-প্রণয় সেন
যে ব্যাক্তি পরলোকে চলে গিয়েছেন, ঈশ্বর ইচ্ছা করলে এক নিমিষে তাঁর দেহ পুননির্মাণ করে দিতে পারেন; এবং তিনি চান যে তোমরা তা জানো। তিনি তোমাদের বোঝাতে চান, এই সংসার অলীক লীলাখেলা।
যদি এই লীলাকে সত্য বলে গ্রহণ কর তবে তোমাদের অবশ্যই আঘাত পেতে হবে; তা নিশ্চয়ই তোমাদের অভিপ্রেত নয়। দুঃখ, ব্যাধি, যন্ত্রণা সমন্বিত এই জীবন তোমরা সহ্য করতে পারবে না। যখনই দেহে কোনো কষ্ট বা আঘাত পাই, আমার মনকে ভ্রুদ্বয়ের মধ্যবর্তী আধ্যাত্মিক চৈতন্যের স্থানে স্থির করি। তখন আর আমি কোন বেদনাই বোধ করি না। কিন্তু যখনই ঐ আঘাত বা ব্যথার স্থানে মনকে সমযুক্ত করি, তখনই বেদনা বোধের মায়ায় আবদ্ধ হই। যদি তোমরা মনকেও তোমাদের আত্মার আধ্যাত্মিক চৈতন্যে কেন্দ্রীভূত রাখতে পার, তবে দুঃখ বেদনার মায়াময়ী ছায়া মানসপটে প্রতিফলিত হলেও তুমি ব্যাথা পাবে না। তাঁর আনন্দময় সত্ত্বাকে তোমার নিকট প্রকট করবার জন্য ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা জানাও।
ইতিমধ্যেই তোমাদের অনেক সময় অপচয় হয়ে গিয়েছে। যে কোনও মুহুর্তে মৃত্যু তোমাদিগকে এই দেহ হতে পৃথক করে দিতে পারে এবং তখন আর ঈশ্বরকে জানবার অবকাশ থাকবে না। দেহপিঞ্জর হতে বহির্গত হবার পূর্বেই তাঁকে জানতে হবে। তাঁকে বলো, আমি তোমার অস্তিত্ব অনুভব করতে চাই।
কিন্তু নিজেকে বাসনা ব্যাধি হতে আরোগ্য না করা পর্যন্ত ঈশ্বর তোমাদিগকে এই মায়ার হাসপাতাল থেকে স্থায়ী মুক্তি দেবেন না। ভগবানের উদ্দেশ্য সব কর্ম করে যাও। আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য ভগবৎ উদ্দেশ্যে কর্মানুষ্ঠান ধ্যান ধারণার মতই আবশ্যক।
রাত্রিতে, যতক্ষণ না তাঁর সত্ত্বায় উন্নত হও এবং তাঁর আনন্দময়ত্বে আপ্লুত হও, ততক্ষণ ধ্যান করবে; যখন দিবাভাগে কর্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হবে তখনও সেই অবস্থায় স্মৃতি মনে পোষণ করবে। তবেই সর্বদা ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করবে, সর্বদা সহাস্যে বলতে পারবে, আমার আত্মা শান্ত চিরনবীন আনন্দে পূর্ণ। এক ফোঁটা দুঃখ বা সামান্য বাহ্যিক সুখ বা শান্তি সেই সমুদ্রে কোনো আলোড়ন তুলতে পারে না।
মায়াকে তুচ্ছ জ্ঞান করো। জীবনকে এক মহাজাগতিক চলচ্চিত্ররূপে দেখো; তাহলে সে আর তোমার উপর মায়ার ইন্দ্রজাল বিস্তার করতে পারবে না। ঈশ্বরীয় আনন্দে স্থিত হও। চারপাশের ভঙ্গুর জগতের ধ্বংসের মধ্যেও যদি অবিচলিত থাকতে পারো, তাহলে অনুভব করতে পারবে যে, ঈশ্বরই সত্য। তিনি তোমাকে আঘাত দিতে চান না। তিনি তোমাকে নিজের প্রতিমূর্তিরূপে গঠন করেছেন। তিনি নিজে যা, তোমাকে তাই করেছেন। কিন্তু সেটা তুমি উপলব্ধি করতে পারো না, যেহেতু তুমি নিজেকে মানুষ বলেই ভাবো। তুমি জানো না যে ঐ চিন্তাটাই হলো মায়া।
ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হওয়া নিশ্চয়ই মজার ব্যাপার নয়। সন্ত ফ্রান্সিস নানান রোগে ভুগেছিলেন। কিন্তু সেই সময়েও রোগগ্রস্তকে নিরাময় ও মৃত্যুকে পুনর্জীবিত করেছিলেন। তাঁর ঈশ্বরীয় আনন্দ কখনই অন্তর্হিত হয় নি। কাজেই সর্বতোভাবে ঈশ্বরকেই অবলম্বন করো। কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত তাঁকে জানাতে পারছো যে তুমি কেবল তাঁকেই চাও, তাঁর সৃষ্ট মায়াময় জগতে নিজেকে মেশাতে চাও না, ততক্ষণ তিনি তোমাকে গ্রহণ করবেন না।
……………………………………………………………
অনুপ্রাণনা
শ্রী শ্রী পরমহংস যোগানন্দ