ভবঘুরেকথা
সিন্ধু সভ্যতা হিন্দু হরপ্পা মহেঞ্জোদারো

হিন্দু সভ্যতার শিকর আবিষ্কার

-অতুল সুর

হিন্দু সভ্যতার ক্ষেত্রে বিগত শতাব্দী চিহ্নিত হয়ে আছে এক অত্যাশচর্য আবিষ্কারের জন্য। সেটা হচ্ছে ১৯২২ খ্রীস্টাব্দে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কার। এই আবিষ্কারের পূর্বে পন্ডিতমহলের বিশ্বাস ছিল যে আগন্তুক আর্যরাই ভারতীয় সভ্যতার স্রষ্টা।

তাঁরা মনে করতেন যে খ্রীস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে আর্যরা পঞ্চনদের উপত্যকায় আসবার পূর্বে, ভারতের লোকরা ছিল অসভ্য ও বর্বর এবং আর্যরাই তাদের সভ্য করে তুলেছিল। কিন্তু সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কার এক লহমায় প্রমাণ করে দিয়েছিল যে ওই ধারণা একেবারেই ভুল।

আর্যরা এদেশে আসবার হাজার বৎসর পূর্বেই এদেশে প্রাদর্ভূত হয়েছিল এক শিক্ষিত নগর সভ্যতা, যার বাহকরা আর্যদের চেয়ে অনেক বেশি সভ্য ছিল। বরং বলা যেতে পারে যে সিন্ধু সভ্যতার বাহকদের তুলনায়, আর্যরাই ছিল এক বর্বর জাতি।

সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে আমার পরিচয় প্রত্যক্ষ। ১৯২৮ খ্রীস্টাব্দে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব সমীক্ষা অধিকরণের সর্বময় কর্তা স্যার জন মারশাল আমাকে নিয়োজিত করেন ‘হিন্দু-সভ্যতার গঠনে সিন্ধু সভ্যতার অবদান’ সম্বন্ধে গবেষণা করবার জন্য। এই গবেষণার কাজটা দু পর্যায়ে সমাপ্ত হয়েছিল।

প্রথম পর্যায়ে মহেঞ্জোদারোয় ও দ্বিতীয় পর্যায়ে কলকাতায়। প্রথম পর্যায়ে আমি যখন মহেঞ্জোদারোতে সরেজমিনে গবেষণা চালাচ্ছি, তখন এক বাঙালী-বিদ্বেষী অফিসারের হাতে নিপীড়িত হবার ভয়ে আমাকে কলকাতাতে পালিয়ে আসতে হয়েছিল।

সে কথাটা যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-গ্রাজুয়েট ডিপার্টমেন্টের প্রেসিডেন্ট ড. সর্ব পল্লী রাধাকৃষ্ণন ও সেনেটের সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য শ্যামাপ্রসাদ মখোপাধ্যায়ের কানে গেল, তখন তাঁরা আমাকে বৈতনিক গবেষক নিযুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুশীলন চালিয়ে যেতে বললেন।

দু’ বৎসর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুশীলন চালিয়ে এই তথ্য উত্থাপন করলাম যে হিন্দু সভ্যতার গঠনের মূলে বারো-আনা ভাগ আছে সিন্ধু উপত্যকার প্রাক-আর্য সভ্যতা; আর মাত্র চার-আনা ভাগ মণ্ডিত আর্য সভ্যতার আবরণে। আমার গবেষণা-লব্ধ তথ্যসমূহ আমি স্যার জন মারশালের কাছে পাঠাতাম।

আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বিশদ প্রতিবেদন পেশ করতাম। আমার সতীৰ্থ ড. নীহাররঞ্জন রায় ১৯৩১ খ্রীস্টাব্দে যখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘ক্যালকাটা রিভিউ’ পত্রিকার সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন, তখন তিনি আমার গবেষণা সম্পর্কিত প্রতিবেদনের অংশবিশেষ ওই পত্রিকায় প্রকাশ করেন।

ছোট ছোট যে সব দ্রব্যসামগ্রী আমরা সে বৎসর পেয়েছিলাম, তার মধ্যে ছিল মেয়েদের মাথার কাঁটা। তা থেকে আমরা সহজেই অনুমান করেছিলাম যে, মেয়েরা খোঁপা বাঁধত ও খোঁপায় কাঁটা গুঁজত। তবে মেয়েরা যে বেণী ঝুলিয়েও ঘুরে বেড়াত, তার প্রমাণও আমরা পেয়েছিলাম।

কিছু অংশ ‘ইণ্ডিয়ান হিসটরিক্যাল কোয়াটারলি’ পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছিল। পরে এগুলি পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৩৬ খ্রীস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান ড. দেবদত্ত রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকার ইণ্ডিয়ান কালচারেল কনফারেনসে প্রদত্ত তাঁর সভাপতির ভাষণে বললেন-

‘হিন্দু সভ্যতা যে আর্য ও অন্যান্য সভ্যতার মিশ্রণে উদ্ভূত এটা যে চারজন বিশিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ করেছেন তাঁরা হচ্ছেন স্যার জন মারশাল, রায়বাহাদুর রমাপ্রসাদ চন্দ, ড. স্টেলা ক্রামরিশ ও শ্রীঅতুলকৃষ্ণ সুর।’

তারপর অনেক বছর কেটে গেল; ভারতের ইতিহাসের ওপর প্রাকবৈদিক সভ্যতার প্রভাব যে কতখানি, তা আমাদের ঐতিহাসিকরা বুঝলেন না। গতানুগতিক ভাবে ভারতের ইতিহাস রচিত হতে লাগল, মাত্র বৈদিক যুগের আগে সিন্ধু সভ্যতা সম্বন্ধে একটা অধ্যায় যোগ করে দিয়ে।

আমি যখন মহেঞ্জোদারোয় যাই, তখন নগরীর যে অঞ্চলে খননকার্য চলছিল, তার নামকরণ করা হয়েছিল : DK Area-Intermediate III period। মহেঞ্জোদারোর প্রশস্ত রাজপথ ও সমান্তরাল রাস্তাগলি সে বৎসরই আবিস্কৃত হয়েছিল। প্রশস্ত রাজপথটি উত্তর-দক্ষিণমুখী।

রাজপথটি তখন মাত্র এক কিলোমিটার পর্যন্ত খুঁড়ে বের করা হয়েছে। রাজপথটি ৩১ থেকে ৩৬ ফুট প্রশস্ত, আর সমান্তরাল পথগালি ২০ থেকে ২৫ ফুট। সে বৎসর আরও আবিস্কৃত হয়েছিল নগরীর পয়ঃপ্রণালী। পোড়া ইট দিয়ে তৈরী এই পয়ঃপ্রণালী অনেকটা পথ রাস্তার পশ্চিম ধার দিয়ে এসে, এক জায়গায় রাস্তা অতিক্রম করে, রাস্তার পূর্ব পাশ ধরে চলে গিয়েছিল।

বাড়ির দূষিত জল এই পয়ঃপ্রণালীতে এসে পড়ত, তবে অনেক বাড়িতে ‘সোক্‌পিট’ও ছিল। প্রতি বাড়ির প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকলেই সামনে পড়ত বাড়ির প্রাঙ্গণ। প্রবেশ পথের নিকট প্রাঙ্গণের এক পাশে থাকত বাড়ির কূপ। স্নানের সময় আবরু রক্ষার জন্য কূপগুলিকে দেওয়াল দ্বারা বেষ্টিত করা হত।

রাজপথের দিকে বাড়ির যে দোকানঘরগুলি ছিল, তার অনেকগলির সামনে আমরা আবিষ্কার করেছিলাম ইটের গাঁথা পাটাতন। বোধহয় এই পাটাতনগলির ওপর বিক্রেতারা দিনের বেলা তাদের পণ্যসম্ভার সাজিয়ে রাখত, এবং রাত্রিকালে সেগালিকে দোকান-ঘরে তুলে রাখত।

ছোট ছোট যে সব দ্রব্যসামগ্রী আমরা সে বৎসর পেয়েছিলাম, তার মধ্যে ছিল মেয়েদের মাথার কাঁটা। তা থেকে আমরা সহজেই অনুমান করেছিলাম যে, মেয়েরা খোঁপা বাঁধত ও খোঁপায় কাঁটা গুঁজত। তবে মেয়েরা যে বেণী ঝুলিয়েও ঘুরে বেড়াত, তার প্রমাণও আমরা পেয়েছিলাম।

অনেকেই বলেন যে সিন্ধুসভ্যতা ও আর্যসভ্যতা অভিন্ন। কিন্তু এটা যে ভ্ৰান্ত মত সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। দুই সভ্যতার মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করলেই এটা বুঝতে পারা যাবে। দুই সভ্যতার মূলগত পার্থক্যগুলি আমি নীচে দিচ্ছি-

ব্যাপকভাবে খননকার্যের ফলে এখন হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো ছাড়া তামাশ্ম যুগের সভ্যতার আরও অনেক কেন্দ্র খুঁজে বের করা হয়েছে। এর ফলে আমরা জানতে পেরেছি যে এই সভ্যতার বিকাশ পনেরো লক্ষ বর্গ মাইল ব্যাপী এক বিস্তৃত এলাকায় ঘটেছিল।

১৯৪৭ খ্রীস্টাব্দে দেশ-বিভাগের পর এই সকল কেন্দ্রের কিছু পাকিস্তানে ও কিছু ভারতের মধ্যে পড়েছে। সিন্ধু সভ্যতার যেসব কেন্দ্র ভারতের মধ্যে পড়েছে সেগালি হচ্ছে- কালিবঙ্গান, লোথাল, রূপার, চণ্ডীগড়, সুরকোটড়া, দেশলপুর, নবিনাল, রঙপুর, ভগৎরাও, মাণ্ড, বরা,

বরগাওন, বাহাদারাবাদ, শিশওয়াল, মিটাথাল, আলমগিরপুর, কায়াথা, গিলাণ্ড, টড়িও, দ্বারকা, কিনডারখেদ, প্রভাস, মাটিয়ালা, মোটা, রোজড়ি, আমরাফলা, জেকডা, সুজনপুর, কানাসুতারিয়া, মেহগাওন, কাপড়খেদা ও সবলদা।

এছাড়া তামাশ্ম যুগের সভ্যতার নিদর্শন আমরা পেয়েছি- লালকিলা, নোয়া, মানোটি, দৈমাবাদ, মহিষদল, বানেশবরডাঙ্গা, পাণ্ডুরাজার ঢিবি প্রভৃতি স্থান থেকেও। ১৯২৯-৩১ খ্রীস্টাব্দে আমি যখন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈতনিক গবেষক হিসাবে সিন্ধু সভ্যতা সম্বন্ধে অনুশীলন করেছিলাম,

তখন আমার প্রতিবেদনের প্রথম অনুচ্ছেদেই বলেছিলাম- ‘এ সম্পকে ঝুঁকি নিয়ে একথা বলা যেতে পারে যে পরবর্তীকালে অনুরূপ সভ্যতার নিদর্শন গঙ্গা উপত্যকাতেও পাওয়া যেতে পারে, যার দ্বারা প্রমাণিত হবে যে এ সভ্যতা উত্তর ও প্রাচ্য ভারতেও বিস্তার লাভ করেছিল।’ আজ খননকার্যের ফলে আমার সেই অনুমান বাস্তবে পরিণত হয়েছে।

অনেকেই বলেন যে সিন্ধুসভ্যতা ও আর্যসভ্যতা অভিন্ন। কিন্তু এটা যে ভ্ৰান্ত মত সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। দুই সভ্যতার মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করলেই এটা বুঝতে পারা যাবে। দুই সভ্যতার মূলগত পার্থক্যগুলি আমি নীচে দিচ্ছি-

১. সিন্ধু সভ্যতার বাহকরা শিশ্ন-উপাসক ছিল মাতৃকাদেবীর আরাধনা করত। আর্যরা শিশ্ন-উপাসক ছিল না ও শিশ্ন-উপাসকদের ঘৃণা ও নিন্দা করত। আর্যরা পুরুষ দেবতার উপাসক ছিল। মাতৃকাদেবীর পূজার কোন আভাসই আমরা ঋগ্বেদে পাই না!

২. আর্যরাই প্রথম ঘোড়াকে পোষ মানিয়েছিল। ঘোড়াই ছিল তাদের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জন্তু। এখানে বলা দরকার যে ঘোড়ার কোন অশ্মীভূত (f০ssilized) অস্থি আমরা সিন্ধুসভ্যতার কোন কেন্দ্রে পাইনি। সিন্ধুসভ্যতার বাহকদের কাছে বলীবর্দই প্রধান জন্তু ছিল।

এটা শীলমোহরসমূহের ওপর পুনঃ পুনঃ বলীবর্দের প্রতিকৃতি খোদন থেকে বঝতে পারা যায়। পশুপতি শিব আরাধনার প্রমাণও মহেঞ্জোদারো থেকে পাওয়া গিয়েছে। বলীবর্দ শিবেরই বাহন। সুতরাং সিন্ধুসভ্যতার কেন্দ্রসমূহে বলীবর্দের প্রাধান্য সহজেই অনুমেয়।

৩. সিন্ধুসভ্যতার বাহকরা নগরবাসী ছিল। আর্যরা নগর নির্মাণ করত না। তারা নগর ধবংস করত। সেজন্য তারা তাদের দেবতা ইন্দ্রর নাম পুরন্দর রেখেছিল।

৪. আর্যরা মৃত ব্যক্তিকে দাহ করত। সিন্ধু সভ্যতার ধারকরা মৃতকে সমাধিস্থ করত।

৫. আর্যদের মধ্যে লিখন প্রণালীর প্রচলন ছিল না। কিন্তু সিন্ধু সভ্যতার ধারকদের মধ্যে লিখন প্রণালী সুপ্রচলিত ছিল।

৬. সিন্ধুসভ্যতা যে আর্যসভ্যতা নয়, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে মৃৎপাত্র। কুরু-পঞ্চাল দেশ, তার মানে যেখানে আর্যসভ্যতা বিস্তার লাভ করেছিল, সেখানকার বৈশিষ্ট্যমূলক মৃৎপাত্রের রঙ ছিল ধূসর বর্ণ। সিন্ধুসভ্যতার কেন্দ্র সমূহ থেকে যে সব মৃৎপাত্র পাওয়া গিয়েছে সেগুলির রঙ হচ্ছে ‘কালো-লাল’।

৭. সিন্ধু সভ্যতা ছিল কৃষিভিত্তিক সভ্যতা। আর্যরা প্রথমে কৃষিকাষ জানত না। এটা আমরা শতপথব্রাহ্মণের এক উক্তি থেকে জানতে পারি। (এ সম্বন্ধে বিশদ বিবরণের জন্য আমার ‘হিন্দু সভ্যতার নৃতাত্ত্বিক ভাষ্য’ দ্রষ্টব্য।)

৮. সিন্ধুসভ্যতার লোকেরা হাতির সঙ্গে বেশ সপরিচিত ছিল। আর্যদের কাছে হাতি এক নতুন জীববিশেষ ছিল। সেজন্য তারা হাতিকে ‘হস্তবিশিষ্ট মৃগ’ বলে অভিহিত করত। বস্তুতঃ হাতিকে প্রাচ্য ভারতের পালকপ্য নামে এক ঋষিই প্রথম পোষ মানিয়েছিল।

এসব প্রমাণ থেকে সহজেই বঝা যাবে যে আর্যসভ্যতা ও সিন্ধুসভ্যতা এক নয়।

গোড়ার দিকে আর্যরা সিন্ধুসভ্যতার বাহকদের সঙ্গে তুমুল, সংগ্রাম চালিয়েছিল। কিন্তু তাদের এই গোড়ার দিকের বৈরিতা পরবর্তীকালে আর স্থায়ী হয়নি। পঞ্চনদ থেকে তারা যতই পূর্বদিকে অগ্রসর হল, ততই তারা এদেশের লোকের সংস্পর্শে এল। তারা এদেশের মেয়েদেরও বিয়ে করল।

বৈদিক আত্মকেন্দ্রিক স্তুতিগানের পরিবর্তে আসে ভক্তি। এর ওপর প্রাগার্য, তান্ত্ৰিক ধর্মেরও প্রভাব পড়ে। বৈদিক যুগের আর্যরা যাদের ঘৃণার চক্ষে দেখতেন ও যাদের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম করতেন, শেষ পর্যন্ত সেই অনার্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীসমূহেরই জয় হল।

যখন অনার্য রমণী গৃহিণী হল, তখন আর্যদের ধর্মকর্মের ওপর তার প্রতিঘাত পড়ল। ক্ৰমশঃ তারা বৈদিক যজ্ঞাদি ও বৈদিক দেবতাগণকে পশ্চাদভূমিতে অপসারণ করল। আর্য ও অন্যান্য সংস্কৃতির সংশ্লেষণে পৌরাণিক দেবতামণ্ডলীর সৃষ্টি হল।

আর্য ও অনার্য সভ্যতার সংশ্লেষ ঘটেছিল সেখানে, যেটাকে আগে আমরা ‘কুরু-পাঞ্চাল’ দেশ বলতাম বা গঙ্গা ও যমুনার অন্তবর্তী অঞ্চল। সেখানে আর্যদের আপোষ করতে হয়েছিল অনার্যদের ভাষা, সভ্যতা ও লোকযাত্রার সঙ্গে। এটা বিবর্তনের ক্ৰমিক ধারাবাহিকতার ভিতর দিয়ে সম্পূর্ণতা লাভ করেছিল পৌরাণিক যুগে।

এই সংশ্লেষণের পর আমরা ভারতীয় সভ্যতার সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ দেখি, যেটা বৈদিক সভ্যতা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। লোকে আর ইন্দ্র, বরুণ প্রভৃতি বৈদিক দেবতার স্তুতিগান করে না। বৈদিক যজ্ঞ সম্পাদন করে না। নতুন দেবতামণ্ডলীর পত্তন ঘটে। যজ্ঞের পরিবর্তে আসে পূজা ও উপাসনা।

বৈদিক আত্মকেন্দ্রিক স্তুতিগানের পরিবর্তে আসে ভক্তি। এর ওপর প্রাগার্য, তান্ত্ৰিক ধর্মেরও প্রভাব পড়ে। বৈদিক যুগের আর্যরা যাদের ঘৃণার চক্ষে দেখতেন ও যাদের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম করতেন, শেষ পর্যন্ত সেই অনার্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীসমূহেরই জয় হল।

বেদ সংকলন ও মহাভারত পুরাণ ইত্যাদি রচনার ভার ন্যস্ত হল এক অনার্য রমণীর জারজ সন্তানের ওপর। এ সবই আমরা বঙ্গাব্দ চতুর্দশ শতকের আবিষ্কার ও অনুশীলনের ফলে জানতে পেরেছি।

দর্শনের ইতিহাস বিচার>>

…………………..
চোদ্দ শতকের বাঙালী (১৯৯৪) : অতুল সুর

…………….
আরও পড়ুন-
মঠ, মন্দির ও মসজিদ
গ্রামীন সমাজ ও জীবনচর্য
বাঙলা ও বাঙালী
হিন্দু সভ্যতার শিকর আবিষ্কার

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

……………….
আরও পড়ুন-
দর্শনের ইতিহাস বিচার
আইয়োনীয় দর্শন
টোটেম বিশ্বাস
নির্ধারণবাদ
বিতণ্ডাবাদী
অতীন্দ্রিয় রহস্যবাদ
জনগণের দর্শন ও বস্তুবাদী দর্শন
লোকায়ত ও সাংখ্য
লোকায়ত, বৈষ্ণব, সহজিয়া
প্রকৃতিবাদী দার্শনিকবৃন্দ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!