক যুদ্ধপ্রিয় কর্মোদ্যোগী জনগোষ্ঠীর বিবরণী, যারা দৈব বা নিয়তির পরিবর্তে শক্তি আর মানুষী প্রচেষ্টা দিয়ে অর্থাৎ পুরুষকার দিয়ে বহু উল্লেখযোগ্য জয়লাভ করেছিল। এমনকী অন্যান্য সংহিতা আর ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলিও নিয়তিবাদী নয়।

অতিলৌকিক শক্তিসমূহ অর্থাৎ দেবতারা এই সব গ্রন্থে বিজয়ী আর্যদের সপক্ষে নিজেদের শক্তি প্রয়োগ করতে যত্ন করেছেন, আর আর্যরা তাঁদের স্তুতি করেছে। প্রশংসা করেছে, তাদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ সম্পাদন করেছে। ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলিতে প্রতিটি দৈনন্দিন প্রয়োজন এবং সংকটময় পরিস্থিতির উপযুক্ত যজ্ঞের কথা সুস্পষ্ট ভাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

পরবর্তীকালে দর্শনের যে শাখার উৎপত্তি যজ্ঞীয় ধর্মবিধির প্রয়োজনে, সেই জৈমিনির পূর্বমীমাংসা গ্রন্থে এই সত্য স্বীকার করা হয়েছে যে যথাযথ ভাবে অনুষ্ঠিত যজ্ঞের ফলে অপূর্ব বা অলৌকিক শক্তিবিশেষ উৎপাদিত হয়, যার সাহায্যে প্রাথিত উদ্দেশ্যসাধন করা যায়। এই ভাবে যজ্ঞ আর তার ফল, উভয়ের অন্তর্বতী যে মাধ্যম।

তাদের জন্য এক ধর্মতত্ত্ব প্রতি-উদ্ভাবন করা হল, যেখানে বলা হল জীবন এক অবিমিশ্রি অভিশাপ, যেখান থেকে সকলেরই মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। পূর্ববর্তীকালে ঋগ্বেদ-এ যে মনোভাব দেখা গিয়েছিল, যেখানে জীবনকে বলা হয়েছে মধুর এক প্রাথিত বস্তু, একে কামনা করা হয়েছে।

সেখানেই এক অদৃশ্য শক্তির ধারণা বর্তমান রয়েছে–যে শক্তি, পূর্বকালে দেবতারা যা সম্পাদন করেছেন তাও সম্পন্ন করতে পারে। এই শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা বহির্ভূত বলা যায় না, তবে কী ভাবে যথাবিধি যজ্ঞ নিম্পন্ন হচ্ছে তার সঙ্গেই এই শক্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।

একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অর্থে এই অপূর্ব-কে দেবতাদেরও অতিক্রমকারী শক্ত বলা যায়, এ এক বিমূর্ত অজ্ঞেয় শক্তি যা প্রকৃতপক্ষে দেবতা নিরপেক্ষ ভাবেই কাজ করে। পরবর্তীকালের নিয়তিবাদের বীজ এখানেই নিহিত, যদিও এখন পর্যন্ত এটি ব্যাখ্যাযোগ্য এবং পূর্ব-নির্ধারণযোগ্য।

আরণ্যক এবং উপনিষদ গ্রন্থাবলিতেও যথাযথ ভাবে নিয়তিবাদের কোনও ধারণা বিস্তারিত ভাবে বিবৃত হয়নি। দৈব নিয়তি, ভাগ্য, কৃতান্ত, বিধিলিপি, ললাটলিখন, প্রভৃতি শব্দ এখনও অজ্ঞাত, কিন্তু বাস্তবত এই সাহিত্যে নিয়তিবাদবিষয়ক ধারণার একটি অত্যাবশ্যক উপাদান বিদ্যমান। খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতকে সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় পৃথিবীতে গ্রিস, রোম, চিন থেকে ইরান এবং ভারতবর্ষ পর্যন্ত আধ্যাত্মিক আন্দোলন দেখা গিয়েছিল।

ভারতবর্ষে এই সময় বিভিন্ন তপস্বীী সম্প্রদায় যথা জৈন, আজীবিক এবং বৌদ্ধদের উদ্ভব হয়; এমন আরও বহু মতবাদের অস্তিত্ব ছিল, বুদ্ধ যাদের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হন এবং প্রাচীন পালি বৌদ্ধ সাহিত্যে যে সব অগণিত যোগীদের উল্লেখ আছে। দেশ তখন বিবিধ মতবাদ সমন্বিত তপস্বীর দলে পূর্ণ ছিল। সনাতন বৈদিক ধর্ম থেকে তাদের পার্থক্যের মূল কারণ ছিল বেদ ও যজ্ঞবিধিতে তাদের অবিশ্বাস। মুণ্ডক উপনিষদ-এর প্রাচীন গ্রন্থেও আমরা শুনি যে যজ্ঞ হল অনির্ভরযোগ্য তরণী।

কিন্তু এই মনোভাব সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বেই দেশের ধর্মীয় বাতাবরণে কিছু ঘটনা ঘটেছিল। লৌহ-হলমুখের প্রবর্তনের ফলে, বৃহৎ বৃহৎ ভূখণ্ড কর্ষণ করা সম্ভব হচ্ছিল। ইটের কাঠামো গড়ে তোলার মতো বাস্তুবিদ্যার জ্ঞান প্রচলিত হয়েছিল, তাই ভবিষ্যৎ দুদিনের অপেক্ষায় অতিরিক্ত খাদ্য সঞ্চয় করা সম্ভব হচ্ছিল।

আর্য-আগমনের পরবর্তী কয়েক শতক-ব্যাপী নিস্ক্রিয়তার পরে, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক পুনরায় শুরু হয়েছিল, ফলে খাদ্যের উদ্ধৃত্তি এবং কুটিরশিল্পের সম্ভার সমাজের শীর্ষস্থিত কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে লাভজনক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই সব মানুষ কৃষক ও শ্রমিকের জীবনযাতপ্রার মানকে নিম্নতমহারে বেঁধে দিয়ে তাদের শ্রমিকে কাজে লাগাত।

বর্ষপঞ্জির হিসাব পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে, কৃষিকাজ অনেকাংশে নিশ্চিত ভাবে করা সম্ভব হয়েছিল। এবং, যুক্তিসঙ্গত ভাবেই বন্যা, খরা, পঙ্গপাল, ইত্যাদির উৎপাত বাদ দিলে কৃষিতে উৎপাদিত ফসল অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। রেশম সড়ক অনুসরণ করে বাণিজ্য প্রসারিত হয়েছিল এশিয়ার অন্যান্য অংশে এবং মুদপ্রার প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যবহার প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যবিধি অনেকাংশে নিরাপদ ভিত্তি পেয়েছিল।

এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, এই সবের ফলে প্রত্যক্ষ উপকৃত হয়েছিলেন ধনী, বণিক, বৈশ্য ও ক্ষত্রিয়েরা আর পরোক্ষ ভাবে ব্রাহ্মণের। এবং এর ফলে প্রত্যক্ষ ভাবে নিঃ স্ব হয়ে পড়েছিল এক বৃহত্তর জনসংখ্যা, যারা ছিল প্রাথমিক পর্যায়ের উৎপাদক: দরিদ্র, বেশ্যা, চাষি আর অগণ্য শূদ্র। তাদের পক্ষে জীবন হয়ে দাঁড়াল প্রকৃত অর্থে এক অভিশাপ।

তাদের জন্য এক ধর্মতত্ত্ব প্রতি-উদ্ভাবন করা হল, যেখানে বলা হল জীবন এক অবিমিশ্রি অভিশাপ, যেখান থেকে সকলেরই মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। পূর্ববর্তীকালে ঋগ্বেদ-এ যে মনোভাব দেখা গিয়েছিল, যেখানে জীবনকে বলা হয়েছে মধুর এক প্রাথিত বস্তু, একে কামনা করা হয়েছে।

এই ভাবে অবাঞ্ছিত ভাবেও মানুষ তার চারিদিকে শক্তিমান অস্তিত্বের বিরুদ্ধে অপরাধ করে বসতে পারে। তাই জীবন মানুষের কাছে এক অন্তহীন দুঃখ। তার এই দুর্দশার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ধর্মতত্ত্ববিদরা একটি মার্জিত তত্ত্ব সৃষ্টি করেছেন। যে, মানুষ তার পূর্বজন্মের স্বকৃত কর্মেরই ফল ভোগ করে থাকে।

এর দীর্ঘস্থায়িত্ব উপভোগ করতে চাওয়া হয়েছে পূর্ণভাবে, এখন দেখা গেল তার চরম বৈপরীত্য এখানে জীবনকে বলা হল অশুভ এক শৃঙ্খল যা পুনরাবৃত্ত হতে থাকে, চরম শান্তি ও মোক্ষলাভের আগে মানুষকে তার থেকে মুক্তি পেতে হবে।

কর্মবাদের তত্ত্ব অনুসারে প্রতিটি কর্মের একটি সমান এবং আনুপাতিক ফল উৎপন্ন হয়। যা ইহজন্মে অথবা পরজন্মে ভোগ করতে হয়–তা ভাল মন্দ যাই হোক, এই তত্ত্ব বিশ্বাস সৃষ্টি করেছিল জন্মান্তরবদের। সম্ভবত জীবনের অসঙ্গতিগুলিকে ব্যাখ্যা করার জন্য মানুষ আজ পর্যন্ত যে সব সমাধান চিন্তা করেছে এটিই তার মধ্যে চতুরতম; সেদিনেও এই মতবাদ উল্লেখযোগ্য ভাবে সার্থক হয়েছিল এবং আজকের দিনেও এই মত সার্থক।

বহু যোগী গোষ্ঠী এই ‘কর্মফল্যবাদ-কে নাকচ করেছেন এই বলে যে সৎকর্ম এক প্রকার উপলব্ধি নিয়ে আসে যা মোক্ষলাভের সহায়ক; কেউ কেউ, যেমন আজীবিকরা মনে করেছিলেন মানুষ যে কমই করুক না কেন, চুরাশি লক্ষ জন্মের পর মোক্ষ অবশ্যই আসবে অথবা আসবে না। যাই হোক, প্রধান প্রধান গোষ্ঠীগুলি কর্ম ও জন্মান্তরিবাদের তত্ত্বকে গ্রহণ করেছিল।

এই সময়ের কাছাকাছি, স্বর্গ ও নরকের তত্ত্বও দ্রুত বধিত হয়েছিল যার ফলে পদানত নিম্নবর্গের ভবিষ্যৎ-চিন্তা হয়েছিল আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন। ধনীর লক্ষণীয় ভোগময় জীবনের প্রক্ষেপণ ছিল স্বর্গের দৃশ্য, যা সমসাময়িক নুতন সমৃদ্ধির সহগামীরূপে কল্পিত হয়েছিল। অপরপক্ষে নরক ছিল সেই সব অত্যাচার কুঠুরির দৃশ্য প্রক্ষেপণ, যেখানে নূতন সব শক্তির অধিকারী শাসকবৃন্দ সামাজিক ও রাজনৈতিক অপরাধীদের নিক্ষেপ করতেন। উভয়প্রকার কল্পনার মূলেই ছিল বাস্তব অভিজ্ঞতা-ফলে মানুষের কল্পনার উপর এর সবল নিয়ন্ত্রণ থাকত।

যদিও তত্ত্বগত ভাবে মানুষই তার নিজ ভাগ্যের রূপকার, প্রকৃতপক্ষে কিন্তু সে তার পরিবেশের শিকার এবং সে নিজেকে বিশেষ বিশেষ বন্ধনে শৃঙ্খলিত বলেই অনুভব করেছে যে শৃঙ্খল তার ইচ্ছাকে প্রায়ই স্বাধীনতা দিত না। মানুষের ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা, আর বস্তুগত প্রয়োজনের চাহিদা তার বাস্তব জীবনে খুব বেশি স্বাধীন নির্বাচনের সুযোগ রাখত না। সাধারণ মানুষের কাছে জীবন সত্যই ছিল এক অভিশাপ। তাই বর্তমান জীবনের অগ্রীতিকর অবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ করে। পরবর্তী জীবনে অপেক্ষাকৃত উন্নতির মুখ দেখার জন্য মানুষ সব কিছুই করতে রাজি থাকত।

এখানে আমরা আরও মনে করতে পারি যে উত্তরবৈদিক যুগের শেষাংশে, অর্থাৎ সংহিতা সমূহের প্রামাণ্য সংকলনে যখন অথর্ববেদ-এর স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্ত ঘটেছিল তখন ধর্মের ক্ষেতপ্রে মূল ধর্মধারা ক্রমে প্রধান হয়ে উঠেছিল। বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম, ইত্যাদি প্রতিবাদী ধর্মগোষ্ঠী এই প্রত্যন্ত ধর্ম ধারাকে অধিকতর সুস্পষ্ট, কুষ্ঠাহীন ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

এমনকী ব্রাহ্মণ্য সাহিত্যের ক্ষেতপ্রে অথর্ববেদ, পরবর্তীকালের ব্রাহ্মণ ও উপনিষদ সমূহের মধ্যে কিছু কিছু উপাদান দেখা যায়, যেখানে ওঝাদের জাদু আর ঝাড়ফুক প্রাস্তিক ধর্মধারার এক বলিষ্ঠ পুনরুত্থানের সংকেত পেয়েছে। মূলত প্রাণবাদী জগৎ তত্ত্বে বিশ্বাসী এই ধর্মধারার মতে মানুষের চারদিকে আছে আত্মা, যক্ষ, দানব, দৈত্য, পরী, ইত্যাদি।

এই সব অধিষ্ঠাত্রী আত্মা সহজেই ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে এবং একবার ক্ষিপ্ত হলে তারা ক্ষমাহীন ভাবে প্রতিশোধ নিতে থাকে। সুতরাং পবিত্র ভাবে জীবনযাপন করা দ্বিগুণ ভাবে কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। যদি কেউ তার নিজস্ব বুদ্ধি অনুযায়ী কাজ করে যায় এবং দোষ-ত্রুটি এড়িয়ে চলার আপ্রাণ চেষ্টাও করে। তবু সহজেই সে এই সব অতিলৌকিক আত্মা, প্রভৃতির খেয়ালখুশির বা আক্রমণের শিকার হতে পারে।

এই ভাবে অবাঞ্ছিত ভাবেও মানুষ তার চারিদিকে শক্তিমান অস্তিত্বের বিরুদ্ধে অপরাধ করে বসতে পারে। তাই জীবন মানুষের কাছে এক অন্তহীন দুঃখ। তার এই দুর্দশার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ধর্মতত্ত্ববিদরা একটি মার্জিত তত্ত্ব সৃষ্টি করেছেন। যে, মানুষ তার পূর্বজন্মের স্বকৃত কর্মেরই ফল ভোগ করে থাকে। স্বাভাবিক অনুসিদ্ধান্ত হল এই যে, পরবর্তী জীবনে অনুরূপ দুঃখকে এড়িয়ে চলার জন্য মানুষ অন্যপরাধী হয়ে জীবনযাপন করবে।

পুরাণগুলিতে যে শপ্রাদ্ধের মাহাত্ম্য ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে পুরোহিতদের যথাযথ দক্ষিণা প্রাপ্তির এবং তাদের প্রাপ্য দ্রব্যাদির গুণ ও পরিমাণ বিষয়ে যে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা কেবল আকস্মিক নয়। এই ভাবে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে অজানা ভয়কে কাজে লাগিয়ে পুরোহিতেরা নিজের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলতেন আর সাধারণ মানুষের ধর্মাচরণকেও নিয়ন্ত্রণ করতেন।

এবং ভারতবর্ষে যেমন অন্যান্য দেশেও অপরাধ শূন্য ভাবে বেঁচে থাকার অর্থ হল সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় অনুশাসকদের কোনও রূপ বিরক্তি উৎপাদন না করা। সাধারণ মানুষ তার নিজের কোনও কৃতকর্মকে যখনই ফলের সঙ্গে মেলাতে না পারে, তখনই তার নাম দেয় ‘অ-দৃষ্ট’- যাকে দেখা যায় না, অর্থাৎ নিয়তি। এই ভাবে জানা এবং অজানা শক্তিগুলির সন্তোষ বিধান করা তার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, সে ভাগ্যের চরম আধিপত্যকে স্বীকার করে নেয়।

পরবর্তী যুগের বেদাঙ্গ সাহিত্যে ভাগ্যকে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে; জীবনের অসংখ্য দুঃখের আকারে এই ভাগ্যের নানা প্রতিমূর্তিকে গণনা করা হয়েছে; এবং এর বিরূপতাকে প্রশমিত করার জন্য নানা গৌণ নূতন নূতন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক প্রকার সম্পূর্ণ নূতন সাহিত্যধারার সৃষ্টি হয়েছে–এটা ‘প্রায়শ্চিত্ত’–সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে কৃত অপরাধের জন্য, সুস্পষ্ট ভাবে সীমারেখা লঙ্ঘন করা বা ছোটখাট অনুষ্ঠানগত ত্রুটি বা শৈথিল্যের জন্য প্রায়শ্চিত্ত। বেদাঙ্গ সাহিত্যের শেষ ভাগে আর একটি সহায়ক সাহিত্য বিকাশ লাভ করেছিল, তা হল শপ্রাদ্ধকল্প’ এবং ‘প্রেতকল্প, এখানে মৃত পূর্বপুরুষদের পরলোকে উন্নীত করার জন্য বিধিনির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই সব আনুষঙ্গিক শাস্ত্র এই জন্যই গড়ে উঠেছিল যে, অস্ত্যেষ্টি ও শাবানুগমন সংকপ্রান্ত এই সব অনুষ্ঠানগুলির উদ্দেশ্য ছিল মৃত আত্মার সুখ নিশ্চিত করা এবং এই সব অনুষ্ঠান ও তার ফলসমূহ পরলোকের অজানাকে স্পর্শ করতে চায়; সুতরাং এখানে অজ্ঞ জনসাধারণকে কিছুটা জোর করেই যেন ভাবতে বাধ্য করা হচ্ছে যে যদি এই সব অনুষ্ঠান যথাযথ পালন না করা হয় তবে তাদের প্রিয়জন পরলোকে কষ্ট পাবে। সমাজে প্রচলিত নিয়তিবাদী ধারণার এটি অন্যতম ফল।

একটি লক্ষণীয় বিষয় হল, এই যে শপ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যে অপরাধী সেই কিন্তু সন্তোষবিধায়ক ব্যক্তি নয়; সুতরাং মৃত স্বজনের উদ্দেশে উৎসগীকৃত পানভোজনের মতোই এই সন্তোষবিধান কল্পনালব্ধ বা পরোক্ষ। স্বজনবিয়োগে কাতর জীবিত আত্মীয় এখানে তার মৃত প্রিয়জনের সেবা করতে পেরে সন্তুষ্ট হন এবং অনুষ্ঠানকারী পুরোহিতের পক্ষে এখানে যথেষ্ট দক্ষিণা পাওয়া সম্ভব হয়।

পুরাণগুলিতে যে শপ্রাদ্ধের মাহাত্ম্য ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে পুরোহিতদের যথাযথ দক্ষিণা প্রাপ্তির এবং তাদের প্রাপ্য দ্রব্যাদির গুণ ও পরিমাণ বিষয়ে যে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা কেবল আকস্মিক নয়। এই ভাবে মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে অজানা ভয়কে কাজে লাগিয়ে পুরোহিতেরা নিজের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলতেন আর সাধারণ মানুষের ধর্মাচরণকেও নিয়ন্ত্রণ করতেন।

<<নিয়তিবাদ : কারণ ও প্রভাব : তিন ।। নিয়তিবাদ : কারণ ও প্রভাব : দুই>>

………………..
প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ : সুকুমারী ভট্টাচার্য।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………………..
আরও পড়ুন-
নিয়তিবাদ : কারণ ও প্রভাব : এক
নিয়তিবাদ : কারণ ও প্রভাব : দুই
নিয়তিবাদ : কারণ ও প্রভাব : তিন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!