ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সাধুদ্বয় সঙ্গে – ঠাকুরের পরমহংস অবস্থা

আজ পঞ্চবটীতে দুইটি সাধু অতিথি আসিয়াছেন। তাঁহারা গীতা, বেদান্ত এ সব অধ্যয়ন করেন। মধ্যাহ্নে সেবার পর ঠাকুরকে আসিয়া দর্শন করিতেছেন। তিনি ছোট খাটটিতে বসিয়া আছেন। সাধুরা প্রণাম করিয়া মেঝেতে মাদুরের উপর আসিয়া বসিলেন। মাস্টার প্রভৃতিও বসিয়া আছেন। ঠাকুর হিন্দিতে কথা কহিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ – আপনাদের সেবা হয়েছে?

সাধুরা – জী, হাঁ।

শ্রীরামকৃষ্ণ – কি খেলেন?

সাধুরা – ডাল-রুটি; আপনি খাবেন?

সাধু ও নিষ্কামকর্ম – ভক্তি কামনা – বেদান্ত – সংসারী ও ‘সোঽহম্‌’

শ্রীরামকৃষ্ণ – না, আমি দুটি ভাত খাই। আচ্ছা জী, আপনারা যা জপ ধ্যান করেন তা নিষ্কাম করেন; না?

সাধু – জী, মহারাজ।

শ্রীরামকৃষ্ণ – ওই আচ্ছা হ্যায়, আর ঈশ্বরে ফল সমর্পণ করতে হয়; – না? গীতাতে ওইরূপ আছে।

সাধু (অন্য সাধুর প্রতি) –

য়ৎ করোষি য়দশ্নাসি য়জ্জুহোষি দদাসি য়ৎ।
য়ৎ তপস্যসি কৌন্তেয় তৎ কুরুষ্ব মদর্পণম্‌ ৷৷১

শ্রীরামকৃষ্ণ – তাঁকে একগুণ যা দেবে সহস্রগুণ তাই পাবে। তাই সব কাজ করে জলের গণ্ডুষ অর্পণ – কৃষ্ণে ফল সমর্পণ।

“যুধিষ্ঠির যখন সব পাপ কৃষ্ণকে অর্পণ করতে যাচ্ছিল, তখন একজন (ভীম) সাবধান করলে, ‘অমন কর্ম করো না – কৃষ্ণকে যা অর্পণ করবে, সহস্রগুণ তাই হবে!’ আচ্ছা জী, নিষ্কাম হতে হয় – সব কামনা ত্যাগ করতে হয়?”

সাধু – জী, হাঁ।

শ্রীরামকৃষ্ণ – আমার কিন্তু ভক্তিকামনা আছে। ও মন্দ নয়, বরং ভালই হয়। মিষ্ট খারাপ জিনিস – অমল হয়, কিন্তু মিছরিতে বরং উপকার হয়। কেমন?

সাধু – জী, মহারাজ।

শ্রীরামকৃষ্ণ – আচ্ছা জী, বেদান্ত কেমন?

সাধু – বেদান্তমে খট্‌ শাস্ত্র (ষড়দর্শন) হ্যায়।

শ্রীরামকৃষ্ণ – কিন্তু বেদান্তের সার – ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা। আমি আলাদা কিছু নই; আমি সেই ব্রহ্ম। কেমন?

সাধু – জী, হাঁ।

শ্রীরামকৃষ্ণ – কিন্তু যারা সংসারে আছে, আর যাদের দেহবুদ্ধি আছে, তাদের সোঽহম্‌ এ-ভাবটি ভাল নয়। সংসারীর পক্ষে যোগবাশিষ্ঠ, বেদান্ত – ভাল নয়। বড় খারাপ।

সংসারীরা সেব্য-সেবক ভাবে থাকবে। ‘হে ঈশ্বর, তুমি সেব্য – প্রভু, আমি সেবক – আমি তোমার দাস।’ “যাদের দেহবুদ্ধি আছে তাদের সোঽহম্‌ এ-ভাব ভাল না।”

সকলেই চুপ করিয়া আছেন। ঠাকুর আপনা-আপনি একটু হাসিতেছেন। আত্মারাম। আপনার আনন্দে আনন্দিত।

একজন সাধু অপরকে ফিসফিস করিয়া বলিতেছেন – “আরে, দেখো দেখো! এস্‌ কো পরমহংস অবস্থা বোল্‌ তা হ্যায়।”

শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারকে, তাহার দিকে তাকাইয়া) – হাসি পাচ্ছে।

ঠাকুর বালকের ন্যায় আপনা-আপনি ঈষৎ হাসিতেছেন।

…………………………..
১ গীতা [৯/২৭]

-১৮৮৪, ৫ই অক্টোবর-

……………….
রামকৃষ্ণ কথামৃত : দ্বাত্রিংশ অধ্যায় : দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!