ভবঘুরেকথা
শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী

বারদী গ্রামে রামরতন চক্রবর্তী নামে এক ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তিনি কবিরাজি করতেন ; তবে লোকে তাকে ডাকনাম অনুসারে কানাই কবিরাজ বলত। নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ হিসাবে তাঁর খ্যাতি ছিল। তাঁর একমাত্র পুত্রসন্তানের নাম ছিল জানকীনাথ। এই জানকীনাথই পরবর্তী জীবনে জানকী ব্রাহ্মচারী নাম খ্যাত হন।

জানকীনাথ যৌবনে পদার্পণ করার পর একবার কালাজ্বরে আক্রান্ত হন। দিনে দিনে রোগ বেড়ে যায় ; ডাক্তার-কবিরাজের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয় একে একে।

এদকে জানকীনাথ ছিলেন বাবা লোকনাথের পূর্বনির্দিষ্ট লীলা-িপার্ষদ। অন্তরঙ্গ পার্ষদকে কাছে টেনে নেবার এক অপূর্ব লীলা রচনা করলেন লোকনাথ।

কালাজ্বরে ক্রমাগত ভোগার ফলে জানকীনাথের জরাজীর্ণ শীর্ণদেহে প্রাণটি কোনমতে টিকে আছে। একমাত্র পুত্রসন্তানের অপাল প্রাণ বিয়োগের সম্ভাবনা দেখে পাগলের মত হয়ে গেলেন পিতামাতা।

রামরতন বুঝতে পারলেন, এই ঘোর বিপদে বাবা লোকনাথের শরণাপন্ন হওয়াই একমাত্র উপায়। এই ভেবে মৃতপ্রায় সন্তানকে নিয়ে একদিন বারদীর আশ্রমে গেলেন রামরতন। বাবা লোকনাথের চরণে সঁপে দিলেন পুত্রকে।

রামরতন বাবাকে বললেন- বাবা আমার একান্ত প্রাণপ্রিয় সন্তানের প্রাণরক্ষা আপনিই করতে পারেন, আপনার অলৌকিক কৃপার দ্বারা আমার পুত্রের প্রাণভিক্ষা দিয়ে আমাকে রক্ষা করুন।

শরণাগত বৎসল বাবা লোকনাথ সব কথা শুনে বললেন- ওকে আশ্রমে রেখে যা।

পরদিন বাবা জানকীনাথকে বললেন- আশ্রমের পূর্বদিকের পুকুর থেকে জল তুলে এনে আশ্রমের সেবায় লেগে যা।

অথচ জানকীনাথ তখন উত্থানশক্তি রহিত, বিন্দুমাত্র বল নেই। অস্তিচর্মসার দেহে পুকুর থেকে জল আনা দূরের কথা, পুকুরে যাবারই ক্ষমতা নেই তাঁর।

কিন্তু কি আশ্চর্য! বাবা লোকনাথ আদেশ করার সঙ্গে সঙ্গে সহসা শক্তি সঞ্চারিত হলো জানকীনাথের দেহে। তিনি তৎক্ষণাৎ পুকুরঘাটে চলে গেলেন অবলীলাক্রমে। তারপর পুকুর থেকে জল তুলে এনে আশ্রমের সেবায় লেগে গেলেন। এইভাবে দিনের পর দিন জল এনে এনে আশ্রমের সেবা করে যেতে লাগলেন জানকীনাথ। আর এই সেবার ফলে বাবার কৃপা ও আশীর্বাদ বর্ধিত হলো জানকীনাথের উপর।

কর্মযোগ শুরু হয়ে গেল জানকীনাথের জীবনে। গুরুর নিত্যচরণ সেবাই হয়ে ওঠে তাঁর সবচেয়ে বড় কাজ। এইভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তি পেয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন জানকীনাথ।

ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছে শুনে ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে যাবার জন্য আশ্রমে ছুটে এলেন জানকীর মা।

জানকীকে মা’র আদেশ পালন করতে নির্দেশ দিলেন বাবা লোকনাথ। কিন্তু জানকী বাবা লোকনাথকে বললেন- আমার তো বাঁচার কোন আশাই ছিল না, কেবল আপনার কৃপায় বেঁচে উঠেছি। তাই এ দেহের উপর আপনি ছাড়া আর কারো কোন অধিকার নেই। এই দেহ কেবল আপনার সেবা, পূজা ও সাধন-ভজনের জন্য উৎসর্গ করেছি আমি, সংসারে আর আমি ফিরব না।

কিন্তু একমাত্র সন্তানের মায়া কাটাতে পারলেন না মা, তিনি চোখে জল নিয়ে বারবার পুত্রকে ঘরে ফিরে যাবার জন্য অনুনয়-বিনয় করলেন। কিন্তু আপন সিদ্ধান্ত ও নিজকর্মে অটল রয়ে গেলেন জানকীনাথ।

অবশেষে পুত্রের গুরুভক্তি ও বৈরাগ্যতার কাছে হার মানতে বাধ্য হলেন মা। বাবা লোকনাথের চরণাশ্রমে পুত্রকে চিরদিনের মত রেখে একা ঘরে ফিরে গেলেন মা।

ক্রমে যোগসাধনায় উচ্চতর অবস্থা লাভ করেন জানকী ব্রহ্মচারী।

<<লোকনাথ বাবার লীলা : পনের ।। লোকনাথ বাবার লীলা : সতের>>

………………………
সূত্র:
শ্রীযামিনী কুমার দেবশর্ম্মা মুখোপাধ্যায়ের ধর্ম্মসার সংগ্রহ গ্রন্থ থেকে।

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

…………………
আরও পড়ুন-
লোকনাথ বাবার লীলা : এক
লোকনাথ বাবার লীলা : দুই
লোকনাথ বাবার লীলা : তিন
লোকনাথ বাবার লীলা : চার
লোকনাথ বাবার লীলা : পাঁচ
লোকনাথ বাবার লীলা : ছয়
লোকনাথ বাবার লীলা : সাত
লোকনাথ বাবার লীলা : আট
লোকনাথ বাবার লীলা : নয়
লোকনাথ বাবার লীলা : দশ
লোকনাথ বাবার লীলা : এগারো
লোকনাথ বাবার লীলা : বারো
লোকনাথ বাবার লীলা : তের
লোকনাথ বাবার লীলা : চৌদ্দ
লোকনাথ বাবার লীলা : পনের
লোকনাথ বাবার লীলা : ষোল
লোকনাথ বাবার লীলা : সতের
লোকনাথ বাবার লীলা : আঠার
লোকনাথ বাবার লীলা : উনিশ
লোকনাথ বাবার লীলা

……………..
আরও পড়ুন-
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : এক
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : দুই
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : তিন
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : চার
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : পাঁচ
লোকনাথ ব্রহ্মচারীর উপদেশ : উপসংহার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!