সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল কিন্তু এই হুট করে মরে যাওয়াটাই কাল হলো। কত প্ল্যান করেছিলাম। এই বছরের গোড়ার দিকে ইউরোপ ট্যুরে যাবো। গাজীপুরের দিকে যে জমিটা কিনেছি সেটাতে বাংলো বাড়িটা করছিলাম সেটাও প্রায় রেডি। সেখানে বসে বসে ছুটির সন্ধ্যাগুলো কাটাবো। ভূমিকে না জানিয়ে শেয়ারবাজারে যে ইনভেস্ট করেছি সেটার কাগজপত্র, ইনসুরেন্সের কাগজপত্র ছাড়াও জমিজমার দরকারি কাগজপত্র কোথায় কোনটা থাকলো কিছুই কাউকে জানিয়ে আসা হলো না। আমার হয়েছে মরণ দশা। মরেও সুখ নাই। সেই বরগুনা থেকে কত কায়দা করে আঠারো কেজি ওজনের কোরাল মাছটা আনিয়েছিলাম। বেশি করে পেয়াজ কুঁচির সাথে মসলায় ডুবিয়ে কষা কষা করে রান্না হবে সাথে থাকবে নতুন আলুর ছোট ছোট চাক চাক টুকরা গুটিকয়েক মটরশুটি আর সবার উপরে ধনেপাতা ছিটানো। গরম গরম লাল চালের ভাতের সাথে খেতে গেলে আনন্দে চোখে জল চলে আসার কথা। সেই মাছ ডিপ ফ্রিজে পরে থাকলো আর আমি এখানে। এখানে বসে বসে দেখছি আমার ধনসম্পত্তি-টাকাকড়ি সব লুটপাট হচ্ছে। স্বান্তনা দিতে ভূমির পাশে যারা দাঁড়াচ্ছে সবকয়টা এক একটা আস্তা হারামজাদা। যেসব আত্মীয়স্বজন বাসায় এসে উঠেছে ভূমি তাদের কাউকে বের করতে পারবে কিনা সেটাও বুঝতে পারছি না। বছর চৌদ্দ আগে যখন নিজের ইচ্ছে মতো পাত্রী পছন্দ করে ভূমিকে বিয়ে করি তখন প্রায় সকলেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। ভেবেছিল বাবা-মা মেনে নেয়নি দেখা হলেই হয়তো টাকা-পয়সা চাইবো। অথচ তারাই আজ বাড়িতে ভিড় করেছে। নিজের হাতে তিলে তিলে গড়ে তোলা সবকিছু ফেলে এমনি পট করে মরে গেলাম? নিজের উপরই বিরক্ত লাগছে। এভাবে মরার কোনো মানে হয় না। এই রকম হুটহাট না মানুষের মৃত্যুটাও একটু গুছিয়ে হওয়া উচিত। এই রকম উদ্ভট নিয়ম কে করলো কে জানে। কত যন্তরমন্তর করে এত্তো কাড়ি কাড়ি টাকাপয়সা কামালাম আয়েশ করে একটু ভোগ করবো তা কপালে সইলো না।
মরে যাওয়ার বেশকিছু সুবিধাও আছে। যেমন এই প্রায় পঞ্চান্ন ঘণ্টার মধ্যে প্রেসার কোনো সমস্যা করে নাই; ডায়বেটিকস-হাইপার টেনশন আর পিঠের যে ব্যাথাটা ছিল তার কোনোটাই আর টের পাওয়া যাচ্ছে না।
বাকিটা আসছে…