সতী স্বামী সহ মৃতা বা দম্পতির স্বর্গারোহণ
পয়ার
প্রভু ভক্ত ব্রজনাথ অতি শিষ্টাচারী।
তার নারী নাম তার বসন্ত কুমারী।।
সাধ্বী সতী পতিব্রতা পরমা সুন্দরী।
প্রভু পদে ভক্তি মতি বলে হরি হরি।।
তিলছড়া গ্রামবাসী শ্রীবংশীবদন।
বসন্ত তাহার কন্যা হরিপদে মন।।
দিবসেতে গৃহকার্য করেন যখনে।
হাতে কাম মুখে নাম করে রাত্রি দিনে।।
যামিনীতে পতিসাথে থাকে এক ঘরে।
পতি পদ বক্ষে ধরি হরি নাম করে।।
ব্রজনাথ হরিনাম করে নিরন্তর।
ঠিক যেন এক প্রাণ এক কলেবর।।
ব্রজনাথ ব্রজভাবে মত্ত নিরন্তর।
কালক্রমে তাহার শরীরে হ’ল জ্বর।।
দেখিয়া বসন্তদেবী চিন্তাকুল ছিল।
একদিন পরে তার চিন্তাজ্বর হ’ল।।
শুনি বংশীবদন গাইন মহাশয়।
দেখিতে জামাতা কন্যা মাচকাঁদি যায়।।
সপ্তদিন জ্বরে পড়ে শ্লেষ্মা বৃদ্ধি হ’ল।
ব্রজনাথ সকলকে কহিতে লাগিল।।
ভ্রাতাগণে বলে আমি চরণের দাস।
আমাকে বিদায় দেহ যাই প্রভু পাশ।।
এত বলি হরি হরি বলিতে লাগিল।
ঘনশ্বাস দেখি সবে বাহিরে আনিল।।
শয়নে নয়ন মুদে হরিপদ ধ্যায়।
হরি হরি বলিয়া জীবাত্মা বাহিরায়।।
ভাই সবে বলে কেহ করনা রোদন।
ভায়ের স্বস্থানে ভাই করেছে গমন।।
জামাতার মৃত্যু দেখি শ্রীবংশীবদন।
কন্যার নিকটে যান করিয়া রোদন।।
কহিছে বসন্তদেবী পিতার গোচরে।
হ’য়েছে পিপাসা বড় জল দেহ মোরে।।
তাহা শুনি বংশী কহে নন্দিনীর ঠাই।
কেমনে খাইবে জল ম’রেছে জামাই।।
কহেন বসন্তদেবী কি কহিলে পিতা।
দাসী ফেলে কোথা যান তোমার জামাতা।।
বিলম্ব না কর পিতা ধ’রে লহ মোরে।
জীবন শীতল করি পতি মুখ হেরে।।
এ জীবন জল পান করিব কি সুখে।
আজ যদি প্রাণনাথ ত্যজিল দাসীকে।।
এত বলি সতী কন্যা উঠিয়া বসিল।
পতির নিকটে যেতে উদ্যতা হইল।।
হেটে যেতে চায় সতী উঠিতে না পারে।
দেখে ত্রস্ত হ’য়ে ব্যস্ত বংশী গিয়া ধরে।।
পিতাকে ধরিয়া সতী পতি ঠাই এসে।
অমনি শয়ন কৈল পতি বাম পার্শ্বে।।
দিলেন দক্ষিণ হস্ত পতির স্কন্ধেতে।
পতি অঙ্গ জড়িয়া ধরিল বাম হাতে।।
উচ্চৈঃস্বরে হরি নাম করি উচ্চারণ।
হরি স্মরি’ শরীর ত্যজিল ততক্ষণ।।
এ হেন মরণ দেখি ধন্য ধন্য মানি।
শোক দুঃখ নাহি কারু করে হরিধ্বনি।।
হরি হরি করি ধরি লইল শ্মশানে।
দাহকার্য সমাধিল হরি গুণ গানে।।
এক সঙ্গে দু’জনার করিল সৎকার।।
কবি কহে রবি গেল হরি কর সার।।