ভবঘুরেকথা

ষষ্ট তরঙ্গ
বন্দনা

জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
জয় শ্রীবৈষ্ণব দাস জয় গৌরী-দাস।।
জয় শ্রীস্বরূপদাস পঞ্চ সহোদর।
পতিতপাবন হেতু হৈলা অবতার।।
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
জয় শ্রীগোলকচন্দ্র জয় শ্রীলোচন।।
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দ ময়।।
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।

ভক্তগণের মহাসংকীর্তনোচ্ছাস
পয়ার
এইভাবে হরিচাঁদ করে ঠাকুরালী।
প্রভু-সঙ্গে ভক্ত সদা থাকে মেলা মেলি।।
ঐশ্বর্য্য প্রকাশি, প্রভু আসিলেন বাসে।
লক্ষ্মীমাতা পদসেবা করিল হরিষে।।
রন্ধন করিয়া ভক্তগণে ডাক দিল।
ভক্তগণে হরি বলে ভোজনে বসিল।।
ঠাকুরানী ডাক দিয়া রামচাঁদে বলে।
তিন চারি মাস বাপ কোথায় বেড়া’লে।।
তোমরা বেড়াও সদা ব’লে হরি বোল।
কোথায় পাইলে বল এ দ্রব্য সকল।।
রামচাঁদ বলে তুমি শুন লক্ষ্মীমাতা।
তোমার কৃপায় পাই আর পা’ব কোথা।।
প্রভু বলে রামচাঁদ বল তোর মাকে।
সর্ব ফল ফলে এক কৃষ্ণকল্প বৃক্ষে।।
শূন্যে রহে কল্প বৃক্ষ ঈশ্বর ইচ্ছায়।
কল্পবৃক্ষ কৃষ্ণভক্তে কল্পনা করয়।।
কৃষ্ণপ্রেম রসিকের রসময় দেহে।
সে দেহের ছায়া সেই কল্পবৃক্ষে চাহে।।
মাতা বলে অর্থে আর নাহি প্রয়োজন।
জন্মে জন্মে চাই তব যুগল চরণ।।
শুনি সব ভক্তগনে বলে হরিবোল।
অর্থত্যাগী প্রেমন্মত্ত ভাবের পাগল।।
প্রেম অনুরাগে সব ভকত জুটিল।
‘মতুয়া’ বলিয়া দেশে ঘোষণা হইল।।
মঙ্গল নাটুয়া বিশে পূর্ব পারিষদ।
ওঢ়াকাঁদিবাসী পারিষদ রামচাঁদ।।
ভজরাম চৌধুরীর ছোট ভাই যেই।
ঠাকুরের ঐকান্তিক পারিষদ সেই।।
কুবের বৈরাগী রামকুমার ভকত।
প্রভুর ভকত সেই হয়েছে ব্যকত।।
গোবিন্দ মতুয়া আর স্বরূপ চৌধুরী।
প্রেমাবেশে ভাবে মেতে বলে হরি হরি।।
চূড়ামণি বুধই বৈরাগী দুই ভাই।
হরিচাঁদ পেয়ে আনন্দের সীমা নাই।।
জগবন্ধু বলে ডাক ছাড়িত যখন।
সুমেরুর চূড়া যেন হইত পতন।।
মঙ্গল যখন হরি কীর্তন করিত।
সম্মুখেতে মহাপ্রভু বসিয়া থাকিত।।
মঙ্গলের নাসা অগ্রে কফ বাহিরিত।
প্রেমে অশ্রুপূর্ণ হয়ে বক্ষ ভেসে যেত।।
ক্ষণে দিত গড়াগড়ি ক্ষণে উঠে বসে।
ক্ষণে নেচে ভেসে যেত প্রেমসিন্ধু রসে।।
ক্ষণে বীর অবতার ক্ষণেক বিমর্ষ।
উত্তরাক্ষ রুদিত বিকট ভঙ্গি হাস্য।।
গাইতে গাইতে শ্লেষ্মা উঠিত মুখেতে।
ঘন মুখ ফিরাইত ডান বাম ভিতে।।
উর্দ্ধ অধঃ মুখ ঝাকি করতালি দেয়।
বালকেতে অগ্নিদন্ড যেমন ঘুরায়।।
তাতে মাত্র দেখা যায় অগ্নির মণ্ডল।
দণ্ড না দেখায় অগ্নি দেখায় কেবল।।
তেমনি মঙ্গল যবে ঘুরাইত মুখ।
এক মঙ্গলের দেখাইত শত মুখ।।
বড় প্রেম উথলিয়া পড়িত গোবিন্দ।
কক্ষবাদ্য করি হেলি দুলিয়া আনন্দ।।
পিছেতে প্রভুকে রাখি বিমুখ হইয়া।
প্রভুর মুখেতে মুখ থাকিত চাহিয়া।।
প্রেমে ঝাঁকাঝাঁকি নাকে শ্লেষ্মা উঠিয়া।
প্রভু অঙ্গে পড়িত যে ছুটিয়া ছুটিয়া।।
নাকে মুখে চোখে যাহা যেখানে পড়িত।
যত্ন করি প্রভু তাহা অঙ্গেতে মাখিত।।
কক্ষবাদ্য করি রামকুমার ভকত।
কীর্তন মধ্যেতে হেলে দুলিয়া পড়িত।।
এইরূপে ভক্তবৃন্দ হয়ে একতর।
দিক নাই কে পড়িত কাহার উপর।।
মহাভাবে চিত্তানন্দ হৃদয় আহ্লাদ।
গম্ভীর প্রকৃতি যেন প্রভু হরিচাঁদ।।
ভক্তগণে প্রেমন্মত্ত হইত যখন।
বিকৃতি আকার প্রভু হইত তখন।।
ক্ষণে কৃষ্ণবর্ণ ক্ষণে গৌরাঙ্গ বরণ।
রক্তজবা তুল্য হ’ত যুগল লোচন।।
ক্ষণে দূর্বাদল শ্যাম ক্ষণে পাটল।
ক্ষণে নীলোৎপল বর্ণ নয়ন যুগল।।
ভক্তগণে হুঙ্কারিত বলে হরিচাঁদ।
সে ধ্বনি শ্রবণে যেন মত্ত সিংহনাদ।।
সবলোক মত্ত হয়ে দিত হরিধ্বনি।
তাহাতে হইত যেন কম্পিতা মেদিনী।।
কেহ না জানিত দিবা কি ভাবেতে গেল।
না জানিত যামিনী কিভাবে গত হল।।
প্রেমানন্দ সদানন্দ আনন্দে বিভোল।
ভণে শ্রীতারকচন্দ্র বল হরি বল।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!