বারদীর জমিদার নাগ মহাশয়।
শুনে বাবার কথা আনন্দিত হয়।।
জমিদার প্রণমিয়া বাবার চরণে।
কৃপা করে চলো বাবা আমার ভবনে।।
লোকনাথ বলে আর গৃহে না থাকব।
ভূমি কিছু দাও মোরে তথঅয় রহিব।।
বাবা নিজে এক স্থান পছন্দ করল।
আশ্রম মন্দির সেথা নির্মাণ হলো।।
তারপর একদিন অতি শুভক্ষণে।
আশ্রম প্রতিষ্ঠা হৈল মহা ধূমধামে।।
এক গোয়ালিনী ছিল আশ্রমের পাশে।
বাবার লাগিয়ে নিত্য দুধ লয়ে আসে।।
অনাথা সে গোয়ালিনী বলল বাবারে।
আশ্রমে থাকব বাবা আজ্ঞা দাও মোরে।।
শুনি তা লোকনাথ আনন্দিত মন।
বলেন থাক মা তুমি মায়ের মতন।।
পূর্বজন্মে গোয়ালিনী ছিল তাঁর মাতা।
যোগবলে লোকনাথ জানে সে বারতা।।
আশ্রমের মাতা বলি পরিচিত হয়।
সর্বকার্য ভার নিজ হাতে তুলে লয়।।
অনাথা কৈবর্ত নারী একজন ছিল।
বাবার আশ্রমে আসি আশ্রয় লইল।।
আশ্রমের কন্যারূপে হয় পরিচিত।
আশ্রম মাতার কার্যে সাহায্য করত।।
এরূপে প্রসিদ্ধ হয় বাবার আশ্রম।
দিনে দিনে বৃদ্ধি পায় ভক্ত সমাগম।।
একদা বিজয় কৃষ্ণ লয়ে ভক্তগণ।
বারদীর আশ্রমেতে করে আগমন।।
বিজয় কৃষ্ণের নাম সকলেই জানে।
ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক সকলেই মানে।।
নৌকা চড়ি বিজযকৃষ্ণ আসতে লাগল।
যোগবলে লোকনাথ জানতে পারল।।
লোকনাথ ডেকে বলে সব ভক্তগণে।
এসেছে বিজয়কৃষ্ণ আনো সযতনে।।
অতি শুদ্ধ আত্মা তার সকলে জানবে।
বহুদিন পরে তার সঙ্গে দেখা হবে।।
আসিয়ে বিজয়কৃষ্ণ দেখি লোকনাথ।
আনন্দ সাগরে যেন লাগল ভাসতে।।
দেখল বিজয়কৃষ্ণ হয় বিস্মিত।
লোকনাথে ঘেরি দেব-দেবী বিরাজিত।।
লোকনাথ দেহ হতে জ্যোতি বাহিরিল।
বিজয়কৃষ্ণের দেহে তা প্রবেশিল।।
বিজয়কৃষ্ণের বাবা বুকে তুলে লন।
চতুর্দিকে দাঁড়াইয়ে দেখে ভক্তগণ।।
পাকা বেল লয়ে বাবা উচ্ছিষ্ট করে।
প্রসাদ দিলেন তাঁরে স্বহস্তে ধরে।।
এরূপে উভয়ের হলো মিলন।
আনন্দিত হলো দেখে যত ভক্তগণ।
বারদী আশ্রম নাম প্রসিদ্ধ হলো।
তীর্থস্থান রূপে তাহা গণ্য যে হলো।।
যেই জন লয় লোকনাথের স্মরণ।
অনায়াসে হয় তার অভীষ্ট পূরণ।।
বাবা লোকনাথ বল যেইজন ডাকে।
আপদে বিপদে বাবা রক্ষা করে তাকে।।
দেশ-দেশান্তর হতে ভক্ত আসে যায়।
যা চায় তা পায় বাবার কৃপায়।।
কালীঘাটে মানত করে একজন।
মনোমত ফললাভ করল যখন।।
কালীঘাটে পূজা তারে দিতে যেতে হবে।
পথের খরচ কিন্তু কোথা থেকে পাবে।।
অবশেষে বলে আসি আশ্রমে মাতারে।
সে কথা গিয়ে মাতা বলল বাবারে।।
শুনে সে কথা বাবা মৃদু হেসে কয়।
আমাকেই দিলে কালীঘাটে পূজা হয়।।
আমারে যা দেবে তাহা পাবেন মা কালী।
নিয়ে এসো মোর আছে পূজার সে ডালি।।
শুনি তা সে ব্যক্তি আনন্দিত হলো।
স্নান করি পূজা লয়ে আশ্রমেতে এলো।।
বাবার মন্দির মাঝে প্রবেশ করল।
মহাকালী মূর্তি সেথা দেখতে পেল।।
প্রণাম করে মাতা বসল আসনে।
লোকনাথ বসে আছে সহাস্য বদনে।।
ভাওয়ালের মহারাজ আসল আশ্রমে।
প্রণাম করল আসি বাবার চরণে।।
ফটো তুলে নিতে তার ইচ্ছা হয় মনে।
অনুমতি চায় রাজা বাবার চরণে।।
অনুমতি দাও বাবা লোকনাথ বলে।
গোপনে রাখব বাবা তব ফটো তুলে।।
প্রয়োজন হলে তাহা প্রকাশ করব।
এক্ষণে তাহা আমি গোপনে রাখব।।
আপনার অপ্রকটে এই চরাচরে।
পূজিত হবে ছবি প্রতি ঘরে ঘরে।।
কাতরতা দেখি বাবা দিলো অনুমতি।
ফটো তুলে নিল রাজা আনন্দিত অতি।।
আসিছে অন্তিম দিন বাবা চিন্তান্বিত।
ভক্ত লাগি কৃপা তার হলো বর্ষিত।।
সময় সমপ্ত হয়ে আসতেছে হায়।
ভক্ত তবু বাবা কৃপা বিতরয়।।
মহাপ্রয়াণের দিন করি নির্বাচন।
ভক্তগণ সঙ্গে করে নানা আলোচন।।
মহাপ্রয়াণের কিছু পেয়ে আভাস।
মনে মনে ভক্তগণ পেয়ে মহা ত্রাস।।
সে সময় জ্যৈষ্ঠ মাস গরমের দিন।
আঠারো তারিখ সেটা শনিবার দিন।।
পরিব্রাজক সাধু আসে বারদীতে।
লোকনাথ শিষ্য রামকুমার নামেতে।।
বারদী নিবাসী এক ভক্ত যে বাবার।
প্রবীণ বয়স্ক চন্দ্র ভট্টাচার্য নাম তাঁর।।
বাবার চরণে আসি প্রণাম করল।
সাধনার কথা বাবা তারে বুঝাল।।
এইরূপো লয়ে বাবা শিষ্য ভক্তগণ।
শাস্ত্র কথা লয়ে করে নানা আলোচনা।।
আরো পড়ুন…
লোকনাথ বাবার মঙ্গলাচরণ পাঁচালী…
লোকনাথ বাবার আবির্ভাব পাঁচালী…
লোকনাথ বাবার বাল্যজীবন পাঁচালী…
লোকনাথ বাবার যোগ-সাধনা পাঁচালী…
লোকনাথ বাবার ব্রহ্মজ্ঞান লাভ পাঁচালী…
লোকনাথ বাবার দেশ ভ্রমণ পাঁচালী…
লোকনাথ বাবার পুনরায় দেশ ভ্রমণ পাঁচালী…
লোকনাথ বাবার সুমেরু যাত্রা পাঁচালী…
লোকনাথ বাবার চন্দ্রনাথ পর্বতে আগমন পাঁচালী…
লোকনাথ বাবার দাউদকান্দি গমন পাঁচালী…
লোকনাথ বাবার বারদীতে আগমন পাঁচালী…
লোকনাথ বাবার আশ্রম স্থাপন পাঁচালী…
লোকনাথ বাবার মহাপ্রয়াণ পাঁচালী…