আমার মন কি যেতে চাও
আমার মন কি যেতে চাও সুধা খেতে অন্ত:পুরে।
যেতে পারবি নে পারবি নে সেথা,
ওরে রাগের মানুষ চলে নির্বিকারে।।
আনন্দময় বাজারখানি,
সদা হচ্ছে প্রেমের ধ্বনি,
আগুনে বারুদে এক ঠাঁই;
সেথা লোভী-কামীর যেতে বারণ,
তথা কেবল শুদ্ধ রাগের করণ,
জ্বেলে রূপের বাতি হাতে
যেতে হবে সেই পথে,
সত্ত্ব রজ: তম: রেখে দূরে।।
সেখানে নেই হিংসা-নিন্দা,
জ্বরা-মৃত্যু, প্রভাত-সন্ধ্যা;
রয় বর্ণচ্ছটা দীপ্তমান হ’য়ে-
সেথা নেই দিবাকর নিশাকর,
ব্রহ্মা-বিষ্ণু অগোচর,
সেথা পবন যেতে নারে-
মন, ও তুই যাবি কেমন ক’রে।
উপরোধে কি কেউ ঢেঁকি গিলতে পারে।।
গোঁসাই হরি কহেন বচন-
যার আছে নিষ্ঠা-সাধন,
অনায়াসে সে-ই যেতে পারে।
(ওরে তুই) রৈলি বেনাগাছে ব’সে,
ডুমুর গিলবি কোন্ সাহসে?
ও তোর যাবার এই কি করণ.
শোন রে পদ্মলোচন,
পিপীলিকার পাখা ওঠে কেবল
মরিবার তরে।।
মন মিছে ভাবনা, তুমি আপনার দেহের ঠিক জান না।
প্রেম-রতি তোর হবে কিসে,
জীব-রতি তোর ষোল আনা।।
সাধুসঙ্গ উয়ের মাদা,
হয় মাদা, নয় জন্ম কাদা-
এ বড় দায়,-
যেমন ফণীর মুখে বর্ষে মণি,
সাধু হৈ দিলে না ধরলে ফণা।।
হরি বলে পদ্মলোচন,
কাটলে গাছ ডাকলে মরণ,
কে বাঁচায় এখন;
যেমন ছড়ালে বীজ গাছ উপজে,
ঐ দেখ রবির তাতে ধান সেজে না।।
……………………
অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের ‘বাংলার বাউল ও বাউল গান’ গ্রন্থ থেকে এই পদটি সংগৃহিত। ১৩৬৪ বঙ্গাব্দে প্রথম প্রকাশিত এই গ্রন্থের বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। লেখকের এই অস্বাধারণ সংগ্রহের জন্য তার প্রতি ভবঘুরেকথা.কম-এর অশেষ কৃতজ্ঞতা।
এই পদটি সংগ্রহ সম্পর্কে অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মহাশয় লিখেছেন- পদ্মলোচন বা পোদো একজন প্রাচীন বাউল-সংগীত-রচয়িতা। তাঁহার কোথায় বাড়ি বা কোথায় আখড়া ছিল, তাহা অনেক বাউলকে জিজ্ঞাসা করিয়াও ঠিক জানা যায় নাই। সকলেই বলে, তিনি প্রাচীন পদকর্তা ও রাঢ়দেশের লোক ছিলেন।
কলিকাতার মাণিকতলা আখড়ার অতি-বৃদ্ধ অনন্ত গোঁসাই (১৯৫০ সালে বয়স ৯৫) বলেন যে, তিনিও তাঁহার গুরুর মুখে এই সব গানই শুনিয়াছেন এবং তাঁহার গুরুও পদ্মলোচনকে অতি প্রাচীন বাউল বলিয়া জানিতেন। প্রাচীন হইলেও পদ্মলোচনের যে কয়টি গান আমরা পাইয়াছি, তাহাতে প্রাচীনত্বের বিশেষ কোনো চিহ্ন নাই। হয়তো লোকমুখে চলিতে চলিতে ইহাদের অনেক বিকৃতি ও পরিবর্তন সাধিত হইতে পারে।
বাউল-গান সম্বন্ধে এ কথাটি অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু যাহা আমরা পাইতেছি তাহা হইতে ভাষা সম্বন্ধে কোনো প্রাচীনত্বের অনুমান করা যায় না। খুব বেশি হইলেও অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিক হইতে আরম্ভ করিয়া ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ইহাদের রচনাকাল। লালনের গানের রচনা যদি যৌবনকাল হইতে আরম্ভ হয়, তবে আমরা উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ হইতে তাহার রচনা আরম্ভ হইয়াছে, এইরূপ সঙ্গত অনুমান করিতে পারি।
লালনের গানে দুই-একটি “যৈছে” “তৈছে” প্রভৃতি পদের ব্যবহার আছে, কিন্তু পদ্মলোচনের গানে তাহাও নাই। বড় জোড় উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বর্তমান গানগুলির রচনাকালের শেষ সীমা ধরা যাইতে পারে।
পদ্মলোচনের দুই একটি গান কোনো কোনো সংগীত-সংগ্রহের মধ্যে স্থানলাভ করিতে পারে, কারণ ইনি আদিযুগের বাউল-গান-রচয়িতা। এই সংকলনে পদ্মলোচনের দীর্ঘ কয়টি গানই বৃদ্ধ অনন্ত গোঁসাই মুখে মুখে আবৃত্তি করিয়া গিয়াছেন, আমি লিখিয়া লইয়াছি; কয়েকটি ঘোষপাড়ার নিকটবর্তী মদনপুরের আকবর শাহ্ ফকিরের গানের খাতা হইতে এবং অন্য কয়টি বর্ধমান হইতে সংগৃহীত।
সংগ্রহের মধ্যে পদ্মলোচনের কয়েকটি গান আমি গ্রহণ করি নাই, সেগুলি বিকৃত ও সন্দেহজনক বলিয়া মনে হইয়াছে।
পদ্মলোচনের ভাষার উপর বিশেষ দখল এবং প্রকাশভঙ্গীতেও মুন্সীয়ানা লক্ষিত হয়।
…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন-
voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….