ভবঘুরেকথা

রাখাল সঙ্গে গোস্বামীর তিলবনে নৃত্য
পয়ার

নাচে গায় রাখালেরা বলে হরিবোল।
নেচেছে গোস্বামী যেন উন্মত্ত পাগল।।
এক এক বার প্রভু উঠেন নৌকায়।
তখন রাখাল হয় পাগলের প্রায়।।
কহে কেহ বলে ভাই পাগল কোথায়।
কোথা গেল বলে কেহ খুঁজিয়া বেড়ায়।।
যখনে সকলে হয় শোকাকুল মন।
তখন পাগল এসে দেন দরশন।।
আসিয়া গোঁসাই কহে ওরে রাখালেরা।
বল বল হরি বল হে দেরে শালারা।।
রাখালেরা বলে যাহা বল তাতে রাজি।
গো-রাখাল বলে ফেলে যেওনা বাবাজী।।
রাখালের সঙ্গে সঙ্গে পাগল গোঁসাই।
হুঙ্কারিয়া নাচে আনন্দের সীমা নাই।।
নাচিতে নাচিতে হরি হরি বলে কাঁদে।
গোস্বামী হুঙ্কার ছাড়ি ডাকে হরিচাঁদে।।
কেঁদে কেঁদে তিল বনে লুকাল গোঁসাই।
অন্বেষণ করি ফিরে রাখাল সবাই।।
কোথা গেল কোথা গেল রাখালের রব।
পেলেম বা কারে তারে হারাইনু সব।।
সকল রাখাল মিলে খুঁজে বনে বন।
সবে মিলে তিল বন করে অন্বেষণ।।
তিল তিল অন্বেষণ করিয়া না পায়।
তাহাতে তিলের চারা গাছ ভেঙ্গে যায়।।
জমি স্বামী নন্দরায় নমঃশূদ্র তিনি।
রাখালে মারিতে যায় ধাইয়া অমনি।।
তিল ভেঙ্গে নাশ কৈলি আমার এ জমি।
যমালয় তোদের পাঠা’ব অদ্য আমি।।
রাখালেরা বলে মার রায় মহাশয়।
গোস্বামী না পেলে মোরা যাব যমালয়।।
এ বাক্য গোস্বামী যবে শুনিবারে পায়।
জয় হরি বল বলে উঠিয়া দাঁড়ায়।।
এই আমি এই আমি বলেন গোঁসাই।
রাখালেরা বলে তারে পেয়েছিরে ভাই।।
ওরে ভাই তিল আলা মারিবি’ত মার।
মারা ধরা বলে কিছু ভয় নাই আর।।
গোঁসাই বলেন ওরে কে মারিতে চায়।
দেখি কেবা মারে তারে ডেকে ল’য়ে আয়।।
রাখালেরা বলে গিয়া রায়ের গোচরে।
মার যদি এস বাবা ডেকেছে তোমারে।।
প্রভু কাছে যোড়করে কহে এক দাই।
আমার জমিতে এসে নাচো হে গোঁসাই।।
রায় কহে যাও যাও যে ডাকে তোমারে।
আমার জমির তিল গেছে একেবারে।।
আমার জমিতে আর যেওনা পাগল।
যাও যদি তিল ভেঙ্গে যাইবে সকল।।
দাই বলে এই তিল ক্ষেত্র মোর হয়।
নাচো গাও হরি বল যত মনে লয়।।
গোস্বামী বলেছে তোর তিল ভেঙ্গে যাবে।
দাই বলে তিল গেলে তিল দিতে হ’বে।।
যায় যাক থাকে থাক সামান্য এ তিল।
দয়া করি প্রেমভক্তি দেহ এক তিল।।
একতিল প্রেমভক্তি মোরে যদি দেহ।
পরিপূর্ণ হ’বে গোলা নাহিক সন্দেহ।।
মোর গৃহে না ধরিবে ছড়িয়ে পড়িবে।
ধরায় না ধরিবে বিরাজা পার যাবে।।
‘ম্লেচ্ছ যবন যারা মোরে কভু নাহি মানে।
এই যুগে তারাও কাঁদিবে মোর নামে’।।
প্রভুর প্রতিজ্ঞা পূর্বে যাহা যাহা ছিল।
শেষ ‘লীলার প্রধান’ সব সম্ভবিল।।
গোঁসাই তাহার মুখে হস্ত দিয়ে কয়।
নাচিব তিলের মধ্যে জয় হরি জয়।।
অমনি চলিল প্রভু রাখাল সঙ্গেতে।
দক্ষিণাভিমুখ হ’য়ে চলে সকলেতে।।
একবার দৌড়ে যায় দক্ষিণের আলি।
উত্তরাভিমুখ পড়ে চলিল সকলি।।
পুনরায় দৌড়ে যায় পশ্চিম আইলে।
আরবার পূর্ব আলি চলিল সকলে।।
আসে যায় নাচে গায় যেন মল্লযুদ্ধ।
নেচে নেচে তিল ভাঙ্গে করে কক্ষবাদ্য।।
তিল গাছ ভেঙ্গে চুরে নেচেছে রাখাল।
কিয়দংশ গাছে রৈল দুই এক ডাল।।
ডালপাতা ভূমিসাৎ পাড়ায় পাড়ায়।
ভেঙ্গে চুরে তিল গাছ প’ল মৃত্তিকায়।।
এইমত তিল নৃত্য গীতভঙ্গ করি।
পাগল বাহির হইল বলে হরি হরি।।
মহাসংকীর্তন মহা পীযুষের রস।
রসনা রসনা পেয়ে রসনা বিরস।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!