ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

শ্রীগৌরাঙ্গের হস্ত গণনা।
পয়ার।

এমন আশ্চর্যলীলা সকলে দেখিল।
তবু প্রভু পেয়ে কেহ চিনিতে নারিল।।
হেন মায়া স্বয়ং এর যুগে যুগে আছে।
মানুষ লীলার বেলা কে কবে চিনেছে।।
বদনে ব্রহ্মাণ্ড দেখাইল যশোদারে।
বাৎসল্য তাচ্ছিল্যজ্ঞানে চিনিতে না পারে।।
যখন গৌরাঙ্গ রায় শচী মার ঘরে।
আমি সেই আমি সেই বলে বারে বারে।।
সুরধনী গঙ্গা জন্মে আমার চরণে।
ডুবিলি মায়ার কূপে আমারে না চিনে।।
নদীয়ার নর নারী শচীমাকে কয়।
পড়িতে পড়িতে উহার বায়ু ঊর্ধ্ব হয়।।
গ্রহণের বেড়ী ভব বন্ধন চরণে।
বিষ্ণুতৈল শিরে দেয় শিখার মুণ্ডনে।।
আপনি হইয়া শান্ত জগৎ রঞ্জন।
জ্যোতির্জ্ঞ পণ্ডিত কাছে দিল দরশন।।
সামুদ্রিক জানে ভাল হস্ত অঙ্ক দেখে। (জ্ঞানে)
তিন জনমের কথা বলে দেয় লোকে।।
তার ঠাই গিয়া বলে গৌরাঙ্গ সুন্দর।
তিন জনমের বার্তা কহত আমার।।
গণক বলেন আমি পাই গণনায়।
পূর্বে তুমি কৃষ্ণ ছিলে যশোদা তনয়।।
নন্দ নামে গোপ বৈশ্য ছিল তব পিতা।
আমার গণনা কভু না হইবে মিথ্যা।।
তা হইলে তুমি হও স্বয়ং অবতার।
এ গণনা ভুল অদ্য হ’য়েছে আমার।।
প্রভু কন হে ঠাকুর আর আছে কার্য।
এর পূর্বে কে ছিলাম করে দেহ ধার্য।।
গণক বলেন তবে ফিরে ধরি হাত।
এর পূর্ব জন্মে তুমি ছিলে রঘুনাথ।।
দশরথ পুত্র তুমি কৌশল্যা উদরে।
চারি অংশে জন্ম নিলা অযোধ্যানগরে।।
গণনাতে টের পাই তোমার যে নাম।
জগৎ মন রমতে তুমি ছিলে রাম।।
তা হইলে তুমি হও স্বয়ং অবতার।
নিশ্চয় গণনা ভ্রান্তি হ’য়েছে আমার।।
কালীয় দমন করে ডুবে কালীদয়।
রাণী ব’লে বাঁচাইল কাত্যায়নী মায়।।
যখন করেন লীলা মানব রূপেতে।
তখন তাঁহাকে কেহ না পারে চিনিতে।।
যোগে বসি ধ্যান করে যত মুনিগণ।
একা গর্গ ধ্যান করে জানিল তখন।।
কণ্বমুনি পারণা করিতে নিবেদয়।
আপনি আসিয়া কৃষ্ণ তার অন্ন খায়।।
ক্রোধে পরিপূর্ণ হয়ে মুনিবর কয়।
গোয়ালের ছেলে মোর অন্ন মেরে দেয়।।
যশোদা রাখিল বেঁধে তবু এসে খায়।
ক্রোধ দেখি যশোদা ধরিল মুনি পায়।।
যশোদা বলেরে কৃষ্ণ অন্ন মার কেনে।
কৃষ্ণ বলে আমারে ডাকিল কি কারণে।।
গৃহে বাঁধা এক কৃষ্ণ আর কৃষ্ণ খায়।
তবু মুনি চিনিতে নারিল দয়াময়।।
বিস্ময় মানিয়া মুনি ধ্যানস্থ হইল।
ধ্যান করি বিশ্ব হরি তবে সে চিনিল।।
কার্যক্ষেত্রে তাঁহারে না চিনে কোনজন।
পূর্বেতে যেমন ভাব এখন তেমন।।
সেই মত লীলা করে যশোমন্ত সুত।
শুনিতে তাঁহার লীলা বড়ই অদ্ভুত।।
শ্রবণে কলুষ ক্ষয় গোলোকেতে বাস।
কৃষ্ণভক্তি লাভ হয় কর্মকাণ্ড নাশ।।
পাপে ধরা পরিপূর্ণ পাপাচ্ছন্ন তায়।
মন্দ সন্দ অন্ধকারে হরি চন্দ্রোদয়।।
শ্রীহরি চরিত্র সুধা রসনা রসিল। (রচিল)
হরি প্রেমানন্দে সবে হরি হরি বল।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!