ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

ভক্তগণের মতুয়া খ্যাতি বিবরণ।
পয়ার

ওঢ়াকাঁদি রাউৎখামার মল্লকাঁদি।
ভ্রমণ করেন হরিচাঁদ গুণনিধি।।
সঙ্গে ভক্তগণ ফিরে পরম আনন্দে।
নাম সংকীর্তন গান হ’তেছে স্বচ্ছন্দে।।
নিজ গ্রামে শ্রীধামের পশ্চিম অংশেতে।
উপনীত হইলেন দাসের বাটীতে।।
একে একে বহুভক্ত আসিয়া মিলিল।
সভা করি ভক্তগণ সকলে বসিল।।
হরি কথা কৃষ্ণ কথা নামপদ গায়।
মধ্যবর্তী মহাপ্রভু বসিয়া সভায়।।
একে একে গ্রামের অনেক লোক আসি।
সভা করি বসিলেন যত গ্রামবাসী।।
পূর্বদিকে মহাপ্রভু পশ্চিমাভিমুখে।
গ্রামীলোক দক্ষিণে প্রভু বামদিকে।।
পশ্চিম দিকেতে বসি ব্রাহ্মণ মণ্ডলী।
ভক্তগণ প্রেমাবেশে করে ঢলা ঢলি।।
কিছুদূর উত্তরে বসিয়া বামাগণ।
হুলুধ্বনি দিতেছে শুনিয়া সংকীর্তন।।
হেনকালে তিন জন ব্রাহ্মণ আসিল।
সভামধ্যে আসিয়া তাহারা দণ্ডাইল।।
সবে বলে বসুন বিছানা আছে অই।
তারা বলে হরিচাঁদ প্রভু তিনি কই।।
ভক্তগণ বলে যদি নাহি চিন কই।
জগতের ঠাকুর বসিয়া তিনি অই।।
একদৃষ্টে তাহারা প্রভুর পানে চায়।
তপস্বী বৈরাগী ওঠে হেনকালে কয়।।
দেখিলে ঠাকুর ওরে ঠাকুর তনয়।
ঠাকুর দেখিলে ওরে প্রণমিতে হয়।।
তিন বিপ্রের একজন মধ্যমবয়স।
আর দু’টি বয়সেতে পৌগণ্ডের শেষ।।
এই দুই ব্রাহ্মণ তাহার একজন।
ঠাকুরে প্রণাম করে শুনি সে বচন।।
একটি প্রণামে দাঁড়াইয়া আর জন।
কৈশোর প্রথমাবস্থা সেই যে ব্রাহ্মণ।।
চাহিয়া ঠাকুরপানে নেত্র তার স্থির।
সেই ব্রাহ্মণের ছিল অসুস্থ শরীর।।
তপস্বী বৈরাগী তবে উঠে সভা হ’তে।
ব্যাধিযুক্ত ব্রাহ্মণেরে লাগিল কহিতে।।
ঠাকুর দেখিতে এলে প্রণমিতে হয়।
দেখিলেত ঐ বিপ্র প্রণমিল পায়।।
এখন পর্যন্ত কেন দাঁড়াইয়া রও।
ঠাকুর দেখিয়া কেন প্রণাম না হও।।
এতেক বলিয়া ব্রাহ্মণের গ্রীবা ধরি।
মত্ত মাতালের প্রায় বলে হরি হরি।।
গ্রীবা ধরি চাপ মারি ভূমিতে ফেলায়।
বলে বাবা দেরে সেবা ঠাকুরের পায়।।
চাপ পেয়ে যেই দ্বিজ প্রণাম করিল।
মঙ্গল দাড়া’য়ে বলে হরি হরি বল।।
হরিচাঁদ পদ হতে পদরজঃ এনে।
ব্রাহ্মণের মস্তকেতে দেয় টেনে টেনে।।
এইমত তিনবার ধুলি দিয়া গায়।
অঙ্গেতে যে ব্যাধি ছিল তাহা সেরে যায়।।
ব্যাধিমুক্ত হ’য়ে দ্বিজ সভাজনে কয়।
অবতীর্ণ সামান্য মানুষ ইনি নয়।।
ক্ষণেক থাকিয়া তবে দ্বিজেরা চলিল।
সভাসদ বিপ্র যত রাগান্বিত হ’ল।।
গ্রামবাসী বহিরঙ্গ লোক যত ছিল।
তাহাদের অতিশয় রাগ উপজিল।।
ব্রাহ্মণে লইয়া করে বিরোধাচরণ।
ইহাদিগে কৃষ্ণভক্ত বলে কোন জন।।
কি পেয়েছে কি হ’য়েছে ঠাকুরালী করে।
ঠাকুর বলয় যশোমন্তের কুমারে।।
অবৈধ সকল কাজ বিধি নাহি মানে।
সমাজের বাধ্য নয় এই কয় জনে।।
শুন সবে প্রতিজ্ঞা করিনু আজ হ’তে।
ইহাদের সঙ্গে না করিব সমাজিতে।।
নাহি মানে দেব দ্বিজ আলাহিদা পথ।
ইহারা হ’য়েছে এক হরিবোলা মত।।
আহারাদি না করিব ইহাদের সঙ্গ।
অদ্য হ’তে গ্রাম্যভাব করিলাম ভঙ্গ।।
সে হইতে গ্রামবাসী হৈল ভিন্নদল।
সে অবধি হরিবোলা পৃথক সকল।।
বিবাদীরা বলে ওরা হ’য়েছে পাগল।
কাণ্ডাকাণ্ড জ্ঞান নাহি বলে হরিবোল।।
হরিবোলা দেখে উপহাস করে কত।
সবে বলে ও বেটারা হরিবোলা ম’তো।।
কেহ বলে জাতিনাশা সকল মতুয়া।
দেশ ভরি শব্দ হ’ল মতুয়া মতুয়া।।
অন্য কেহ যদি হয় হরিনামে রত।
সবে করে উপহাস অই বেটা ম’তো।।
অন্য অন্য গ্রাম আড়োকাঁদি ওঢ়াকাঁদি।
সে হইতে হ’য়ে গেল ‘মতুয়া’ উপাধি।।
তাহা শুনি ডেকে বলে প্রভু হরিচাঁন।
ভিন্ন সম্প্রদায় মোরা ‘মতুয়া’ আখ্যান।।
মতুয়া উপাধি খ্যাত জগতের মাঝ।
রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!