তারকের স্তব
(লঘু ত্রিপদী)
ওগো দয়াময় হইয়া সদয়
করুণা করিলে মোরে।
গুণের মহিমা, দিতে নারি সীমা
নাম নিলে আখি ঝরে।।
আমি অন্ধ জন না জানি সাধন
তোমারি কৃপা গুণে।
আসিয়া ধরায়, চিনিনা তোমায়
ভুলিয়া মায়া বন্ধনে।।
তুমি দীনবন্ধু করুণার সিন্ধু
পতিত পাবন হরি।
পতিত তারিতে এলে অবনিতে
সাঙ্গ পাঙ্গ সঙ্গে করি।।
তুমি দর্প হারী, মুকুন্দ মুরারী
প্রভু নিত্য নিরঞ্জন।।
তুমি চক্র ধারী সুন্দর শ্রী হরি
ভকত নয়নমণি।
অগতির গতি তুমি শান্তি পতি
কন্যা তব এ ধরণী।।
অন্ধের নয়ন মহা উদ্ধরণ
তিমির বিনাশকারী।
মদন মোহন ভকত জীবন
দুষ্টের দমন হরি।।
তং হি পূর্ণব্রহ্ম তুমি হে আব্রহ্ম
কৃষ্ণ কেশব শ্রী রাম।
দেব গদাধর গৌরাঙ্গ সুন্দর
গুণময় গুণধাম।।
বিধাতার বিধি তুমি গুণনিধি
সর্ব গুণের আধার।
অন্তিম কাণ্ডারী দিতে পদতরী
ভব নদী কর পার।।
ভকত লাগিয়া বেড়াও কান্দিয়া
ব্যাথায় বেথিত হয়ে।
তুমি বিনে আর কে আছে আমার
ফেল না পদে ঠেলিয়া।। (পয়ার)
ভক্তি ভাবে স্তুতি করে তারক রসনা।
ঠাকুর বলে বাছা তুই মোর সোনা।।
পদ্ম হস্ত বুলায়েছে তারকের গায়।
হেনকালে শান্তি মাতা আসিল তথায়।।
তারকেরে কোলে করি মাতা ঠাকুরাণী।
ছল ছল আখি দু’টি কহিতেছে বাণী।।
তুই মোর প্রাণাধিক ওহে বাছাধন।
বহু দিন হেরি নাক ও চাঁদ বদন।।
চাঁদ মুখে চুমু দেয় জগত জননী।
ধন্য ধন্য শ্রী তারক কবি চূড়ামণি।।
দেখরে নগর বাসী দেখরে চাহিয়া।
হেন ভাগ্য কার হয় জনম লভিয়া।।
ভক্ত আর ভগবান এমতি মিলন।
মনে হয় এই যেন বৈকুন্ঠ ভুবন।।
এই ভাবে ভক্ত আর হরি দয়াময়।
প্রেম সকরান্ধ পানে প্রফুল্ল-হৃদয়।। (মকরন্দ)
ধীরে ধীরে হরিচাঁদ কহিল তখন।
শুন শুন শান্তি দেবী আমার বচন।।
তারকের আনা মাছ কর হে রন্ধন।
বড় ক্ষুধা লাগিয়াছে করিব ভোজন।।
তাই শুনি শান্তি দেবী করিল রন্ধন।
ভক্তের ভক্তির দ্রব্য হইল তেমন।।
রন্ধন করিয়া দেবী কহিল তখন।
সবাই বস রে খেতে হয়েছে রন্ধন।।
তাই শুনি হরিচাঁদ ভোজনে বসিল।
তারক গোলোকে দুই পাশেতে বসাল।।
ভক্ত আর ভগবানে করেছে ভোজন।
শান্তি মাতা অন্ন দেয় আনন্দিত মন।।
হরিচাঁদ বলে বড় সুন্দর রন্ধন।
এমন স্বাদের মাছ খাইনি কখন।।
তাই শুনি সে তারক ভাবে মনে মনে।
আজি মোর মনবাঞ্ছা হইল পূরণ।।
হরি হরি হরি বলে কান্দিছে তারক।
তাই দেখে হরি বলে নাচিছে গোলক।।
ভক্ত আর ভগবান এমতি মিলন।
হয় নাই হবে নাক এ তিন ভুবন।।
এ দীন বিনোদ বলে পাঁচালীর ছন্দে।
হরিচাঁদ ছবিখানি হৃদয়েতে বন্দে।।
তাই বলি ভাই সব বেলা বেশী নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরিবল ভাই।।