ভবঘুরেকথা
নৃসিংহদেব দেবতা নারায়ণ

সুলভ ভক্তিযুক্তানাম্ দুর্দশৌ দুষ্টচেতসাম্
অনন্য গতিকানাম চ প্রভুভক্তৈক বৎসলঃ।
শনৈশ্চরস্তত্র নৃসিংহদেবস্তুতিং চকারামল চিত্তবৃত্তিঃ
প্রণম্যসাষ্টাঙ্গম্ অশেষলোক কিরীট নীরাজিত পাদপদ্মম্।।১।।

-ভগবান শ্রী নৃসিংহদেব ভক্তদের কাছে সুলভ, কিন্তু তিনি দুষ্টচেতাদের দণ্ডদাতা। তিনি শরণাগত অসহায় ভক্তদের একমাত্র রক্ষাকর্তা। যখন অসংখ্য গ্রহলোকের দেবতারা তাঁর পাদপদ্মে প্রণতি নিবেদন করলে তাদের মুকুটের ঝলমল মণিরত্নগুলোর জ্যোতি তাঁর পদনখাগ্রে প্রতিফলিত হয়, তখন মনে হয় যেন শত শত প্রদীপ জাজ্বল্যমান। তাই ব্রহ্মার সভায় শনিদেব সেই ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রণতি নিবেদন পূর্বক প্রার্থনা করছেন।

শ্রী শনিরুবাচ

যৎ পাদপঙ্কজ রজঃ পরমাদরেণ
সংসেবিতম্ সকল কল্মষ রাশিনাশম্।
কল্যাণকারকং অশেশনিজানুগানাম্
স ত্বম নৃসিংহ ময়ি দেহি কৃপাবলোকম্।।২।।

-শ্রী শনিদেব বললেন, আপনার পদরজের দ্বারা রাশি রাশি কলুষ নষ্ট হয়। আর আদরের সাথে যারা আপনার পাদপদ্মের সেবা করেন তারা অশেষ কল্যাণ রাশি প্রাপ্ত হন। হে ভগবান নৃসিংহদেব, আমাতে আপনার কৃপাদৃষ্টি স্থাপন করুন।

সর্বত্র চঞ্চলত্ব¡য়া স্থিতয়া হি লক্ষ্মাঃ
ব্রহ্মাদি বন্দ্যপদয়া স্থিরয়ান্য সেবি।
পাদারবিন্দযুগলং পরমাদরেন
স ত্বম নৃসিংহ ময়ি দেহি কৃপাবলোকম্।।৩।।

-স্বরূপে চঞ্চলা হয়েও লক্ষ্মীদেবী স্বয়ং এবং সর্বলোক পূজ্য ব্রহ্মা-শিবাদি দেবতারাও আপনার পাদপদ্মের অর্চনা করেন। হে ভগবান নৃসিংহদেব আমাকে আপনার কৃপাদৃষ্টি প্রদান করুন।

যদরূপম আগমাশিরঃ প্রতিপাদ্যমাদ্যং
আধ্যাত্মিকাদি পরিতাপ হরম বিচিন্ত্যম্।
যোগীশ্বরৈরপগতাখিল দোষ সঙ্ঘৈঃ
স ত্বম নৃসিংহ ময়ি দেহি কৃপাবলোকম্।।৪।।

-বেদসমূহে বিস্তররূপে বর্ণিত আপনার রূপের ধ্যান করার মাধ্যমে সকল শ্রেষ্ঠ সাধুরা ত্রিতাপ ক্লেশ ও সকল দুর্ভাগ্য থেকে মুক্ত হন। হে ভগবান নৃসিংহদেব, আমাকে আপনার কৃপাদৃষ্টি প্রদান করুন।

প্রহ্লাদ ভক্তবচসাঃ হরিরাবিরাস
স্তম্ভে হিরণ্যকশিপুং য উদারভাবঃ।
উর্বো নিধায় উদরং নখরৈদদার
স ত্বম নৃসিংহ ময়ি দেহি কৃপাবলোকম্।।৫।।

-প্রহ্লাদের বাক্যে পরম করুণ দয়ালু ভগবান হরি স্তম্ভ থেকে বের হয়ে হিরণ্যকশিপুকে উরুতে স্থাপন করে নখদ্বারা তার উদর বিদারণ করেছিলেন। হে ভগবান নৃসিংহদেব আমাকে আপনার কৃপাদৃষ্টি প্রদান করুন।

যে নৈজ ভক্তম অনলাম্বুুধি ভুধরোগ্র
শৃঙ্গপ্রপাত বিষদন্তিসরীসূপেভ্য।
সর্বাত্মকঃ পরম কারুণিকৌররক্ষ
স ত্বম নৃসিংহ ময়ি দেহি কৃপাবলোকম্।।৬।।

-তুমি তোমার ভক্ত প্রহ্লাদকে জ্বলন্ত অগ্নি, গভীর সমুদ্র, সুবিশাল পর্বত, বিষ, মত্তহস্তী এবং বিষধর সাপেদের হাত থেকে রক্ষা করেছ। তুমি সর্বত্র বিরাজমান এবং পরম করুণাময়। হে ভগবান নৃসিংহদেব, আমাকে আপনার কৃপাদৃষ্টি প্রদান করুন।

যন্বির্বিকার পররূপ বিচিন্ত্যনেন
যোগীশ্বরা বিষয়বীত সমস্তরাগাঃ।
বিশ্রান্তিমাপুর বিনাশবতীং পরাক্ষম্।
স ত্বম নৃসিংহ ময়ি দেহি কৃপাবলোকম্।।৭।।

-যে সর্বোৎকৃষ্ট রূপের ধ্যান করে সকল শ্রেষ্ঠ সাধুরা বিষয় সাগর থেকে মুক্ত হয়ে ব্রহ্মসাযুজ্য লাভ করেন। হে ভগবান নৃসিংহদেব, আমাকে আপনার কৃপাদৃষ্টি প্রদান করুন।

যদরূপম উগ্র পরিমর্দন ভাবশালি
সঞ্চিন্তনেন সকলাঘ বিনাশকারি।
ভূত-জ্বর গ্রহ সমুদ্ভব ভীতিনাশম্
স ত্বম নৃসিংহ ময়ি দেহি কৃপাবলোকম্।।৮।।

-আপনার উগ্রমূর্তি দর্শন করে, সকল শান্তি-সুখ-সমৃদ্ধি লাভ হয়, সকল পাপ নাশ হয় এবং ভূত ভয়, জ্বর ও অপগ্রহাদির উপদ্রব বিদূরিত হয়। হে ভগবান নৃসিংহদেব, আমাকে আপনার কৃপাদৃষ্টি প্রদান করুন।

যস্যৌত্তমং যশ উমাপতি পদ্মজন্ম
শক্রাদি দৈবত-সভাসু সমস্তগীতম্।
শক্ত্যৈব সর্বশমল প্রশমৈক দক্ষম্।
স ত্বম নৃসিংহ ময়ি দেহি কৃপাবলোকম্।।৯।।

-আপনার যশোগাথা শিব, ব্রহ্মা, ইন্দ্রাদি দেবতারা কীর্তন করে থাকেন এবং আপনার শক্তি রাশি সমস্ত অপবিত্রতা বিনাশকারী। হে ভগবান নৃসিংহদেব, আমাকে আপনার কৃপাদৃষ্টি প্রদান করুন।

এবম্ শ্রুত্বাস্তুতিম দেবাঃ শনিনা কল্পিতাং হরিঃ
উবাচ্ ব্রহ্মবৃন্দস্থং শনিং তং ভক্তবৎসলঃ।।১০।।

-ব্রহ্মার সভায় শনিদেব রচিত হৃদয়গ্রাহী স্তুতি শ্রবণ করে ভক্তবৎসল হরি বলতে লাগলেন।

শ্রীনৃসিংহোবাচ

প্রসন্নোহং শনেতুভ্যম্ বরং বরয় শোভনম্।
যং বাঞ্ছসি তমেব ত্বম সর্বলোক হিতাবহম্।।১১।।

-শ্রী নৃসিংহদেব বললেন- হে শনি আমি তোমার ভক্তিতে তুষ্ট। যার দ্বারা সর্বলোকের কল্যাণ হয় এমন বর প্রার্থনা কর। আমি প্রদান করব।

শ্রীশনিরুবাচ

নৃসিংহ ত্বম ময়ি কৃপাং কুরু দেব দয়ানিধে।
মদ্বাসরস্তব প্রীতিকরঃ স্যাদেবতাপতে।।১২।।
মৎকৃতম্ ত্বৎপরম স্তোত্রং শৃন্বন্তি চ পঠন্তি চ।
সর্বান কামান পুরয়েথা স্তেষাং ত্বম লোকভাবন।।১৩।।

-শ্রীশনিদেব বললেন -হে ভগবান নৃসিংহদেব, হে দয়ার সাগর আমার প্রতি প্রসন্ন হোন। হে দেবদেব, আমার শনিবার যেন আপনার প্রিয় হয়। হে বিশ্বপাবন, যে সমস্ত ভক্তরা আমার গ্রথিত এই স্তব শ্রবণ বা কীর্তন করেন, তাদের সমস্ত বাসনা পূরণ করুন।

শ্রী নৃসিংহ উবাচ

তথৈবাস্তু শনেহম্ বৈ রক্ষৌভুবন সংস্থিতঃ।
ভক্তকামান পূরয়িষ্যে ত্বং মমৈক বচঃ শৃণু।।
ত্বৎ কৃতং মৎপরং স্তোত্রম্ যঃ পঠেৎ শৃণুয়াচ্চ যঃ।
দ্বাদশাষ্টম জন্মস্তাৎ তদভয়মাস্তু তস্য বৈ।।১৪।।

-শ্রীনৃসিংহদেব বললেন, হে শনি তাই হোক। যেহেতু আমি বিশ্বরক্ষক (রক্ষভুবন), আমার ভক্তের সকল বাসনা পূরণ করি। আরো জানো ১২-৮ অবস্থানের গ্রহ বা অন্য কুসময়ে জন্মের দ্বারা যারা যৎপরোনাস্তি দুঃখ পেয়েই যাচ্ছে তারা যদি এটা পাঠ করে বা শুনে তার কোনো ভয় থাকবে না।

শনির্নরহরিং দেবং তথেতি প্রত্যুবাচ হ।
ততঃ পরম সন্তুষ্টাঃ জয়েতি মুনয়োবদন।।১৫।।

-শনিদেব তখন নরহরি ভগবানকে বললেন যে, তিনি তার নির্দেশ পালন করবেন। তখন ব্রহ্মা সভায় আনন্দিত সাধু মুনি ঋষিরা জয় জয় ধ্বনি করলেন।

শ্রীকৃষ্ণোবাচ

ইতম্ শনৈশ্চরস্যাৎ নৃসিংহদেব
সম্বাদমেতত্ স্তবনং চ মানবাঃ।
শৃণোতি যঃ শ্রাবয়তে চ ভক্ত্যা
সর্বাণভীষ্ঠানি চ বিন্দতে ধ্রুবম।।১৬।।

-শ্রীকৃষ্ণ ধর্মরাজকে বললেন, যে ব্যক্তি

ভক্তিসহকারে শ্রী নৃসিংহ-শনি সংবাদ শ্রবণ করেন বা পাঠ করেন, তার সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ হয় এবং তিনি পরমানন্দ লাভ করেন।

।। ইতি শ্রীভবিষ্যোত্তর পুরাণে রক্ষোভুবন
মাহাত্ম্যে শ্রীশনৈশ্চরকৃত শ্রীনৃসিংহ স্তুতি সমাপ্ত।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!