হরিভক্ত দরশনে গঙ্গার পাপ মোচন
এইভাবে শ্রী অশ্বিনী, জয়পুর থাকে তিনি
ভক্তি করে তারকের পায়।
কবিগান শিখিবারে, দলেতে দোয়ারী করে
মহাভাবে থাকিত সদায়।।
অশ্বিনীর কন্ঠ সুর, মধু হতে সুমধুর
আসরেতে করে কবিগান।
আসরেতে শ্রোতাবৃন্দ, শুনিয়া পরমানন্দ
হরিচাঁদ ভক্ত শিরোমণি।
গান শুনি আনন্দিত, আসরের শ্রোতা যত
শ্রোতাগন কাহে একজন।
প্রেমরসে তনুখানি, হরিভক্ত শিরোমণি
হরি বলে ঝরে দু’নয়ন।
হরিচাঁদ রূপরসে, সদা আখি জলে ভাসে
হরিচাঁদে সপে মন প্রাণ।
যেদিকে ফেরায় আখি, হরিচাঁদ রূপ দেখি
অমনি হারায় বাহ্যজ্ঞান।।
সবে করে জয়ধ্বনি, শ্রীতারক তাহা শুনি
মস্তকেতে হস্ত দিয়া কয়।
শুন শুন বাছাধন, তুমি প্রেম মহাজন
হরি বলে আর্শীবাদ দেয়।
এইভাবে দেশে দেশে, কবিগান করি শেষে
জয়পুর গিয়ে সাঝে রয়।
হরিভক্ত শিরোমণি, শ্রীতারক তাহা জানি
কর্ম করিবারে নাহি দেয়।।
বলে তুমি শুন সোনা, কোন কর্ম করিওনা
সদা কর হরি গুণগান।
হরিচান্দ লীলাগীতি, লিখ তুমি শীঘ্র গতি
আশীর্বাদ করিলাম দান।।
ওড়াকান্দি গুরুচাঁদ, করেছেন আশীর্বাদ
আমি আর বাক্যে দিনু সায়।
তারকচাঁন্দের বাণী, শুনিয়া সে অশ্বিনী
কাঁদিয়া ধরিল গিয়া পায়।।
ছল ছল আখি দু’টি, কহিছেন কর পুটি
আমা দ্বারা সম্ভব না হয়।
বিদ্যা বুদ্ধি মোটে নাই, কেমনে লিখিব তাই
বল গুরু করি কি উপায়।।
তারক কহিছে বাণী, শুন শুন জাদুমণি
হরিচাঁদ হৃদয় আসিয়া।
তোমা দিয়া লেখাইবে, উপলক্ষ তুমি হবে
ভাব তুমি কিসের লাগিয়া।।
গুরু মুখে এই বাণী, শুনি ভক্ত শিরোমণি
কিছুদিন জয়পুরে রয়।
সদা হরিনাম করে, হরিনামে আখি ঝরে
প্রেমের তরঙ্গে ভেসে যায়।।
এইভাবে দিন গেল, কতদিন গত হল
শুন এক আশ্চর্য ঘটনা।
নব গঙ্গা নদি তীরে, অশ্বিনী বেড়ায় ঘুরে
হরিনাম কখন ভোলে না।।
নব গঙ্গা নদীকুলে, হিজলিকা বৃক্ষ দোলে
শাখাগুলি জলের উপর।
মহানন্দে বাহু তুলে, গঙ্গা মাকে পাব বলে
ঠিক যেন উপাসনা করে।।
সেই বৃক্ষ শাখা পরে, বসিয়া আনন্দ ভরে
প্রেমিক অশ্বিনী সদা রয়।
হরিচাঁদ পোষা পাখি, হরিনামে ঝরে আখি
প্রেমের তরঙ্গে ভেসে যায়।।
এক শাখে পদ দিয়ে , অন্য শাখাতে বসিয়ে
আনন্দেতে হরিগুণ গায়।
হরি হরি হরি বলে, ভেসেছে নয়ন জলে
সেই জল জলে ভেসে যায়।।
হরিনাম ধ্বনি শুনে, ভেসে ওঠে সুরোধনী
হরিভক্ত সঙ্গ পেতে চায়।।
বসিয়া মকর পৃষ্ঠে, চেয়ে আছে এক দৃষ্টে
নাম গুণে পরাণ জুড়ায়।।
ঝর ঝর আখি ঝরে, ধরে মাতা দুই করে
সর্ব পাপ হরণ আশায়।।
ভগীরথ যেদিনেতে, গঙ্গা আনে এ মহিতে
গঙ্গা জম্মে শ্রীহরির পায়।।
জন্মিয়া সে সুরধনী, ভগবানে বলে বাণী
কেন প্রভু জন্মালে আমায়।
দয়াময় বলে বাণী, শুন মাতা সুরধনী
শীঘ্র গতি যাহ মা ধরায়।।
পাপী তাপী উদ্ধারিতে, যাহ তুমি অবনীতে
ভগীরথ সঙ্গে তুমি যাও।
সগরের বংশ যত, ব্রহ্ম পাশে ভস্মীভূত
আগে তুমি তাদের তারাও।।
আর যত পাপী হবে, তোমা যদি পরশিবে
তারা সবে মুক্ত হয়ে যাবে।।
গঙ্গা বলে দয়াময়, ধরি আমি তব পায়
মম পাপ কেমনে ঘুচিবে।।
শুনিয়া গঙ্গার বাণী, কহিলেন চক্রপাণী
শুন গঙ্গা বলি তব ঠাই।
আমা হতে নাম বড়, নাম হতে ভক্ত বড়
হরিভক্ত সঙ্গ করা চাই।।
মম ভক্ত দরশনে, মম ভক্ত পরশনে
সর্ব পাপ মুক্ত হয়ে যাবে।
তাই আজি সুরধনী, হরিনাম ধ্বনি শুনি
দরশনে পরাণ জুড়া’বে।।
রোজ রোজ তথা আসি, গাছের ডালেতে বসি
এইভাবে হরিনাম করে।
গঙ্গা মা আনন্দ মনে, নিত্য আসি নাম শোনে
আনন্দে মকর লেজ নাড়ে।।
গ্রামবসী একজন, করি তাই দরশন
তারকের কাছে গিয়া কয়।
অশ্বিনীকে কর মানা, সে যেন গাছে যায় না
কবে যেন কুম্ভীরেতে খায়।।
নদীকুলে বৃক্ষডালে, বসে হরি হরি বলে
নয়নের জলে ভেসে যায়।
আমি দেখিলাম এসে, কুম্ভীর রয়েছে ভেসে
তাই আমি জানাই তোমায়।।
হেন কথা শুনি কানে, রসরাজ ভাবে মনে
কোন কিছু না পায় ভাবিয়া।
সাপে যারে ছায়া দেয়, তারে কি কুমীরে খায়
নিজ গিয়ে দেখিব আসিয়া।।
তাই ভাবি মনে মনে, থাকিয়া গোপনে স্থানে
চেয়ে চেয়ে দেখিবারে পায়।
অশ্বিনী বসিয়া ডালে, সদা হরি হরি বলে
নয়নের জলে ভাসে যায়।।
মা গঙ্গা মকর পরে, দুই হাতে উচু করে
ধরিতেছে নয়নের জল।
ধরিয়া নয়ন বারি, লইতেছে শিরপরি
আনন্দেতে বলি হরি বল।।
মনে ভাবে রসরাজ, কি যেন হইল আজ
গঙ্গা মাকে করে দরশন।
হেন দৃ্শ্য চোখে দেখি, পালটিতে নারে আখি
ঝর ঝর ঝরে দু’নয়ন।
দেখিয়া গঙ্গার মুর্ত্তি, করে কত স্তব স্তুতি
বলে মাগো রাখিও চরণে।
পাপী তাপী উদ্ধারিতে, আসিলেন অবনীতে
ধন্য আমি তব দরশনে।।
নিজ পাপ মুক্ত হতে, হরিভক্ত সঙ্গ নিতে
খেলা কর এখানে আসিয়ে।
ধন্য ধন্য শ্রী অশ্বিনী, হরি ভক্ত শিরোমণি
ধন্য আমি তার গুরু হয়ে।।
এইভাবে স্তুতি করে, হরি বলে আখি ঝরে
কেন্দে কেন্দে পড়িল ধরায়।
তাই দেখে সে অশ্বিনী, হরিভক্ত শিরোমণি
গুরু পদে কেঁদে কেঁদে কয়।।
আমি বড় অপরাধী, তুমি মোর গুণনিধি
চরণেতে ক্ষমা ভিক্ষা চাই।
তারক কহিছে বাণী, শুন শুন জাদুমণি
তোর কোন অপরাধ নাই।।
অশ্বিণীর হস্ত ধরে, চলিলেন ধীরে ধীরে
তখনি গৃহিতে চলে গেল।
কান্দিয়া বিনোদ বলে, এ জনম গেল চলে
হরিভক্ত সঙ্গ নাহি হলো।।