-সাধক সৎচিত্তানন্দ
কিন্তু তাহাদের অন্তর-মন-জ্ঞান-বুদ্ধি প্রেমময়-ভক্তিপূর্ণ না হওয়ার কারণে। তাহারা অনেক কিছুই ঠিকঠাক মতো ধরিয়া উঠিতে পারেন না। তাহারা জ্ঞানের অহমিকায় ডুবিয়া থাকেন। কি কি পাঠ করিয়াছে? কি কি পাঠ করা উচিত? কি কি পাঠ না করিলে জীবন ব্যর্থ? সকল সময় এইসকল তালিকা মাথায় লইয়া চলে।
তাহারা ধরিয়াই লয়। যেই মতে তাহারা জ্ঞান প্রাপ্ত হইয়াছে বলিয়া তাহাদের ধারণা। তাহারা মনে করিয়া থাকে সেই মতই একমাত্র পথ। যাহা দ্বারা জ্ঞান অর্জন সম্ভব। অন্য কোনো পথ থাকিতে পারে ইহা তারা মানিতে নারাজ। এই নিয়াই তাহাদের সকল তর্ক।
সুন্দর-নান্দনিক প্লেটে সাজানো নির্দিষ্ট-আকার আকৃতির বেষভূষা না হইলেও যে মিষ্টি মিষ্টিই থাকে। অর্থাৎ সত্য সত্যই থাকে। এই সহজ সরল বিষয়টি তাহারা মানিতে চায় না। তাহাদের এক কথা মিষ্টি হইতে হইবে সেই মতো, যা তারা খাইয়া মিষ্টি বলিয়া মানিয়া লইয়াছে।
অর্থাৎ সত্য এখানে ঘটনা না। ঘটনা হইলো সত্যের যে সংজ্ঞা তাহারা মুখস্থ করিয়াছে। শিক্ষক তাহাদের যে মতে বুঝাইয়াছে তাই সত্যের শেষ কথা। ইহার বাইরে সত্য বলিয়া কিছু হইতেই পারে না। বাকি সকলই মিথ্যা। কিন্তু ইহা কিছুতেই বুঝিতে চায় না।
সত্য সত্যই। তাহা যেই রূপেই হোক। অর্থাৎ প্রকৃত সত্য জ্ঞান তাহাই। যাহা ব্রহ্মাণ্ডের সত্য জ্ঞান। তাহা সর্বব্যাপী। তাহাকে সংজ্ঞার জালে আবধ্য যেমন করা যায় না। কেহ করিতেও পারে নাই। করিতে পারিবে বলিয়াও নিশ্চিত হওয়া যায় না।
তাহারা পথে ঘুরিয়া বেড়ায় জ্ঞানীর খোঁজে। কিন্তু সেই কথা তাহারা কখনো স্বীকার করিয়া থাকেন না। এমন কি এই কথাও স্বীকার করিতে কুণ্ঠাবোধ করিয়া থাকেন যে, তাহারা ঘুরিয়া বেড়ান। তাহারা কথায় কথায় বলিবে, আপনাদিগের মতন আমরা ঘুড়িয়ে বেড়াই না।
কারণ এই ব্রহ্মাণ্ডই হইলো রহস্যময়। রহস্যময়তাই ইহার ধর্ম। রহস্য ধরিয়া রাখিতে না পারিলে তাহার ধর্ম ন্যাশ হইবে। এই রহস্যভেদ আদতে সাধনা নয়। এই রহস্যে মিশে যাওয়াই সাধনা। অর্থাৎ রহস্যের সহিত লীন হইতে পারাই সাধনা।
তবে সকলে এইরূপ ভাবিবে তাহারও কোনো মানে হইতে পারে না। এর ভিন্ন ভাবনাও থাকিবে। এইটুকু প্রকৃত সাধক অল্পবিদ্যাতে ধরিতে পারিলেও। জ্ঞান অহংকারে আবিষ্ঠ যাত্রীরা তাহা বুঝিতে পারে না। দিব্যি করিয়া বলা যায়, তাহাদের গুরুদেবও তাহাদের এইরূপ শিক্ষা দেন না।
তথাপিও তাহারা গুরুর দোহাই দিয়াই এইরূপ আচরণ করিয়া থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় তাহাদের নিজ গুরু সম্পর্কে অঘাৎ ভক্তিপূর্ণ আচরণ লক্ষ করা গেলও, আদতে তাহারা সন্দিহান প্রকৃতির হইয়া থাকে। গুরু সম্পর্কে সুন্দর সুন্দর বাণী, স্মৃতি লইয়া আলোচনা করিতে দেখা যায় তাদের।
তবে তা যে তারা জীবন দিয়ে পালন করেন না। তা তাহাদের সহিত আলাপেই টের পাওয়া যায়। আদতে তাহারা নিজ স্বার্থের খাতিরে সকল কর্ম করিয়া থাকে। এমনকি যাহাদের সহিত চলাচল করে। আড়ালে তাহাদের সম্পর্কে কুৎসা রটাইতেও পিছপা হয় না।
তাহারা পথে ঘুরিয়া বেড়ায় জ্ঞানীর খোঁজে। কিন্তু সেই কথা তাহারা কখনো স্বীকার করিয়া থাকেন না। এমন কি এই কথাও স্বীকার করিতে কুণ্ঠাবোধ করিয়া থাকেন যে, তাহারা ঘুরিয়া বেড়ান। তাহারা কথায় কথায় বলিবে, আপনাদিগের মতন আমরা ঘুড়িয়ে বেড়াই না।
আমরা বুঝিয়া গেছি। জানিয়া গেছি। ঘুড়িয়া জ্ঞান অর্জন হয় না। সময় নষ্ট। আপনাদিগের মতো আমাদের এতো সময় কই। আমরা যে ঘুড়িবে। এইসকল অর্বাচিনের কর্ম।
অথচ দেখা যাইবে সুযোগ পাইলে তাহারা সক্কলের আগে, সবচেয়ে বেশি ঘুড়িয়ে বেড়ায়। জ্ঞানীর সন্ধান পাইলে তাহারা সবার আগে দৌড় লাগান। কিন্তু তাহা তারা স্বীকার করিয়া লন না। অথবা তাহারা তাহা বুঝিতেই পারেন না।
অর্থাৎ প্রেম-ভক্তি হীন চিত্তে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জ্ঞানের বিবেচনা করিতে থাকে। কিন্তু ইহা বুঝিয়া লইতে পারে না। প্রেমিক হইতে পারিলে। প্রেমময় হইতে পারিলে। বিভেদ থাকে না। আমরা তোমরা থাকে না। ভালো-মন্দ ভেদ থাকে না। বিচার-যাচাই-বাঁছাই থাকে না। যুক্তি খাটে না।
তাহাদের মাঝে বিদ্যার কমতি আছে এ কথা দুর্জ্জনেও বলিতে পারিবে না। কিন্তু মিথ্যা অহংকারের যে আবরণ তাহাদের চক্ষু ঢাকিয়া থাকে তাহাতে তাহারা প্রকৃত সত্যকে ধরিতে পারে না। এই রহস্যময় জগতে যে প্রেম ভিন্ন অন্য কিছুই নাই।
প্রেমই যে সহজ পথ এইটা মানিতে পারে না। তাহারা প্রেমের সংজ্ঞা মুখস্থ করিয়া হিসেব নিকেশ করিতে ব্যস্ত সময় কাটাইয়া দেয়। কার প্রেম খাঁটি-আর কার প্রেম ভেজাল। এই সকল তথ্য একীভূত করিতে করিতেই সময় পার। অথচ নিজে একটু সহজ হইলে।
প্রেমময় হইলে সকল কিছুর মাঝেও যে প্রেম প্রাপ্ত হওয়া যায়। তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারে না। তাহাদের অনেকেই দরজার কাছাকাছি যাইয়া দরজা না খুলিয়া চাবি হাতে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে। দরজাখানা কি উপযুক্ত কাষ্ঠ দ্বারা নির্মিত কিনা!
জ্ঞানের দরজা এরূপ হয় কিনা! এরূপ দরজা দিয়ে প্রবেশ করা ঠিক হইবে কিনা! আমার উপযুক্ত আরও উত্তম দরজা খুঁজিয়া লওয়া যায় কিনা!!
অর্থাৎ প্রেম-ভক্তি হীন চিত্তে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জ্ঞানের বিবেচনা করিতে থাকে। কিন্তু ইহা বুঝিয়া লইতে পারে না। প্রেমিক হইতে পারিলে। প্রেমময় হইতে পারিলে। বিভেদ থাকে না। আমরা তোমরা থাকে না। ভালো-মন্দ ভেদ থাকে না। বিচার-যাচাই-বাঁছাই থাকে না। যুক্তি খাটে না।
প্রেমই হইলো প্রকৃত ধর্ম। মহাধর্ম প্রেমে মজতে পারলে। দরজা খুলিবার প্রয়োজন হয় না। দরজা খুলিয়া যায়।
তাই মিষ্টির স্বাদ লইতে হইলে মুখে পুড়িবার পর তাহার স্বাদ লইয়া ভাবাই উত্তম। তাহা হইলে যতটা স্বাদ নির্গত করিয়া লওয়া যায় ততই সুমধুর অভিজ্ঞতা হইবে। স্বাদ ততই খুলিতে লাগিবে। ততই মিষ্টির মিষ্টত্ব বোধকে বোঝা যাইতে শুরু করিবে।
আর যদি মিষ্টি যথার্থ নাই হয়। তাহলে পূর্বের কোনো মিষ্টি খাইবার সু-মধুর কথা ভাবাই উত্তম। নয় তো ভুলে ভালে এই সংক্ষিপ্ত জীবনের অনেক মহামূল্যবান সময় করিয়া যায়। আনন্দে জীবন কাটুক সেটাই উত্তম। ঘটা করিয়া আয়োজন করিয়া নিয়া অন্যের মনে আঘাত দিয়া আনন্দ উপভোগের মানে নাই।
তাহাদের নিয়া ভাবা। তাহাদের নিয়া কুৎসা রটনা করা। তাহাদেরই কেবল খুঁজিয়ে বেড়ানোর কোনো মানে থাকে না। যদি তুমি প্রকৃত সত্য জ্ঞানের সন্ধানী বলিয়া নিজেকে দাবী করিবার চাও। আর যদি এই সকল ঘাটিয়াই তুমি আনন্দ লাভ করো। তাহা হইলে জানিয়া রাখিয়ো জ্ঞান হইতে তুমি এখনো বহু বহু দূরে।
যদি না তাহার সাথে গভীর পিরিতি থাকে। রাজনৈতিক নেতারা ভোটে জিতিবার জন্য অনেক ধরনের কথা বলেন। অনেক অঙ্গীকার করিয়া থাকেন। সেই বক্তৃতা শুনিবার জন্য যারা জড়ো হয়। তাহাদের মধ্যে অনেকেই অবগত থাকেন এই সকলই ফাঁকা বুলি।
তাহার পরও অনেকেই ভিড় করেন। আনন্দ উপভোগ করেন। জগৎ সংসার হইলো তেমনি এক জায়গা। যেখানে অনেক কিছুই ফাঁকি। তাহার সকল কিছু সকলের জন্য নহে। যে যার মতের জিনিসই খুঁজিয়া বেড়ায়। আর যদি একবার জানা হইয়া যায় নিজের মত কি। নিজের পছন্দ কি।
তাহা হইলে এদিক-সেদিক না ঘুরিয়া নির্দিষ্ট পথে অগ্রসর হওয়াই উত্তম। আর যে পথে পা বাড়াইবে বলিয়া সিদ্ধান্ত লইয়াছো। তাহার মাঝে প্রেম খুঁজো। যেখানে প্রেমের সন্ধান পাইবে। শুদ্ধতার সন্ধান পাইবে। সেই দিকে মতি স্থির করো।
যেই দিক প্রেমশূন্য প্রান্তর। সে দিকে না যাইয়া। তাহা লইয়া কুৎসা না করিয়া। নিজে প্রেমময় হইয়া প্রেমের সন্ধান করাই সাধকের কর্ম। তাতেই জ্ঞানের পথ সুগম হয়। নতুবা কেবল ঘুড়িয়া মরাই সারা। তবে এইখানে একটা কথা উঠিতেই পারে।
প্রেমের পথে যে জালি প্রেমিক রহিয়াছে তাহাদের কি করিব? আমি বলিব, তুমি প্রেমময় হইলে জালি প্রেমিকরা তোমা হইতে বহু দূরেই অবস্থান করিবে। তারপরও যদি তোমার পথে তাহাদের আগমন ঘটিয়াই যায়। তাহলে তুমি নিতান্ত তুচ্ছ যাত্রী হইলে তাহাদের এড়াইয়া যাও।
আগেই বাছ-বিচার করিতে হয়। তবে তা অবশ্যই শুদ্ধ মনে, ভক্তিপূর্ণ ভঙ্গীতে, প্রেমময় হৃদয়-মনে। তাহার পর কার্য করিতে হয়। আর কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে যদি কোনো কিছু করিতে বাধ্যই হইতে হয়। বা মানিয়া লইতে হয়। তবে তা করিবার সময় মনে কষ্ট না লইয়া হাসি মুখে আনন্দ চিত্তেই তা করা উত্তম।
তাহাদের নিয়া ভাবা। তাহাদের নিয়া কুৎসা রটনা করা। তাহাদেরই কেবল খুঁজিয়ে বেড়ানোর কোনো মানে থাকে না। যদি তুমি প্রকৃত সত্য জ্ঞানের সন্ধানী বলিয়া নিজেকে দাবী করিবার চাও। আর যদি এই সকল ঘাটিয়াই তুমি আনন্দ লাভ করো। তাহা হইলে জানিয়া রাখিয়ো জ্ঞান হইতে তুমি এখনো বহু বহু দূরে।
উপরোক্ত এই সকল লেখা পড়িতে পড়িতে আপনি হয়তো ভাবিতেছেন, বাহ্ মশাই। আপনি বলিতেছেন, প্রেমহীন মানুষ কি করিতেছে এই সকল ভাবা সাধকের কর্ম নহে। আবার আপনিই সেই সকল লোকজন লইয়্যা এতো কথা কেনো লিখিতে গেলেন।
এর উত্তরে বলিতে হয়, স্বীকার করিয়া লইতেছি। আপনাদের অভিযোগ মিথ্যা নহে। আসলেই তো তাই। তাই তো ঘটিয়াছে। অন্যকে যাহা করিতে নিষেধ করিতেছি। আমি নিজেই কি তাহা লইয়া মত্ত্ব হইয়া উঠেতেছি না? নইলে এই বিষয়ে আলাপন কেনো। জগতে এতো বিষয় থাকিতে?
আসলে যারা গুরু হইয়া গিয়াছে। বা গুরু হইবার পথে। তাহাদের কারবার হইলো পতিত মানুষদের লইয়া। তাহারা পতিত মানুষ তরাইতে জগতে আসে। কিন্তু সাধক পর্যায়ে পতিত মানুষের সঙ্গ করিলে সাধনকার্যে ব্যাঘাত ঘটে।
মন কু-পথে সঞ্চালিত হইবার সম্ভাবনা থাকিয়া যায়। তাই সাধককে সকল কিছু করিবার পূর্বে ভাবিতে হয়। করিয়া ফেলিয়া ভাবিতে বসিলে মূল লক্ষ্য হইতে বিচ্যুত হইবার সম্ভবনা অধিক হয়। তাহাকে চলিতে হয় বাছ বিচার করিয়া।
তাই কোন মানুষ কেমন। তাহার জ্ঞানের বাহার কি। তাহার সামাজিক মর্যাদা কি। তাহার প্রতিপত্তি কি। তাহার প্রভাব কতটা। তাহার আর্থ-সামাজিক অবস্থা কি। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি বিবেচনা অপেক্ষা সাধকের কর্ম হইলো মানুষটা প্রেমময় কিনা! শুদ্ধ প্রেমের প্রেমিক কিনা! সেই বিবেচনায় যাওয়া।
আগেই বাছ-বিচার করিতে হয়। তবে তা অবশ্যই শুদ্ধ মনে, ভক্তিপূর্ণ ভঙ্গীতে, প্রেমময় হৃদয়-মনে। তাহার পর কার্য করিতে হয়। আর কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে যদি কোনো কিছু করিতে বাধ্যই হইতে হয়। বা মানিয়া লইতে হয়। তবে তা করিবার সময় মনে কষ্ট না লইয়া হাসি মুখে আনন্দ চিত্তেই তা করা উত্তম।
সাধনপথে সাধকের লক্ষ থাকে সাধনায় আগাইয়া যাওয়ার। কতটা তার প্রাপ্তি যোগ ঘটিল। কতটা অপ্রাপ্তি হইলো তাহার হিসেব খুলিয়া বসিলে পথ থামিয়া যায়। তাই আদি কালে সাধক একা সাধন করিতো। চলিয়া যাইতো পাহাড়ে বা একান্তে।
কিন্তু আধুনিককালে সর্বক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। তাই সাধককে সর্বপ্রথম নজর রাখিতে হয় সে কাহার কাহার সহিত সঙ্গ করিবে। কাহার সহিত সঙ্গ করিবে না। আর এই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করিতে গিয়াই এতোসব আলোচনা। কাহারো কুৎসা প্রকাশ করা এই রচনার উদ্দেশ্য নহে।
সাধক যাতে তার নিজ নিজ সাধন-ভজন চালাইয়া যাইতে পারে শুদ্ধ মনে তাই কিঞ্চিৎ অবগত করার অভিলাষে এই রচনা। তাই বিনীতভাবে সকলের চরণে ভক্তি নিবেদন করে প্রার্থনা। কেহ মনে কষ্ট লইবেন না। উপরোক্ত কথা সকলের মঙ্গলের জন্যই বলা।
যাহাতে কু-প্রবৃত্তির সঙ্গ ত্যাগ করিয়া সাধক তার সাধন-ভজন-তপস্যা চালাইয়া যাইতে পারে। সুন্দর-শুদ্ধ রূপে। কথায় বলে- ‘সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে’। তাই সঙ্গ অতীব গুরুত্বপূর্ণ সাধনপথে। সঠিক সঙ্গ না হইলে পথ চলা হয়ে পরে দুষ্কর। কেবল গোল গোল ঘোরাই সারা হয়।
তাই কোন মানুষ কেমন। তাহার জ্ঞানের বাহার কি। তাহার সামাজিক মর্যাদা কি। তাহার প্রতিপত্তি কি। তাহার প্রভাব কতটা। তাহার আর্থ-সামাজিক অবস্থা কি। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি বিবেচনা অপেক্ষা সাধকের কর্ম হইলো মানুষটা প্রেমময় কিনা! শুদ্ধ প্রেমের প্রেমিক কিনা! সেই বিবেচনায় যাওয়া।
কাউকে নিয়ে গভীর ভাবনায় প্রবেশ করিয়া তাহাকে চ্যালেঞ্জ করা। তর্ক করা। তাহাকে শোধরানোর দায়িত্ব সাধকের নহে। সাধক বিনয়ের সাথে বিনীত হয়ে কেবল তাহার কথা বলিতে পারে। কাউকে ভৎসনা করা তাহার কর্ম নহে।
আর যাহারা ভৎসনায় রত থাকে তাহাদের সহিত সঙ্গ করাও বিপদজনক। এতে তাহার স্বভাব সাধকের মধ্যে জাগ্রত যেমন হইতে পারে। তেমনি মনো কষ্ট হইতে পারে তাহার আচরণে। এতে সাধনায় ব্যাঘাত ঘটে। কিছু লোক সমাজে থাকিয়াই যায়।
যাহারা মানুষকে স্বস্তি দানের বদলে অস্বস্তিতে ফেলিতে অধিক আনন্দ লাভ করে। তাই তাহাদের সঙ্গ ত্যাগ করাই উত্তম। প্রবাদে বলা হইয়া থাকে, “দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল”। সাধনায় সঙ্গহীনতা উত্তম। বিপথগামী সঙ্গ অপেক্ষা। জয়গুরু।।
(সমাপ্ত)
<<কাহাদের সঙ্গ ত্যাগ করিবা: কিস্তি এক
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………………………..
আরো পড়ুন-
কাহাদের সঙ্গ ত্যাগ করিবা: কিস্তি এক
কাহাদের সঙ্গ ত্যাগ করিবা: কিস্তি দুই
2 Comments