ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

অথ লক্ষ্মীমাতার জন্ম-বিবাহ ও যশোমন্ত ঠাকুরের তিরোভাব।
পয়ার।

জিকাবাড়ী নিবাসী লোচন প্রামাণিক।
একমাত্র কন্যা ভালবাসে প্রাণাধিক।।
বৈকুণ্ঠের লক্ষ্মী যিনি সত্যে বেদবতী।
অম্বরীষ কন্যা যিনি দ্বাপরে শ্রীমতি।।
বিষ্ণুপদ সেবানন্দ ক্ষীরোদ বাসিনী।
ত্রেতাযুগে সীতা সতী দ্বাপরে রুক্মিনী।।
বিষ্ণুপ্রিয়া নাম ধরে গৌরাঙ্গ গৃহিণী।
কলিতে হ’লেন তিনি লোচন নন্দিনী।।
যে কালে জন্মিল মাতা লোচনের ঘরে।
ভূমিষ্ঠ হ’লেন যবে সূতিকা আগারে।।
কি লিখিব কি লিখিব ভেবেছি বসিয়া।
শান্তিদেবী পদ ভাবি নয়ন মুদিয়া।।
অন্তর হইতে এক নারী বাহিরিল।
সেই নারী লক্ষ্মীমার ধাত্রী যেন ছিল।।
আমি যেন দেখিলাম বিভীষিকা প্রায়।
ধ্যানে কি স্বপনে দেখি বোঝা নাহি যায়।।
দেখিলাম শান্তিমার শান্তিময়ী পদ।
রাঙা চরণেতে ফুটিয়াছে কোকনদ।।
ধাত্রী দেখে কোকনদ উড়িয়া আসিল।
শান্তিমার শ্রীচরণে প’ড়ে লুটাইল।।
প্রসবিনী ফুলনাড়ি যবে প্রসবিল।
এক ফুল তথা হতে পদে লুকাইল।।
ইহা শুনিলাম যেন প্রলাপের প্রায়।
সজ্ঞানেতে লিখিলাম ধাত্রী যাহা কয়।।
ধাত্রী বলে প্রসূতিরে বলি মা তোমায়।
তোমার এ কন্যা মা সামান্যা কভু নয়।।
ধাত্রী কহিলেন লোচনের গৃহিণীরে।
লোচন-গৃহিণী কয় লোচনের তরে।।
শুনিয়া লোচন সব করিল প্রত্যয়।
এ মেয়ের যোগ্য বর পাইব কোথায়।।
নির্জনে বসিয়া করে ঈশ্বরের ধ্যান।
এই কন্যা কাহাকে করিব সম্প্রদান।।
বহু চিন্তা মনে মনে করিতে লাগিল।
এদিকেতে লক্ষ্মীমাতা বলিষ্ঠা হইল।।
বাল্যকালে যখনেতে করিতেন খেলা।
বালিকাগণের সঙ্গে করিতেন মেলা।।
আয় গো ভগিনী মোরা খেলিব সকলে।
সর্বমঙ্গলার পূজা করি সবে মিলে।।
সতীর বেদনা যানে সেই মাতা সতী।
পঞ্চতপা হইয়া পাইল পশুপতি।।
কল্য শাস্ত্র শুনিয়াছি বাবার গোচরে।
জগন্মাতা জন্ম নিয়াছিল গিরিপুরে।।
বাল্যকালে করিলেন তপস্যা আরম্ভ।
শিবপূজা করিলেন সদা অবলম্ব।।
তপস্যার ফলে পতি পায় কৃত্তিবাস।
সতীমার পূর্ণ হ’ল মনো অভিলাষ।।
একদিন আমার পিতার গুরু এল।
গোঁসাই বসিয়া কত শাস্ত্র শুনাইল।।
শুনিলাম কাত্যায়নী পূজে ব্রজঙ্গনা।
মাধব মাধব পয়ে পুরা’ল বাসনা।।
দয়মন্তী সতী শক্তি আরাধনা ফলে।
হংসমুখে বার্তা শুনি পতি পেল নলে।।
ভদ্রাবতী সতী বাহু রাজার নন্দিনী।
পাইল শ্রীবৎস পতি দৈববাণী শুনি।।
সাবিত্রীর ব্রত করে সতী সে সাবিত্রী।
মৃত্যুপতি জিনে, বাঁচাইল মৃত পতি।।
সাধনা বিহনে ভাল পতি মিলে কার।
আয় মোরা পূজা করি সর্বমঙ্গলার।।
বালিকাগণের সহ হইয়া একত্র।
আনিতেন দূর্বাদল তুলসীর পত্র।।
গৃহ হ’তে চেয়ে নিত আতপ তণ্ডুল।
তুলে নিত গ্রামে পেত যত যত ফুল।।
কুষ্মাণ্ড কাচড়া লাউ কলম্বী ধুতুরা।
মরিচ বেগুন বন্যা ফুল কেওয়া তারা।।
ফাল্গুনী সংক্রান্তি দিনে দ্বিজমন্ত্র বিনে।
পূজিতেন কাত্যায়নী ল’য়ে বালাগণে।।
তুলসী চন্দন মাখি’ যতন করিয়া।
কালী লও ব’লে দিত অঞ্জলী পুরিয়া।।
খেলিতেন ল’য়ে যত গ্রাম বালিকায়।
ইহার অগ্রেতে বাল্য খেলার সময়।।
বালিকা আচারে আলো তণ্ডুল বিহনে।
বালি দিয়া নৈবিদ্য সাজা’ত বালাগণে।।
বলিতেন এই মত তোরা সবে সাজা।
আয় লো ভগিনী মোরা খেলি পূজা পূজা।।
এরূপে পৌগণ্ডকাল হ’য়ে এল গত।
এমন সময় খেলে সাবিত্রীর ব্রত।।
কখন কখন ল’য়ে বালিকার গণ।
ভক্তিভাবে পূজিতেন দেব নারায়ণ।।
অম্বরীষ কন্যা শ্রীমতীরে তুমি নাও।
সেই মত দয়াময় মোরে ল’য়ে যাও।।
লোচন শুনিল দৈবে বাল্যখেলার ছলে।
যশোমন্ত পুত্র হরি বিশাকে বাঁচা’লে।।
চিত্ত চমকিত হ’ল মানিল বিস্ময়।
এ ছেলে ঈশ্বর অংশ সামান্য ত নয়।।
হরির সঙ্গেতে দিলে শান্তির বিবাহ।
ইহকাল পরকাল হইবে নির্বাহ।।
লোচন সফলাডাঙ্গা আসিয়া আসিয়া।
যশোমন্তে কথা কয় হাসিয়া হাসিয়া।।
তোমার মধ্যম পুত্র আমি তাঁরে চাই।
কন্যা দিয়া আমি তাঁরে করিব জামাই।।
শুনি যশোমন্ত বড় হ’ল আনন্দিত।
বলে এই কর্ম কর যে হয় উচিত।।
আসা যাওয়া দেখা শুনা হয় রীতিমতে।
কন্যাদান করিলেন শুভ সু-লগ্নেতে।।
যশোমন্ত বিয়া দিল পাঁচটি নন্দন।
অচিরাৎ লোকলীলা কৈল সম্বরণ।।
একদিন গাত্র শীত হৃদিকম্প হয়।
মুহূর্তেক বসিলেন তুলসী তলায়।।
জপিলেন ষোল নাম বত্রিশ অক্ষর।
সজ্ঞানেতে দেহত্যাগী হ’ল লোকান্তর।।
পুষ্পরথে চড়ি সুখে গোলোকে গমন।
যশোমন্ত প্রীতে হরি বল সর্বজন।।
হরি পিতা লোকান্তর সমাধি শুনিলে।
পুলকে গোলোকে যাবে হরি হরি বলে।।
অন্তকালে হবে তাঁর হরি কর্ণধার।
বিরচিল রসরাজ কবি সরকার।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!