জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা ও নবকলেবর রহস্য
-ড সৌরভ মণ্ডল
শ্রীপুরুষোত্তমক্ষেত্রে পুরীর মন্দিরে দারুব্রহ্ম শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবকে কেন্দ্র করিয়া বৎসরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। এই সকল উৎসব উপলক্ষ্য করিয়া জগন্নাথদেবের দ্বাদশ যাত্রার প্রচলন থাকিলেও তাহার মধ্যে রথযাত্রা ও স্নানযাত্রা মহোৎসব সর্ব্বোত্তম।
কেবলমাত্র এই দুই উৎসবে প্রভু শ্রী জগন্নাথদেবের দারু মূর্তি মন্দিরের গর্ভগৃহ হইতে বাহিরে আসিয়া দৃশ্যমান হন। স্নানযাত্রার পর এক পক্ষকাল ধরিয়া দারুব্রহ্ম শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের অনবসর বা নব অঙ্গরাগ বা নবযৌবন প্রাপ্তির পর নব অঙ্গরাগে সুসজ্জিত হইয়া রথারূঢ় হইয়া সকল ভক্তদের দর্শন দান করেন।
দারুব্রহ্ম শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের দারু মূর্তি প্রতি দ্বাদশ বৎসর অন্তর নবকলেবর প্রাপ্ত হন। এক বিশেষ লক্ষণযুক্ত নিম বৃক্ষ হইতে দেবমূর্তি গঠিত হয় এবং দীর্ঘদিন বিভিন্ন যজ্ঞাদি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়া ইহা পালিত হয়। এই যজ্ঞাদি অনুষ্ঠানটি ‘ন্যাসদারু’ নামে পরিচিত।
সেই অনুষ্ঠানের মূল পর্বটি হইলো প্রাণ প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ পূর্ববর্তী বিগ্রহের নাভিদেশ হইতে ব্রহ্মমণি লইয়া নূতন বিগ্রহের নাভিদেশে প্রতিস্থাপন। যার পরশ মাত্রই দারু মূর্তি দারুব্রহ্মে পরিণত হইয়া যায়। প্রধান পুরোহিত (দইতাপতি) পরম শুদ্ধাচারে হস্ত ও চক্ষুদ্বয় বস্ত্র দ্বারা আবৃত করিয়া (যাহাতে স্পর্শদোষ ও দৃষ্টিদোষ না লাগে) পুরাতন বিগ্রহ হইতে ব্রহ্মমণি নূতন বিগ্রহে স্থাপন করেন।
সুপ্রাচীনকাল হইতে এই ধরিত্রীর বুকে বহু মহাত্মার আবির্ভাব ঘটিয়াছে। তাঁহারা প্রত্যেকেই মায়াবদ্ধ জীবকূলকে মুক্তির পথ দেখাইয়াছেন ও আত্মজ্ঞানের পথ নির্দেশ দিয়াছেন এবং আপন কর্ম শেষে পুনরায় মিলিত হইয়াছেন পরমাত্মার সহিত। সেই ধারা আজও অব্যাহত রহিয়াছে।
এই পর্বটি পালিত হয় চূড়ান্ত সাবধানতা ও গোপনীয়তার সহিত। কি এই ব্রহ্মমণি? প্রবাদ আছে ইহা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেহত্যাাগের পর প্রাপ্ত কুণ্ডলাকার নাভিদেশ। কেহ কেহ বলেন ইহা সতীর নাভিদেশ। কাহারও কাহারও মতে, এটি আত্মনারায়ণের প্রকৃত স্বরূপ পরমব্রহ্মের সর্বোত্তম প্রতীক বা প্রতিমূর্তি একটি অতি উচ্চ সুলক্ষণযুক্ত শালগ্রাম শিলা।
শ্রীপুরুষোত্তমক্ষেত্রে স্নানপূর্ণিমাতে প্রভু শ্রী জগন্নাথের মহাস্নানের পর জগন্নাথদেবর দারুব্রহ্ম মূর্তি ‘অনবসর’ কালে অর্থাৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে চলিয়া যান পক্ষকালের জন্য। কেহ কেহ বলেন, প্রভু শ্রী ভগবান জগন্নাথ এই সময় প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হন ও পক্ষকাল ব্যাপি আয়ুর্বেদ মতে চিকিৎসাধীন থাকেন।
এই সময় সর্বসাধারণ প্রভু জগন্নাথের দর্শন পান না। ঠিক রথযাত্রার পূর্বে নব অঙ্গরাগে সুসজ্জিত হইয়া জগন্নাথদেব ‘নবযৌবন’ সম্পন্ন হইয়া রথযাত্রায় পুনরায় ভক্তদের নিকট প্রকাশিত হন।
প্রতি দ্বাদশ বৎসর অন্তর জগন্নাথদেবের নবকলেবর উৎসব এবং প্রতি বৎসর স্নানযাত্রার পর এক পক্ষকালের জন্য অনবসর বা লোকচক্ষুর অন্তরালে গিয়া নবযৌবন প্রাপ্তির উৎসবের মধ্য দিয়া পুরাকালের ব্রহ্মজ্ঞ মহান ঋষিগণ ভারতের আধ্যাত্ম জগতের এক অতি উচ্চস্তরের সাধনার ইঙ্গিত বা সংকেত প্রদান করিয়াছেন।
সুপ্রাচীনকাল হইতে এই ধরিত্রীর বুকে বহু মহাত্মার আবির্ভাব ঘটিয়াছে। তাঁহারা প্রত্যেকেই মায়াবদ্ধ জীবকূলকে মুক্তির পথ দেখাইয়াছেন ও আত্মজ্ঞানের পথ নির্দেশ দিয়াছেন এবং আপন কর্ম শেষে পুনরায় মিলিত হইয়াছেন পরমাত্মার সহিত। সেই ধারা আজও অব্যাহত রহিয়াছে।
সেই সকল ঋষি, মুনি ও মহাত্মাগণের মধ্য হইতে কেহ কেহ ‘কাল’ (মৃত্যু) কে আপন বশে আনিয়া কালাতীত অবস্থায় উত্তীর্ণ হইয়া, পরমাত্মার অনিচ্ছার ইচ্ছায় আজও এই ধরণীর বুকে বিরাজমান থাকিয়া, অদ্যাবধি মুক্তিকামী জীবকূলকে পথনির্দেশ দিয়ে চলেছেন।
লাহিড়ী মহাশয় সেই ক্রিয়ার ডায়েরিতে কায়াকল্প ত্যাগের বহুবিধ পন্থার উল্লেখ করিয়াছিলেন এবং তার প্রয়োগবিধি ও কোন পন্থা অবলম্বন করিলে কতদিনে কলেবর পরিবর্তন দ্বারা নবযৌবন প্রাপ্ত হওয়া যায় তার বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছিলেন।
সহস্রাধিক বৎসর ধরিয়া তাঁহারা এই ধরিত্রীর বক্ষ মাঝে অবস্থান করিলেও তাঁহাদের শ্রীদেহে বা কলেবরে বয়সের ছাপ এতটুকু পরে নাই। তাঁহারা আপন সাধন বলে চিরযৌবন প্রাপ্ত হইয়াছেন। এই পুরাতন দেহ বা কলেবর পরিত্যাগ করিয়া নব কলেবরে প্রবেশ বা নবযৌবন বা চিরযৌবন প্রাপ্তির যে সাধন পন্থা তাহাকে ‘কায়াকল্প’ ত্যাগ বলা হইয়া থাকে।
কায়া অর্থাৎ দেহ বা শরীর এবং কল্প অর্থাৎ যুগ। যুগ যুগ ধরিয়া পুরাতন শরীর বা দেহ পরিত্যাগ করিয়া নবরূপে যৌবন প্রাপ্তিই হইলো কায়াকল্প ত্যাগ। এই পদ্ধতি অবলম্বন করিয়া অদ্যাবধি বহু মহাত্মা সহস্রাধিক বৎসর জীবিত রহিয়াছেন।
পরমারাধ্য পূজ্যপাদ শ্রীশ্রী যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী মহাশয় তেমনই এক মহাত্মার আশীর্বাদ লাভ করিয়া ধন্য হইয়াছিলেন। তাঁহার গুরুদেব শ্রীশ্রী বাবাজী মহারাজ সেই সকল প্রাচীন, সহস্রাধিক বৎসর জীবিত মহাত্মাগণের মধ্যে অন্যতম। আজও তাঁহার আশীর্বাদ লাভ করিয়া বহু মহান সাধক ধন্য ধন্য হইতেছেন।
শ্রীশ্রী লাহিড়ী মহাশয় তাঁহার গুরুদেবের নিকট হইতে প্রাপ্ত সকল যৌগিক প্রক্রিয়াগুলি গোপনে একটি দিনলিপিতে লিপিবদ্ধ করিয়া যান। সেইখানে তিনি বহু রেখাচিত্রসহ ক্রমান্বয়ে একশত আট প্রকার যৌগিক প্রক্রিয়া ও তাহার প্রকারভেদ এবং পাত্রভেদে ঐ সকল ক্রিয়ার প্রয়োগবিধি বিস্তারিত লিখিয়া যান।
তাঁহার ঐ মূল্যবান খাতা কেবলমাত্র তাঁহার প্রধান শিষ্য পরমারাধ্য যোগীবর শ্রীশ্রী পঞ্চানন ভট্টাচার্য মহাশয় স্বহস্তে লিখিয়া লইয়াছিলেন। গুরু পরম্পরায় আপনাপন প্রধান শিষ্য কর্তৃক সেই প্রথা অদ্যাবধি অব্যাহত রহিয়াছে।
পরমারাধ্য পূজ্যপাদ গুরুদেব শ্রীশ্রী যোগাচার্য ডা অমল বিকাশ চৌধুরী মহাশয় কর্তৃক লিখিত ক্রিয়ার ডায়েরি তিনি তাঁর এক স্নেহধন্য শিষ্যকে প্রদান করিয়া গিয়াছেন। আজও তা উপযুক্ত ব্যক্তির দ্বারা অতি সঙ্গোপনে সুরক্ষিত রহিয়াছে।
লাহিড়ী মহাশয় সেই ক্রিয়ার ডায়েরিতে কায়াকল্প ত্যাগের বহুবিধ পন্থার উল্লেখ করিয়াছিলেন এবং তার প্রয়োগবিধি ও কোন পন্থা অবলম্বন করিলে কতদিনে কলেবর পরিবর্তন দ্বারা নবযৌবন প্রাপ্ত হওয়া যায় তার বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছিলেন।
দ্বিতীয় পন্থায় লাহিড়ী মহাশয় উল্লেখ করিয়াছেন কয়েকটি বিশেষ ধরণের লতার নাম। তিনি বলিয়াছেন, ঐ লতার রস নির্দিষ্ট কিছুদিন ধরিয়া সমাধিস্থ সাধকের অঙ্গে মর্দন করিতে হইবে এবং একটি বিশেষ পানীয় পান করাইয়া একটি বিশেষ স্থানে শয়ন করাইয়া রাখিলে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যেই দেহের বার্দ্ধক্যজনিত লোলচর্ম্মের পরিবর্তে যৌবনসুলভ আকৃতি লাভ হইবে এবং বৃদ্ধ বালকের ন্যায় হইবে।
সেই সকল একাধিক পন্থার মধ্যে, দারুব্রহ্ম শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের প্রতি দ্বাদশ বৎসর অন্তর গোপনীয়তার সহিত নবকলেবর উৎসব এবং প্রতি বৎসর স্নানযাত্রার পর এক পক্ষকালের জন্য অনবসর বা লোকচক্ষুর অন্তরালে গিয়া গোপনে নবযৌবন প্রাপ্তির যে উৎসব প্রচলিত আছে তাহা এই কায়াকল্প ত্যাগের অতি উচ্চস্তরের দুই প্রকার সাধনার প্রতীক।
প্রথম পন্থায় অতি উচ্চাবস্থা প্রাপ্ত যোগীগণ পবিত্র যজ্ঞবেদী প্রস্তুত করিয়া হোমাগ্নিতে বিশেষ মন্ত্রের সহিত ঘৃতাহুতি দান করেন। তাহার পর বহুবিধ অঙ্গন্যাসানুষ্ঠান পালন করেন। এই ন্যাসানুষ্ঠান অতি উচ্চস্তরের কিছু যৌগিক প্রক্রিয়া, যা স্থির বায়ুর দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়।
ইহার আভাস যোগীবর শ্রীশ্রী পঞ্চানন ভট্টাচার্য মহাশয় তাঁহার রচিত আর্যমিশন গীতার প্রথমেই দিয়াছেন। এই হৃদ্যাদিন্যাসানুষ্ঠানের প্রতীক হিসাবে বর্তমান পুরীর মন্দিরে নবকলেবর অনুষ্ঠানের পূর্বে ‘ন্যাসদারু’ অনুষ্ঠান নামে প্রচলিত রহিয়াছে।
তাহার পর একটি বিশেষ যৌগিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করিয়া (বায়ুস্থিরের উপর তৃতীয় ক্রিয়া) সাধক তাহার পবিত্র দেহের প্রদক্ষিণ করেন। ইহার প্রতীক হিসাবে জগন্নাথদেবের পরম পবিত্র ন্যাসদারু লইয়া শ্রী মন্দির প্রদক্ষিণের বিধান রহিয়াছে।
এইবার সাধক তাহার শরীর হইতে বিশেষ যৌগিক পন্থায় প্রাণশক্তিকে বহির্দেশে আনয়ন পূর্বক বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করিয়া মন্ত্রোচ্চারণের সহিত এক একটি খণ্ড সম্মুখস্থিত হোমাগ্নিতে আহুতি প্রদান করিতে থাকেন।
সর্বশেষ খণ্ডটি বিশেষ পন্থাবলম্বনে আপন জঠরাগ্নিতে (মনিপুর চক্রে) আহুতি প্রদান করিলেই নব শরীর প্রাপ্ত হন। এই সর্বশেষ পন্থার প্রতীকই হইলো জগন্নাথদেবের পুরাতন বিগ্রহ হইতে ব্রহ্মমণি নূতন বিগ্রহের নাভিদেশে স্থাপনের অনুষ্ঠান।*
দ্বিতীয় পন্থায় লাহিড়ী মহাশয় উল্লেখ করিয়াছেন কয়েকটি বিশেষ ধরণের লতার নাম। তিনি বলিয়াছেন, ঐ লতার রস নির্দিষ্ট কিছুদিন ধরিয়া সমাধিস্থ সাধকের অঙ্গে মর্দন করিতে হইবে এবং একটি বিশেষ পানীয় পান করাইয়া একটি বিশেষ স্থানে শয়ন করাইয়া রাখিলে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যেই দেহের বার্দ্ধক্যজনিত লোলচর্ম্মের পরিবর্তে যৌবনসুলভ আকৃতি লাভ হইবে এবং বৃদ্ধ বালকের ন্যায় হইবে।
তিনি লিখিয়াছেন এই অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় কেবলমাত্র অতি উন্নত যোগীরাই সফলকাম হন। এইরূপে কলেবর পরিবর্তনের উদ্দেশ্য এই যে ইহাতে নির্বিঘ্নে ধারাবাহিকভাবে সাধন করিয়া যাইবার সুযোগ ঘটে, অন্যথায় মৃত্যুর পর পুনর্জন্মলাভ ও যৌবন কাল প্রাপ্তির জন্য অনেক বৎসরের বিঘ্ন হয়।
এই পন্থার অনুকরণে প্রতি বৎসর স্নানযাত্রার পর এক পক্ষকালের জন্য অনবসর বা লোকচক্ষুর অন্তরালে গিয়া নবযৌবন প্রাপ্তির উৎসব পালন করা হইয়া থাকে। এই সময়ে প্রভু শ্রী জগন্নাথদেবের দারুমূর্তিতে যে একটি বিশেষ তৈল মর্দন করা হইয়া থাকে এবং বিশেষ কিছু লতার রসে নির্মিত ঔষধ সেবন করানো হইয়া থাকে তাহা ঐ পন্থার অনুকরণ মাত্র।**
পূর্বেই উল্লেখ করিয়াছি এই কায়াকল্প ত্যাগের বহু পন্থার কথা শ্রীশ্রী লাহিড়ী মহাশয় উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। তাহার মধ্যে উপরিউক্ত এই দুই পন্থার সহিত প্রভু শ্রী জগন্নাথদেবের উৎসবের সাযুজ্য থাকিলেও অপরাপর পন্থাগুলিও অতি অপূর্ব।
অপর একটি পন্থায় তিনি গাণিতিক উপায়ে বিভিন্ন যৌগিক ক্রিয়ার দ্বারা কিরূপে কায়াকল্প ত্যাগ করা যায় তার ব্যখা দিয়াছিলেন। সেই পন্থার কথা তাঁহার অপর এক শিষ্য পূজনীয় শ্রীশ্রী রামদয়াল মজুমদার মহাশয় তাঁহার রচিত ‘শ্রীগীতা’-র দ্বিতীয় ষটকের অষ্টম অধ্যায়ে ১৭নং শ্লোকে ব্যাখ্যা করিয়াছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য শ্রীশ্রী রামদয়াল মজুমদার মহাশয়ের স্নেহধন্য মহামহোপাধ্যায় ড গোপীনাথ কবিরাজ মহাশয় তাঁহার সম্পাদিত ‘বিশুদ্ধবাণী’ বইটিতে জ্ঞানগঞ্জের শ্রদ্ধেয় মহাত্মাগণ কিরূপে কায়াকল্প ত্যাগ করিতেন তার বিস্তৃত বিবরণ প্রকাশ করিয়াছিলেন।
এছাড়াও বহুবর্ষজীবি শ্রীশ্রী বরফানী দাদাজী মহারাজ তাঁহার সাধনকালে হিমালয়ের বহু সহস্রাধিক বৎসর জীবিত মহাত্মাগণের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন এবং তাঁহাদের কায়াকল্প ত্যাগের সাধন পদ্ধতি সম্বন্ধে অবগত হন। সেই কথা তিনি পরবর্তীকালে প্রকাশ করেন এবং তা তাঁর জীবনীগ্রন্থে প্রকাশিত হইয়াছে।
সর্বশেষে বলি, কায়াকল্প ত্যাগের সাধন পন্থা অতি গোপনীয়। ইহা সাধারণ যোগী তো দূর যোগাচার্যগণ ও অবগত নহেন। ইহা প্রাচীন মহাত্মাগণ অতি উচ্চাবস্থা প্রাপ্ত যোগীগণকে বিশেষ প্রয়োজনেই শিক্ষা দিতেন। সেই বিষয়েও লাহিড়ী মহাশয় তাঁহার ডায়েরি তে উল্লেখ করিয়াগিয়াছেন।
তিনি লিখিয়াছেন এই অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় কেবলমাত্র অতি উন্নত যোগীরাই সফলকাম হন। এইরূপে কলেবর পরিবর্তনের উদ্দেশ্য এই যে ইহাতে নির্বিঘ্নে ধারাবাহিকভাবে সাধন করিয়া যাইবার সুযোগ ঘটে, অন্যথায় মৃত্যুর পর পুনর্জন্মলাভ ও যৌবন কাল প্রাপ্তির জন্য অনেক বৎসরের বিঘ্ন হয়।
সেই কারনেই অদ্যাবধি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে এই নবকলেবর এবং স্নাযাত্রার পর অনবসর কাল অনুষ্ঠান দুইটি অতি সঙ্গোপনে পালিত হইয়া থাকে।
………………………………….
[টিকা:
* শ্রীশ্রী বাবাজী মহারাজের কৃপায় উপরে উক্ত এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পূজনীয় শ্রী যুক্তেশ্বর গিরি মহারাজের শিষ্য পরম্পরায় শ্রদ্ধেয় স্বামী সত্যেশ্বরানন্দ গিরি মহারাজ দুনাগিরিতে অবস্থানকালে স্বচক্ষে দেখিয়াছিলেন। তাহার বিবরণ তিনি তাঁহার রচিত ‘Mahamuni Babaji & His Legacy’ নামক পুস্তকে প্রকাশ করিয়াছেন, ১৯৮৪ তে।
** যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী মহাশয় জীবিত অবস্থায় তাঁহার স্বহস্তে লিখিত এই অতি গোপনীয় ডায়েরি তাঁহার প্রধান শিষ্য ব্যাতীত কাহাকেও দেখার অনুমতি দিয়া যান নাই। তাঁহার মহাসমাধি লাভের পর তাঁহার বংশধরগণ এই ডায়েরি প্রাপ্ত হন।
পরবর্তীকালে তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রীযুক্ত তিনকড়ি লাহিড়ী মহাশয়ের দ্বিতীয় পুত্র শ্রীযুক্ত অভয়চরণ লাহিড়ী মহাশয়, যোগীরাজের স্বহস্ত লিখিত সকল দিনলিপি অবলম্বনে, ১৩৬৪ সালে ‘শ্রীশ্রী শ্যামাচরণ লাহিড়ী মহাশয়ের জীবন কথা’ নামে একটি পুস্তক রচনা করেন। সেই পুস্তকে তিনি এই দ্বিতীয় পন্থার কথা উল্লেখ করিয়াছিলেন।
পরবর্তীকালে বংশপরম্পরায় যোগীরাজের সকল রচনা তাঁহার কনিষ্ঠ পুত্র শ্রীযুক্ত দুকড়ি লাহিড়ী মহাশয়ের দ্বিতীয় পুত্র শ্রীযুক্ত আনন্দমোহন লাহিড়ী মহাশয়ের হস্তে আসিয়া পড়ে।
তিনিও এই দিনলিপিগুলি অবলম্বনে বহু পুস্তক রচনা করেন। তার মধ্যে ‘যোগীরাজ স্মৃতি’ নামে লাহিড়ী মহাশয়ের এক প্রামাণ্য জীবনীগ্রন্থের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে এই কায়াকল্প ত্যাগের দ্বিতীয় পন্থার কথা উল্লেখ করিয়াছিলেন।]
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………………………..
আরো পড়ুন:
সব তীর্থ বার বার গঙ্গা সাগর একবার
দোল উৎসব
আম্মার সঙ্গলাভ
ক্রিয়াযোগ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শ্রীশ্রী সাধিকা মাতা
বহুবর্ষজীবি শ্রীশ্রী বরফানী দাদাজি
জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা ও নবকলেবর রহস্য