ভবঘুরেকথা
অনাহত চক্র যোগ আসন ধ্যান

-স্বামী বিবেকানন্দ

২৮ মার্চ, ১৯০০ খ্রীঃ সান্ ফ্রান্সিস্কোতে প্রদত্ত

অতি প্রাচীনকাল হইতে ভারতবর্ষে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ-অভ্যাস জনপ্রিয়তা লাভ করিয়া আসিতেছে। এমন কি ইহা মন্দিরদর্শন বা স্তবস্তোত্রাদি পাঠের মত ধর্মচারণের একটি অঙ্গরূপে পরিণত হইয়াছে। … আমি এই বিষয়ের প্রতিপাদ্যগুলি তোমাদের নিকট উপস্থাপিত করিবার চেষ্টা করিব।

তোমাদিগকে আমি বলিয়াছি, ভারতীয় দার্শনিক কিভাবে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে দুটি বস্তুতে পর্যবসিত করেন-প্রাণ ও আকাশ। প্রাণ-অর্থে শক্তি। যাহা কিছু গতি বা সম্ভাব্য গতি, চাপ, আকর্ষণ … বিদ্যুৎ, চুম্বকশক্তি, শরীরের ক্রিয়ানিচয়, মনের স্পন্দন প্রভৃতি-রূপে প্রকাশ পাইতেছে, সবই সেই এক মূলশক্তি প্রাণের অভিব্যক্তি। প্রাণের শ্রেষ্ঠ বিকাশ হইল-যাহা মস্তিষ্কে বুদ্ধির আলোকরূপে অভিব্যক্ত।

শরীরে প্রাণের যত কিছু অভিব্যক্তি, তাহার প্রত্যেকটিকে মন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করা উচিত। … শরীরকে সম্পূর্ণভাবে মনের অধিকারে আনা চাই। আমাদের সকলের পক্ষে ইহা সম্ভব নয়; বরং আমাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে ইহার বিপরীতটিই সত্য। যাহা হউক আমাদের লক্ষ্য হইল-মনকে এমনভাবে তৈরী করা, যাহাতে খুশীমত সে শরীরের প্রত্যেক অংশ শাসন করিতে পারে। ইহাই তত্ত্ববিচার ও দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গী।

অবশ্য আমরা বাস্তব-ক্ষেত্রে যখন আসি, তখন ইহা খাটে না। তখন আমরা গাড়ীটিকে ঘোড়ার আগে স্থাপন করিয়া বসি। শরীরই তখন মনের উপর কর্তৃত্ব করে। আঙুলে কেহ চিমটি কাটিলে আমি যন্ত্রণা বোধ করি। দেহেরই প্রভাব মনের উপর চলিতে থাকে। দেহে অবাঞ্ছনীয় কিছু ঘটিলে আমার দুশ্চিন্তার অবধি থাকে না, আমার মনের সাম্যচ্যুতি ঘটে। এই অবস্থায় শরীরই আমাদের মনের প্রভু। আমরা দেহের সহিত এক হইয়া যাই। নিজদিগকে শরীর ছাড়া আর কিছু ভাবিতে পারি না।

তত্ত্বদর্শী আসিয়া আমাদিগকে এই দেহাত্মবুদ্ধির বাহিরে যাইবার পথ দেখান। আমাদের প্রকৃত স্বরূপ কি, তাহা তিনি আমাদিগকে শিক্ষা দেন। তবে যুক্তিবিচার দ্বারা বুদ্ধিতে ইহা ধারণা করা ও স্বরূপের প্রত্যক্ষানুভূতি-এই দুই-এ সুদীর্ঘ ব্যবধান রহিয়াছে, যেমন একটি বাড়ীর নক্সা ও বাস্তব বাড়ীটির মধ্যে প্রচুর পার্থক্য থাকে। অতএব ধর্মের প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছিবার জন্য নানা প্রণালী থাকা চাই।

পূর্ববর্তী আলোচনায় আমরা তত্ত্বজ্ঞানের পন্থা অনুশীলন করিতেছিলাম-আত্ম-স্বরূপে দাঁড়াইয়া সব কিছুকে নিয়ন্ত্রিত করা-আত্মার মুক্তস্বভাব ঘোষণা করা-শরীরের সাহায্য না লইয়া শরীরকে জয় করা। গীতা বলেন, ইহা খুবই কঠিন। সকলের জন্য এই পথ নয়। দেহাসক্ত ব্যক্তির পক্ষে এই সাধনা দুষ্কর। (গীতা, ১২ ৷ ৫)

কিছু স্থূল সহায়তা পাইলে মন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। মন নিজেই এই চরম আধ্যাত্মিক সত্যের অনুভূতি যদি সম্পাদন করিতে পারে, তাহা হইলে তদপেক্ষা সঙ্গত আর কিছু আছে কি? কিন্তু দুঃখের বিষয়, মন তাহা পারে না। আমাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে স্থূল সাহায্যের প্রয়োজন হয়। রাজযোগের প্রণালী হইল-এই স্থূল সাহায্যগুলি গ্রহণ করা।

উহা আমাদের শরীরের ভিতর যে-সব শক্তি ও সামর্থ্য রহিয়াছে, সেগুলিকে কাজে লাগাইয়া কতকগুলি উন্নত মানসিক অবস্থা সৃষ্টি করে এবং মনকে উত্তরোত্তর সবল করিয়া উহাকে তাহার হৃত সাম্রাজ্য পুনঃপ্রাপ্তিতে সহায়তা করে। কেবল ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করিয়া কেহ যদি চরম আত্মতত্ত্ব উপলব্ধি করিতে পারে, তাহা তো অতি উত্তম। কিন্তু আমরা অনেকেই তো উহা পারি না। সেজন্য আমাদিগকে স্থূল সাহায্য অবলম্বন করিয়া ক্রমশঃ ইচ্ছাশক্তিকে লক্ষ্যপথে লইয়া যাইতে হইবে।

… সমগ্র জগৎ হইল বহুত্বে একত্বের একটি বিপুল নিদর্শন। মাত্র এক সমষ্টি মন রহিয়াছে। উহারই বিভিন্ন অবস্থা বিভিন্ন নামে পরিচিত। মনরূপ মহাসমুদ্রে ঐগুলি যেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবর্ত। আমরা একই সময়ে সমষ্টি ও ব্যষ্টি। এইভাবে খেলা চলিতেছে …। বাস্তবপক্ষে একত্বের কখনও বিচ্যুতি ঘটে না। জড় পদার্থ, মন এবং আত্মা-তিন-ই এক।

এই-সকল বিভিন্ন নাম মাত্র। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে শুধু একটিই সত্য আছে, পৃথক্ দৃষ্টিকোণ হইতে আমরা উহাকে প্রত্যক্ষ করি। একটি দৃষ্টিকোণে উহা জড়বস্তুরূপে প্রতীত হয়, অন্য দৃষ্টিকোণ হইতে উহাকেই দেখি মনরূপে, দুই বস্তু কিছু নাই। একজন একটি দড়িকে সাপ বলিয়া ভুল করিয়াছিল। ভয়ে অস্থির হইয়া সে অপর একজনকে সাপটিকে মারিবার জন্য ডাকিতে লাগিল। তাহার স্নায়ুমণ্ডলীতে কম্পন শুরু হইল, বুক ধড়াস ধড়াস করিতে আরম্ভ করিল।

ভয় হইতেই এই-সব লক্ষণ দেখা দিয়াছিল। অবশেষে সে যখন আবিষ্কার করিল, উহা দড়ি, তখন সব বিকার চলিয়া গেল। আমরাও চিরন্তন সত্য-বস্তুকে এইরূপ নানা মিথ্যা আকারে দেখিতেছি। আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়, আমরা যাহাকে জড় পদার্থ বলি, উহাও সেই সৎস্বরূপ। তবে আমরা যেভাবে দেখিতেছি, উহা তাহা নয়। যে-মন দড়ি দেখিয়া উহাকে সাপ বলিয়া ভাবিয়াছিল, সে-মন যে মোহগ্রস্ত হইয়াছিল, তাহা নয়; তাহা হইলে সে কিছুই দেখিত না।

একটি জিনিষকে অপর জিনিষ বলিয়া দেখা, একেবারে যাহার অস্তিত্ব নাই-এমন কিছু দেখা নয়। আমরা শরীর দেখিতেছি, অনন্তকে জড়বস্তু বলিয়া মনে করিতেছি। আমরা সত্যেরই সন্ধান করিতেছি। আমরা কখনও প্রবঞ্চিত নই। সর্বদাই আমরা সত্যকেই জানিতেছি, তবে সত্যের প্রতিচ্ছবি কখনও কখনও আমাদের কাছে ভুল হইতেছে, এই মাত্র।

একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে কেবল একটি বস্তুকেই দেখা চলে। যখন আমি সর্পকে দেখিতেছি, রজ্জু তখন সম্পূর্ণ তিরোহিত। আবার যখন রজ্জু দেখি, তখন সর্প আর নাই। এক সময়ে একটি মাত্র বস্তু প্রত্যক্ষ হইতে পারে।

আমরা যখন জগৎ দেখিতেছি, তখন ঈশ্বরকে দেখিব কিরূপে? ইহা মনে মনে বেশ ভাবিয়া দেখ। ‘জগৎ’ অর্থে ইন্দ্রিয়সমূহের মাধ্যমে বহু বস্তুরূপে প্রতীয়মান ঈশ্বরই। যখন তুমি সাপ দেখিতেছ, তখন দড়ি আর নাই। যখন চৈতন্য সত্তার বোধ হইবে, তখন অপর যাহা কিছু সব লোপ পাইবে। তখন আর জড়বস্তুকে দেখিবে না, কেননা যাহাকে জড়বস্তু বলিতেছিলে, তাহা চৈতন্য ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের ইন্দ্রিয়নিচয়ই বহুর ‘অধ্যাস’ লইয়া আসে।

আমরা যদি কোন বস্তুর বেগ বাড়াইয়া দিই, উহার ভর (mass) কমিয়া যায় …। পক্ষান্তরে ভর বৃদ্ধি করিলে বেগ হ্রাস পায়। … এমন একটি অবস্থায় প্রায় পৌঁছান যাইতে পারে, যেখানে বস্তুর ভর সম্পূর্ণ লোপ পাইবে।

জলাশয়ের সহস্র সহস্র তরঙ্গে একই সূর্য প্রতিবিম্বিত হইয়া সহস্র সহস্র ক্ষুদ্র সূর্যের সৃষ্টি করে। ইন্দ্রিয় দ্বারা যখন আমি ব্রহ্মাণ্ডের দিকে তাকাই, তখন উহাকে জড়বস্তু ও শক্তি বলিয়া ব্যাখ্যান করি। একই সময়ে উহা এক ও বহু। বহু এককে নষ্ট করে না, যেমন মহাসমুদ্রের কোটি কোটি তরঙ্গ সমুদ্রের একত্বকে কখনও ব্যাহত করে না। সর্বদা উহা সেই এক মহাসমুদ্র। যখন জগৎকে দেখিতেছ, মনে রাখিও-আমরা উহাকে জড় বা শক্তি দুইয়েতেই পরিণত করিতে পারি।

আমরা যদি কোন বস্তুর বেগ বাড়াইয়া দিই, উহার ভর (mass) কমিয়া যায় …। পক্ষান্তরে ভর বৃদ্ধি করিলে বেগ হ্রাস পায়। … এমন একটি অবস্থায় প্রায় পৌঁছান যাইতে পারে, যেখানে বস্তুর ভর সম্পূর্ণ লোপ পাইবে।

জড়কে শক্তির কারণ অথবা শক্তিকে জড়ের কারণ বলা চলে না। উভয়ের সম্পর্ক এমন যে, একটি অপরটির মধ্যে তিরোহিত হয়। একটি তৃতীয় পক্ষ অবশ্যই থাকা প্রয়োজন, উহাই মন। বিশ্বজগৎকে জড় বা শক্তি কোনটি হইতেই উৎপন্ন করা যায় না।

মন জড় নয়, শক্তিও নয়, অথচ সর্বদাই জড় ও শক্তির প্রসব করিতেছে। আখেরে মন হইতেই সকল শক্তির উদ্ভব। ‘বিশ্ব-মন’-এর অর্থ ইহাই-সকল ব্যষ্টি-মনের সংহতি। প্রত্যেক ব্যষ্টি-মন সৃষ্টি করিয়া চলিয়াছে, আর সব সৃষ্টি একত্র যোগ করিলে অখিল বিশ্বপ্রপঞ্চ খাড়া হয়। বহুত্বে একত্ব-একই সময়ে বহু ও এক।

ব্যক্তি-ঈশ্বর হইলেন সকল জীবের সমষ্টি, আবার তাঁহার একটি স্বকীয় স্বাতন্ত্র্যও আছে-যেমন আমাদের দেহ অসংখ্য কোষের সমষ্টি, কিন্তু গোটা দেহটির একটি পৃথক্ স্বাতন্ত্র্য রহিয়াছে।

যাহা কিছুর গতি আছে, উহা প্রাণ বা শক্তির অন্তর্গত। এই প্রাণই নক্ষত্র সূর্য চন্দ্রকে ঘুরাইতেছে; প্রাণই মাধ্যাকর্ষণ … ।

অতএব প্রকৃতির যাবতীয় শক্তিই বিশ্বমনের সৃষ্টি। আর আমরা ঐ বিশ্ব-মনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশরূপে ভূমাপ্রকৃতি হইতে প্রাণকে আহরণ করিয়া নিজেদের ব্যষ্টি-প্রকৃতিতে দেহের ক্রিয়া, মনের চিন্তা সৃষ্টি প্রভৃতি কাজে লাগাইতেছি। যদি বল-চিন্তা সৃষ্টি করা যায় না, তাহা হইলে কুড়ি দিন না খাইয়া দেখ, কিরূপ বোধ হয়। … চিন্তাও আমাদের ভুক্ত খাদ্য দ্বারাই উৎপন্ন। ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।

যে-প্রাণ সব কিছুকে চালাইতেছে, উহাকে আমাদের দেহের মধ্যে নিয়ন্ত্রণের নাম ‘প্রাণায়াম’। সহজ বুদ্ধিতে আমরা দেখিতে পাই, আমাদের দেহের যাবতীয় ক্রিয়ার মূলে রহিয়াছে আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস। নিঃশ্বাস বন্ধ করিলে দেহের ব্যাপারও বন্ধ হইয়া যায়। পুনরায় শ্বাস লইলে ক্রিয়া আরম্ভ হয়। তবে প্রাণায়ামের লক্ষ্য শ্বাস-নিরোধ মাত্র নয়, শ্বাসের পশ্চাতে এক সূক্ষ্মতর শক্তিকে বশে আনা।

জনৈক রাজা মন্ত্রীর প্রতি কোন কারণে অসন্তুষ্ট হইয়া একটি উচ্চ গম্বুজের উপর তাঁহাকে বন্দী করিয়া রাখিবার আদেশ দেন। মন্ত্রীর স্ত্রী রাত্রে স্বামীর সহিত দেখা করিতে আসিলে মন্ত্রী বলিলেন, ‘কান্নাকাটি করিয়া লাভ নাই বরং সুকৌশলে আমাকে একটি দড়ি পাঠাইয়া দিও।’ মন্ত্রীপত্নী একট গুবরে পোকার একটি পায়ে একগাছি রেশমের সুতা বাঁধিয়া উহার মাথায় খানিকটা মধু মাখাইয়া উহাকে ছাড়িয়া দিলেন।

রেশমের সুতার সহিত প্রথমে খানিকটা মোটা সুতা এবং পরে মোটা টোয়াইন সুতার গুটি সংলগ্ন ছিল। টোয়াইনের গুটিটিতে বাঁধা ছিল একগাছি শক্ত মোটা দড়ি। মধুর গন্ধে পোকাটি ধীরে ধীরে উপরে উঠিতে লাগিল এবং ক্রমে বুরুজের মাথায় উঠিল। মন্ত্রী পোকাটি ধরিলেন এবং ক্রমশঃ সিল্কের সুতা, মোটা সুতা এবং টোয়াইনের সুতা ধরিয়া মোটা দড়িগাছিটি নীচ হইতে উপরে টানিয়া তুলিলেন এবং উহার সাহায্যে বুরুজ হইতে পলায়ন করিলেন।

আমাদের দেহে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস যেন ঐ রেশমী সুতা। উহাকে আয়ত্ত করিলে ক্রমশঃ আমরা স্নায়ুমণ্ডলীরূপে মোটা সুতা এবং চিন্তারূপে টোয়াইনের সুতাকে ধরিতে পারি। অবশেষে আমরা হাতে পাই প্রাণরূপ শক্ত রজ্জু। প্রাণ-নিয়ন্ত্রণ দ্বারা আমরা মুক্তি লাভ করি।

জড়স্তরের বস্তুর সাহায্যে আমাদিগকে সূক্ষ্ম ও সূক্ষ্মতর অনুভূতিতে উপস্থিত হইতে হইবে বিশ্বজগৎ একটিই সত্তা, উহার যে বিন্দুতেই স্পর্শ কর না কেন, সব বিন্দুই ঐ এক বিন্দুরই হেরফের। একটি একতা সর্বত্র অনুস্যূত। অতএব শ্বাস-প্রশ্বাসরূপে স্থূল ব্যাপারকে ধরিয়াও সূক্ষ্ম চৈতন্যকে অধিগত করা যায়।

এখন শরীরের যে-সব স্পন্দন আমাদের জ্ঞানগোচর নয়, প্রাণায়ামের অভ্যাস দ্বারা উহাদিগকে আমরা ক্রমশঃ অনুভব আরম্ভ করি। আর ঐ-সব স্পন্দন-অনুভবের সঙ্গে উহারা আমাদের বশে আসে। আমরা বীজাকারে নিহিত চিন্তাগুলিকে দেখিতে পাইব এবং উহাদিগকে আয়ত্ত করিতে পারিব। অবশ্য আমাদের সকলেরই যে ইহা সম্পাদনের সুযোগ বা ইচ্ছা বা ধৈর্য বা শ্রদ্ধা আসিবে তাহা নয়, তবে এই-সম্পর্কীয় সাধারণ জ্ঞানও প্রত্যেকের কিছু না কিছু উপকার সাধন করে।

প্রথম সুফল স্বাস্থ্য। আমাদের শতকরা নিরানব্বই জন যথাযথভাবে নিঃশ্বাস লই না। ফুসফুসে যথেষ্ট বাতাস আমরা টানিয়া লই না। … শ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়মিত করিতে পারিলে শরীর শুদ্ধ হয়, মন শান্ত হয় …। লক্ষ্য করিয়া থাকিবে-মনের যখন শান্তি থাকে-তখন নিঃশ্বাস ধীরে ধীরে এবং তালে তালে পড়িতে থাকে। সেইরূপ নিঃশ্বাসকে যদি স্থির ও ছন্দোবদ্ধ করা যায় তো মনেরও শান্তি আসে।

অপরপক্ষে মন যখন উদ্বিগ্ন, তখন নিঃশ্বাসের তালও কাটিয়া যায়। অভ্যাসের দ্বারা নিঃশ্বাসকে নিয়ন্ত্রিত করিতে পারিলে মনের শান্তি অবশ্যই সুলভ্য। মন যদি উত্তেজিত হয়, ঘরে গিয়া দরজা বন্ধ কর এবং মনকে স্থির করিবার চেষ্টা না করিয়া দশ মিনিট তালে তালে নিঃশ্বাস লইতে থাক। দেখিবে মন শান্ত হইয়া আসিতেছে। এই ধরনের অভ্যাসগুলি হইল সাধারণ লোকের উপযোগী এবং উপকারী। অপরগুলি যোগীদের জন্য।

গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়াগুলি ধাপমাত্র। বিভিন্ন ক্রিয়ার জন্য প্রায় চুরাশীটি আসন আছে। কেহ কেহ প্রাণায়ামকে জীবনের প্রধানতম অনুশীলনরূপে গ্রহণ করিয়াছেন। নিঃশ্বাসের গতিকে লক্ষ্য না করিয়া তাঁহারা কোন কাজই করেন না। সর্বদা তাঁহাদের দৃষ্টি থাকে কোন্ নাকে বেশী শ্বাস বহিতেছে। দক্ষিণ নাসারন্ধ্রে শ্বাসের গতি থাকিলে তাহারা কতকগুলি কাজ করিবেন, বামদিকে শ্বাস বহিলে অন্য কতকগুলি কাজ।

যখন উভয় নাসাপথেই শ্বাসগতি সমান থাকে, তখন তাঁহারা ভগবদুপাসনা করেন। শ্বাসের এইরূপ অবস্থায় মনঃসংযম সহজ হয়। শ্বাসের দ্বারা দেহের স্নায়ুপ্রবাহকে ইচ্ছামত শরীরের যে কোন অংশে চালিত করা যায়। কোন অঙ্গ পীড়িত হইলে প্রাণপ্রবাহ সেই অঞ্চলে নিয়োজিত করিয়া পীড়ার উপশম করা চলে।

আরও নানাপ্রকার যৌগিক ক্রিয়া প্রচলিত আছে। কতকগুলি সম্প্রদায় আছে, যাহারা শ্বাস-ব্যাপারকে থামাইয়া রাখিতে চায়। তাহারা এমন কিছু করিবে না, যাহাতে বেশী নিঃশ্বাস লইতে হয়। তাহারা একপ্রকার ধ্যানস্থ হইয়া থাকে। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ তখন প্রায় সবই বন্ধ। হৃদ‍্‍যন্ত্রের স্পন্দনও একপ্রকার স্তব্ধ। … এই সব ক্রিয়ায় খুব বিপদ আছে। আরও কতকগুলি কঠিন ক্রিয়ার উদ্দেশ্য উন্নততর যৌগিক শক্তি লাভ করা।

কাহারও চেষ্টা থাকে-শ্বাসরুদ্ধ করিয়া শরীরকে হাল্কা করিয়া ফেলা। তখন তাহারা শূন্যে উঠিতে পারে। আমি কখনও কাহাকেও এইরূপ শূন্যে উঠিতে বা বাতাসে উড়িতে দেখি নাই। তবে যোগের পুঁথিতে এইরূপ ক্ষমতার উল্লেখ আছে। এই সকলের প্রত্যক্ষ জ্ঞানের ভান আমি করিতে চাই না। তবে আমি অনেক আশ্চর্য যৌগিক ক্রিয়া দেখিয়াছি। … একবার এক ব্যক্তিকে শূন্য হইতে ফল ও ফুল বাহির করিতে দেখিয়াছিলাম।

যোগী যোগশক্তি দ্বারা স্বীয় দেহকে এত ক্ষুদ্র করিয়া ফেলিতে পারেন যে, উহা এই দেওয়ালকে ভেদ করিয়া যাইতে পারে। আবার তাঁহার শরীরকে এত ভারী করাও সম্ভব যে, দুই শত লোক তাঁহাকে তুলিতে পারিবে না।

… যোগী যোগশক্তি দ্বারা স্বীয় দেহকে এত ক্ষুদ্র করিয়া ফেলিতে পারেন যে, উহা এই দেওয়ালকে ভেদ করিয়া যাইতে পারে। আবার তাঁহার শরীরকে এত ভারী করাও সম্ভব যে, দুই শত লোক তাঁহাকে তুলিতে পারিবে না। যদি ইচ্ছা করেন তো তিনি পাখীর ন্যায় আকাশে উড়িয়া যাইবেন। কোন যোগীর কিন্তু ঈশ্বরের ন্যায় ক্ষমতালাভ করা সম্ভব নয়। তাহা যদি হইত, তাহা হইলে এক যোগী হয়তো সৃষ্টি করিতেন, অপর এক যোগী উহা ধ্বংস করিয়া দিতেন।

… যোগবিষয়ক গ্রন্থে এই-সকল কথা আছে। আমার নিজের পক্ষে এইসব বিশ্বাস করা কঠিন, তবে আমি অবিশ্বাসও করি না। নিজের চোখে যে-সব বিষয় দেখিয়াছি, সেইগুলিতে কোন সন্দেহ নাই।

জগতের জ্ঞান-আহরণ যদি সম্ভবপর হয় তো উহা প্রতিদ্বন্দ্বিতা দ্বারা নয়, মনকে নিয়ন্ত্রিত করিয়া। পাশ্চাত্যদেশীয়রা বলেন, ‘ইহা আমাদের স্বভাব, আমরা উহা বদলাইতে পারি না।’ কিন্তু এই প্রকার মনোভাব দ্বারা সামাজিক সমস্যার সমাধান হয় না, জগতেরও কোন উন্নতি ঘটে না।

বলবান‍রা সব কিছু গ্রাস করিয়া লইতেছে, দুর্বলেরা দুঃখভোগ করিতেছে। যাহার কাড়িয়া লইবার ক্ষমতা

আছে, তাহার লোভেরও সীমা নাই। বঞ্চিতেরা ধনীর প্রতি প্রবল ঘৃণা লইয়া নিজেদের সুযোগের অপেক্ষা করিতেছে। তাহাদের হাতে যখন ক্ষমতা আসিবে, তখন তাহাদের আচরণও হইবে অনুরূপ। ইহাই প্রতিদ্বন্দ্বিতার রীতি, অনিয়ন্ত্রিত ভোগপ্রবৃত্তির পরিণাম। সমস্যার সমাধান হইতে পারে শুধু মানুষের মনকে সুপরিচালিত করিয়া। … মানুষ যাহা করিতে চায় না, তাহা তাহাকে আইনের জোরে করান যায় না। …সে যদি আন্তরিক সৎ হইতে চায়, তবেই সে সৎ হইতে পারে। আইন-আদালত কখনও তাহাকে সৎ পথে আনিতে পারে না।

মানুষের মনেই সকল জ্ঞান। একটি পাথরে কে জ্ঞান দেখিয়াছে? জ্যোতির্বিদ্যা কি তারাগুলিতে? মানুষই জ্ঞানের আধার। আসুন আমরা উপলব্ধি করি যে, আমরা অনন্ত শক্তিস্বরূপ। মনের ক্ষমতার সীমা কে টানিতে পারে? আমরা সকলেই সেই অনন্ত মনস্বরূপ, আসুন আমরা ইহা অনুভব করি। প্রত্যেকটি জলবিন্দুর সহিত সমগ্র সমুদ্রটি রহিয়াছে।

মানুষের মন ঐ মহাসমুদ্রের মত। ভারত-মনীষা মনের এই শক্তি ও সম্ভাবনাগুলির আলোচনা করিয়াছে এবং উহাদের বিকাশসাধনে সে তৎপর। পূর্ণতার উপলব্ধি সময়-সাপেক্ষ। ধৈর্য ধরিয়া অপেক্ষা করা চাই। যদি পঞ্চাশ হাজার বৎসর লাগে, তাহাতেই বা কি? মানুষ যদি স্বেচ্ছায় তাহার মনের মোড় ফিরাইয়া পূর্ণতার অভিলাষী হয়, তবেই পূর্ণতার উপলব্ধি সম্ভবপর।

রাজযোগে বিঘোষিত সব বিষয়ে তোমাদের বিশ্বাস করিবার প্রয়োজন নাই। তবে একটি বিষয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, উহা হইল মানুষের দেবত্বলাভের সামর্থ্য। মানুষ যখন তাহার নিজের মনের চিন্তাসমূহের উপর সম্পূর্ণ প্রভুত্ব অর্জন করে, তখনই ঐ দেবত্ব-বিকাশ সম্ভবপর। … মনের ভাবনা ও ইন্দ্রিয়সমূহ আমার আজ্ঞাবহ ভৃত্য, আমার চালক নয়-এইরূপ অবস্থা আসা চাই, তবেই সব অশুভ লোপ পাইবে।

মনকে রাশি রাশি তথ্য দিয়া ভরিয়া রাখার নাম শিক্ষা নয়। মনরূপ যন্ত্রটিকে সুষ্ঠুতর করিয়া তোলা এবং উহাকে সম্পূর্ণ বশীভূত করা-ইহাই হইল শিক্ষার আদর্শ। মনকে যদি একটি বিন্দুতে একাগ্র করিতে চাই, উহা সেখানে যাইবে; আবার যে মুহূর্তে আমি উহাকে ডাক দিব, উহা সেই বিন্দু হইতে যেন ফিরিয়া আসিতে পারে।

ইহাই বিষম সঙ্কট। অনেক কষ্টে আমরা কিছু একাগ্রতার শক্তি লাভ করি। মন কতকগুলি বিষয়ে লাগিয়া থাকিতে পারে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে অনাসক্তির ক্ষমতা আমরা অর্জন করি না। মনকে একটি বিষয় হইতে ইচ্ছামত টানিয়া আনিতে পারি না, এমন কি অর্ধেক জীবন দিতে রাজী হইলেও না।

মনকে একাগ্র করা ও বিযুক্ত করা-দুই ক্ষমতাই আমাদের থাকা প্রয়োজন। যে ব্যক্তি এই দুইটিতেই নিপুণ, তিনিই যথার্থ মনুষ্যত্ব লাভ করিয়াছেন। সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আছাড় খাইতেছে শুনিলেও তিনি দুঃখী হইবেন না। এইরূপ স্থিরতা কি পুঁথি পড়িয়া লাভ করা যায়?

রাশি রাশি বই পড়িতে পার … শিশুর মাধায় এক মুহূর্তে পনর হাজার শব্দ ঢুকাইয়া দিতে পার, যতকিছু মতবাদ, যতকিছু দর্শন আছে, সব তাহাকে শিখাইতে পার … মাত্র একটি বিজ্ঞান আছে, যাহা দ্বারা মনের প্রভুত্ব লাভ করা যায়-মনোবিদ্যা … প্রাণায়াম হইতেই ইহার আরম্ভ।

ধীরে এবং ক্রমে ক্রমে মনের বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করিতে পারা যায় এবং অবশেষে মন বশে আসে। ইহা সুদীর্ঘ অভ্যাসের ব্যাপার। হাল্কা কৌতূহল চরিতার্থ করিবার জন্য ইহা কখনই অভ্যাস করা উচিত নয়। যাহার যথার্থ আগ্রহ আছে, সে একটি নির্দিষ্ট প্রণালী অনুসরণ করে। রাজযোগ কোন বিশ্বাস, মতবাদ বা ঈশ্বরের কথা বলে না। যদি তোমার দুই হাজার দেবতার উপর আস্থা থাকে, বেশ তো ঐ বিশ্বাসের পথেই চল না। ক্ষতি কি? কিন্তু রাজযোগে পাওয়া যায় ব্যক্তি-সম্পর্কশূন্য তত্ত্ব।

মহা মুশকিল এই যে, আমরা বচন ও মতবাদ ঝাড়িতে বৃহস্পতি। কিন্তু এই বাক্যের বোঝা অধিকাংশ মানুষকে কোনই সাহায্য করে না। তাহাদের প্রয়োজন বাস্তব জিনিষের সংস্পর্শ। বড় বড় দার্শনিক তত্ত্বের কথা বলিলে তাহারা ধারণা করিতে পারিবে না, তাহাদের মাথা গুলাইয়া যাইবে। সরল শ্বাসপ্রশ্বাসের অভ্যাসের কথা অল্প অল্প করিয়া শিক্ষা দিলে বরং তাহারা বুঝিতে পারিবে এবং অভ্যাস করিয়া আনন্দও পাইবে।

ধর্মের ইহা প্রাথমিক পাঠ। শ্বাসপ্রশ্বাসের অভ্যাস দ্বারা প্রচুর উপকার হইবে। আমার মিনতি-আপনারা শুধু উপর উপর কৌতূহলী হইবেন না। কয়েকদিন অভ্যাস করিয়া দেখুন। যদি ফল না পান, আসিয়া আমাকে গালি দিবেন।

সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড একটি পুঞ্জীভূত শক্তি। ঐ মহাশক্তি প্রতি বিন্দুতে বর্তমান। উহার এক কণাই আমাদের সকলের পক্ষে পর্যাপ্ত, যদি আমরা জানি কি করিয়া উহা আয়ত্ত করা যায়।

‘অমুক কাজ আমাকে করিতেই হইবে’-এই বুদ্ধিই আমাদিগকে নষ্ট করিতেছে, ইহা ক্রীতদাসের বুদ্ধি। … আমি তো চিরমুক্ত। আমার আবার কর্তব্যের বন্ধন কি? আমি যাহা করি, তাহা আমার খেলা। একটু আমোদ করিয়া লই … এই পর্যন্ত।

প্রেতাত্মারা দুর্বল। তাহারা আমাদের নিকট হইতে কিছু প্রাণশক্তি পাইতে চেষ্টা করিতেছে।

একটি মন হইতে অপর মনে আধ্যাত্মিক তেজ সংক্রামিত করা যায়। যিনি দেন, তিনি গুরু; যে গ্রহণ করে, সে শিষ্য। এইভাবেই পৃথিবীতে আধ্যাত্মিক শক্তি বিকীর্ণ হয়।

… প্রাণ সংস্কারসমূহে আশ্রয় পায়। নূতন শরীর পরিগ্রহ কালে উহা পুনরায় পৃথক্ হয়। যথাকালে নূতন দেহ ও নূতন মস্তিষ্ক নির্মিত হয়। আত্মা উহার মাধ্যমে পুনরায় অভিব্যক্ত হন।

মৃত্যুর সময় ইন্দ্রিয়সমূহ মনে লয় পায়, মন লীন হয় প্রাণে। আত্মা দেহ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইবার সময় মন ও প্রাণের খানিকটা অংশ সঙ্গে লইয়া যান। সূক্ষ্ম-দেহের ধারক হিসাবে কিছু সূক্ষ্ম উপাদানও নেন। কোন প্রকার বাহন ব্যতীত প্রাণ থাকিতে পারে না। … প্রাণ সংস্কারসমূহে আশ্রয় পায়। নূতন শরীর পরিগ্রহ কালে উহা পুনরায় পৃথক্ হয়। যথাকালে নূতন দেহ ও নূতন মস্তিষ্ক নির্মিত হয়। আত্মা উহার মাধ্যমে পুনরায় অভিব্যক্ত হন।

প্রেতাত্মারা শরীর সৃষ্টি করিতে পারে না। তাহাদের মধ্যে যাহারা খুব দুর্বল, তাহারা যে দেহ ত্যাগ করিয়াছে, তাহাই স্মরণ করিতে পারে না। তাহারা অপর মানুষের শরীরে প্রবেশ করিয়া পৃথিবীর কিছু ভোগসুখ লাভ করিবার চেষ্টা করে। যে-কেহ ঐ প্রেতাত্মাদের প্রশ্রয় দেয়, তাহাদের সমূহ বিপদ ঘটিতে পারে, কেননা প্রেতাত্মারা তাহার জীবনীশক্তি শোষণ করে।

এই জগতে ঈশ্বর ব্যতীত আর কিছুই চিরন্তন নয়। … মুক্তি-অর্থে সত্যকে জানা। আমরা নূতন কিছু হই না, আমরা যাহা তাহাই থাকি। আত্মসত্যে শ্রদ্ধা আনিতে পারিলেই মুক্তি সম্ভব, কর্ম দ্বারা নয়; ইহা জ্ঞানের প্রশ্ন। তুমি কে-ইহা তোমাকে উপলব্ধি করিতে হইবে, আর কিছু নয়। সংসার-স্বপ্ন তৎক্ষণাৎ ঘুচিয়া যাইবে। তোমরা এবং অন্যান্য সকলে এই পৃথিবীতে নানা স্বপ্ন দেখিয়া চলিয়াছ।

মৃত্যুর পর স্বর্গে গিয়া আবার নূতন এক স্বপ্ন দেখা শুরু হইবে। ঐ স্বপ্ন চলিবে কিছুকাল। উহার অবসান ঘটিলে পুনরায় শরীর পরিগ্রহ করিয়া পৃথিবীতে আসা-হয়তো খুব সদ্‌ভাবে জীবনযাপন, অনেক দান-ধ্যান। কিন্তু তাহা তো আর আত্মজ্ঞান আনিয়া দিবে না। প্রকৃত দান অর্থে হাসপাতাল নির্মাণ নয়-ইহা আমরা কবে বুঝিব?

বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেন, ‘সকল বাসনা আমা হইতে চলিয়া গিয়াছে। আমি আর ক্রিয়াকাণ্ডের মধ্যে যাইব না।’ তিনি তত্ত্বজ্ঞানের প্রয়াসী হইয়া কঠোর সাধনায় লাগিয়া যান। অবশেষে একদিন দেখিতে পান-এই জগদ্‌‍বৈচিত্র্য কী মিথ্যা কল্পনা, কী দুঃস্বপ্ন, আর স্বর্গ বা লোক-লোকান্তরের প্রসঙ্গ আরও নিকৃষ্টতর ফাঁকি!-তখন তিনি হাসিয়া উঠেন।

………………..
দশম খণ্ড : সংক্ষিপ্তলিপি-অবলম্বনে : প্রাণায়াম

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!