বিধবা রমণীর শ্বেত কুষ্ঠ মুক্তি
পয়ার
মহাপ্রভু স্বরূপেরে বলে বাছাধন।
আমি এবে করি বৎস স্বস্থানে গমন।।
তোর বাটী আসিলাম বাঞ্ছাপূর্ণ হ’ল।
শ্বেত রোগা রমণী দেখিতে বাকী র’ল।।
তোর ঘরে অন্নভুক্ত রহে বহুদিন।
দেখিব সে নবীনা কি হ’য়েছে প্রবীণ।।
স্বরূপ বলিল প্রভু আসিলেন যবে।
সেই নারী প্রণমিল শ্রীপদ পল্লবে।।
প্রভু বলে আমি তাহা লক্ষ্য করি নাই।
ডেকে আন তাহাকে এখন দেখে যাই।।
আজ্ঞামতে স্বরূপ আনিল ততক্ষণে।
লোটায়ে পড়িল নারী প্রভুর চরণে।।
প্রভু বলে রে স্বরূপ! পূর্ব বাক্য রাখ।
সবার সম্মুখে একে মা বলিয়া ডাক।।
রায় কহে যবে দয়া হ’ল মম ভাগ্যে।
শ্রীধামে বসিয়া দাসে যবে দিলে আজ্ঞে।।
সেই হ’তে ঘুচিয়াছে শমনের শঙ্কা।
কাম জয়ী হইয়াছি মেরে জয় ডঙ্কা।।
এখন নাহিক ভয় মা বলিয়া ডাকিতে।
সেই হ’তে এই ভাব আমার মনেতে।।
মা ব’লে ডাকিতে যবে দিলেন হুকুম।
সে হ’তে এ’ দেহে নাই কামের জুলুম।।
সেই হ’তে আমাকে ছাড়িয়া গেছে কাম।
নির্বিঘ্নে বসিয়া জপ করি হরিনাম।।
প্রভু বলে আমি তাহা জেনেছি অন্তরে।
দণ্ডবৎ কর সবে আমি যাই ঘরে।।
এ মেয়ের শ্বেত রোগ আমি জানি তাই।
এক সঙ্গে থাক বটে তুমি দেখ নাই।।
স্বচক্ষে দেখিলে রোগ প্রত্যয় জন্মিবে।
তোর ভক্তিজোরে রোগ এবে সেরে যাবে।।
স্বরূপ বলেন আমি কিছুই না জানি।
শ্রীমুখের বাক্য সত্য এইমাত্র মানি।।
প্রভু কহে আর কেহ জানিতে নারিল।
অনেকের মনে এই সন্দেহ রহিল।।
মনের বিকার নাই তোমা দু’জনার।
আমি তাহা ভালমতে জেনেছি এবার।।
বাহির করহ রোগ দেখুক সকলে।
মনের বিকার যাক হরি হরি বলে।।
স্বরূপ বলেছে সেই রমণীর ঠাই।
কোথা তব শ্বেত রোগ বের কর তাই।।
প্রভু বলে রোগ আছে হাঁটুর উপরে।
আর একটুকু আছে বক্ষের ভিতরে।।
স্বরূপ ফেলিল তার বক্ষের কাপড়।
সবে দেখে রোগ আছে বক্ষের উপর।।
স্বরূপ কহেন সেই নারীর গোচরে।
আছে নাকি শ্বেত রোগ হাঁটুর উপরে।।
হাঁটুর উপরে রোগ দেখাইল নারী।
স্বরূপ ক্রন্দন করে হরিপদ ধরি।
সারে বা না সারে রোগ তাতে ক্ষতি নাই।
শ্রীচরণে থাকে মতি এই ভিক্ষা চাই।।
ঠাকুর বলেন সেই নারীকে চাহিয়া।
মনের বিকার তব গেছে কি ঘুচিয়া।।
ঠাকুরের পদ ধরি কহে সেই নারী।
যা বলাও তাহা আমি বলিবারে পারি।।
ত্রাণ কর্তা আপনি ঘুচিল মম পাপ।
আমি স্বরূপের মা স্বরূপ মম বাপ।।
ডাকামাত্র সেই শ্বেত রোগ সেরে গেল।
সভাশুদ্ধ হরিধ্বনি করিয়া উঠিল।।
ঠাকুরের পদে দোঁহে তখনে লোটায়।
রচিল তারক মৃত্যুঞ্জয়ের কৃপায়।।