ভবঘুরেকথা

তারকের ভ্রান্তি দুর
সেই হতে কিছুদিন ওড়াকান্দি রয়।
ঠাকুরের কর্ম করে হরি গুণ গায়।।
এই ভাবে দশ দিন গত হয়ে গেল।
নিজের বাড়ীর কথা মনে যে পড়িল।।
ভাবিলেন ঘরে মোর অর্থ কিছু নাই।
কিভাবে বাঁচিবে সবে মনে ভাবে তাই।।
ভাবিতে ভাবিতে তার ঝড়ে আখি জল।
অন্তরে জানিল তাহা পরম দয়াল।।
তারকের কাছে গিয়ে হরিচাঁদ কয়।
শুন শুন ও তারক বলি যে তোমায়।।
গৃহে চেল যাও তুমি ওহে বাছাধন।
ভক্তি পথে থাকে যেন সদা তব মন।।
যে করে আমার চিন্তা তার চিন্তা নাই।
তার দৈন্য দশা আমি সকল ঘুচাই।।
তাই শুনি সে তারক প্রণমিল পায়।
ঠাকুরের পদধুলি লইল মাথায়।।
শান্তি মার পদ প্রান্ত প্রণাম করিয়া।
ছল ছল আখি দু’টি কহিছে কান্দিয়া।।
তব চরণেতে মাগো এই ভিক্ষা চাই।
জনমে জনমে যেন ভুলিয়া নাই যাই।।
শান্তি মাতা কহিলেন শুন বাছাধন।
তোমার মনের বাঞ্ছা হইবে পুরণ।।
আশীর্বাদ লয়ে শিরে তারক সুজন।
ওড়াকান্দি হতে যাত্রা করিল তখন।।
পথে যেতে কত কিছু ভাবিতে লাগিল।
গৃহের সকল কথা মনেতে পরিল।।
ঘরেতে তণ্ডুল নাস্তি কি হবে উপায়।
নয়নের জলে তার বক্ষ ভেসে যায়।।
দশ দিন গত হল উপায় কি হবে।
অন্য বিনে মাতা মোর না খেয়ে মরিবে।।
যোগ্য পুত্র বেঁচে থেকে মায়ের মরণ।
ধিক ধিক শত ধিক আমার জীবন।।
দশ মাস দশ দিন জঠরে ধরেছে।
নিজে না খাইয়ে মাতা কত কি করেছে।।
ইতি উতি কত কিছু ভাবিতে ভাবিতে।
জলে ভরা আখি দু’টি লাগিল হাটিতে।।
বেলা গেল সন্ধ্যা হল এমন সময়।
লোহাগড়া বাজারেতে হইল উদয়।।
হরিচাঁদ ছবিখানি হৃদয় ধরিয়া।
গৃহের পিছনে গিয়া রহিল বসিয়া।।
তারকের মাতা বলে বধুমাতা ঠাই।
শুন শুন বধুমাতা তোমাকে জানাই।।
ওড়াকান্দি গেছে সে তারক আমার।
দশ দিন গত হল না জানি ব্যাপার।।
তারকের লাগি মোর পরাণ কেন্দেছে।
কি যেন কি হল নাকি মনেতে জেগেছে।।
চিন্তামণি বলে মাগো কোন চিন্তা নাই।
অদ্য কিবা কল্য আসে মনে জাগে তাই।।
ওড়াকান্দি হরিচাঁদ বড় দয়াময়।
তার কাছে গেলে পরে বিপদ না হয়।।
বিপদ ভঞ্জন হরি জগতে আসিল।
হরি নামে পাপ তাপ সকল নাশিল।।
আমাদের ভাগ্য ভাল পেয়েছি চরণ।
জনমের মত আজি লইনু শরণ।।
হেন কথা যখনেতে তারক শুনিল।
মায়ের চরণে এসে প্রণাম করিল।।
ছল ছল আখি দু’টি কহিলেন বাণী।
কি ভাবে বাঁচিয়া র’লে বল তাই শুনি।।
গৃহেতে তণ্ডুল নাস্তি গেলাম রাখিয়া।
কোন ভাবে কি খাইয়া রহিলেন বাঁচিয়া।।
দশ দিন গত হল আমি বাড়ী নাই।
চাউল কোথায় পেলে বল শুনি তাই।।
তারকের মাতা বলে কি কথা কহিলি।
হাট থেকে চাল কিনে তুই যে পাঠালি।।
সুন্দর বালক এক আসি হেথায়।
চাউল ডাউল দিয়া হইল বিদায়।।
সে বলিল তারক সে ওড়াকান্দি গেছে।
মোর কাছে চাল কিনে পাঠিয়ে দিয়েছে।।
তারে কোন দিন আমি চোখে দেখি নাই।
ভাবিলাম তোর কাছে জিজ্ঞাসিব তাই।।
হেন বাক্য যখনেতে তারক শুনিল।
মায়ের চরণ ধরি কান্দিতে লাগিল।।
কেন্দে বলে ওগো মাতা বলি তব ঠাই।
কারো কাছে চাল কিনে আমি দেই নাই।।
এমন বান্ধব কেবা আছে এ জগতে।
চাউল ডাউল দেয় বয়ে মস্তকেতে।।
আমি অতি মুঢ়মতি কোন গুণ নাই।
কেবা এই মহাজন মনে ভাবি তাই।।
হেন বাক্য যখনেতে তারক বলিল।
চিন্তামণি পদে পড়ে কান্দিতে লাগিল।।
কেন্দে বলে ওগো স্বামী বলি তব ঠাই।
কেবা এসেছিল আমি তোমাকে জানাই।।
মনে পরে এসেছিল হরি দয়াময়।
তাহাকে দেখিয়া চক্ষু ফিরান না যায়।।
সুন্দর বালক রূপে এসেছিল হেথা।
হেন রূপ আমি আর দেখি নাই কোথা।।
আমি তারে জিজ্ঞাসিনু কোথা বাড়ী ঘর।
সে বলিল আমি থাকি বাজারের পর।।
ভাবের বাজারে থাকি মোট বয়ে খাই।
যে আমায় মোট দেয় তার বাড়ী যাই।।
আমাদের বোঝা তিনি মস্তকেতে করি।
ছদ্মবেশে এসছিল দয়াল শ্রী হরি।।
হেন বাক্য চিন্তামণি বলিতে বলিতে।
তারকের পদে পড়ে লাগিল কান্দিতে।।
তারক ঢলিয়া পল মায়ের চরণে।
শত বারী বহিতেছে তাহার নয়নে।।
দেখরে জগত বাসি দেখরে চাহিয়া।
কি ভাবে কি করে হরি ভক্তের লাগিয়া।।
যদি কোন ভক্ত তারে সব কিছু দেয়।
এই ভাবে হরি তার বাসনা পুরায়।।
তাই বলি ভাই সব আর কিবা চাও।
শ্রীহরির শ্রীচরণে সব সপে দাও।।
কান্দিয়া বিনোদ বলে বেলা বেশী নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!