ভবঘুরেকথা

ভক্তের  বাধ্য হরিচাঁদ
লাল চন্দ্র পুর গ্রাম খুলনা জেলায়।
কবিগান হবে সেথা জানিল সবায়।।
কালীকৃষ্ণ নামে এক জমিদার ছিল।
তার বাড়ী কবিগান বন্দোবস্ত হল।।
তারক গোঁসাই এল গান গাহিবার।
মথুর নামেতে এল অন্য সরকার।।
দুই দলে হবে সেথা কাব্য আলোচনা।
দলে দলে সবে এল শুনিতে বাসনা।।
বহু লোক এলা তথা গান শুনিবারে।
দুই দল উঠিলেন কবির আসরে।।
ভবানী বিষয় আর আগমনী হয়।
সখী সংবাদ কবি যে হয়ে গেল সায়।।
তারপর পাঁচালীতে গেল দুই জন।
গান শুনে আনন্দিত সবাকার মন।।
মথুর সাজিল গিয়ে কেশব কাশ্মীরী।
তারকেরে সাজাইল শ্রীগৌরাঙ্গ হরি।।
কেশব কাশ্মীরী শেষে কহিতে লাগিল।
তুমি নাকি ভগবান লোকে তাই বলে।।
তুমি যদি ভগবান বলি যে তোমায়।
হরি নামে মাতোয়ারা সকল সময়।।
দু’টি কথা বলি তোমা শুন দিয়া মন।
বৃন্দাবনে তুমি যবে করিলে ভ্রমণ।।
হরি নামে মাতোয়ারা ঝরে দু’টি আখি।
হেন কালে দুই হাতে পড়ে দুই পাখী।।
শুক আর সারী এই পাখী দুইজন।
দুই শ্লোক বলে তারা কিসের কারণ।।
শ্লোক দু’টি বল আজি এ সবার মাঝ।
তবে আমি বুঝে লব তুমি রসরাজ।।
শ্লোকের অর্থ কিবা বল ভগবান।
প্রাণ ভরে শুনে আমি জুড়াইব কান।।
তারপর শ্রী তারক আসরেতে যায়।
শ্লোকের অর্থ কিবা খুঁজিয়া না পায়।।
ধামা চাপা দিয়ে বলে তারক গোঁসাই।
হরি নামে মাতোয়ারা শুনিতে না পাই।।
তারপর সে মথুর আসরেতে যায়।
ব্যাঙ্গ করে তারকেরে কত যে কি কয়।।
তাই শুনে সে তারক বাহিরেতে গেল।
নয়নের জলে বক্ষ ভাসিতে লাগিল।।
নির্জনে বাসিয়া কবি ভাবে মনে মন।
কোথা প্রভু হরিচাঁদ কি করি এখন।।
তোমার আদেশ নিয়া কবিগান গাই।
তোমার কৃপায় কোথা পরাজয় নাই।।
এবে তুমি বলে দাও কি হবে উপায়।
তোমার নামের বুঝি হয় পরাজয়।।
সাধন না জানি প্রভু ভজন না জানি।
এ বিপদে রক্ষা কর হরি গুণমণি।।
তুমি যারে রক্ষা কর ওগো দয়াময়।
তার কভু নাহি হয় হেন পরাজয়।।
মহাভাব উথলিয়া আখি দু’টি ঝরে।
ওড়াকান্দি থেকে হরি জানিল অন্তরে।।
ভক্তের লাগিয়া আজি হরি দয়াময়।
কাগজেতে শ্লোক লিখে বাতাসে ভাসায়।।
বাতাসেতে ভেসে ভেসে সে কাগজ খানি।
তারকের মস্তকেতে পড়িল অমনি।।
তাই দেখে সে তারক কাগজ ধরিল।
দুই শ্লোক লেখা আছে দেখিতে পাইল।।
মনে মনে ভাবিতেছে কবি রসরাজ।
ভক্ত বাঞ্ছাকল্পতরু তার এই কাজ।।
তখনি তারক চন্দ্র আসরেতে যায়।
শোক দু’টি ব্যাখ্যা করি সবারে জানায়।।
কবির খোলায় যত শ্রোতাগণ ছিল।
আনন্দেতে আত্মহারা প্রেমেতে ভাসিল।।
(শ্লোকের অর্থ)
যাহার সৌন্দর্য দেখে ললনা ভুলিল।
স্ত্তম্ভবিধায়িনী রাধা প্রেমেতে মজিল।।
যেই প্রভু গোবর্ধন করিল ধারণ।
তাই দেখে জনগণ আনন্দিত মন।।
বিশ্বজন হিত লাগি মদন মোহন।
বিশ্বের মঙ্গল করে সেই কৃষ্ণধন।।
শ্রীরাধার প্রেম আর নত্তন কীর্তন।
শ্রীকৃষ্ণের করিলেন চিত্ত আকর্ষণ।।
এত বলি শ্রীতারকে ব্যাখ্যা যে করিল।
শ্রোতাগণ সুখী হয়ে আনন্দে ভাসিল।।
জয় জয় ধ্বনি ওঠে আকাশ ভেদিয়া।
রমাগণে উলুধ্বনি দিলেন আসিয়া।।
গান শেষে সে তারক বাহিরেতে এল।
শত শত শ্রোতাগণ চরণে পড়িল।।
তারকের জয়গান করিতে করিতে।
শ্রোতাগণ চলে গেল যে যার বাটিতে।।
গান শেষে সব দল বিদায় হইল।
যার যার দেশে সবে গমন করিল।।
তারপর সে তারক ওড়াকান্দি যায়।
প্রণাম করিল গিয়ে ঠাকুরের পায়।।
কেন্দে কেন্দে সে তারক বলিল বচন।
সেই শ্লোকের কথা কহিল তখন।।
তারকের কথা শুনে হরিচাঁদ কয়।
ভক্ত বাঞ্ছা পুরাইতে আসি এ ধরায়।।
তোর পরাজয় দেখে শ্লোক লিখিয়া।
পবনের কাছে আমি দেই পাঠাইয়া।।
হেন বাক্য হরিচাঁদ যখন বলিল।
তারক চরণে পড়ে কান্দিতে লাগিল।।
তারকের কান্না দেখে বলে দয়াময়।
আশীর্বাদ দিয়ে তারে করিল বিদায়।।
কান্দিয়া বিনোদ বলে বেলা বেশী নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!