একদিন বারদীর আশ্রমে এক যুবক এসে উপস্থিত হলো, যুবকটি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। ধর্ম-কর্ম বা সাধু-সন্ন্যাসীর প্রতি তার কোনো আস্থা বা আগ্রহ নেই। সব সাধু-সন্ন্যাসীকে ভন্ড বলে মনে করে সে। যুবকটি তার মাকে খুব ভালবাসে; সম্প্রতি তার মা এক দূরারোগ্য রোগে ভুগছেন, তাই মা’র অনুরোধে সে অনিচ্ছা সত্ত্বে মা’র রোগমুক্তির জন্য লোকনাথ ব্রহ্মচারীর কাছে এসেছে।
কিন্তু আশ্রমে এসে লোকনাথ বাবাকে প্রণাম না করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। ছেলেটিকে দেখেই অন্তর্যামী বাবা বললেন, কিরে, তুই তো ধর্ম-কর্ম বা সাধু-সন্ন্যাসীতে বিশ্বাস করিস না, তবে আমার কাছে এত কষ্ট করে এলি কেন?
কথাটা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল ছেলেটি। তার মনের কথা কি করে জানলেন তিনি, তা বুঝতে পারল না। বুঝল, সব সাধু-সন্ন্যাসীই ভণ্ড নয়। ছেলেটিকে চুপ করে থাকতে দেখে বাবা আবার বললেন, তুই তোর মাকে খুব ভালবাসিস, তাই না? তাঁর অনুরোধেই তো তুই আমার কাছে এসেছিস।
লোকনাথ যুবকটির মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহভরে বললেন- বুদ্ধিকে সীমার মধ্যে আবদ্ধ রাখলে কখনো সত্যকে জানা যায় না। তোর সঙ্গে আর আমার দেখা হবে না, তবে তোর মা’র রোগ সেরে যাবে, চাকরিতে তোর উন্নতি হবে। কিন্তু দেখিস, সত্যকে ভুলে যাসনি ; মন গর্ব রাখবি না। দু:খীর দু:খমোচনের চেষ্টা করবি, কাউকে ঘৃণা করবি না। যখনি কোন বিপদে পরবি, আমাকে স্মরণ করবি; আমি তোকে সাহায্য করব।
একথা শুনে আরও আশ্চর্য হয় ছেলেটি। সে লজ্জিত হয়ে বলল- আজ্ঞে হ্যাঁ, আমি মা’র আদেশে তাঁর রোগমুক্তির জন্যই এখানে এসেছি।
বাবা তখন বললেন- ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, যে সন্তান মা’র আদেশ পালন করে, ঈশ্বর তাকে দয়া করেন। তোর মা আমাকে বিশ্বাস করে, মনে মনে আমার কাছে সে প্রার্থনা করেছিল, তা বিফল হয়নি। তুই সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলি তো? তুই সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিস। তোর পকেটে একটা চিঠি এসেছে। খুলে দেখ, তোর চাকরির খবর এসেছে।
যুবকটি দেখলো- সত্যিই তার পকেটে একটা খাম রয়েছে। সেটা খুলে দেখল, সত্যিই তাতে চাকরি পাওয়ার কথা আছে। এই অত্যাশ্চর্য ঘটনায় অভিভূত হয়ে গেল যুবকটি। লোকনাথ ব্রহ্মচারী যে কত বড় যোগসিদ্ধ মহাপুরুষ, তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করল। তার চোখে জল এল, শ্রদ্ধায় আপনা থেকে তার মাথাটা লুটিয়ে পরল বাবার চরণে ; সে বার বার ক্ষমা প্রার্থনা করল। সাধু-সন্ন্যাসীর প্রতি অবিশ্বাস ও অশ্রদ্ধার ভাব চিরদিনের জন্য কেটে গেল তার। কার মধ্যে কি শক্তি আছে, কে জানে?
লোকনাথ যুবকটির মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহভরে বললেন- বুদ্ধিকে সীমার মধ্যে আবদ্ধ রাখলে কখনো সত্যকে জানা যায় না। তোর সঙ্গে আর আমার দেখা হবে না, তবে তোর মা’র রোগ সেরে যাবে, চাকরিতে তোর উন্নতি হবে। কিন্তু দেখিস, সত্যকে ভুলে যাসনি ; মন গর্ব রাখবি না। দু:খীর দু:খমোচনের চেষ্টা করবি, কাউকে ঘৃণা করবি না। যখনি কোন বিপদে পরবি, আমাকে স্মরণ করবি; আমি তোকে সাহায্য করব।
এইভাবে মহাপুরুষ লোকনাথ বাবার প্রভাবে অজ্ঞতার সব অন্ধকার কেটে যায় যুবকটির মন থেকে সেদিন। সেদিন থেকে সে হয়ে ওঠে অন্য মানুষ ; বাবার উপদেশ সে জীবনে কখনো ভোলেনি।
ব্রহ্মজ্ঞ মহাপুরুষের অভয় বাণী অমোঘ, তা কখনই মিথ্যা হতে পারে না। ভ্রষ্টাচারী মিথ্যাচারী মানুষের চরিত্রও তাঁর সংস্পর্শে এসে দিব্যলীলায় রূপান্তরিত হয়।
<<লোকনাথ বাবার লীলা : সাত ।। লোকনাথ বাবার লীলা : নয়>>
………………………
সূত্র:
শ্রীযামিনী কুমার দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায়ের ধর্ম্মসার সংগ্রহ গ্রন্থ থেকে।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
…………………
আরও পড়ুন-
লোকনাথ বাবার লীলা : এক
লোকনাথ বাবার লীলা : দুই
লোকনাথ বাবার লীলা : তিন
লোকনাথ বাবার লীলা : চার
লোকনাথ বাবার লীলা : পাঁচ
লোকনাথ বাবার লীলা : ছয়
লোকনাথ বাবার লীলা : সাত
লোকনাথ বাবার লীলা : আট
লোকনাথ বাবার লীলা : নয়
লোকনাথ বাবার লীলা : দশ
লোকনাথ বাবার লীলা : এগারো
লোকনাথ বাবার লীলা : বারো
লোকনাথ বাবার লীলা : তের
লোকনাথ বাবার লীলা : চৌদ্দ
লোকনাথ বাবার লীলা : পনের
লোকনাথ বাবার লীলা : ষোল
লোকনাথ বাবার লীলা : সতের
লোকনাথ বাবার লীলা : আঠার
লোকনাথ বাবার লীলা : উনিশ
লোকনাথ বাবার লীলা
……………..
আরও পড়ুন-
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : এক
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : দুই
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : তিন
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : চার
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : পাঁচ
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : উপসংহার