ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

দেবী জানকী কর্তৃক মহাপ্রভুর ফুলসজ্জা
পয়ার

নিত্যানন্দ শ্রীচৈতন্য আর শ্রীঅদ্বৈত।
তিন সহোদর হয় অতি সুচরিত।।
নিত্যানন্দ জ্যেষ্ঠা কন্যা নামে কলাবতী।
চণ্ডীচরণের নারি অতি সাধ্বী সতী।।
পদুমা নিবাসী রামমোহন মল্লিক।
তাহার তনয় চণ্ডীচরণ নৈষ্ঠিক।।
নিত্যানন্দের আর এক কন্যা রসবতী।
মৃত্যুঞ্জয়ের কনিষ্ঠা অতি সাধ্বী সতী।।
গোবিন্দ মতুয়া প্রভু ভক্ত শিরোমণি।
রসবতী সতী হয় তাহার ঘরণী।।
অষ্ট সাত্ত্বিক বিকারী গোবিন্দ মতুয়া।
হরিনাম করিতেন নাচিয়া নাচিয়া।।
প্রভাতী গাইত যবে প্রভাত সময়।
শুনিয়া সবার চিত্ত হ’ত দ্রবময়।।
গোগৃহে থাকিত গরু ঊর্ধ্ব মুখ চেয়ে।
নয়ন জলেতে তারা যাইত ভাসিয়ে।।
পক্ষীগণ এসে সব উড়িয়া পড়িত।
বৃক্ষপরে পক্ষীগণ বসিয়া শুনিত।।
পক্ষী সব দিত স্বর গানের স্বরেতে।
জ্ঞান হ’ত পক্ষী গান করে সাথে সাথে।।
ভাস্কর উঠিলে শেষে গান ভঙ্গ হ’ত।
পক্ষীগণ চিঁ চিঁ কুচি রবে উড়ে যেত।।
হেন-ই গায়ক ছিল গোবিন্দ মতুয়া।
নাচিত কীর্তনমাঝে যেমন নাটুয়া।।
রসবতী সতীর কনিষ্ঠা সহোদরা।
সাধ্বী সতী সুকেশা সুন্দরী মধুস্বরা।।
সবার কনিষ্ঠা ধনী জানকী নামেতে।
তার বিয়া হ’ল গৌরচন্দ্রের সঙ্গেতে।।
শ্রাবণ মাসেতে বিকশিতা কৃষ্ণকলি।
ফুল দেখে জানকী হইল কুতূহলী।।
ভেবেছেন এই ফুল গেঁথে বিনাসুতে।
এ হার দিতাম হরিচাঁদের গলেতে।।
এমত জানকী দেবী মনেতে ভাবিয়া।
ফুলপানে এক দৃষ্টে রহিল চাহিয়া।।
দেখে ফুল প্রাণাকুল হ’লে উত্তরাক্ষ।
চক্ষের জলেতে তার ভেসে যায় বক্ষ।।
অবসন্নমনা ফুল কাছে উপনীত।
মনে মনে কহে ফুল কেন বিকশিত।।
প্রভু এলে তুই যদি বিকশিতা হ’তি।
তা’হলে প্রভুর গলে যাইতে পারিতি।।
অদ্য বিকশিত হ’লি কল্য হ’বি বাসি।
ঝরিয়া পড়িবি তুই জলে যাবি ভাসি।।
পুস্পপানে চেয়ে র’ল না পালটে আঁখি।
পিছে হাঁটি পিছাইয়া চলিল জানকী।।
ঘরের পিড়ির প’র বসিল তখনে।
আত্ম হারাইয়া চেয়ে আছে ফুল পানে।।
তথা বসি মনে মনে গাঁথিলেন হার।
ধবল লোহিত ফুল হরিদ্রা আকার।।
তিন বর্ণে ফুল তুলে বর্ণে বর্ণে গাঁথি।
থরে থরে গাঁথনি করিল সাধ্বী সতী।।
চারি চারি সাদা ফুল চারি চারি লাল।
চারিটি হরিদ্রা ফুলে করিয়া মিশাল।।
এইভাবে পুস্পহার করিয়া গ্রন্থন।
প্রভুর শ্রীকণ্ঠে দিল করিয়া যতন।।
হরিচাঁদে ফুলসাজে সাজিয়া জানকী।
মনোহর রূপ দেখে অনিমেশ আঁখি।।
আরোপে শ্রীরূপ দেখে স্পন্দহীনা রয়।
ঠিক যেন ধ্যান ধরা যোগিনীর ন্যায়।।
প্রহরেক কালগত এরূপে বসিয়া।
এইভাবে একেশ্বরী আছেন চাহিয়া।।
মৃত্যুঞ্জয় গিয়াছিল দক্ষিণ পাড়ায়।
এসে গৃহে এইভাব দেখিবারে পায়।।
সম্বোধিয়া কহে মৃত্যুঞ্জয়ের রমণী।
প্রহরেক এইভাবে তোমার ভগিনী।।
অঙ্গের স্পন্দন নাহি শ্বাস আছে মাত্র।
চক্ষের নিমিষ নাহি যেন শিবনেত্র।।
দক্ষিণাভিমুখ ছিল দণ্ড চারি ছয়।
উত্তরাভিমুখ এই দণ্ড দুই হয়।।
আহারান্তে ননদিনী ছিলেন শয়নে।
নিদ্রাভঙ্গে গিয়াছিল ফুলের বাগানে।।
বিকশিতা কৃষ্ণকলি দেখিল চাহিয়া।
ফিরে না আসিল গৃহে এল পিছাইয়া।।
জানকীর সেই ভাব মৃত্যুঞ্জয় দেখি।
উচ্চঃস্বরে ডাকে তারে জানকী জানকী।।
চিৎকার ঈষৎ মাত্র শুনিল জানকী।
জ্ঞান নাই অঙ্গে মাত্র দিল এক ঝাঁকি।।
এক ডাক দুই ডাক তিন ডাক দেয়।
তিনবার অঙ্গ কম্প যোগ ভঙ্গ নয়।।
সুভদ্রা কহিছে ডেকনারে মৃত্যুঞ্জয়।
এ যেন কৃষ্ণ আরোপ হেন জ্ঞান হয়।।
মৃত্যুঞ্জয় জানকীকে কহে কাঁদি কাঁদি।
জানকীরে দেখ আমি যাই ওঢ়াকাঁদি।।
ওঢ়াকাঁদি প্রভুধামে যান মৃত্যুঞ্জয়।
উপনীত হ’ল গিয়া সন্ধ্যার সময়।।
ঘোর হয় নাই সন্ধ্যা দ্বীপ জ্বলে ঘরে।
ঠাকুর বসিয়াছেন গৃহের বাহিরে।।
প্রণমিল মৃত্যুঞ্জয় ঠাকুরের পায়।
অপরূপ ফুলসজ্জা দেখিবারে পায়।।
কৃষ্ণকলি পুষ্পহার প্রভুর গলায়।
কি শোভা হয়েছে তাহা কহা নাহি যায়।।
চারি চারি শ্বেত পুষ্প চারি চারি লাল।
চারিটি হরিদ্রা বর্ণ তাহাতে মিশাল।।
চারি পুষ্প শ্বেত আর চারি পুষ্প লাল।
চারিটি হরিদ্রা বর্ণ থরে থরে মাল।।
এই মালা দুই সারি প্রভুর গলায়।
আর দুই সারি মালা দিয়াছে মাথায়।।
মস্তকের পার্শ্ব দিয়া আকর্ণ বেষ্টিত।
ঝুমুকা আকার হার গলেতে দোলিত।।
এক সারি বক্ষঃপর রয়েছে সাজান।
আর এক সারি নাভি পর্যন্ত ঝুলান।।
অপরূপ তাহাতে হয়েছে কিবা সাজ।
গোপীরা সাজায় যেন কুঞ্জ বন মাঝ।।
ফুলহার ঈষৎ ঈষৎ ঝুলিতেছে।
তার মাঝে দলগুলি ঈষৎ লড়িছে।।
বহিতেছে মন্দ মন্দ দক্ষিণে বাতাস।
ফুল হতে বহিতেছে অপর্যাপ্ত বাস।।
এতেক শ্রাবণ মাস আরও সন্ধ্যাকালে।
অল্পক্ষণ দিনমণি গেছে অস্তচলে।।
আকাশে বিচিত্র শোভা স্থগিত বরুণ।
এদিকে উদিত যেন দ্বিতীয় অরুণ।।
মৃত্যুঞ্জয় এসে তাই করে দরশন।
অপরূপ রূপ যেন মদন মোহন।।
জ্ঞানহারা প্রায় যেন হইল অধৈর্য।
ভেবেছেন মৃত্যুঞ্জয় এই কি নিকুঞ্জ।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে প্রভু বল বল বল।
কোন গোপী ব্রজভাবে তোমাকে সাজা’ল।।
প্রভু কন মল্লকাঁদি জানকী নামিনী।
আমাকে সাজিয়ে গেল সেই যে গোপিনী।।
তুমি যারে দেখে এলে যেন ধ্যান ধরা।
উত্তার দেখিলে যার নয়নের তারা।।
মানসেতে মনসুতে মালা গেঁথে ফুলে।
মনে মনে মালা গেঁথে দিল মোর গলে।।
আরোপেতে দেখে মোরে বাক্য নাহি স্ফুরে।
এসেছ যাহার ভাব জানাতে আমারে।।
কি কহিবি তার কথা বল বল বল।
দেখিব দেখিব তারে চল চল চল।।
মৃত্যুঞ্জয় ধরায় পড়িল কাঁদি কাঁদি।
প্রভু বলে চল শীঘ্র যাই মল্লকাঁদি।।
মহাপ্রভু নৌকা ‘পরে উঠিল অমনি।
আস্তে আস্তে মৃত্যুঞ্জয় বাহিল তরণী।।
শুক্লাপক্ষ শুভাস্টমী তিথির সময়।
তরী পরে হরি, তরী বাহে মৃত্যুঞ্জয়।।
ক্রমে ক্রমে নিশাকর কর প্রকাশিল।
ঈশানে ঈষৎ মেঘ ক্রমে দেখা দিল।।
গগনে নক্ষত্র সব হ’য়েছে উদয়।
তার মধ্যে চন্দ্রোদয় কিবা শোভা তায়।।
শোভা দেখি মৃত্যুঞ্জয় আনন্দ অপার।
জয়ধ্বনি করে ক্ষণে করে হুহুঙ্কার।।
স্বেদকম্প পুলকিত মৃত্যুঞ্জয় দেহ।
বলে তোরা হেন শোভা দেখিলি না কেহ।।
বিস্মিত হইল ঠাকুরের পানে চেয়ে।
প্রভু কয় যারে বাছা ত্বরা তরী বেয়ে।।
ধীরে ধীরে বাহে তরী মালা দেখি মোহে।
নিরখি নিরখি নীর নিরবধি বহে।।
বহিতেছে বাহিতেছে মোহিতেছে মালা।
উপনীত হল আসি খাল তালতলা।।
মৃত্যুঞ্জয় গিয়াছেন উড়িয়া নগরী।
আশাপথ চেয়ে তার নারী কাশীশ্বরী।।
নিবাসী নিশ্চিন্তপুর তপস্বী সদ্জ্ঞানী।
দেবী কাশীশ্বরী তার প্রাণের নন্দিনী।।
মৃত্যুঞ্জয় গিয়াছেন যেই পথ দিয়া।
ঠাকুরানী সেই পথে আছেন বসিয়া।।
প্রাণকান্ত গিয়াছেন প্রাণকান্ত স্থানে।
ভাবে কান্ত হেরি কান্ত আসে কতক্ষণে।।
ক্ষণেক বসিয়া থাকে উত্তরাভিমুখে।
ক্ষণে গৃহকার্য করে পুনঃ গিয়া দেখে।।
গৃহকার্য করি যায় গৃহের বাহিরে।
পুনঃ গৃহ পিছে এসে আশাপথ হেরে।।
আবার আসিয়া গৃহকার্য করে ক্ষণে।
ক্ষণে ক্ষণে দৃষ্টি করে জানকীর পানে।।
নিভৃতে বসিল গিয়া গৃহের পশ্চাতে।
আসে কিনা আসে নাথ দেখে আরোপেতে।।
নয়ন মুদিয়া প্রায় অর্ধদণ্ড ছিল।
আরোপে দেখিল প্রভু তালতলায় এল।।
হর্ষোৎফুল্ল হইয়া উঠিল ঠাকুরানী।
সত্বরে আসিল যথা যোগে ননদিনী।।
কহে ডাকি সে জানকী ননদীর ঠাই।
ঠাকুর এসেছে তোর আর চিন্তা নাই।।
কতক্ষণ এইরূপে আরোপে থাকিবা।
অনুমান ছাড়ি কর বর্তমান সেবা।।
কৃষ্ণকলি হার শোভে ঠাকুরের গলে।
সুখে হাতে সৌদামিনী জলদের কোলে।।
বার বার ডাকিতেছে উঠ ঠাকুর-ঝি।
ঠাকুর ঠাকুর ল’য়ে ওই এল বুঝি।।
মৃত্যুঞ্জয় মাতা সে সুভদ্রা ঠাকুরানী।
করিছেন মালা জপ বসি একাকিনী।।
কহিছে বধূর কাছে তোরা কোহিস।
ঠাকুর এসেছে কথা কোথা কি শুনিস।।
বধূ কহে ঠাকুরানী কি কোহিব আর।
ঠাকুর-ঝি গাঁথিয়াছে মালা মনোহর।।
সেই মালা গলে কিবা সেজেছে ঠাকুরে।
অই আসিতেছে নৌকা আর নাহি দূরে।।
হেন মতে হইতেছে কথোপকথন।
মল্লকাঁদি ঘাটে নৌকা আসিল তখন।।
ভকত বৎসল হরি দ্বৈত হরি রূপে।
ইচ্ছিলেন আসিবেন জানকী সমীপে।।
অসম্ভব ক্রিয়া যত তাহাতে সম্ভব।
প্রহ্লাদে রাখিতে যথা স্তম্ভেতে উদ্ভব।।
এক কৃষ্ণ যথা নন্দ গৃহে বন্ধ রয়।
আর কৃষ্ণ কণ্ব মুনি অন্ন মেরে দেয়।।
এক মূর্তি মৃত্যুঞ্জয় নৌকাপরে থাকি।
এক মূর্তি দেখে সুখে সুভদ্রা জানকী।।
ঠাকুরের কথা শুনি সুভদ্রা জননী।
বধূকে কহিল বধূ কহিলি কি বাণী।।
জানকী দিয়াছে মালা ঠাকুরের গলে।
দেখিলি সে মালা তুই তোর ভক্তি বলে।।
তোরা দোঁহে মালা দিয়া কৈলী দেখাদেখি।
আমি অভাগিনী শুধু মালা লয়ে থাকি।।
হেনরূপ হইতেছে কথোপকথন।
উপস্থিত হরিচাঁদ হইল তখন।।
জানকী আসিয়া প্রভু পদে প্রণমিল।
কাশীমাতা গৃহে গিয়া আসন পাতিল।।
গললগ্নী কৃতবাস হইয়া তখনে।
প্রভুকে বলেন বাপ এস হে আসনে।।
শুনিয়া ঠাকুর গিয়া আসনে বসিল।
সুভদ্রা আসিয়া পদে প্রণাম করিল।।
করজোড়ে কহিলেন ঠাকুরের ঠাই।
কি দিয়া জানকী তোমা সা’জাল গোঁসাই।।
ঠাকুর কহিছে তুমি জানিলে কিরূপে।
সুভদ্রা কহিছে বধূ দেখিল আরোপে।।
বধূ কহে হরিচাঁদে সাঁজালে যতনে।
পদ্ম দিয়া পাদপদ্ম সাঁজালে না কেনে।।
বলাবলি উভয়েতে করে ঠারে ঠোরে।
তাই শুনি আমি শেষে জিজ্ঞাসি বধূরে।।
বধূ বলে জানকী যে আরোপেতে ছিল।
কৃষ্ণকলি ফুলহারে তোমারে সাঁজিল।।
এই সেই ফুলহারে সাঁজিলে গোঁসাই।
তব গলে মালা দেখি মানিলাম তাই।।
ওদিকে প্রভুকে ল’য়ে আসেন মৃত্যুঞ্জয়।
মল্লবিলে পদ্মপুষ্প দেখিবারে পায়।।
ভাবিছেন প্রভুকে লইয়া নিজ ঘরে।
এই পদ্ম ফুল দিয়া সাজা’ব ঠাকুরে।।
পদ্মবনে ফুল তোলে বসিয়া নৌকায়।
মহাপ্রভু বলে কি করিস মৃত্যুঞ্জয়।।
মনের মানসা ফুল করিয়া যতন।
চন্দন মাখিয়া ফুলে পূঁজিব চরণ।।
মৃত্যুঞ্জয় ভবনেতে বসিয়া আসনে।
অন্তর্যামী গোঁসাই ভেবেছে মনে মনে।।
কাশীমাতা হরিচাঁদে বসায়ে শয্যায়।
চরণে চন্দন দেন আনন্দ হৃদয়।।
হেনকালে মৃত্যুঞ্জয় আনিলেন ফুল।
ফুল দেখে কাশীমাতা আনন্দে আকুল।।
চন্দনে মাখিয়া পদ্ম দেন পাদপদ্মে।
তুলসীর দাম দেন তার মধ্যে মধ্যে।।
দেবী কাশী হাসি হাসি কহিছেন বাণী।
ঠাকুরের শোভা কিবা দেখে ঠাকুরানী।।
শুনিয়া সুভদ্রা মাতা একদৃষ্টে চায়।
দ্বিগুণ উজ্জ্বল শোভা দেখিবারে পায়।।
একে জানকী দত্ত আরোপের মাল।
পাদপদ্মে পদ্ম ভক্তি চন্দন মিশাল।।
স্ফটিকের উপরে যেন হীরকের চাকা।
চূড়ার উপরে যেন ময়ূরের পাখা।।
দেখি ঠাকুরানী পড়ে পদে লোটাইয়া।
মৃত্যুঞ্জয় পড়িলেন চরণ ধরিয়া।।
জানকী পতিতা পদে কাঁদিয়া কাঁদিয়া।
প্রেম-বন্যা উথলিয়া চলিল বহিয়া।।
কাশীশ্বরী সবে তোলে ধরিয়া ধরিয়া।
ঠাকুর বলেন সবে লহ উঠাইয়া।।
সকলে বসিল এসে ঠাকুরের ঠাই।
মহাপ্রভু পদধরি কাঁদিছে সবাই।।
এ সময়ে মৃত্যুঞ্জয় প্রেমেতে মাতিয়া।
হরি হরি হরি বলে নাচিয়া নাচিয়া।।
মহাপ্রভু বলে আয় আয় মৃত্যুঞ্জয়।
আমরা এখানে তুই নাচিস কোথায়।।
এত শুনি মৃত্যুঞ্জয় নৃত্য সম্বরিল।
শ্রীহরির শ্রীপদে শ্রীপাদ লোটাইল।।
ক্রমে ক্রমে সকলেই প্রেম সম্বরিল।
ফুলের বাগান দিকে নজর পড়িল।।
সন্ধ্যাগ্রে দেখিছে ফুল শাখা পরিপূর্ণ।
এবে দেখে ফুল নাই শাখা সব শূন্য।।
ফুল ছিল বাগানেতে ঘেরা পরিপাটী।
এবে দেখে মাঝে মাঝে দুটি কি একটি।।
এসে গৃহে মৃত্যুঞ্জয় কহিছেন বাণী।
ধন্য মাতা ধন্য পিতা ধন্য মোর ভগ্নী।।
মাতা মোর রত্নগর্ভা যে গর্ভে ভগিনী।
হেন গর্ভে অগ্রে আমি তাহে ধন্য মানি।।
যে গৃহে অনাথ নাথ গৃহ ধন্য মানি।
যে গৃহে তোমাকে সেবে ধন্য সে গৃহিণী।।
তব পাদপদ্মে প্রভু এই ভিক্ষা চাই।
জনমে জনমে তোমা এইরূপে পাই।।
ঠাকুর বলেন বাছা তুইরে সাধক।
জনমে জনমে তুই আমার সেবক।।
যাবচ্চন্দ্র দিবাকর জনমে জনমে।
তব প্রেমে বাধ্য আমি তোমার আশ্রমে।।
মৃত্যুঞ্জয় বলে প্রভু আর নাহি চাই।
অহৈতুকী ভক্তি যেন জন্মে জন্মে পাই।।
জানকী আরোপ মনোরম্য ফুলসাজ।
কহিছেন তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!