ভবঘুরেকথা

পাগলের নামে বিদ্বেষ
পয়ার

সবে মিলে কানাকানি করে পরস্পরে।
এইসব কার্য কি পাগল ভাল করে।।
ঠাকুরের সম্ভ্রম না রাখে এই বেটা।
বারজাতি মধ্যে কেন এঁটে ভাত বাঁটা।।
কেন ঠাকুরের এক সাথে খেতে বসে।
দধি দুগ্ধ না খাইতে কেড়ে নিল শেষে।।
পাগল হইল কেন এত অত্যাচারী।
মহাপ্রভু পিতৃগুরু ঈশ্বরাধিকারী।।
সাথে খায় কেড়ে লয় সেবা না হইতে।
গৃহস্থের তিল ভাঙ্গে রাখালের সাথে।।
তিল আলা গৃহস্থেরা কত মন্দ কয়।
উচিৎ বলিতে গেলে সাধু নিন্দা হয়।।
এইমত পাগলামী কেন উনি করে।
এ কথা জানাও সবে ঠাকুর গোচরে।।
মহোৎসব করি পরে সবে বাড়ী যায়।
প্রভুর নিকটে গিয়ে একে একে কয়।।
শুনিয়া ঠাকুর কয় তারে পাই যদি।
দেখিস কি করি যদি আসে ওঢ়াকাঁদি।।
থাক সবে গোলোক আসিবে যেই দিনে।
সেদিন সকলে তোরা আসিস এখানে।।
কি জন্য করিল বেটা এত পাগলামী।
গোলোকের পাগলামী ভেঙ্গে দিব আমি।।
একদিন গোলোক আসিল ওঢ়াকাঁদি।
সেই দিন সবে গিয়ে হইলেন বাদী।।
জয় হরি বল রে গৌর হরি বল।
গম্ভীর হুঙ্কার করি উঠিল পাগল।।
মতুয়ারা বসিয়াছে ঠাকুর নিকটে।
পাগলে দেখিয়া হরিচাঁদ ক্ষেপে উঠে।।
বলরে গোলোক মহোৎসবে কি করিলি।
গুরুঠাকুরের কেন অপমান কৈলি।।
রাখাল লইয়া কেন তিল ভেঙ্গে দিলি।
গৃহস্থেরা আসিয়া কেন দেয় গালাগালি।।
গোলোক কহিছে প্রভু কি কহিব আমি।
যাহা কর তাহা করি হয় পাগলামী।।
নাহি মোর জ্ঞান কাণ্ড তাতে হই দোষী।
ভাল মন্দ নাহি বুঝি প্রেম ল’য়ে খুশী।।
কে যেন কি ক’রে যায় কিবা হিতাহিত।
জানিয়া করুণ দণ্ড যে হয় উচিৎ।।
তিল ভাঙ্গি রাখালের সঙ্গে সঙ্গে থেকে।
হিন্দু দিল গালাগালি দাই নিল ডেকে।।
যার জমি সেই দাই বলিল নাচিতে।
তিল ভাঙ্গি দাই বেটা আনন্দিত তা’তে।।
এ যেন কাহার কার্য আমি নাহি বুঝি।
ভাগবত সিদ্ধ ক্রিয়া জগবন্ধু রাজী।।
পাগল বলিছে তোরা জয় হরি বোল।
কেবা কি করিতে পারে ক্ষেপিল পাগল।।
মহাপ্রভু বলে তোরা করিলি নালিশ।
যাহা কহে কর দেখি ইহার সালিশ।।
প্রসাদ বিলাইবার পারে কি না পারে।
যে প্রসাদ বিক্রি হয় আনন্দ বাজারে।।
কুকুরের মুখ হ’তে দ্বিজ কেড়ে খায়।
তাহা বিলাইয়া কি গোলোক দোষী হয়।।
আনন্দ বাজার নহে এ নহে উৎকল।
ইহা যেই মনে ভাবে সেই মূঢ় খল।।
এ হেন আনন্দ চিত্ত হ’য়েছে যাহার।
তার কাছে এই সেই আনন্দ বাজার।।
প্রসাদেতে অবিশ্বাস মনেতে ভাবিলি।
তবে তোরা হাত পেতে কেন তাহা নিলি।।
প্রসাদ লইয়া কই মন হৈল খাটি।
ছাই মাটি ল’য়ে কি করিলি চাটাচাটি।।
হিন্দু দেয় গালাগালি দাই ডেকে নিল।
জেনে আয় কার ক্ষেতে হ’ল কত তিল।।
তোরা যে নালিশ কৈলি না জেনে সন্ধান।
যা দেখি সে ঠাকুরের ভাঙ্গা হুক্কা আন।।
ঠাকুরের হুক্কা ভাঙ্গে কীর্তন খোলায়।
পাকঘরে গোলোক কেমনে টের পায়।।
সূতা দিয়ে গ্রন্থি দিল গিরে আটে নাই।
মাটি দয়া গোলোক যোড়া’য়ে দিল তাই।।
বলিতে বলিতে প্রভু আরক্ত নয়ন।
বলিলেন বাহ্য রুষ্ট কর্কশ বচন।।
ভাঙ্গা হুঁকা মাটি দিয়া যে দিয়াছে যোড়া।
তারপরে দ্বেষ করা মোরে নিন্দা করা।।
রাগাত্মিকা রাগ ধর্ম ওঢ়াকাঁদি গণ।
এর পরে নাহি কোন সাধন ভজন।।
মর্ম না জানিয়া কেহ কারে না নিন্দিবে।
হইলে আত্ম-বিদ্রোহ ছাড়ে খারে যাবে।।
বাহ্য অঙ্গ ডোরক কপিন মালা আর।
সব হ’তে সবাকে করেছি অবসর।।
সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় হইবেক যেই।
না থাকুক ক্রিয়া কর্ম হরি তুল্য সেই।।
কীর্তনেতে লম্ফ করে অসম্ভব কাজ।
ভীমকায় বিশেষ দেখিলে যার ল্যাজ।।
প্রসাদ বাটীতে কেন তারে ভাব মন্দ।
সাবধান কেহ কর নাহি আত্মদ্বন্দ্ব।।
অধিকারী পাক করে লাবড়া ব্যঞ্জণ।
ভোজনে গোলোক মোরে করে নিবেদন।।
আমি খাইলাম তাই গোলোক দেখিল।
সে হেতু কীর্তন মাঝে প্রসাদ বাঁটিল।।
না জানে পাষণ্ডীগণ এই কার্য কার।
ঈশ্বরীয় কর্ম এই ঘটনা তাহার।।
তোরা ইহা না জানিস আমি জানিয়াছি।
গোলোক করিল যাহা আমি করিয়াছি।।
শুনিয়া মতুয়াগণ কাঁদিয়া আকুল।
বলে প্রভু আমাদের বুঝিবার ভুল।।
প্রভু বলে হয়, হয় না জান আপনা।
নিজ চক্ষে নিজ মুখ নাহি দেখা চেনা।।
একবার যারে যে বিশ্বাস করে মনে।
তারে অবিশ্বাস আর করে বা কেমনে।।
তিল গাছ ভাঙ্গিয়াছে যাহার যাহার।
জান তথা হ’তে কিবা আসে সমাচার।।
আট দশ দিন পরে পুকুরের পাড়ে।
বসিলেন মহাপ্রভু ভূমি শয্যা ক’রে।।
এক এক জন করি আইল অনেকে।
নালিশ করিছে তারা এল একে একে।।
ঈশ্বরাধিকারী আর গোলোক কীর্তুনে।
তস্য পুত্র গিরিশ মথুর দুইজনে।।
তালুকের মহেশ আর নিবারণ বালা।
ক্রমে ক্রমে হৈলা হরিভকতের মেলা।।
মৃত্যুঞ্জয় দশরথ আর শম্ভুনাথ।
মদন বদন বনমালী রঘুনাথ।।
ক্রমাগত হইল বহুত লোকজন।
নালিশ করিছে তারা আসিল তখন।।
ঠাকুর বসিয়া কহিছেন সব কথা।
হেনকালে পাগল গোলোক এল তথা।।
ঠাকুর কহিল যারা নালিশ করিলি।
তিল হ’ল কিনা হ’ল তার কি জানিলি।।
হেনকালে প্রণমিয়া বলে সেই দাই।
কোথায় আছেন মোর পাগল গোঁসাই।।
আমার জমিতে তিনি নাচিয়া গাইয়া।
তিল নষ্ট করেছিল রাখাল লইয়া।।
ভাঙ্গা ডাল মাটি মধ্যে পড়িয়া যা ছিল।
হ’য়ে বৃষ্টি ডাল পুষ্টি তিলে বেড়ে গেল।।
নন্দরায় গোস্বামীকে তাড়াইয়া দিল।
তবু তার জমিতে যথেষ্ট তিল হৈল।।
অন্য অন্য কৃষকের যত তিল জমি।
কারু মোটে হয় নাই কারু বহু কমি।।
তিল ভাঙ্গে আমি খুশী রায় করে দোষী।
তবু অন্য হ’তে তিল চতুর্গুণ বেশী।।
রায়ের দু’বিঘায় ফলেছে পাঁচ সলি।
আমার দু’বিঘা জমি রায়দের আলি।।
আমার সে ক্ষেত্রে তিল হ’ল নয় সলি।
আসিয়াছি গোস্বামীর কথা যাব বলি।।
আমি চির দাস প্রভু দয়া কর মোরে।
যবন বলিয়া ঘৃণা না কর আমারে।।
প্রভু হরিচাঁদ বলে ওহে ভক্তগণ।
কি কহে যবন সবে করহে শ্রবণ।।
গোলোক কি করে কেহ না পাইলে দিশে।
এখন গৃহেতে গিয়া ভাব ব’সে ব’সে।।
শুনি মতুয়ারগণ ভাসে অশ্রুজলে।
পাগল হুঙ্কার করি জয় হরি বলে।।
ভাষা ছন্দে কহে কবি তারক সরকার।
হরি হরি বল ভাই দিন নাহি আর।।
আদেশিল প্রভু দশরথ মৃত্যুঞ্জয়।
চতুর্বিংশ বর্ষ পরে পাগল উদয়।।
মহানন্দ প্রেমানন্দ বলে বার বার।
দিন গেল গেল না মনের অন্ধকার।।
হরিলীলামৃত অব্জ অর্ক মহানন্দ।
বিরচিল তারকের হৃদে মহানন্দ।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!