ভবঘুরেকথা
সপ্তচক্র ধ্যান চক্র আসন যোগ

যোগবিষয়ে অন্যান্য শাস্ত্রে উল্লেখ :

১. শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ্

দ্বিতীয় অধ্যায়

অগ্নির্যত্রাভিমথ্যতে বায়ুর্যত্রাধিরুধ্যতে।
সোমো যত্রাতিরিচ্যতে তত্র সঞ্জায়তে মনঃ ।।৬।।

-যেখানে অগ্নিকে মথন করা হয়, যেখানে বায়ুকে রোধ করা হয় এবং যেখানে অপর্যাপ্ত সোমরস প্রবাহিত হয়, সেখানে (সিদ্ধ) মনের উৎপত্তি হইয়া থাকে।

ত্রিরুন্নতং স্থাপ্য সমং শরীরং
হৃদীন্দ্রিয়াণি মনসা সন্নিবেশ্য।
ব্রহ্মোড়ুপেন প্রতরেত বিদ্বান্
স্রোতাংসি সর্বাণি ভয়াবহানি ।।৮।।

-বক্ষঃ, গ্রীবা ও শিরোদেশ উন্নতভাবে রাখিয়া, শরীরকে সমভাবে ধারণ করিয়া, ইন্দ্রিয়গুলিকে মনে স্থাপন করিয়া জ্ঞানী ব্যক্তি ব্রহ্মরূপ ভেলা দ্বারা সকল ভয়াবহ স্রোত পার হইয়া যান।

প্রাণান্ প্রপীড্যেহ সংযুক্তচেষ্টঃ
ক্ষীণে প্রাণে নাসিকয়োচ্ছ্বসীত।
দুষ্টাশ্বযুক্তমিব বাহমেনং
বিদ্বান্ মনো ধারয়েতাপ্রমত্তঃ ।।৯।।

-সংযুক্তচেষ্ট ব্যক্তি প্রাণকে সংযত করেন। যখন উহা শান্ত হইয়া যায়, তখন নাসিকা দ্বারা প্রশ্বাস পরিত্যগ করেন। যেমন সারথি চঞ্চল অশ্বগণকে সংযত করেন অধ্যবসায়শীল যোগীও সেইভাবে মনকে ধারণ করিবেন।

সমে শুচৌ শর্করাবহ্নিবালুকা-
বিবর্জিতে শব্দজলাশ্রয়াদিভিঃ ।
মনোহনুকূলে ন তু চক্ষুঃপীড়নে
গুহানিবাতাশ্রয়ণে প্রযোজয়েৎ ।।১০।।

-সমতল, শুচি, প্রস্তর, অগ্নি ও বালুকাশূন্য, মনুষ্যকৃত অথবা কোন জলপ্রপাতজনিত মনশ্চাঞ্চল্যকর শব্দ-শূন্য, মনের অনুকূল, চক্ষুর প্রীতিকর পর্বতগুহাদি নির্জন স্থানে থাকিয়া যোগ অভ্যাস করিতে হইবে।

নীহারধূমার্কানিলানলানাং
খদ্যোতবিদ্যুৎস্ফটিকশশিনাম্।
এতানি রূপাণি পুরঃসরাণি
ব্রহ্মণ্যভিব্যক্তিকরাণি যোগে ।।১১।।

-নীহার, ধূম, সূর্য, বায়ু, অগ্নি, খদ্যোত, বিদ্যুৎ, স্ফটিক, চন্দ্র-এই রূপগুলি সন্মুখে আসিয়া ক্রমশঃ যোগে ব্রহ্মকে অভিব্যক্ত করে।

পৃথ্ব্যপতেজোহনিলখে সমুত্থিতে
পঞ্চাত্মকে যোগগুণে প্রবৃত্তে।
ন তস্য রোগো ন জরা ন মৃত্যুঃপ্রাপ্তস্য যোগাগ্নিময়ং শরীরম্ ।।১২।।

-যখন পৃথিবী, জল, তেজঃ, বায়ু ও আকাশ-এই পঞ্চভূত হইতে যৌগিক অনুভূতিসমুদয় হইতে থাকে, তখন যোগ আরম্ভ হইয়াছে বুঝিতে হইবে। যিনি এইরূপ যোগাগ্নিময় শরীর পাইয়াছেন, তাঁহার আর ব্যাধি, জরা, মৃত্যু থাকে না।

লঘুত্বমারোগ্যমলোলুপত্বং
বর্ণপ্রসাদঃ স্বরসৌষ্ঠবঞ্চ।
গন্ধঃ শুভো মূত্রপুরীষমল্পং
যোগপ্রবৃত্তিং প্রথমাং বদন্তি ।।১৩।।

-শরীরের লঘুতা, স্বাস্থ্য, লোভশূন্যতা, সুন্দর বর্ণ, স্বরমাধুর্য, মূত্রপুরীষের অল্পতা ও শরীরে একটি পরম সুগন্ধ-যোগারম্ভ করিলে যোগীর এই লক্ষণগুলি প্রথমেই প্রকাশ পায়।

যথৈব বিন্বং মৃদয়োপলিপ্তং
তেজোময়ং ভ্রাজতে তৎ সুধান্তম্।
তদ্বাত্মতত্ত্বং প্রসমীক্ষ্য দেহী
একঃ কৃতার্থো ভবতে বীতশোকঃ ।।১৪।।

-যেমন সুবর্ণ ও রজত প্রথমে মৃত্তকাদি দ্বারা লিপ্ত থাকে, পরিশেষে উত্তমরূপে ধৌত হইয়া তেজোময় দীপ্তিতে প্রকাশ পায়, সেইরূপ দেহী আত্মতত্ত্ব দর্শন করিয়া একস্বরূপ, কৃতার্থ ও দুঃখবিমুক্ত হয়।

২. শঙ্কর-উদ্ধৃত যাজ্ঞবল্ক্য

আসনানি সমভ্যস্য বাঞ্ছিতানি যথাবিধি।
প্রাণায়ামং ততো গার্গি জিতাসনগতোহভ্যসেৎ।।
মৃদ্বাসনে কুশান্ সম্যগাস্তীর্ষাজিনমেব চ।
লম্বোদরং চ সম্পূজ্য ফলমোদকভক্ষণৈঃ ।।
তদাসনে সুখাসীনঃ সব্যে ন্যস্যেতরং করম্।
সমগ্রীবশিরাঃ সম্যক্ সংবৃতাস্যঃ সুনিশ্চলঃ।।
প্রাঙ্মুখোদঙ্মুখো বাপি নাসাগ্রন্যস্তলোচনঃ।

অতিভুক্তমভুক্তং চ বর্জয়িত্বা প্রষত্নতঃ।।
নাড়ীসংশোধনং কুর্ষাদুক্তমার্গেণ যত্নতঃ।
বৃথা ক্লেশো ভবেত্তস্য তচ্ছোধনমকুর্বতঃ।।
নাসাগ্রে শশভৃদ্বীজং চন্দ্রাতপবিতানিতম্।
সপ্তমস্য তু বর্গস্য চতুর্থং বিন্দুসংযুতম্।।
বিশ্বমধ্যস্থমালোকা নাসাগ্রে চক্ষুষী উভে।
ইড়য়া পূরয়েদ্বায়ুং বাহ্যং দ্বাদশমাত্রকৈঃ।।

ততোহগ্নিং পূর্ববদ্ধ্যায়েৎ স্ফুরজ্জ্বালাবলীষুতম্।
রুষষ্ঠং বিন্দুসংযুক্তং শিখিমন্ডলসংস্থিতম্।।
ধ্যায়েদ্বিরেচয়েদ্বায়ুং মন্দং পিঙ্গলয়া পুনঃ।
পুনঃ পিঙ্গলয়াপূর্ষ ঘ্রাণং দক্ষিণতঃ সুধীঃ।।
তদ্বদ্বিরেচয়েদ্বায়ুমিড়য়া তু শনৈঃ শনৈঃ।
ত্রিচতুর্বৎসরং চাপি ত্রচতুর্মাসমেব বা।।

গুরুণোক্তপ্রকারেণ রহস্যেবং সমভ্যসেৎ।
প্রাতর্মধ্যন্দিনে সায়ং স্নাত্বা ষট্‌কৃত্ব আচরেৎ।।
সন্ধ্যাদি কর্ম কৃত্বৈবং মধ্যরাত্রেহপি নিত্যশঃ।
নাড়ীশুদ্ধিমবাপ্নোতি তচ্চিহ্নং দৃশ্যতে পৃথক্।।
শরীরলঘুতা দীপ্তির্জঠরাগ্নিবিবর্ধনম্।
নাদাভিব্যক্তিরিত্যেতল্লিঙ্গং তচ্ছুদ্ধিসূচকম্।।
প্রাণায়ামং ততঃ কুর্যাদ্রেচকপূরককুম্ভকৈঃ।
প্রাণাপানসমাযোগঃ প্রাণায়ামঃ প্রকীর্তিতঃ।।

* * *

পূরয়েৎ ষোড়শৈর্মাত্রৈরাপাদতলমস্তকম্।
মাত্রৈর্দ্বাত্রিংশকৈঃ পশ্চাদ্রেচয়েৎ সুসমাহিতঃ।।
সম্পূর্ণকুম্ভবদ্বায়োর্নিশ্চলং মূর্ধ্নি দেশতঃ।
কুম্ভকং ধারণং গার্গি চতুঃষষ্ট্যা তু মাত্রয়া।।
ঋষয়স্তু বদন্ত্যন্যে প্রাণায়ামপরায়ণাঃ।

পবিত্রীভূতাঃ পূতান্ত্রাঃ প্রভঞ্জনজয়ে রতাঃ।।
তত্রাদৌ কুম্ভকং কৃত্বা চতুঃষষ্ট্যা তু মাত্রয়া।
রেচয়েৎ ষোড়শৈর্মাত্রৈর্ন্যাসেনৈকেন সুন্দরি।।
তয়োশ্চ পূরয়েদ্বায়ুং শনৈঃ ষোড়শমাত্রয়া।
প্রাণায়ামৈর্দহেদ্দোষন্ ধারণাভিশ্চ কিল্বষান্।
প্রত্যাহারাচ্চ সংসর্গান্ ধ্যানেনানীশ্বরান্ গুণান্।।

-যথাবিধি বাঞ্ছিত আসন অভ্যাস করিয়া অতঃপর হে গার্গি, জিতাসনগত হইয়া প্রণায়াম অভ্যাস করিবে। কোমল আসনে কুশ সম্যক্ বিছাইয়া, তাহার উপর মৃগচর্ম বিছাইয়া, ফল ও মোদকের দ্বারা গণেশের পূজা করিয়া, সেই আসনে সুখাসীন হইয়া বামহস্তে দক্ষিণহস্ত স্থাপন করিয়া, সম-গ্রীবশির হইয়া, মুখ বন্ধ করিয়া, নিশ্চল হইয়া, পূর্বমুখ বা উত্তরমুখে বসিয়া, নাসাগ্রে দৃষ্টি ন্যস্ত করিয়া, অতিভোজন ব একেবারে অনাহার ত্যাগ করিয়া পূর্বোক্ত প্রকারে যত্নপূর্বক নাড়ী শোধন করিবে; এই নাড়ী শোধন না করিলে সাধনের ক্লেশ সমস্তই বৃথা হয়।

পিঙ্গলা ও ইড়ার সংযোগস্থলে (দক্ষিণ ও বাম নাসিকার সংযোগস্থলে) ‘হুং’ বীজ চিন্তা করিয়া ইড়াকে দ্বাদশমাত্রা বাহ্য বায়ু দ্বারা পূর্ণ করিবে, পরে সেই স্থানে অগ্নির চিন্তা ও ‘রং’ বীজ ধ্যান করিবে; এইরূপে ধ্যান করিবার সময় ধীরে ধীরে পিঙ্গলা (দক্ষিণ নাসিকা) দিয়া বায়ু রেচন করিবে। পুনরায় পিঙ্গলার দ্বারা পূরক করিয়া পূর্বোক্ত প্রকারে ধীরে ধীরে ইড়া দ্বারা রেচন করিবে। গুরুর উপদেশ অনুসারে ইহা তিন-চারি বৎসর অথবা তিন-চারি মাস অভ্যাস করিবে।

ঊষাকালে, মধ্যাহ্নে, সায়াহ্নে ও মধ্যরাত্রে, যতদিন না নাড়ীশুদ্ধি হয় ততদিন গোপনে অভ্যাস করিতে হইবে; তখন তাঁহাতে এই লক্ষণগুলি প্রকাশিত হয়, যথা-শরীরের লঘুতা, সুন্দরবর্ণ, ক্ষুধা ও নাদ-শ্রবণ।

পরে রেচক, কুস্তক, পূরকাত্মক প্রাণায়াম করিতে হইবে। অপানের সহিত প্রাণ যোগ করার নাম প্রাণায়াম। ১৬ মাত্রায় মস্তক হইতে পদ পর্যন্ত পূরক, পরে ৩২ মাত্রায় রেচক ও ৬৪ মাত্রায় কুম্ভক করিবে। আর এক প্রকার প্রাণায়াম আছে তাহাতে প্রথমে ৬৪ মাত্রায় কুম্ভক, পরে ৩২ মাত্রায় রেচক ও শেষে ১৬ মাত্রায় পূরক করিতে হইবে। প্রাণায়ামের দ্বারা শরীরের সমস্ত দোষ দগ্ধ হইয়া যায়।

ধারণা দ্বারা মনের অপবিত্রতা দূর হয়, প্রত্যাহার দ্বারা সঙ্গদোষ নাশ হয় এবং ধ্যানের দ্বারা নাশ হইয়া যায়-যাহা কিছু আত্মার ঈশ্বরভাব আবৃত করিয়া রাখে।

৩. সাংখ্য-প্রবচন-সূত্র

তৃতীয় অধ্যায়

ভাবনোপচয়াৎ শুদ্ধস্য সর্বং প্রকৃতিবৎ ।।২৯।।

-প্রগাঢ় ধ্যানবলে শুদ্ধস্বরূপ পুরুষের প্রকৃতির মতো সমুদয় শক্তি আসিয়া থাকে।

রাগোপহতির্ধ্যানম্ ।।৩০।।
-আসক্তির নাশকে ধ্যান বলে।

বৃত্তিনিরোধাত্তৎসিদ্ধিঃ ।।৩১।।

-সমুদয় বৃত্তির নিরোধ ধ্যানসিদ্ধি হয়।

ধারণাসনস্বকর্মণা তৎসিদ্ধিঃ ।।৩২।।

-ধারণা, আসন ও নিজ কর্তব্যকর্ম নিষ্পাদনের দ্বারা ধ্যান সিদ্ধ হয়।

নিরোধশ্ছর্দিবিধারণাভ্যাম্ ।।৩৩।।

-শ্বাসের ছর্দি (ত্যাগ) ও বিধারণ (ধারণ) দ্বারা প্রাণবায়ুর নিরোধ হয়।

স্থিরসুখমাসনম্ ।।৩৪।।

-যেভাবে বসিলে স্থৈর্য ও সুখ লাভ হয়, তাহার নাম আসন।

বৈরাগ্যাদভ্যাসাচ্চ ।।৩৬।।

-বৈরাগ্য ও অভ্যাসের দ্বারাও।

তত্ত্বাভ্যাসান্নেতি নেতীতি ত্যাগাদ্বিবেকসিদ্ধিঃ ।।৭৪।।

-‘ইহা নয়, ইহা নয়’ বলিয়া প্রকৃতির প্রত্যেকটি তত্ত্বকে ত্যাগ করিতে পারিলে বিবেক সিদ্ধ হয়।

চতুর্থ অধ্যায়

আবৃত্তিরসকৃদুপদেশাৎ ।।৩।।

-বেদে একাধিকবার শ্রবণের উপদেশ আছে, সুতরাং পুনঃপুনঃ শ্রবণের আবশ্যক।

শ্যেনবৎ সুখদুঃখী ত্যাগবিয়োগাভ্যাম্ ।।৫।।

-শ্যেনপক্ষী যেমন মাংসের বিয়োগে দুঃখী ও স্বয়ং ইচ্ছাপূর্বক ত্যাগ করিয়া সুখী হয়, সাধুও সেইরূপ ইচ্ছাপূর্বক সর্বত্যাগ করিয়া সুখী হইবেন।

অহিনির্ল্বয়নীবৎ।।৬।।

-সর্প যেমন হেয়জ্ঞানে গাত্রস্থ জীর্ণত্বক্ অনায়াসে পরিত্যাগ করে (সাধকও সেইরূপ পূর্বসংস্কার ত্যাগ করিবেন)।

অসাধনানুচিন্তনং বন্ধায় ভরতবৎ ।।৮।।

-যাহা বিবেকজ্ঞানের সাধন নয়, তাহা চিন্তা করিবে না, কারণ উহা বন্ধনেরহেতু; দৃষ্টান্ত-ভরত রাজা।

বহুভির্যোগে বিরোধো রাগাদিভিঃ কুমারীশঙ্খবৎ ।।৯।।

-বহু ব্যক্তির সঙ্গ রাগাদির কারণ বলিয়া ধ্যানের বিঘ্নস্বরূপ; দৃষ্টান্ত-কুমারীহস্তের বহু শঙ্খ।

দ্বাভ্যামপি তথৈব ।।১০।।

-দুইজন (বা দুটি শঙ্খ) একসঙ্গে থাকিলেও এইরূপ।

নিরাশঃ সুখী পিঙ্গলাবৎ ।।১১।।

-আশা ত্যাগ করিলে সুখী হওয়া যায়। দৃষ্টান্ত-পিঙ্গলা নাম্নী বেশ্যা।

বহুশাস্ত্রগুরূপাসনেহপি সারাদানং ষট্‌পদবৎ ।।১৩।।

-যদি বহু শাস্ত্র ও বহু গুরুর উপাসনা করা হয়, তথাপি তাঁহাদের মধ্যে সারটুকুই গ্রহণ করিতে হইবে, মুধুকর যেমন অনেক পুষ্প হইতে মধু সংগ্রহ করে।

ইষুকারবন্নৈকচিত্তস্য সমাধিহানিঃ ।।১৪।।

-শরনির্মাতার মতো একাগ্রচিত্ত থাকিলে সমাধি ভঙ্গ হয় না।

কৃতনিয়মলঙ্ঘনাদানর্থক্যং লোকবৎ ।।১৫।।

-লৌকিক বিষয়ে যেমন কৃতনিয়ম লঙ্ঘন করিলে মহা অনর্থের উৎপত্তি হয়, তদ্রূপ ইহাতেও।

প্রণতিব্রহ্মচর্যোপসর্পণানি কৃত্বা সিদ্ধির্বহুকালাত্তদ্বৎ ।।১৯।।

-প্রণতি, ব্রহ্মচর্য ও গুরুসেবা দ্বারা বহুকালে সিদ্ধিলাভ হয়, যেমন ইন্দ্রের হইয়াছিল।

ন কালনিয়মো বামদেববৎ ।।২০।।

-জ্ঞানোৎপত্তির কালনিয়ম নাই। যেমন, বামদেব মুনির (গর্ভাবস্থায় জ্ঞানোদয়) হইয়াছিল।

লব্ধাতিশয়যোগাদ্বা তদ্বৎ ।।২৪।।

-যে ব্যক্তি অতিশয় অর্থাৎ জ্ঞানের পরাকাষ্ঠা লাভ করিয়াছেন, তাঁহার সঙ্গদ্বারাও বিবেক লাভ হইয়া থাকে।

ন ভোগাদ্ রাগশান্তির্মুনিবৎ ।।২৭।।

-যেমন ভোগে সৌভরিমুনির আসক্তির শান্তি হয় নাই, তেমনি অন্যেরও ভোগে রাগশান্তি হয় না।

পঞ্চম অধ্যায়

যোগসিদ্ধয়োহপ্যৌষধাদিসিদ্ধিবন্নাপলপনীয়াঃ ।।১২৮।।
-ঔষধাদি দ্বারা আরোগ্য হয় বলিয়া যেমন লোকে ঔষধাদির শক্তি অস্বীকার করে না, যোগজ সিদ্ধিও সেইরূপ অস্বীকার করা চলিবে না।

ষষ্ঠ অধ্যায়

স্থিরসুখমাসনমিতি ন নিয়মঃ ।।২৪।।

-স্বস্তিকাদি আসন অভ্যাস করিতেই হইবে, এমন কোন নিয়ম নাই। শরীর ও মন বিচলিত না হয় ও সুখকর হয়, এরূপভাবে উপবেশনের নামই আসন।

৪. ব্যাস (বেদান্ত) সূত্র

৪র্থ অধ্যায়-১ম পাদ

আসীনঃ সম্ভবাৎ ।।৭।। ।

-উপাসনা বসিয়াই সম্ভব, সুতরাং বসিয়া উপাসনা করিবে।

ধ্যানাচ্চ ।।৮।।

-ধ্যান-হেতুও (উপবিষ্ট, অঙ্গচেষ্টারাহিত্যাদি লক্ষনাক্রান্ত পুরুষকে দেখিয়া লোকে বলে, ইনি ধ্যান করিতেছেন, অতএব ধ্যান উপবিষ্ট পুরুষেই সম্ভব)।

অচলত্বঞ্চাপেক্ষা ।।৯।।

-কারণ ধ্যানী পুরুষকে নিশ্চল পৃথিবীর সহিত তুলনা করা হইয়াছে।

স্মরন্তি চ ।।১০।।

-কারণ, স্মৃতিতেও এইরূপ আছে।

যত্রৈকাগ্রতা তত্রাবিশেষাৎ ।।১১।।

-যেখানে একাগ্রতা হইবে, সেই স্থানে বসিয়াই ধ্যান করিবে, কারণ কোন্ স্থানে বসিয়া ধ্যান করিতে হইবে, তাহার কোন বিশেষ বিধান নাই।

…………………………………………
এই কযেকটি উদ্ধৃত অংশ দেখিলেই একটা ধারণা হয়-যোগসম্বন্ধে অন্যান্য ভারতীয় দর্শনের কি বলিবার আছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!