তারকচাঁদের পানসী তরী
খড়িয়া গ্রামেতে ছিল নিবারণ নাম।
তারকের শিষ্য সেই ভক্ত গুণধাম।।
একদিন তারকের পদ ধরি কয়।
শুন বাবা বলি তোমা কি হবে উপায়।।
অভাবের তাড়নায় কি করিব আমি।
কি করিলে ভাল হবে বলে দাও তুমি।।
তাই শুনে শ্রী তারক কহিল তখন।
শুন তুমি নিবারণ আমার বচন।।
ধানের ব্যাবসা তুমি কর মহাশয়।
হাটে হাটে কেনা বেচা করিও সদায়।।
তাহাতেই যাহা কিছু লভ্য তব হবে।
সংসারের আয় ব্যয় তাহাতে চলিবে।।
এতি বলি এক টাকা তার হাতে দিল।
টাকা দিয়া তার হাতে কহিতে লাগিল।।
ব্যাবসায় পুজি আমি দিলাম তোমায়।
এক দরে কেনা বেচা করিও সদায়।।
তাই শুনি নিবারণ চরণে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কহিতে লাগিল।।
শুন বাবা বলি তোমা মরমের কথা।
তোমার চরণ বিনে দাড়াইব কোথা।।
যে দিনেতে তব পায় শরণ নিয়েছি।
তোমার স্বরূপ আমি হৃদয় একেছি।।
এক নিবেদন বাবা চরণে জানাই।
অন্তিম কালেতে যেন শ্রীচরণ পাই।।
তারক বলেছে বাছা মন ঠিক চাই।
হরিচান্দের কৃপায় কোন চিন্তা নাই।।
তাই শুনে নিবারণ গৃহেতে আসিল।
তারকের কথা নিয়ে ব্যবসা করিল।।
তারকের নাম নিয়ে প্রতি হাটে যায়।
ধানের ব্যবসা করে আনন্দ হৃদয়।।
চতুর্গুণ লভ্য হয় তারকের বরে।
ঘরে ফেরে নিবারণ প্রফুল্ল অন্তরে।।
এই ভাবে হাটে হাটে ব্যবসা করিত।
তারক তারক বলে সদায় ডাকিত।।
ধরে জনে পরিপূর্ণ ক্রমেতে হইল।
তারপর জমি জমা কত যে রাখিল।।
মাঝে মাঝে নিবারণ জয়পুর যায়।
তারকের পদে গিয়ে সকল জানায়।।
তাই দেখে শ্রী তারক আশির্বাদ করে।
আশির্বাদ লয়ে শিরে ফিরে আসে ঘরে।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।
একদিনি নিবারণ শুনিতে পাইল।।
লীলা সাঙ্গ করেছেন তারক গোঁসাই।
তাই শুনে নিবারণ কেন্দে ছাড়ে হাই।।
গড়াগড়ি যায় শেষে মাটিতে পড়িয়া।
কেন বাবা চলে গেলে জগত ছাড়িয়া।।
প্রাণের পুতুল তুমি চরণে জানাই।
তোমা হেন দরদিয়া কোথা গিয়ে পাই।।
পাগলের মত প্রায় বেড়ায় ঘুরিয়া।
তারক তারক বলে বেড়ায় কান্দিয়া।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।
শান্ত হয়ে তারপরে ভাবিতে লাগিল।।
তারকের নাম নিয়ে তরণী গঠিব।
ধানের ব্যবসা আমি তাহাতে করিব।।
সুন্দরীর কাঠ দিয়ে তরণী গঠিল।
আগা নায় তারকের নাম লিখে দিল।।
পাঁচ হাত মুখে হল সে তরণী খানি।
নাম হল তারকের পানসী তরণী।।
তারপর নিবারণ নৌকা সাজাইয়া।
তারক চাঁদের নাম মানত করিয়া।।
কয়জন ভাগি নিয়ে নৌকা সাবাইল।
শুভ দিন বুধবার তরী খুলে দিল।।
তারকের নাম নিয়ে তরণী বাহিয়া।
চালনা বন্দরে ধান কিনিলেন গিয়া।।
তারপর শেষে এসে করিত বিক্রয়।
হাটে হাটে বিক্রি করে বহু লভ্য পায়।।
এই ভাবে নিবারণ ব্যবসা করিত।
তারক চান্দের নাম অন্তরে জপিত।।
একদিন ধান কিনে দেশেতে আসিল।
মন প্রতি দুই টাকা বাজার কমিল।।
তাই দেখে নিবারণ মনেতে ভাবিয়া।
তারক তারক বলে বেড়ায় কান্দিয়া।।
একদিন নিশি যোগে স্বপনে দেখিল।
তারক শিয়রে বসে কহিতে লাগিল।।
শুন শুন নিবারণ বলি যে তোমারে।
ধান বিক্রি কর তুমি এক মাস পরে।।
এই কথা বলে তিনি অদৃশ্য হইল।
নিদ্রা ভেঙ্গে নিবারণ ভাবিতে লাগিল।।
ভাগীদের জানাইল স্বপনের কথা।
তাই শুনে ভাগীগণ হল নিরবতা।।
ঘাটেতে তরণী বেধে সবে গৃহে গেল।
হাটে হাটে কেনা বেচা বন্ধ করে দিল।।
নৌকা খানি ঘাটে বাধা কেহ নাহি রয়।
তাই জেনে এক চোর ভাবিল হৃদয়।।
কিছু ধান চুরি করে আনিব রাত্রিরে।
তাই ভেবে সেই চোর লাগিল ঘুরিতে।।
সন্ধ্যা হতে সেই চোর ঘোরা ফেরা করে।
নৌকার নিকটে গেল দশটার পরে।।
দেখিলেন নৌকা পরে বসি একজন।
হুকা সেবা করিতেছে হয়ে একমন।।
তাই দেখে সেই চোর জিজ্ঞাসে তাহারে।
কেবা তুমি হুকা খাও বসে নৌকা পরে।।
তাহা শুনে কহিলেন নৌকা পরে যেই।
যার নৌকা বসে বসে হুকা খায় সেই।।
তাই শুনে সেই চোর পিছাইয়া এল।
নিবারণের বাড়ীতে আসিয়া দেখিল।।
নিবারণ পাকঘর ভাত খাইতেছে।
তাই দেখে সেই চোর মনেতে ভেবেছে।।
নৌকার মালিক যেই গৃহেতে রহিল।
নৌকা পরে কেবা সেই তামাক খাইল।।
ইতি উতি কত কিছু মনেতে ভাবিয়ে।
নৌকার নিকটে গেল দিশেহারা হয়ে।।
নৌকা পরে ছিল যেই জিজ্ঞাসিল তারে।
তব নাম কিবা হয় কহ আজ মোরে।।
নৌকা পরে যেবা ছিল কহিল তখন।
তারক আমার নাম শুন বাছাধন।।
তাই শুনে সেই চোর পিছাইয়া এল।
মালিকের কাছে গিয়ে সকল বলিল।।
ধান চুরি করিবারে তব নায় যাই।
নৌকায় পাহারা দেয় তারক গোঁসাই।।
এত বলি নিবারণে কহিতে লাগিল।
কেন্দে কেন্দে সেই চোর চরণে পড়িল।।
নিবারণ ব্যাস্ত হয়ে চোরকে ধরিয়া।
নৌকার নিকটে যায় কান্দিয়া কান্দিয়া।।
দেখিলেন নৌকা পরে আর কেহ নাই।
কল্কিতে আগুণ আছে দেখিলেন তাই।।
তাই দেখে দুই জনে গড়াগড়ি যায়।
তারক তারক বলে কান্দে দু’জনায়।।
কান্দিয়া বিনোদ বলে বেলা ডুবে গেল।
তারকের প্রীতে সবে হরি হরি বল।।